বর্তমান বিশ্বপ্রেক্ষাপটে ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সর্বোত্তম কর্মপদ্ধতির সন্ধানে
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১০:১২:১৯ সকাল
(আজ বা কালকের মধ্যেই এই প্রবন্ধটি 'উম্মাহর মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ের পথ' নামক বইয়ে প্রিন্ট হবে। এজন্য এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিতে আপনাদের সবার সুচিন্তিত মন্তব্য চাচ্ছি।)
বর্তমান বিশ্বপ্রেক্ষাপটে সারা পৃথিবী জুড়েই ইসলামের পুনর্জাগরণ ও ইসলামের পুন:আগমনের সম্ভাবনা দিন দিন উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।
বিশ্বজুড়ে আজ অনেক গুলো ইসলামিক দল, সংগঠন ও প্রায় সকল ইসলামিক স্কলারগণই ইসলামের জন্য, ইসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য একেজন একেকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইসলাম নামক সুবিশাল গাছের শাখা-প্রশাখার সৌন্দর্য বর্ধন, পরিচর্যা ও গোড়ায় পানি সিঁঞ্চনের কাজ করে যাচ্ছেন।
ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনো ক্ষেত্রে সামান্য থেকে সামান্যতম ভূমিকা পালন করা বা করতে পারাও নি:সন্দেহে বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার। আর সবচাইতে বড় সৌভাগ্য তো অবশ্যই তাদের যাঁরা বিশ্ব মুসলিমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের দূরাবস্থা থেকে উত্তরণ ও বিশ্বমানবতার জন্য একটি আদর্শিক কল্যাণময় ইসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থা উপহার দেয়ার মহান লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।
বিশ্বজুড়ে নানান জুলুম, নির্যাতন আর বাঁধা-প্রতিবন্ধকতার পাহাড় ঠেলে যারা ইসলামিক রাষ্ট্রের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তাদের প্রায় সকলেই যে একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই এই শ্রম, সাধনা করছেন, সংগ্রাম-আন্দোলনে ব্যপৃত আছেন। নিজেদের সম্পদ, সন্তান, পরিবার এমনকি নিজেদের সবচেয়ে প্রিয় জীবন-যৌবনকে পর্যন্ত তারা অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছেন মহান আল্লাহর দীনের জন্য। এই সকল মহান ব্যক্তিদের আত্মত্যাগ ও পরিশ্রমকে পার্থিব কোনো মানদন্ডে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। সম্ভব নয় তাদেরকে দুনিয়ার কোনো উহার-উপঢৌকনে সন্তুষ্ট করা। তাঁরা যেই মহান রব্বে কায়েনাতের সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ স্বয়ং তাদের সকল আমলের প্রতিদান নিজ হাতে দিবেন।
বিশ্বজুড়ে ইসলামের জন্য ইসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থার চূড়ান্ত লক্ষ্য নির্ধারণ করে আজ অনেকেই কাজ করে যাচ্ছেন। একেকজন ইসলামিক ব্যক্তি, শায়খ কিংবা তাদের সংগঠনের কাজের ধরণ ও কর্মপদ্ধতি একেক রকম হলেও তাদের অধিকাংশের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যই কিন্তু এক ও অভিন্ন। আর তা হলো এই মাটির পৃথিবীতে মহান রবের বিধান চালু করা, ইসলামকে একটি রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবারও বিশ্বরাজনীতির মঞ্চের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করা এবং পূর্ণাঙ্গ ইসলামিক শারীয়া দ্বারা পরিচালিত একটি আদর্শিক ইসলমিক খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা বিশ্ববাসীকে উপহার দেয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।
১৯২৪ সনের পর থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত বিগত প্রায় ৯০ বছরের মধ্যে ইসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার সামগ্রীক পদক্ষেপের সরল বিশ্লেষণ করলে যে কেউ এটি স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে বর্তমান সময়ের চেষ্টা-প্রচেষ্টা, ব্যাপক ও অসংখ্য উদ্যোগের মতো এতো বৃহৎ পরিসরে ও অসংখ্য ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অতীতে আর কখনও হয়নি।
মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণের যে ঢেউ গত শতাব্দীর শেষ প্রান্ত থেকে শুরু হয়েছিলো তিউনিশিয়ার মুক্তিকামী যুবকদের আত্মত্যাগের ঘৃতাঞ্জলীতে সৃষ্ট আরব বসন্ত ও তৎপরবর্তী লিবিয়া, মিশর এবং সর্বশেষ সিরিয়ার আপডেট সংবাদ যে কোনো মুমিনকে নতুন আশায় বুক বাঁধতে বাধ্য করছে। তাদেরকে শীঘ্রই এক সোনালী সকালের আশায়, সুবহে সাদিকের সন্ধানে এক চাতক পাখির মতো ব্যকূল করে তুলছে।
বর্তমানে মুসলিমদের আকীদা-বিশ্বাসের নিশ্চয়তা প্রদানকারী, মুসলিম উম্মাহর মজলুম সদস্যদের আর্তনাদ আর আহাজারীতে সাড়া দিতে সক্ষম একটি আদর্শিক ইসলামিক খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আজ বিশ্বের আপামর মুসলিম জনসাধারণের কাছে অন্য যে কোনো সময়ের চাইতে এবং অন্য যে কোনো কাজের চাইতে যে বেশি গুরুত্ব বহন করছে এবং এটি যে নিপীড়িত, নির্যাতিত লাখো-কোটি মুসলিম ও মজলুম মানবতার প্রাণের দাবীতে পরিণত হয়েছে তা বলাই বাহুল্য।
বর্তমান বিশ্বে আন্তরিকভাবে ইসলামকে পছন্দ করেন এমন কোনো মুসলিমকে পাওয়া যাবে না যিনি ইসলামিক রাষ্ট্রের প্রয়োজন ও বিশাল সুফল সম্পর্কে অবগত নন। সচেতন প্রতিটি মুসলিম নাগরিক ই বর্তমানে ইসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে একটি নূন্যতম পজেটিভ ধারণা পোষণ করেন। একেবারে প্রান্তিক মুসলিমদের অনেকের কাছে জাগতিক ও ইসলামিক শিক্ষার একাডেমিক নলেজের অভাব থাকলেও ইসলামের মূলগত বিষয় তথা মহান আল্লাহ এবং তার রাসূলের নীতি আদর্শ অনুসারে দেশ পরিচালিত হোক -এই বিষয়ে তারা অন্য যে কারো চাইতে বরং একধাপ বেশিই আগ্রহী। যে কারণে নির্বাচনের সময় কিংবা পার্থিব স্বার্থ উদ্ধারে আমাদের দেশের ও বিশ্বের দুর্নীতিবাজ শাসক গুলো কিন্তু ঠিকই জনগণকে কাছে টানবার জন্য ধর্মের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে থাকেন।
অন্যদেরকে তারা ধর্মব্যবসায়ী বলে কটাক্ষ করলেও ধর্ম নিয়ে সবচাইতে মোক্ষম ব্যবসা করা ও জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে বিরাজমান ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে নিজেদের নষ্ট স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য ক্ষেত্রে বিশেষে তাদের ধার্মিক রূপ ধারণের তুলনা এই বিশ্বে দ্বিতীয়টি আর পাওয়া যাবে না। ইসলামের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক গণতান্ত্রিক কুফুরি মতাদর্শের মূলগত গড়ল জনগণের দৃষ্টির আড়ালে ঠেলে দিতে একে ‘ইসলামিক শূরা’ ব্যবস্থার নতুন রূপ বলে গণতন্ত্রের মতো সম্পূর্ণ হারাম একটি আদর্শের উপর ইসলামের কিছু বিষয়ের প্রলেপ দিয়ে ক্ষমতার হালুয়া-রুটি পাওয়ার পথ নির্বিঘ্ণ করতে দুর্ণীতিবাজ শাসকদের সে যে কি প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চলতে থাকে নির্বাচনের আগে ও পরে তা আমাদের দেশের এবং সারা বিশ্বের সকল সচেতন মানুষই আমার চাইতে ভালো জানেন।
তবে এর চাইতে সামান্য এগিয়ে যারা ইসলাম সম্পর্কে নূন্যতম পড়াশোনা করেন এবং ইসলাম নিয়ে ভাবেন, নিজের বিবেক ও বিচার বুদ্ধিকে ন্যায়ানুগভাবে কাজে লাগানোর মতো নূন্যতম সামর্থ্য মহান আল্লাহ যাদেরকে দান করেছেন তারা খুব সামান্য সময়ের ব্যবধানেই এক সময়ে ইসলামকে সমাজ ও রাষ্ট্রে সর্বোচ্চে তুলে ধরা, ইসলামিক বিষয়াবলী নিজেদের ব্যক্তি ও পরিবারের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রেও চালু করার ব্যাপারে সীমাহীন সিরিয়াস ও আগ্রহী হয়ে উঠেন। একটি পর্যায়ে তাদের এই বোধ-উপলব্ধি তাদেরকে প্রতিটি মুসলিমের জন্য একটি আদর্শিক ইসলামিক খিলাফত রাষ্ট্রের গুরুত্বের বিষয়টির আবশ্যকতা স্মরণ করিয়ে দেয় তীব্রভাবে। ফলে তারা ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে কায়েম করার জন্য নিজেদেরকে সর্বাত্মকভাবে নিয়োগ করেন।
যারা সমাজ ও রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চান ও প্রতিষ্ঠিত করতে চান তারা বর্তমানে মূলগতভাবে দু’টি ধারায় কাজ করে চলেছেন।
এক: হচ্ছে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য স্বশস্ত্র পন্থাকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান।
দুই: এক্ষেত্রে স্বশস্ত্র পন্থার পরিবর্তে অন্য কোনো পদ্ধতিকে অগ্রাধিকার প্রদান করে সে অনুসারে কাজ করা।
যারা দ্বিতীয় পন্থায় আমাদের দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করে চলেছেন তাদের মধ্যে মূলগতভাবে আমি ৩টি ধারা পেয়েছি।
১. ব্যক্তিগত পর্যায়ে মুসলিমদেরকে পরিশুদ্ধ করে করে একটি পর্যায়ে যখন সকল মুসলিমগণ ইসলামিক হয়ে যাবেন তখন এমনিতেই ইসলামী রাষ্ট্র হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে তাবলীগী জামাআত, বিভিন্ন পীর সাহেব ও তাদের মুরীদদের কর্ম তৎপরতা এবং কওমী মাদরাসার সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকের চিন্তাধারাকেই আমার কাছে এমন মনে হয়েছে।
২. গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা।
৩. ইসলামিক রাষ্ট্রের জন্য ব্যক্তি গঠন, সাংগঠিন কাঠামো প্রস্তুতকরণ এবং সমাজের মধ্যকার প্রভাবশালীদের থেকে নুসরা বা সহযোগিতা নিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম কায়েম করা।
পরের পর্বে সমাপ্ত...
বিষয়: বিবিধ
১৫৪০ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লাইটহাউস ব্লগে কমেন্ট করতে পারছিনা কেন?
ইসলামিক রাষ্ট্রের জন্য ব্যক্তি গঠন, সাংগঠিন কাঠামো প্রস্তুতকরণ এবং সমাজের মধ্যকার প্রভাবশালীদের থেকে নুসরা বা সহযোগিতা নিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম কায়েম করা।
first need to close gongi-awamilig
আপনি কি আপনার প্রবন্ধে ইমাম মাহদী আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমন পেক্ষাপট এবং ইসলামী আন্দোলনে তাঁর কর্মপদ্ধতিক সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন? ইসলামী আন্দালন কর্মপদ্ধতি নির্ধারনে ইমাম মাহদী পর্ব কিন্তু খুবই গুরত্বের দাবি রাখে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন