‘বাগী’রা কখনো বিজয়ী হয় না

লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৩:২৮:৫০ দুপুর



(গত চারদিন আগের লেখা এটি। একটি দৈনিকে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখনও তারা প্রিন্ট না করায় ব্লগারদের জন্য দিয়ে দিলাম।)

নাম বা শ্লোগানের শব্দ ও অর্থের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, দল বা প্রতিষ্ঠানের একটি মিল থাকে। প্রত্যেকের নাম ও শ্লোগানের প্রভাবও নিজেদের মাঝে ও কর্মতৎপরতার মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয় প্রায়শই। নিজের ভেতরের আসল মানুষটি যার সাথে সামঞ্জস্যশীল ঠিক তেমনই কোনো নাম বা শ্লোগানের সাথে কাকতালীয়ভাবেই অনেক সময় আমরা নিজের অজান্তেই নিজেদেরকে পরিচিত করতে উদগ্রীব হয়ে উঠি। এর মাধ্যমে যখন নিজের খোলস খসে পরে তখন আঁৎকে উঠে পিছু হটার চেষ্টা করি। কিন্তু ততণে হয়ে যায় অনেক দেরি।

ইদানিং অনেকে আবার না জেনে বা না বুঝে নিজেদের সন্তানদের বা প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য এমন এমন নাম বাছাই করে থাকেন, যার হয়তো কোনো অর্থই নেই কিংবা এমন অর্থ আছে যা খুবই মন্দ ও নিকৃষ্ট। ব্যক্তি যদি সেই অর্থটি জানতেন তাহলে হয়তো কখনই এমন নাম রাখতেন না। ইসলাম ও কুরআন-হাদীসের প্রাথমিক জ্ঞান থেকেও দূরে থাকা আমাদের দেশের উচ্চশিতিদের মধ্যে এটি বর্তমানে খুব বেশি প্রত্য করা যায়। একটি উদাহরণ দেই। বছর খানেক আগে একজন বড় আলিমের সাথে আমি বরগুনা গিয়েছিলাম। সেখানে শহরে একটি বড় ব্যনার আমার চোখে পড়লো যাতে লেখা ছিলো... ছেলে মাহিনের অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত...

এ বিষয়টি সম্পর্কে স্থানীয়দেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানালেন সেখানকার খুবই ধনাঢ্য ও সম্ভ্রান্ত এক ব্যক্তির অতি আদরের ছেলের নাম মাহিন। যে কিছুদিন আগে তার সহপাঠীদের সাথে ক্রিকেট খেলার সময় সামান্য একটি বলের আঘাতে মৃত্যুবরণ করেছে। এজন্যই তার ছেলের নামে অন্যরা ব্যানার টানিয়ে শোক প্রকাশ করছেন।

ঘটনাটি খুবই দু:খজনক। শুনে কষ্ট পেয়েছিলা। স্কুলের একটি ছেলে এভাবে সামান্য তুচ্ছ একটি কারণে চলে যাওয়া খুবই বেদনার।

কিন্তু যে বিষয়টি আমাকে এর পর আশ্চর্য করেছিলো তা হলো ‘মাহিন’ নামটি। আমি জানি এই নাম আরো অনেকেই তার ছেলের জন্য রেখেছেন বা রাখেন। আমার খুবই জানতে ইচ্ছে হয়, যারা নিজেদের সন্তানদের জন্য এই নাম রাখেন তারা কি জানেন এই ‘মাহিন’ শব্দটির অর্থ কি?

হয়তো জানেন না। অর্থ জানলে আমি নিশ্চিত তারা নিজেদের আদরের সন্তানদের জন্য এমন নাম রাখতে পারতেন না। মাহিন শব্দের অর্থ হচ্ছে খুবই তুচ্ছ, নিকৃষ্ট, অপবিত্র, নাপাক -ইত্যাদি।

পবিত্র কুরআনে সূরা সাজদার ৮ নং আয়াতে এই মাহিন শব্দটি আছে। সেখানে মহান আল্লাহ বলেছেন, “তারপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন তুচ্ছ, নাপাক একফোটা পানির নির্যাস থেকে।”

এখন আরবী ভাষা সম্পর্কে ধারনা নেই বা কম এমন কেউ যদি কুরআন থেকে এই আয়াতটি দেখে সেখানে অবস্থিত ‘মাহিন’ শব্দ দেখে ব্যকুল হয়ে যান এবং এর অর্থ না দেখেই নিজের সন্তানকে এই নামে ডাকেন, এই নাম রাখেন তাহলে অবস্থাটি কি দাঁড়াবে?

কিছুদিন আগে বারিধারার একটি অফিস থেকে আসার সময় পার্শ্বের একটি বিল্ডিং এর সাইনবোর্ড দেখলাম তারা নাম দিয়েছে ‘ইনকারনা’। এটিও একটি আরবী শব্দ, যার অর্থ: আমরা অস্বীকার করলাম। আমার ধারণ এই কোম্পানীর কর্তাব্যক্তিরা হয়তো অমুসলিম হবেন অথবা মুসলিম কিন্তু নিজেদের কোটি টাকার প্রজেক্টের এই সুবিশাল বিল্ডিংটির তারা কি নাম দিয়েছেন তার অর্থ নিজেরাও একবার যাচাই করে দেখার সময় পান নি। খিলগাঁও এ একটি দোকানের নাম দেখেছিলাম ‘হায়েজ ইঞ্জিনিয়ারিং...

আর আগালাম না। এই হলো আমাদের অবস্থা। যে বিষয়ে লেখা শুরু করতে চাচ্ছিলাম এখন তা বলা যায়। তবে তার আগে একটি শব্দের প্রতি সচেতন পাঠকের একটু দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি।

باغى ‘বাগী’ একটি আরবী-ফার্স শব্দ। যার সহজ অর্থ: ফিৎনা সৃষ্টিকারী, দাঙ্গাবাজ, লুট-তরাজ ও অরাজকতা সৃষ্টিকারী। এটি ইসমে ফায়েল এর সিগা। এর মাসদার হচ্ছে بغاوت ‘বাগাওয়াত’ (দাঙ্গাবাজী)।

‘বাগাওয়াত’ ‘বাগাত’ বা ‘বাগী’ এই শব্দগুলো যখন ইসলামের কোনো বিষয়ের সাথে ব্যবহৃত হয় তখন এর অর্থ দাঁড়ায়- ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণকারী, ইসলামের তি করতে আপ্রাণ প্রচেষ্টায় লিপ্ত, ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী -ইত্যাদি।

পবিত্র কুরআনে সূরা হুজুরাত এর ৯ নং আয়াতে এই শব্দটি (بغت) ব্যবহৃত হয়েছে। এই সূরার ৯ থেকে ১৫ নং আয়াত আজ যখন আবারও পড়ছিলাম তখন মনে হচ্ছিলো এটি মনে হয় মহান আল্লাহ আমাদের বর্তমান ফিৎনা-ফাসাদের এই সময়ের জন্যই অবতীর্ণ করেছেন। এই লেখার শেষে আয়াতের অর্থ গুলো তুলে ধরা হবে ইনশাআল্লাহ।

ফিরে যাচ্ছি প্রথম আলোচনায়। দিন দিন আমাদের সমাজে এমন অনেক নামের প্রচলন দেখা যাচ্ছে যার অর্থগুলো খুবই ভয়ংকর। অনেকে জেনে বা না জেনে, বুঝে বা না বুঝে সেই মন্দ নামগুলোকেই গর্বের সাথে উচ্চারণ করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে সর্বাধিক প্রচলিত তেমনই একটি শব্দ হচ্ছে ‘বাগী’।

এই বাগী শব্দের আগে পরে একেকজন একেক শব্দ যোগ করে নিজেদের পরিচয়ের জানান দিচ্ছেন। কেউ হয়তো বসাচ্ছেন ‘কুতুব’ কেউ যোগ করছেন ‘দেওয়ান’ কেউ আবার ‘রাজা’। তবে গত ১০ দিনে এই বাগী শব্দটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে ‘শাহ’ শব্দের সাথেই। হ্যাঁ পাঠক, ঠিকই ধরেছেন আমি সাম্প্রতিক সময়ে ‘শাহবাগে’ চলমান আন্দোলন এবং তাতে অংশগ্রহণকারী ‘শাহবাগী’দের কথাই বলছি।

‘বাগী’ সে যেই হোক না কেন সে ‘বাগী’ই। যতণ পর্যন্ত না সে এই ‘বাগাওয়াত’ (দাঙ্গাবাজী) থেকে বের হতে পারবে ততণ পর্যন্ত তার মধ্যকার প্রকৃত মনুষ্যত্ব আপন আলোয় উজ্জ্বীবিত হতে পারবে না। কোনো মানুষ একই সাথে পূর্ণাঙ্গ মুসলিম হবে আবার ইসলামের ব্যাপারে ‘বাগী’ও হবে এটি অসম্ভব। হয়তো আপনি মুসলিম হবেন অথবা বাগী হবেন। কোনটি হবেন এটি আপনার সিদ্ধান্ত। তবে দুনিয়া ও আখেরাতের প্রকৃত সফলতা ও বিজয় অর্জন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই একনিষ্ঠ মুসলিম হতে হবে। বাগী হলে আপনি কখনই প্রকৃত সফল ও বিজয়ী হতে পারবেন না।

তবে হ্যাঁ, বাগী’রা সাময়িকভাবে কিছু পার্থিব উন্নতি সাধন করতে পারে। সাময়িক সময়ের জন্য বিশাল বিশাল শো-ডাউনও করে দেখাতে পারে। অনেক মানুষ জেনে বা না জেনে বাগী'দেরকে সমর্থনও করতে পারে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, প্রকৃতভাবে বাগীরাই বিজয়ী হবে। বরং দিবালোকের সূর্য মিথ্যা হতে পারে কিন্তু বাগী’রা যে পরাজিত হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। দেদ্বীপ্যমান সত্যের সাথে, ইসলামের পবিত্র আলোর সাথে বিদ্বেষপোষণকারী বাগাওয়াত’কারীরা যে কখনো সফলতার দেখা পাবে না তা তো বলাই বাহুল্য। কারণ বাগীরা যদি তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস আর মন্দ আক্রোশ বাস্তবায়নও করে নিতে সম হয় তাহলে তারা, খুনী, ডাকাত, লুটেরা আর অপরাধী হিসেবে চিরদিন নিন্দিত ও ধিকৃত হতে থাকবে। আর যদি দুনিয়াতেও ব্যর্থ ও পরাজিত হয় তবে তো আম ছালা উভয়টিই হারালো। একে আরবীতে বলে ‘খাসিরাদ দুনইয়া ওয়াল আখিরাহ।’

এটি একটি ঐতিহাসিক সত্য যে, অতীতে কোনো ‘বাগী’ই প্রকৃত সাফল্য ও বিজয় অর্জন করতে পারে নি। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও পারবে না।

প্রিয়নবী সা. এর সময়ে এবং তারপর থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত ইসলামী ইতিহাসে অনেকগুলো বাগাওয়াত বা ইসলামের সাথে বিদ্বেষপূর্ণ বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছিলো। প্রথম দিকে বাগীদের প্রাবল্য এবং আধিক্য বেশি হলেও শেষ পর্যন্ত প্রায় সব েেত্রই তারা পরাজিত হয়েছিলো।

স্বয়ং প্রিয়নবী সা. এর সাথে এমন গাদ্দারী করেছিলো একদল বাগী। ইতিহাস যাদেরকে আজো ‘উকল’ বা ‘উরাইনা’ নামক গোত্রের ‘বাগী’ বা ফিৎনা সৃষ্টিকারী, দাঙ্গাবাজ হিসেবে ধিক্কার দিয়ে থাকে।

এই দাঙ্গাবাজ গোত্রের কিছু লোক মদীনাতে এসে রাসূলের কাছে কালিমা পড়ে মুসলিম হবার ভাব ধরেছিলো। এরপর তারা প্রিয়নবী সা. কে বললো, আমরা কৃষক নই, আমরা দুগ্ধপান করে বেঁচে থাকি। তারা মদীনার আবহওয়া নিজেদের অনুকূল মনে করলো না। তাই রাসূলুল্লাহ সা. একজন রাখালসহ বাইতুল মালের কতগুলো উট নিয়ে মদীনার বাইরে যেতে এবং সেগুলোর দুধ ও মুত্র পান নির্দেশ দিলেন। তারা যাত্রা করে হাররা নামক স্থানে গিয়ে ইসলাম ত্যাগ করার ঘোষণা দিলো এবং মুরতাদ হয়ে গেলো। এরপর তারা রাসূলুল্লাহ সা. এর দেয়া রাখালকে হত্যা করে উটগুলো ছিনতাই করে নিয়ে পলায়ন করলো।

মহানবী সা. এর কাছে এই খবর পৌঁছলে তিনি সাথে সাথে তাদের পিছু ধাওয়া করার জন্য সাহাবীদেরকে নির্দেশ দিলেন। তাদেরকে ধরে আনা হলে কঠিনতমভাবে তাদেরকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিলো। (বিস্তারিত সহীহ বুখারী, যুদ্ধ-বিগ্রহ অধ্যায়, হাদীস নং ৪১৯২)

রাসূলের ইন্তেকালের পর সাহাবায়ে কিরামের সময়ে ইসলামী ইতিহাসে মুসায়লামাতুল কাযযাব, আসওয়াদ আনাসী, ফিৎনায়ে ইরতিদাদসহ অসংখ্য বাগাওয়াত, দাঙ্গাবাজির ঘটনা ঘটেছিলো। কিন্তু রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলামিক খিলাফত চালু থাকায় তখন আর ‘বাগী’রা তেমন সুবিধা করতে পারেনি। শিতি ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা অন্যান্য জাগতিক বিষয়ের পাশাপাশি কুরআন এবং হাদীসের ব্যাপারেও সম্যক অবগত থাকার কারণে সহজেই তাদেরকে চিহ্ণিত করতে পেরেছিলেন। উদ্ভবের সাথে সাথেই তাদেরকে শনাক্ত করতে পেরেছিলেন। ফলে বিচণ জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন প্রথমেই। ফলে অল্পতেই তারা বিপর্যস্ত হয়েছিলো,

মর্মান্তিকভাবে পরাজিত হয়েছিলো। ফিৎনা-ফাসাদ ও অন্যায়ের েেত্র রাষ্ট্রের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, সমাজের গণ্য-মান্য ব্যক্তিবর্গ এবং রাষ্ট্রের প থেকে সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তারা ধিকৃত ও লাঞ্ছিতভাবে ইতিহাসের আস্তাকূড়ে নিপ্তি হয়েছিলো।

ক্রুসেড যুদ্ধের ইতিহাস থেকে আমরা বাগী'দের পরাজয়ের আরেকটি ঐতিাসিক উদাহরণ পেতে পারি। ক্রুসেডাররা মুসলিমদের থেকে তাদের প্রথম কিবলা, পবিত্র ভূমি বায়তুল মুকাদ্দাসকে দখল করে সেখানে এমন নির্বিচার গণহত্যা চালায় যে পুরো ফিলিস্তিন জুড়ে শুধু মুসলিমদের লাশ আর লাশের স্তুপ জমে যায়। পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ আকার নিয়েছিলো যে, নিরীহ আপামর জনতার জমাট বাঁধা রক্তের ক্রুসেডারদের ঘোড়া গুলোও চলতে পারছিলো না। ধর্ষণ, লুটপাটের তো কথাই নেই।

১১৬৯ খৃষ্টাব্দের এমনই এক সঙ্গীন মূহুর্তে ফিলিস্তিনের মজলুম মানবতাকে মুক্ত করার জন্য, স্বাধীনতা সংগ্রাম ঘোষণা করে দিগি¦জয়ী মুসলিম সেনাপতি সালাহ উদ্দীন আইয়ূবী রহ.। আগ্রাসী ক্রুসেডার ও বাগীদের বিরুদ্ধে তিনি আপোষহীন যুদ্ধের ঘোষণা দেন। শুরু হয় এক কঠিন সংগ্রাম। একদিকে সহায়-সম্বলহীন একজন সেনাপতি, অপরদিকে পুরো ইউরোপের ইহুদী ও খৃষ্টান। এমনকি মুসলিমদের মধ্যকার অনেকে সালাহ উদ্দীন আইয়ূবী’র সামনে খৃষ্টানদের চাইতেও বেশি বাঁধা ও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে থাকেন। নাম সর্বস্ব মুসলিম আমীর-উমারা আর দুর্নীতিবাজ শাসকরা নিজেদের সামান্য স্বার্থেরহানী ঘটনার শংকায় প্রবল আপত্তি ও বিরোধীতা শুরু করেন।

ঘরে বাইরের এমন হাজারো বিরোধীতার মাঝেও সালাহ্ উদ্দিন আইউবী নিজ অভিষ্ট ল্েয এগিয়ে যাচ্ছিলেন তীঁর তীব্র গতিতে। শুরু হলো ক্রুসেডাররে সাথে যুদ্ধ। তুমুল যুদ্ধ। এই খবর যখন ক্রুসেডাররা শুনলো তখন তারা বিষয়টিকে খুব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করলো। কারণ তারা জানতো যে এই যুদ্ধের নেতৃত্ব কে দিচ্ছে।

এদিকে মুসলমানদের মধ্যকার কিছু আলিম-উলামা ও নেতৃস্থানীয় লোকেরা আরম্ভ করলো দু:খজনক বিরোধীতা। তারা সালাহ উদ্দীনকে অতি উৎসাহী বলে তাঁর কঠোর সমালোচনা শুরু করলো। রোম সম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকে তারা ‘পাগলামো’ বলে সালাহ উদ্দীন আইউবী রহ. কে তিরস্কার করতে লাগলো। তারা বলতে লাগলো যে, রোম এতো বড় এক বিশাল সম্রাজ্য, যাকে বলা যায় কূল-কিনারাহীন সমূদ্র। তারা রোম সম্রাজ্য ও ইউরোপকে এতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলো যে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথা তারা চিন্তাই করতে পারছিলো না। তারা চিন্তা করছিলো যে, গোটা ইউরোপ তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ, আর অন্য দিকে মুসলিমরা হলো শতধাবিভক্ত। অতএব এমন একটি বিভক্ত জাতি নিয়ে বিশাল সামরিক শক্তিধর ঐক্যবদ্ধ ইউরোপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাওয়ার অর্থ হলো মুসলমানদেরকে চরম বিপদের মধ্যে ফেলে দেয়া।

কিন্তু সালাহ উদ্দীন আইউবী রহ. একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র উপর তায়াক্কুল করে এগিয়ে চললেন। তিনি ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং তাদের থেকে মুসলমানদের ভূখন্ড পুনরুদ্ধার করার অভিযান আরম্ভ করেন। এই অবস্থা দেখে পোপ গোটা ইউরোপকে আর একটি নতুন ক্রুসেডের জন্য সংগঠিত করতে আরম্ভ করে, যেটা ৪র্থ ক্রুসেড এবং এটা ছিলো সর্ব বৃহৎ ক্রুসেড। কারণ এটি ছিলো সালাহ উদ্দীন আইউবী রহ. এর পুরো ইউরোপের সম্মিলিত যুদ্ধ ঘোষণা।

মুসলিমদের সামরিক নেতৃত্বে এবার সালাহ উদ্দীন রহ. কে দেখে এই যুদ্ধকে খৃষ্টানরা সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিলো এবং তারা তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করলো। এই যুদ্ধে আগ্রাসী বাগী’রা কোনো জেনারেলদের উপর দায়িত্ব না দিয়ে স্বয়ং তাদের শাসক রাজা-বাদশারা নিজেরা যুদ্ধের ময়দানে এসে সরাসরি নেতৃত্ব দেয়া শুরু করেছিলো। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানির রাজা নিজেরা সালাহ উদ্দীন আইউবী রহ. এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য বেড়িয়ে পড়েছে এবং তারা নিজ নিজ সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছে। ইংল্যান্ড, জার্মানী ও ফ্রান্স যখন একই সাথে মুসলিমদের বিরুদ্ধে এতো সৈন্য প্রেরণ করে যে তখন তাদের সেনাবাহিনীর আকার এতো বিশাল হয়ে দাঁড়ায় যা তৎকালীন সময়ের প্রোপটে অস্বাভাবিক ধরণের এক বিশাল সেনাবাহিনী হিসেবে আবির্ভুত হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায় শুধু জার্মান কিং ফ্রেডরিক বার্বারোজ একাই তিন ল সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী নিয়ে যুদ্ধযাত্রা করে। তৎকালীন সময়ের প্রোপটে তিন ল সৈনের কোনো বাহিনীর কথা শুনলে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে এমনিতেই যে কোনো মানুষ মূর্ছা যাওয়ার কথা। সম্মিলিত ইউরোপিয়ান বাহিনী এতো বিশাল আকার ধারণ করে যে, তাদের নৌ-বাহিনীর জাহাজ এবং ইউরোপিয়ান বাণিজ্যিক জাহাজগুলো দিয়েও তাদেরকে বহন করে আনা সম্ভব হচ্ছিলো না। তাই ফ্রান্স আর ইংল্যান্ডের সৈন্যরা নৌ-জাহাজে যাত্রা করলেও জার্মান বাহিনীকে স্থল পথে যাত্রা করতে হয়।

একদিকে ইউরোপের বিশাল বাহিনী মুসলিমদেরকে সমূলে উৎখাত করার জন্য ধেয়ে আসছিল, আর অন্য দিকে মুসলিমদের মধ্যে চলছিলো ফতোয়াবাজি আর অনৈক্যের প্রচন্ড ঝড়। সবশেষে মুসলমানদের একদল বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে পালিয়ে গেলো আর স্বল্প সংখ্যক হলেও একদল আল্লাহর পথে যুদ্ধের জন্য অটল অবিচলভাবে সামনে এগিয়ে গেলো। ঠিক যেমনিভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বনী ইসরাইলদেরকে সমূদ্রের সামনে এনে পরীা করেছিলেন। এটা ছিলো মুমিনদের জন্য একটি পরীা। আল্লাহ তা‘আলা সব সময়ই মুমিনদেরকে এভাবে পরীা করে থাকেন। তিনি কোনো মুমিনের ধ্বংস চান না, তিনি শুধু পরীার মাধ্যমে সত্যিকার ঈমানদাদেরকে বাছাই করে মুনাফিকদের থেকে আলাদা করে নেন।

সালাহ্ উদ্দীন আইউবীর সময়ও এই একই ঘটনা ঘটলো। এটা ছিলো ঈমানের পরীা। পরীার মাধ্যমে ঈমানদার আর ঈমানের ভূয়া দাবীদারদেরকে আল্লাহ তা‘আলা যখন আলাদা করে নিলেন তখন আল্লাহ তা‘আলা নিজ কুদরতেই মুসলিমদেরকে বিজয় দান করলেন। ফ্রেডরিক বার্বারোজ যে তিন ল সৈন্য নিয়ে রওয়ানা দিয়েছিলো তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা কিভাবে শায়েস্তা করলেন, আসুন আমরা দেখে নিই।

তাদেরকে পথিমধ্যে এমন একটি নদী পার হতে হলো, যে নদীতে বরফ গলা পানি প্রবাহিত হচ্ছিলো যার কারণে পানি ছিলো প্রচন্ড ঠান্ডা। একদিকে প্রচন্ড গরম আবহাওয়া, অপর দিকে প্রচন্ড ঠান্ডা পানি। সব মিলিয়ে ক্রুসেডার সেনাবাহিনী এক মহা বিপর্যয়কর অবস্থায় পড়লো। আর তাদের সেনাপতি ফ্রেডরিক বার্বারোজ ছিলো সত্তোরোর্ধ বয়সের বৃদ্ধ। লৌহবর্ম দিয়ে তার শরীরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত আবৃত ছিলো। ফ্রেডরিক বার্বারোজ ঘোড়ায় চড়ে অল্প পানির একটি খাল পার হচ্ছিল আর হঠাৎ কেন যেন তার ঘোড়াটি অস্বাভাবিক কিছু একটা দেখে ভয় পেয়ে লাফানো শুরু করলো। ফলে ফ্রেডরিক বার্বারোজা ঘোরা থেকে ছিটকে পানির মধ্যে পড়ে গিয়ে হার্ট এ্যাটাক করে সেখানেই মারা গেলো।

ইমাম ইবনে আসীর রহ. তার মৃত্যুর ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, জার্মান কিং ফ্রেডরিক সামান্য হাটু পানিতে ডুবে মারা গেলো। অথচ ফ্রেডরিক বার্বারোজ ছিলো এমন একটি নাম যা শুনলে গোটা দুনিয়ার মানুষের হৃদয়ে কম্পন শুরু হয়ে যেতো। যে ছিলো ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী বীর যোদ্ধা ও প্রতাপশালী শাসক, আল্লাহ তাকে সামান্য হাটু পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করলেন।

জার্মান কিং এর মৃত্যুর পর ক্রুসেডারদের মধ্যে অনৈক্য ছড়িয়ে পড়লো। এছাড়া দীর্ঘ যাত্রা ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তাদের মধ্যে বিভিন্ন রকম রোগ-ব্যধিও ছড়িয়ে পড়লো। এভাবে তারা যখন শাম দেশে গিয়ে পৌঁছলো তখন তাদের অবস্থা ছিলো এমন যেন, তাদেরকে মাত্র কবর থেকে টেনে বের করা হয়েছে। শুধু তাই নয় পথিমধ্যে মৃত্যুবরণ আর পলায়ন করতে করতে শেষ পর্যন্ত যখন এই তিন ল সেনাবাহিনীর বহর ‘আল বাক্কা’ গিয়ে পৌঁছেছিলো, তখন তাদের সংখ্যা অবিশ্বাস্যভাবে তিন লাখ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছিলো মাত্র এক হাজারে। তিন ল থেকে মাত্র এক হাজার সৈন্য শেষ পর্যন্ত এসে পৌঁছলো সালাহ উদ্দীন আইউবী রহ. এর মোকাবেলা করার জন্য।

এই ফ্রেডরিক বার্বারোজা সালাহ উদ্দীনকে অহংকার ও দম্ভের সাথে চিঠি লিখে হুমকি দিয়েছিলো যে, সালাহ উদ্দীন যদি বারো মাসের মধ্যে এই অঞ্চল থেকে তার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার না করে, তাহলে তাকে দেখে নেবে, এই করবে সেই করবে...। কিন্তু আল্লাহ চাইলেন অহংকারী বার্বারোজকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করতে। আর তিনি তা একবারে সহজভাবেই করে ছাড়লেন। বার্বারোজ শপথ করেছিলো যে সে ফিলিস্তিনের পবিত্র মাটিতে পা রাখবেই, কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাকে তার শপথ পূরণ করতে দিলেন না। ফিলিস্তিনে আসার আগেই যখন সে মারা গেল, তখন পিতার প্রতিজ্ঞা রার্থে তার পুত্র মৃতদেহটি পানিতে সিদ্ধ করে ভিনেগার মিশিয়ে একটি ড্রামে সংরণ করল। কিন্তু মৃতদেহটি পঁচে গলে ড্রামটি ফেটে বের হয়ে গেলো। আর তার পুত্র অবশেষে বাধ্য হলো তাকে পথিমধ্যে এক জায়গায় মাটি খুড়ে পুঁতে রাখতে। সে তার সামান্য শপথটুকুও পূরণ করতে পারলো না।

কিন্তু আজকের বাস্তবতা একটু ভিন্ন। আজ যারা বাগী তারা তাদের বাগাওয়াতের কাজে আজ অনেককেই সহযোগি হিসেবে পাচ্ছে। জনগণের অধিকাংশই তাদের ব্যাপারে সম্যকভাবে অবগত না থাকা এবং ইসলামের প্রাথমিক মৌলিক বিষয় গুলোর উপরও তাদের পর্যাপ্ত নলেজ না থাকার কারণে খুব সহজেই তারা তাদের চটকদার শ্লোগান ও শ্র“তিমধুর নাম দিয়ে সহজ-সরল আপামর জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করতে সম হচ্ছে।

রাষ্ট্রের অন্যতম অতন্দ্র প্রহরী, জাতির বিবেক সাংবাদিক সমাজ, ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার প্রায় পুরোটাই আজ এক অদৃশ্য কলকাঠির ইশারায় বাগীদেরকে সর্বাত্মক সমর্থন দিচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই সম্ভবত প্রথম ঘটনা যেখানে লাগাতার ৯ দিন পর্যন্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সম্পূর্ণ পাশ কাটিকে এমন একটি বিষয়কে ধারাবাহিকভাবে লিড নিউজ করে প্রচার করা হচ্ছে -যার আসলে মৌলিক কোনো ভিত্তিই নেই। যার প্রায় পুরোটাই আবেগের উপর নির্ভরশীল। বিবেকের সাড়া এখানে খুবই গৌন। অনেকেই এ বিষয়ে নিজের বিবেককে ইচ্ছাকৃতভাবে ঘুম পারিয়ে রাখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। এ বিষয়ের যৌক্তিকতা ও বাস্তবতা তুলে ধরতে গেলেই সাথে সাথে তোতা পাখির মতো শ্লোগান আসবে ‘তুই রাজাকার।

আমাদের দেশে বর্তমানে অনেকগুলো দল বা সংগঠন ইসলামের নামে বা ইসলামের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কোনো সংগঠনের সাথে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনোভাবেই আমি সরাসরি সম্পৃক্ত নই। তবে যারাই ইসলামের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করতে চায়, সত্যের জন্য এগিয়ে যেতে চায় তাদের সকলের প্রতিই আমি সমানভাবে আন্তরিক ভালোবাসা পোষণ করি। তাদের জন্য দু’আ করি। কোন ব্যক্তি বা দল যদি ভুল সিদ্ধান্ত নেয় বা অন্যায় করে তাহলে বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকেই আমি আমার সাধ্য ও সামর্থ্যরে আলোকে সত্য ও সঠিক বাস্তবতাটি তাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করি। আমার অভিব্যক্তি তাদের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে আল্লাহর দরবারে আর্জি জানাই, যেনো তিনি তাদেরকে সুমতি দান করেন। তবে নিজের নানাবিধ অমতার কারণে তাদের সাথে সম্পৃক্ত হতে না পারার কারণে মাঝে মাঝে অনুতপ্তও হই।

১৯৭১ এ বাংলাদেশে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছিলো তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা সীমাহীন অপরাধ। যারা তৎকালীন হানাদার বাহিনীর এই বর্বরতায় সহযোগিতা করেছিলো তারাও সমভাবেই অপরাধী। তাই বাস্তবিক যুক্তি-প্রমাণের আলোকে, নিরপে ও স্বচ্ছ বিচারের মাধ্যমে এই অপরাধের সাথে সম্পৃক্তদেরকে বিচার করা হোক এটা এদেশের সকল নাগরিকদের একটি স্বাভাবিক কামনা ছিলো। এতোদিন পরে এ ব্যাপারে একটি বিচার আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে। এটি একটি সুখবর ছিলো। আশান্বিত জনতা ভেবেছিলো এবার হয়তো তারা প্রকৃত অপরাধীদেরকে আসামী হিসেবে শনাক্ত করতে পারবেন। তাদের বিচার প্রত্য করবেন এবং প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হবে। কিন্তু এরপর কি হয়েছে তা সচেতন পাঠক আমার চাইতে বেশি জানেন।

আদালত এ পর্যন্ত দু’টি রায় দিয়েছেন। তার মধ্যে একটি ছিলো ফাসির রায় অপরটি যাবজ্জীবন কারাদন্ড। দু’টি রায়ের প্রথমটির পর অনেকেই খুব উৎফুল্ল হলেও পরের রায়টিতে তাদের অনেকেই সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। ফলে এক পর্যায়ে শুরু হয় শাহবাগের এই জমায়েত। এই জমায়েত ও বিশাল অবস্থান কর্মসূচীর প্রথমদিকেও অনেকে একে পজেটিভ ও ভালো বলে গ্রহণ করলেও এর আয়োজকদের আভ্যন্তরীণ অবস্থা ও আসল চেহারা ধীরে ধীরে প্রকাশ হতে থাকে। এক পর্যায়ে মানুষ দেখতে পায় যে এখানে আসলে যুদ্ধাপরাধের নাম করে ইসলামের বিরুদ্ধে এক নতুন বাগাওয়াতের সূচনা করা হয়েছে।

৭১ সালে রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধীদের ৫%ও যেখানে আলেম ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব ছিলেন না, সেখানে তারা আলেম-উলামা ও দাঁড়ি-টুপিওয়ালা ইসলামপ্রিয় ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদেরকেই একমাত্র রাজাকার বলে প্রচার শুরু করে। বিদ্বেষ ছড়ানো শুরু হয় ইসলামী নিদর্শনাবলীর ব্যাপারেও। এক পর্যায়ে দাঁড়ি-টুপি ও লম্বা জামা-জোব্বাই হয়ে উঠে তাদের আক্রমণের প্রথম এবং প্রধান ল্য। কিছুদিন আগে কুকুরের মাথায়ও তারা টুপী পড়ানো এবং তাদের মুখে দাঁড়ি লাগানোর মতো চরমতম ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছে। বাগীদের এই আন্দোলনের কারণেই কিছুদিন আগে বিভিন্ন স্থানে কিছু উশৃংখল পাপাচারী নিজ পিতার বয়সী বৃদ্ধ মুসল্লিদেরকে দাঁড়ি ধরে অপমান ও লাঞ্ছনা করতেও তারা দ্বিধান্বিত হয় নি। আর এই বাগী আন্দোলনের মূল হোতারা যে আসলেই ইসলামের উপর কতটা প্তি, ক্রুদ্ধ, বিদ্বেষপূর্ণ তার খানিকটা ছাপ তারা অনলাইনে অনেক আগেই রেখে দিয়েছে। বিভিন্ন ব্লগ এবং ওয়েবে তাদের এই অপকর্ম গুলোর বেশ কিছু বর্তমানে তারা মুছে ফেললেও তার রেকর্ড সচেতন মহলের কাছে যথাযথভাবে সংরতি রয়েছে। রামপন্থী এবং বামপন্থী এই সকল নাস্তিক-কুলাঙ্গার গুলো ইসলাম, কুরআন, প্রিয়নবী সা., তাঁর পবিত্র সহধর্মিনীগণ এমনকি পশুত্বের সর্বনিন্ম স্তরে নেমে গিয়ে স্বয়ং মহান আল্লাহকেও তারা যে কত কদর্য ভাষায় গালি-গালাজ করেছে এবং করছে তার সামান্য এক ঝলক যদি আজকের আত্মপরিচয়হীন হুজুগে নব্য ‘শাহবাগী’রা দেখতেন তাহলে চেতনার মঞ্চে তারা ফুল নয় জুতা নিপে করতেন।

মুসলিম উম্মাহর যুব-তরুণদেরকে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, উন্মাতাল নাচ-গান, আর নানাবিধ দৃশ্যমান ও অদৃশ্য মাদকের আড়ালে মনুষ্যত্বহীনতার কোন অন্ধ গহ্বরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তা ভাবতেই নুন্যতম বিবেচনা বোধ সম্পন্ন একজন সাধারণ নাগরিকও শিউরে উঠেন ভীষণভাবে।

কতিপয় দাঙ্গাবাজ, বাগী আর দুস্কৃতিকারীদের হাত থেকে এই উম্মাহর তরুণ-যুবকদেরকে রা করার জন্য যাদের এগিয়ে আসা উচিত ছিলো কি এক অদৃশ্য কারণে যেনো তারা সকলেই মুখে কুলুপ এঁটেছে। শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয় বরং জাতির বিবেক খ্যাত সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রায় সবগুলোই এই কর্মযজ্ঞের কুন্ডলীতে ইন্ধন যোগাচ্ছেন।

তবে একেবারে ব্যতিক্রম যে নেই তা কিন্তু নয়। গতানুগতিকভাবে হঠাৎ ধেয়ে আসা প্রবল স্রোতের মোকাবেলায় সর্বপ্রথম জাতিকে সতর্ক করার জন্য এক ‘অবরুদ্ধ সম্পাদক’ রুখে দাঁড়ান। নিজের সীমিত সাধ্য ও সামর্থ্যরে আলোকে তিনি পুরো জাতিকে ‘হাশিশ খাওয়ানো’র মতো এই মহা অন্যায়ের প্রতিবাদ জানান। বাস্তব সত্য জাতির সামনে তুলে ধরেন। তার সঠিক সময়ের সাহসী উচ্চারণ আরো দু’ একটি সংবাদপত্র ও তার সাংবাদিকদেরও নাড়া দিতে সম হয়েছে। ফলে একটি সামান্য ও ুদ্র অংশও আজ সত্যের পে উঠে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু এজন্য দৈনিক আমারদেশ পত্রিকার সংগ্রামী সম্পাদক জনাব মাহমুদুর রহমান এবং তার আমার পত্রিকাকে প্রতিনিয়ত যে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে তাও আজ জাতির সামনে পরিস্কার। প্রতিদিন একেক স্থানে পত্রিকা পোড়ানো, একটি পত্রিকার নিচ তলায় আগুন লাগানোর মতো ভয়ংকর দুঃসংবাদ হয়েছে নিত্য সাথী। কিন্তু এরপরও যারা সত্যের পে অটল থাকবে, শেষ পর্যন্ত যে তারাই বিজয়ী হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

সূরায়ে কমার এর ৪৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বাগীদের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, যদি মুমিনরা একনিষ্ঠ মুসলিম হিসেবে সামনে অগ্রসর হয় তাহলে অবশ্যই অবশ্যই সংঘবদ্ধ বাগী’রা খুব শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পিঠ দেখিয়ে পলায়ন করবে। আর মুমিনদের বিজয়ের জন্য সূরায়ে নূরের ৫৫ নং আয়াতে দু’টি শর্তারোপ করেছেন, একটি হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ ঈমান, দ্বিতীয়টি হচ্ছে বিচণতার সাথে দ্বীনের বিজয়ের জন্য কাজ করা।

আজকে যারা এই বাগী’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে মাত্র বিগত ১০ দিনেই তাদের অবস্থা সেই পরাজিত জার্মান বাহিনীর চাইতেও শোচনীয় অবস্থায় চলে গেছে। গতকাল এবং আজ সকালে যারা শাহবাগ ঘুরে এসেছেন এখানার আবেগী সরলমনা তরুণদের চেহারা দেখেছেন তারাই এর প্রকৃত বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারবেন। নৈতিক ও আদর্শিক নূন্যতম দৃঢ়তাও কিংবা দীর্ঘ মেয়াদী কোনো বাস্তবিক ল্য না থাকায় তাদের চেহারা এবং পুরো জমায়েতে আজ বিরাজ করছে এক সীমাহীন হতাশা। ইসলাম বিদ্বেষী আয়োজক এবং তরুণদের এই জাগরণকে ছিনতাইকারী পরাশক্তির নেতৃবৃন্দ নিজেরাই আভ্যন্তরীণ বিবাদে পর্যুদস্ত। নিজেরাই এখন একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন আখের গোছানোর ফন্দি-ফিকিরে। পুরো অবস্থান স্থল এখন মিনি ‘এফডিসি’তে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে মাঝ রাত পর্যন্ত আসর জমছে আবার সকালে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে তা হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে।

আরো অনেক গুলো বিষয় ছিলো কিন্তু লেখাটি বড় হয়ে যাচ্ছে। মহান আল্লাহ যদি তাওফীক দেন তাহলে ইনশাআল্লাহ সামনে কখনো লিখবো। শেষ করছি সূরায়ে হুজুরাতের দু’টি আয়াতের সরল অনুবাদ উদ্ধৃত করে। বর্তমান প্রোপটে অন্তত: ১০ বার এই সূরার ৯-১৫ আয়াত গুলো পড়া উচিত। তাহলে আমাদের করণীয় সম্পর্কে কিছু তথ্য এখান থেকে আমরা লাভ করতে পারবো। মহান আল্লাহ বলেন,

অর্থ: “আর যদি মুমিনদের দু’দল পরস্পরে (ঝগড়া-বিবাদ কিংবা) যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। ন্যায়ানুগভাবে ফায়সালা করে দাও। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর বাড়াবাড়ি করে, তাহলে তোমরা সেই বাগী’(দাঙ্গাবাজ)দের প্রতিরোধ করো, তাদের বিরুদ্ধ যুদ্ধ করো, যতণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে, ন্যায় বিচার মেনে নেয়। তারপর যদি (বাগী’রা) ফিরে আসে তাহলে তাদের মধ্যে ইনসাফের সাথে মীমাংসা কর এবং ন্যায়বিচার কর। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালবাসেন।

নিশ্চয়ই মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে।” (সূরা হুজুরাত, আয়াত ৯-১৫)

বিষয়: বিবিধ

৩১৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File