ইসলামিক মিডিয়া : সমস্যা ও সম্ভাবনা -২
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১০:৩৭:২২ সকাল
পূর্বের লেখা:
ইসলামিক মিডিয়া : সমস্যা ও সম্ভাবনা -১
http://www.onbangladesh.net/blog/blogdetail/detail/3264/umayerkhan/36420
পূর্ব প্রকাশের পর-
অন্যদের কথা না হয় পরেই বলি। নিজেদের সমস্যা গুলো নিয়েই আগে আলোচনা করি। নিজেদের বলতে আমি বোঝাতে চাচ্ছিলাম আমি যেখান থেকে আমার শিক্ষা জীবনের শুরু করেছিলাম এবং যেই পারিবারিক ও আনুসাঙ্গিক পরিবেশে আমি বেড়ে উঠেছি সেই কওমী আলেম-উলামা ও ইসলামিক অঙ্গনের কথা।
প্রতি বছর কোরবানীর মওসুম এলে দেশের বিভিন্ন স্থানে একটি কমন সমস্যা দেখা যায়। এ সময় আইন শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর অতি উৎসাহী একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা সারা বছর আমাদের দেশের বিভিন্ন আধুনিক শিক্ষাঙ্গনে যেখানে সারা বছর অস্ত্রের তুমুল ঝনঝনানি চলে সেখানে কোনো অস্ত্রের খোঁজ না পেলেও তারা বিভিন্ন মাদ্রাসা গুলোতে এ সময় ভয়ংকর সব কোরবানীর গরু যবেহ করার ছুড়ির স্তুপ আবিস্কার করতে সক্ষম হন!
আজ যখন হলুদ মিডিয়াগুলো কোরবানির আগে পরে বিভিন্ন কওমী মাদ্রাসায় যুগ যুগ ধরে বিদ্যমান কোরবানীর গরু যবেহ করার ছুড়ি উদ্ধারের আশ্চর্যজনক মহা সাফল্য আবিস্কার করে এবং তা কতিপয় লাল মিডিয়া বিশাল কাভারেজ দিয়ে 'মাদ্রাসায় কোরবানীর সন্ত্রাসী ছুড়ি পাওয়া গেছে' মর্মে প্রতিবেদনের পর প্রতিবেদন করতে থাকে তখন টনক নড়ে আমাদের মুরুব্বী বিভিন্ন মাদ্রাসার মুহতামিম সাহেবদের।
এবার তারা মিডিয়ার খোঁচা ও তার শয়তানী সম্পর্কে খানিকটা উপলব্ধি অর্জন করে ঘুম থেকে সদ্য জাগ্রত আতঙ্কিত গৃহস্তের মতো এলাকার সুদখোর, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ মেম্বার, চেয়ারম্যান কিংবা এমপিদের দ্বারস্থ হন। তাদেরকে এই নিরীহ ছুড়িগুলোর তাৎপর্য বর্ণনা করতে মাদ্রাসার প্যাডে বিশাল থেকে বিশাল বিবরণ বিবৃত করে থানা থেকে কোরবানীর ছুড়ি গুলো ছাড়িয়ে আনার আবেদন পত্র জমা দিতে থাকেন।
কখনো কোনো মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যাল বা সংশ্লিষ্ট কোনো আলিমের বিরুদ্ধে যখন দালাল লাল মিডিয়া উঠে পরে লাগে, একের পর এক বানানো বিভিন্ন রিপোর্ট তৈরী করে তাকে ব্ল্যাকমেইল করা ও ফাঁদে ফেলার ফন্দি আঁটে তখন কিছু বুযুর্গ ও আমীরুল উমারাদের সাময়িক মিডিয়া ভাবনার উদয় হয়। তখন তারা এই অঙ্গনে কাজ করছে এমন সাবেক কওমী ছাত্র ও ইসলামিক সাংবাদিকদের খুবই সাদরে নিজেদের মাদ্রাসায়, দফতরে ডেকে নেন, আপ্যায়ন করান এবং উদ্ভুত এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য তাদের পক্ষে কিছু নিউজ, প্রতিবেদন পত্রিকা ও মিডিয়া গুলোতে প্রচারের জন্য অনুরোধ করতে থাকেন।
আফসোস! শত আফসোস!
আমাদের আকাবিরীনগণ যদি ভয়ংকর মিডিয়া সন্ত্রাস ও তার মোকাবেলা করার বিষয়টি নিজেদের ঘরে, একেবারে জামার আস্তিনে এসে আগুন লাগার আগে বুঝতে পারতেন!
দীন ও ইসলামের উপর মিডিয়াগুলোর শত আঘাত আর হামলা যাদের আয়েশি জীবন-যাপন ও সংক্ষিপ্ত চিন্তার জগতে সামান্য আলোড়ন তুলতে না পারলেও বিষয়টি যখন উম্মাহর স্বার্থ ও জাতীয় পর্যায় অতিক্রম করে একেবারে তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত ও পরিবারগত স্বার্থের হানি করতে শুরু করেছে কেবলমাত্র তখনই তাদের মাঝে এই চিন্তা কেবলমাত্র উঁকি দেয়া শুরু করেছে যে মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ যেমন নষ্ট করে দেয়া সম্ভব একইভাবে মিডিয়ার মাধ্যমে দীনী দাওয়াত ও ইসলামের খেদমতও অকল্পনীয় হতে পারে।
আফসোস!
আমাদের এই দেশের উলামায়ে কিরামগণ যদি শুরু থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের উলামায়ে কিরামের মতো নিজ নিজ ভাষা ও সাহিত্যের হাল ধরতেন।
যদি তারা মাদ্রাসার তা'লীম ও তা'আল্লুমের পাশাপাশি ছাত্রদেরকে পত্রিকা, মিডিয়া ইত্যাদির সুফল-কুফল এবং এর মাধ্যমে ইসলামের প্রচারের ব্যাপারে উৎসাহী করতেন।
নিজেদের মেধাবী শিক্ষার্থীদের একটি অংশের জন্য মিডিয়া অঙ্গনে কাজের উপযোগী কিছু ক্ষেত্র তৈরী করার বিষয়টি যদি এদেশের লক্ষ লক্ষ মাদ্রাসা-মকতব পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট সম্মানীত পরিচালক, অনুদানদাতারাও উপলব্ধি করতেন তাহলে আজ হয়তো এদেশের পরগাছা বাম ও নাস্তিকরা মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামের আজকের মতো এমন নগ্ন আক্রমণ করার সাহস পেতোনা।
কি ক্ষতি হতো যদি মুফতি আমিনী রহ. একটি দৈনিক পত্রিকা চালুর উদ্যোগ নিতেন?
কি অসুবিধা সামনে এসে দাঁড়াতো যদি শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. শত শত মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দু'একটি মিডিয়া তৈরী করে যেতেন? অন্তত: তাদের রাহমানিয়া মাদ্রাসার মাসিক রহমানী পয়গামকে দৈনিকে রূপান্তর করলেও কতো আর লস হতো?
কি সমস্যা ছিলো বা আছে বর্তমান মারকাজুল ইসলামীর সম্মানীত প্রধান মুফতি শহীদুল ইসলাম সাহেবের জন্য দুই তিনটি পত্রিকা চালু করার?
সিলেটের প্রিন্সিপ্যাল হাবিবুর রহমান সাহেবের জন্য অন্তত: একটি দৈনিক পত্রিকা চালু করা কি এখনও অনেক কঠিন?
যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার সম্মানিত প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা মাহমুদুল হাসান দা. বা. ইচ্ছা করলে কি অন্তত: ২-৩ টা দৈনিক করা যায় না?
বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি, সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান, ব্যবসায়ী, আমলাসহ তার হাজার হাজার কোটিপতি ভক্ত-মুহিব্বীনদের জন্য তার একটি নির্দেশই তো যথেষ্ট ছিলো -যদি তিনি নির্দেশ দিতেন।
কেনো গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার বর্তমান প্রিন্সিপ্যাল, আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. এর সুযোগ্য সন্তান মাওলানা মুফতী রুহুল আমীন সাহেবের নিজস্ব মাসিক পত্রিকাটি দৈনিক করার উদ্যোগটি কেনো থেমে গেলো?
বর্তমান শাসকগোষ্ঠির অত্যন্ত প্রিয়ভাজন আমাদের কওমী আলেমদের একাংশের অন্তরের প্রিয় আলেম, অপর অংশের অপ্রিয় মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব কি চাইলে গত ৫ বছরে তার মাসিক পাথেয় পত্রিকাটি দৈনিকে রূপান্তর করতে পারতেন না?
অনেক তদবির করে কেবলমাত্র কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় বছরে মাত্র দু'বার ঈদের জামাতের খতীব হওয়ার চাইতে একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক হওয়ার বিষয়টি কি খুবই কম হতো?
এ ধরণের আরো অসংখ্য জিজ্ঞাসার সম্ভাব্য একটিই উত্তর হতে পারে, আর তাহলো- তারা মিডিয়ার বাস্তবতা পেছন অতীতেও যেমন অনুধাবন করতে পারেন নি অথবা জাতীয় ও উম্মাহর এই স্পর্শকাতর স্থানে তাদের থাকার কথা তাদেরকে কেউ সুকৌশলে ভুলিয়ে দিয়েছে।
চলবে...
বিষয়: বিবিধ
১৩১২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ মাপ করুক কওমী আকাবীররা ফার্সী ভাষা ও উর্দু ভাষায় যতটা পারদর্শী বাংলা ভাষায় ততটাই অমনোযোগী । মাতৃভাষার চর্চাহীনতার কারনে উনারা বাংলার শিক্ষিত সমাজ হতে অনেকটাই পৃথক হয়ে আছেন । যার কারনে শিক্ষিত সমাজ উনাদের ব্যাপারে অনেকটাই অন্ধকারে থাকে আর এই সুযোগটাই নিছ্ছে নাস্তিক গোষ্ঠি।
আপনার এই পোষ্ট বহুল পঠিত হোক ও প্রচারীত হোক ।
1. 1st of all our alem society didn't realize the importance of media.
2. Some body realize but they want to publish himself some monthly magazine due to alem society divided into many parts.they have no manpower,they don't know the system of take license of media.
Although they not enough money to establish some daily news papers.For smooth money donation,they depend on some black money rich person who are not mentally want to help for media.
3.Many alem learders earlier depend of daily inqilab for their news.they also thinking that inqilab is enough for their support.But onnce they find out that inqilab turninto their policy.
So i donot see any positive future for islamic good media.
আরেকটি সমস্যা ভাই
সেটা হল কাওমী হাজারাত যাদের পয়সা দিয়ে চলেন তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করতে পারেন না।
যারা এই সব মাদ্রাসায় পয়সা দেয় তারাই আবার সেকুলার রাজনীতির ধারক বাহক। সমস্যাটা এই জায়গায়।
আশা করি আগামী পর্বে এই বিষয়টা আলোচানায় আসবে। ধন্যবাদ আপনাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন