দ্বিতীয় বিবাহ : কুসংস্কার ও মনস্তাত্বিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ১৯ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৬:২৪:৩১ সন্ধ্যা



ঘটনা: ১

হারিস ইবনে হাম্মাম সাহেবের স্ত্রী-সন্তানরা আজ খুবই খুশী। অনেক দিনের লেগে থাকা এবং অব্যাহত প্রচেষ্টার পর বিখ্যাত ব্যবসায়ী, অঢেল সম্পদের অধিকারী হারিস সাহেবকে অবশেষে নিজের কথায় রাজি করানো সম্ভব হয়েছে।

অনেক দিন না না করার পর অবশেষে তিনি গতকালকে সম্মতি দিয়েছেন। তাই হারিস সাহেব নিজে চিন্তিত ও পেরেশান হলেও আজ তার ঘরে যেনো আনন্দের শেষ নেই। তার বুদ্ধিমতি স্ত্রী এ উপলক্ষে ঘরে স্পেশাল খাবার ও মিষ্টির আয়োজন করেছেন আজ। বিকেলে সকল আত্মীয়-স্বজনদেরকেও দাওয়াত করিয়েছেন তাদেরও ভূরি ভোজন করাবেন বলে। বিষয়টি নিয়ে তাদের পরিচিত ও এলাকার ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীদের প্রায় সবাই আজ খুবই আনন্দিত। বিষয়টি হচ্ছে প্রথম স্ত্রীর বহু চাপাচাপি ও জোড়ালো তাকিদের পর হারিস সাহেব দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণে অবশেষে সম্মত হয়েছেন।

ঘটনা: ২

আব্দুল কাদির সাহেব গত কয়েকদিন যাবত মারাত্মক পেরেশান। বাসার চৌহদ্দি পেরিয়ে তার অফিসের কলিগ এমনকি পরিচিত প্রায় কারো কাছেই তিনি মুখ দেখাতে পারছেন না। এলাকার প্রতিবেশিরাও রাস্তায় দেখা হলে কেমন যেনো মুখ বাকিয়ে তাকাচ্ছেন তার দিকে। অনেকেই তার সম্পর্কে ফিস-ফাস করে কি যেনো বলছে অপরকে। কয়েক যুগ একই এলাকায় বংশ পরম্পরায় বেশ অবস্থা সম্পন্নভাবেই কাটিয়ে দিলেও গত কয়েকদিন যাবত যেনো তিনি ভিন গ্রহের আজব কোনো প্রাণী হিসেবে নাযিল হয়েছেন। ঘরে তো টেকাই দায় হয়ে গেছে। স্ত্রী তার আসার সংবাদ পেলেই সেরেছে! সেই যে শুরু হলো, আর থামার নাম নেই। মোটকথা আব্দুল কাদির সাহেবকে নিয়ে পরিবারের সকলে এখন এক ভীষণ সামাজিক সঙ্কটে আছেন। সোসাইটিতে নাকি মুখই দেখাতে পারছেন না কেউ। এমতাবস্থায় আব্দুল কাদির সাহেব যে কি করবেন তাই স্থির করতে পারছেন না। পরিবার, সমাজ ও লৌকিতায় অন্ধদের কাছে কি বিরাট পাপ যে তিনি করেছেন তার প্রায়শ্চিত্য তিনি কিভাবে করবেন সেটিই ভাবছেন এখন!

সমস্যা অবশ্য আগেও ছিলো। কিন্তু সেটি ছিলো তাদের ব্যক্তি ও পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তিনি বিগত কয়েক বছর যাবতই ভীষণ সমস্যায় পেরেশান ছিলেন। গাড়ি-বাড়ি কি নেই তার? স্থাবর অস্থাবর সহায়-সম্পত্তি মিলে তার যে অবস্থা তাতে একজন মানুষ রাজার হালে না হলেও উজীর হালে অনায়াসেই চলে যেতে পারেন কয়েক প্রজন্ম পর্যন্ত। কিন্তু তারপরও তার মনে সুখ নেই। পরিবারে শান্তি নেই।

বিয়ে করেছেন গত প্রায় এক যুগ আগে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি কোনো সন্তানের মুখ দেখতে পারেন নি। প্রথম দিকে ডাক্তারদের কাছে গেলে তারা বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলেই সামান্য দাওয়াই দিয়ে ফেরত পাঠাতেন। কিন্তু দেখতে দেখতে সময় গড়িয়ে গেলো অনেক দিন। দিন, মাসের ঘন্টা পেরিয়ে আজ যুগও অতিক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ফলাফল জিরো। অবশ্য গত কয়েক বছর আগেই তারা বিষয়টি সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে নিশ্চিত হতে পেরেছেন।

দেশে বিদেশে অনেক ডাক্তার আর বিভিন্ন ল্যাবে নিজেদের স্বামী-স্ত্রীর সম্ভাব্য প্রায় সকল টেষ্ট তারা করিয়েছেন। লাখ লাখ টাকা খরচ করে ফাইনালি তারা জানতে পেরেছেন যে নিজে সুস্থ্য-সবল হলেও স্ত্রীর শারীরিক অক্ষমতার জন্যই তারা কখনই সন্তানের মুখ দেখতে পারবেন না। সন্তান চাইলে আব্দুল কাদির সাহেবের সামনে দ্বিতীয় বিবাহের কোনো বিকল্প তাদের সামনে ছিলো না। কিন্তু তার স্ত্রীও একেবারে দুই পায়ে খাঁড়া। কোনো অবস্থাতেই তিনি নিজ স্বামীকে দ্বিতীয় বিবাহের অনুমতি দিবেন না। প্রয়োজনে তিনি বৈরাগী হবেন, ঘুমের বড়ি খাবেন বা আরো যা যা প্রয়োজন সবই করবেন কিন্তু সংসারে তিনি নিজ স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী সহ্য করবেন না কিছুতেই!

= প্রথম এবং দ্বিতীয় উভয় ঘটনার মধ্যে একটি ক্ষেত্রে ভীষণ মিল আর অপর ক্ষেত্রে সীমাহীন অমিল। মিল হচ্ছে উভয় পরিবারেই স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করবে বা করেছে। আর অমিল হলো প্রথম ক্ষেত্রে স্বামী নারাজ স্ত্রী তাকে বাধ্য করেছে রাজী হতে পক্ষান্তরে দ্বিতীয় ক্ষেত্রে স্ত্রী নারাজ অনুমতি দিতে কিন্তু স্বামী বেচারা না পেরে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শুনতে ঘটনা দুটি পুরোই কাল্পনিক মনে হতে পারে। বিশেষত: প্রথম ঘটনাটি। কিন্তু আসলে দুটিই বাস্তব ঘটনা। শুধু নামটি পরিবর্তিত করা হয়েছে। আর এই দুটি ঘটনার মধ্যকার সময়টিও একটি ব্যবধান দ্বারা বিভাজিত।

প্রথম ঘটনাটি আমাদের বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে যতোটা কাল্পনিক মনে হচ্ছে একসময় সেটি ততোধিক বাস্তব ছিলো। এখন যেমন দ্বিতীয় বিষয়টি।

আমাদের বর্তমান সময়ে দ্বিতীয় ঘটনা অর্থাৎ প্রথম স্ত্রীর বর্তমান থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণের বিষয়টি পরিবার, সমাজ খুব মন্দ চোখে দেখলেও শহুরে ধানাঢ্য ব্যক্তিদের একাধিক রক্ষিতা কিংবা প্রেমিকা থাকার বিষয়টি কিন্তু অল্টো অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক স্ট্যাটাস হিসেবে ধর্তব্য হয়।

অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তির স্ত্রীও জানেন তার স্বামী একাধিক পরনারীর সাথে সম্পর্ক যুক্ত। কিন্তু যতক্ষণ সে বিয়ে না করবে ততক্ষণ তার কোনো আপত্তি নেই। অনেকে নিজ স্বামীর সাথে বিভিন্ন ক্লাবে এমনকি নাইটক্লাবেও স্বাচ্ছন্দে ঘুরতে যান। অসভ্যতার চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করে অনেক অভিজাত (?) পরিবার বিভিন্ন পার্টি নিজ নিজ স্ত্রী বদল করে নাচেন, মাদক গ্রহণ করেন এমনকি পশ্চিমাদের চরম অসভ্য কালচার একে অপরের স্ত্রীর সাথে সময়ও কাটান -কিন্তু এসকল কিছুতেও কারো মান যায় না, মান সম্মানে টান লাগে যখন কারো স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে!

পক্ষান্তরে ব্যতিক্রমও আছে। গ্রামের রিকশা চালক কিংবা ভবঘুরে আতেলদের দেখা যায় একসাথে তিন বা চার বিয়ে করে বসে আছে। অনেকে নিজ স্ত্রীদেরকে দিয়ে গার্মেন্টস বা বিভিন্ন বাসায় কাজ করাই আর নিজে কেবল ঘুরে ফিরে খায়!

সব মিলিয়ে সংক্ষেপে বলা যায় আমাদের সমাজে দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে একটি চরম অস্থির, অরাজক অবস্থা বিরাজমান। অনেকে তো আবার আরো কয়েক কাঠি সরস হয়ে ইসলাম কেনো পুরুষকে একাধিক বিয়ের অনুমতি দিলো তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইসলামের উপরই আক্রমণ করে বসেন। কিন্তু ঢাকা ও দেশের সব অভিজাত শহরের অসংখ্য অগণিত হোটেল ও বিভিন্ন ক্লাব গুলোয় সামান্য অর্থের বিনিময়ে একজন পুরুষের একাধিক হারাম সঙ্গ ভোগ করাকে সাধুবাদ জানান! এ এক চরম দ্বৈত মুনাফিকি চরিত্র!

চলবে...

(আসলে এটি একটি দীর্ঘ আলোচনার বিষয়। বিবাহ ও ইসলাম, পুরুষের একাধিক বিবাহ ও নারী বিষয়ক অতীতে লেখা প্রায় ডজন খানেক পোষ্টে এ বিষয়ে প্রাথমিক কিছু তথ্য ছিলো এবং এ বিষয়ে বাকি কিছু তথ্য ও আলোচনা পরের পর্বে করার ইচ্ছা করছি। ধন্যবাদ।)

বিষয়: বিবিধ

২০৭৪ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

164452
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৭
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : সুন্দর পোষ্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
২১ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৮:৫১
119361
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : পড়া এবং মন্তব্য করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

ঘরের মানুষ আপনার মন্তব্য দেখে কিছু বললে কিন্তু আমার কোনো দোষ নাই It Wasn't Me! It Wasn't Me! ^#(
164458
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫২
ভিশু লিখেছেন : সহমত!
বক্তব্যগুলো অত্যন্ত বাস্তব!
ধন্যবাদ আপনাকে!
২১ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৮:৫১
119362
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ। Happy>- Happy>- Happy>-
164461
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৩
মোঃজুলফিকার আলী লিখেছেন : ধন্যবাদ খান ভাই। আসলে বর্তমান সমাজে অনেক অনৈতিক কাজকর্ম চলে কিন্তু আমরা ইসলামের আদর্শের দিকটি নিয়ে চিন্তা করিনা। ফলে আমাদের এ অবস্থা। লেখাটি অনেক সুন্দর। লেখার জন্য ধন্যবাদ।
২১ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৮:৫২
119363
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : আফসোস!

যদি আমরা চিন্তা করতে পারতাম!
164488
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪১
রাইয়ান লিখেছেন : সুন্দর লেখা... ভালো লেগেছে ।
২১ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৮:৫২
119364
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : ধন্যবাদ। Good Luck Good Luck
164496
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:০৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : জরুরি ও যেীক্তিক পোষ্টটির জন্য ধন্যবাদ। দ্বিতিয় বিবাহ,বিধবা বিবাহ কিংবা বয়সে বড় কোন মেয়েকে বিয়ে করার ব্যাপারে আমাদের দেশে কিছু অদ্ভুত ধারনা আছে। অনেককেই আরবদেশগুলিতে একজনের একাধিক স্ত্রী প্রসঙ্গে সমালোচনা করেন কিন্তু তাদের সমাজ এবং পরিবেশ বুঝতে পারেননা। এই প্রসঙ্গে সৈয়দ মুজতাবা আলী একটি মজার ঘটনা লিখেছেন ইউরোপে ১৯২০-২৫ সালের দিকে অনেকে তাকে বেশ তাচ্ছিল্য করে প্রশ্ন করত যা আপনাদের দেশে বহু বিবাহ প্রথা কি সত্যি আছে। অন্যদের মত বিব্রত না হয়ে সৈয়দ সাহেব জবাব দিতেন মুসলিম হলে চারটি পর্যন্ত আর হিন্দু হলে তো কথাই নাই! দুই তিনশ পর্যন্ত। তারপর আস্তে করে বলতেন শতকরা পাঁচ শতাংশ মানুষ ও একাধিক বিয়ে করেনা এবং তারপর তিনি প্রশ্ন করতেন যে আইনত যদিও একের অধিক বিয়ে তারা কেউ করতে পারেননা কিন্তু শপথ করে বলতে যে স্ত্রী ছাড়া আর কোন নারির সাথে তার সম্পর্ক নাই?
উল্লেখ যোগ্য সে সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কোটি মানুষের মৃত্য হওয়ায় যাদের বেশিরভাগই ছিল পুরুষ ইউরোপে নারি পুরুষ অনুপাত অনেক বেড়ে গিয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই আইনত একাধিক স্ত্রী না থাকলেও অনেকেই স্ত্রীদের জ্ঞাতসারে অন্য নারিদের সাথে স্ত্রীর মতই সম্পর্ক রাখতেন। পরিস্থিতি এই ব্যবস্থার যেীক্তিকতা স্বীকার করতে বাধ্য করেছিল।
২১ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৮:৫৪
119365
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

তবে ভাইজান কিয়ে দিল্লির লাড্ডু খেয়েছেন কি না জানি না!

ভাগ্যিস এখনও হাফিজ সাহেব হয়তো এটি দেখেন নি!
২১ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:২০
119482
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভাইরে লাড্ডু নাই এখন তিতা শাক।
হাসান রাজা নাকি কিছুদিন পরপর বিয়ে করতেন কারন তিনি মনে করতেন বিয়ে করলে মানুষের মন ভাল থাকে।
164763
২০ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:১১
আলোকিত ভোর লিখেছেন : ভালো লাগলো Happy ধন্যবাদ Rose
২১ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৮:৫৪
119366
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ।
165161
২১ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৮:০৯
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : এই ব্লগে ভাইদের উৎসাহ এবং রিস্পন্স দেখে ভাবছি ভাবীদের খবর দেব কিনা Thinking Thinking Thinking
২১ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৮:৪০
119347
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : ভাইদের চাইতে বিষয়টি অনেক সময় কিন্তু ভাবীদেরও বেশি প্রয়োজন হয়ে পরেTongue Tongue

আগামী পর্বে এমন কিছু বিষয় আসছে কিন্তু...Happy>- Happy>-
172865
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:১১
আইমান হামিদ লিখেছেন : ভাই এখনো একটি জুটে নি :(
আপনি আছেন দ্বিতীয় টি নিয়ে।
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:৪৫
126806
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ ব্যবস্থা হয়ে যাবে, নো টেনশন। Happy>- Happy>-


শুধু নিয়ত করেন...Angel Angel

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File