পৃথিবীর সবচাইতে বড় অপরাধ প্রিয়নবীকে কটূক্তি ও অবমাননা (প্রেক্ষিত ৬ এপ্রিল নাস্তিক বিরোধী আন্দোলনের বর্ষপূর্তি)
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ০৬ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:৩৫:৫৩ দুপুর
ইসলাম সাম্য ও ন্যায়ের ধর্ম, জীবন ব্যবস্থা। ইসলামে দয়া, মায়া, ক্ষমা পরিমিত এবং পরিশীলিত। উপযুক্ত ক্ষেত্রে যথাযথ দয়া প্রদর্শন ও অসহায়কে সহায়তার ক্ষেত্রে ইসলামের যেমন তুলনা নেই, তেমনি অপাত্রে অনর্থক দাক্ষিণা করা কিংবা 'উলুবনে মুক্তো ছড়ানো'র বেকুব নীতিও ইসলাম প্রত্যাখ্যান করে। ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলিম এবং অমুসলিম, প্রত্যেকেরই নুন্যতম মানবিক ও প্রয়োজনীয় ন্যায়ানুগ অধিকার ও সম্মান নিশ্চিত করেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশের নাগরিক হিসেবে সামাজিক ও মানবিক অধিকার লাভের ক্ষেত্রে একজন মুসলিম এবং অমুসলিমের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সেক্যুলারিজমের ভ্রান্ত শ্লোগান 'ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার' হলেও ইসলামের শ্লোগান ভিন্ন। আর তা হচ্ছে, 'ধর্ম যার যার, কিন্তু রাষ্ট্র চলবে ইসলামী বিধান অনুসারে'। আর এটা যৌক্তিকভাবেও অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। কেননা, একমাত্র ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম মানুষের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিষয়াবলীর পূর্ণ সমাধান দিতে আজো সক্ষম হয় নি। গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র আবার ধর্ম থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে যে জীবন ব্যবস্থা দিয়েছে তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে সমস্যা বিদ্যমান। (এ বিষয়ে আমার 'সংস্কৃতি বিনোদন রাজনীতি বইয়ে বিস্তারিত আছে তাই এই লেখায় এ সম্পর্কে আর কথা বাড়াতে চাচ্ছি না।)
মূল কথা হচ্ছে একজন মানুষ চাই সে মুসলিম হোক আর অমুসলিম, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে অপরাধ করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে রাষ্ট্রীয় আইন-আদালত ও বিচারের সম্মুখীন হতে হবে না -এটাই ইসলামী রাষ্ট্রের মূলনীতি। আর ইসলামের দৃষ্টিতে সকল অপরাধের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুতর ও মারাত্মক অপরাধ হচ্ছে 'দীন ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করা, প্রিয়নবী সা. কে ব্যঙ্গ করা ও তার স্ত্রী'দের সম্পর্কে নোংরা কথা-বার্তার মাধ্যমে রাসূল সা. কে অবমাননার অপচেষ্টা করা।
এটি এমন ভয়াবহতম জঘন্য অপরাধ যে, ইসলামের দৃষ্টিতে এই অপরাধে যেই দোষী সাব্যস্ত হবে, চাই সে মুসলিম হোক আর অমুসলিম তার নূন্যতম শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদন্ড। এটা কুরআন এবং সুন্নাহর অসংখ্য দলীল-প্রমাণের দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত। তাই এক্ষেত্রে অহেতুক ইসলামের দয়া-মায়ার কথা বলে বিষয়টিকে হালকা করার বা অপরাধীদেরকে পার পাইয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। নূন্যতম ঈমান যার অন্তরে আছে যে কখনোই রাসূল সা. এর অবমাননা সহ্য করতে পারে না। এক্ষেত্রে পাশ্চাত্যে অবস্থান করে অনেক চমৎকার দীনী দাওয়াতের কাজ করে যাওয়া উস্তাদ নু'মান আলী খান' এর নরম বক্তব্যও গ্রহণযোগ্য নয়। -কেননা এই ব্যাপারে মুসলিমদের উত্তেজিত ও প্রতিশোধ পরায়ন হওয়ার আবশ্যকীয়তার উপর কুরআন ও সুন্নাহর অসংখ্য দলীল-প্রমাণ বিদ্যমান।
এই অপরাধে অভিযুক্ত নাস্তিকদের শাস্তি বিধানের ক্ষেত্রে তাদের 'মুরতাদ হওয়ার' বিষয়টি আনাও অপ্রয়োজনীয় বাতুলতা। সামান্য দূর্বলতার من بدل دينا فأقتلوه (যে দীন ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায় তাকে হত্যা করতে হবে) হাদীস জোর করে আনারও কোনো প্রয়োজন নেই। কারন মুরতাদ হওয়া যদিও একটি গুরুতর অপরাধ কিন্তু এর চাইতে শতগুন বেশি ভয়াবহ অপরাধ হচ্ছে আল্লাহর রাসূল সা. কে কটূক্তি করা, গালি দেয়া ইসলাম সম্পর্কে অবমাননাকর প্রচারণা চালানো। ইসলামী রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে কোনো অমুসলিমের জন্য ইসলাম গ্রহণ না করা রাষ্ট্রীয় কোনো অপরাধ নয়, তবে ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তি করা ভয়ংকর অপরাধ। যার শাস্তি মৃত্যুদন্ড।
প্রিয়নবী সা. এর অবমাননা, রাসূল সা. কে ব্যঙ্গ করা, কটূক্তি করা, প্রয়নবী সা. এর সম্মানিত স্ত্রী, উম্মাহাতুল মুমিনীনদের শানে অশ্লীলক কথা প্রচার করা, যে কোনো নূন্যতম বেয়াদবী কিংবা মহান আল্লাহকে -নাউযুবল্লাহি গালি দেয়া ইত্যাদি স্বয়ং সম্পূর্ণ মারাত্মক অপরাধ। এগুলো এতো মারাত্মক অপরাধ যে এই অপরাধীদের নূন্যতম শাস্তি হচ্ছে একমাত্র মৃত্যুদন্ড। আর এই শাস্তি বাস্তবায়নের দায়িত্বও রাষ্ট্রের। সমাজ ও রাষ্ট্রের যে কোনো খুনী, ধর্ষকের বিচারের দায়িত্ব যেমন রাষ্ট্রের তেমনি রাসূল সা. সম্পর্কে কটূক্তিকারীদের কঠিনতম শাস্তি দেয়াটাও তাদের সবচাইতে প্রধান ও জরুরী কাজ।
রাষ্ট্র যদি খুনী, ধর্ষকদের শাস্তি দিতে বিলম্ব ও টালবাহানা করে এমতাবস্থায় খুনীদের অবস্থা হয়ে যায় পোয়াবাড়ো। এ পর্যায়ে বাড়বাড়ন্ত খুনীদের হাত থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে গিয়ে, কিংবা ধর্ষকদের হাত থেকে নিজ পরিবার ও প্রিয়জনদের রক্ষা করতে গিয়ে কোনো নাগরিক যদি হাতে আইন তুলে নিতে বাধ্য হয় এবং খুনী, ধর্ষকদেরকে হত্যা করে তাহলে সেই নাগরিক যেমন সবার কাছেই শাস্তির পরিবর্তে পুরস্কারের হকদার হয়, একইভাবে রাসূল সা. এর অবমাননার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র যদি নিশ্চুপ বসে থাকে এমতাবস্থায় কোনো মুমিন যদি ঐ সকল কুচক্রী আর মানবতার দুশমনদেরকে তাদের প্রাপ্য মৃত্যু বুঝিয়ে দেয়, তাদেরকে হত্যা করে তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতেও তারা অবশ্যই সম্মান ও মর্যাদার দাবীদার। (অবশ্য এক্ষেত্রে নাস্তিকদের ইসলাম ও প্রিয়নবীর অবমাননার সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকতে হবে)
মক্কা বিজয়ের পর অনকে অপরাধীকেই রাসূল সা. ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। মুসলিমদেরকে এমনকি রাসূল সা. কেও যারা শারীরিকভাবে বিভিন্ন কষ্ট দিয়েছে, নির্যাতন করেছে তাদের সকলকেই রাসূল ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। এমনকি আপন চাচা হামযা রা. কে যারা নির্মমভাবে শহীদ করা ওয়াহশী এবং শাহাদাতের পর তার কলিজা বের করে চিবানো হিন্দাকেও রাসূল সা. মাফ করে দিয়েছিলেন।
কিন্তু এতো মায়াময় আর উদার প্রিয়নবী সা. কিন্তু মক্কাবিজয়ের দিনও কয়েকজনকে ক্ষমা করেন নি। এরা ছিলো সেই খবীস যারা রাসূল সা, ইসলাম ইত্যাদি নিয়ে ঠাট্টা-ব্রিদ্রুপ করতো। রাসূল সা. কে হেয় করার জন্য নিজেদের যবান এবং সাহিত্যের মাধ্যমে সমাজে অপ-প্রচার করতো। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলো আব্দুল্লাহ ইবনে খাতাল তার দুই কৃতদাসী, আবূ লাহাবের কৃতদাসী সারা। আব্দুল্লাহ ইবনে খাতালকে রাসূল সা. এর নির্দেশে কাবার গিলাফ জড়ানো অবস্থায় সেখানেই হত্যা করা হয়।
আব্দুল্লাহ ইবনে খাতাল এবং তার দুই ক্রীতদাসী আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধে গান গাইতো। তারা আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধে গান গেয়ে মক্কায় কনসার্ট করতো। আবু লাহাবের স্বত্বাধীন একটি মেয়ে ক্রীতদাসীর সাথে এই দুটো মেয়েও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
ইসলামে সাধারণভাবে নারীদেরকে হত্যা করার অনুমতি নেই (যুদ্ধে লিপ্ত কাফির মহিলা ব্যতীত) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। আর ইসলামে স্বাধীন অপেক্ষা দাস-দাসীদের অপরাধের শাস্তিও কম হয়ে থাকে। যেহেতু, ক্রীতদাসদের কোন ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই, সেহেতু তাদের শাস্তিও কম হয়। এই নারীদের আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিরুদ্ধের গান গাওয়া বা না গাওয়ার স্বাধীনতা ছিলো না। কিন্তু আবু লাহাব এবং আব্দুল্লাহ বিন খাতাল, তাদের মনিব, তাদের এই কাজটি করতে আদেশ দিয়েছে, কিন্তু তারপরও তাদের আলাদা করা হয়েছে এবং হত্যা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারপরও মক্কা বিজয়ের দিন বিশেষ তালিকায় থাকা নারীদেরকে হত্যার কথা বলা হয়েছে এটাই বোঝানোর জন্য যে, যারা রাসূলকে গালি দিবে, ইসলামকে ব্যাঙ্গ করবে, তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে প্রিয়নবীর অবমাননা করবে তাদের কোনো ক্ষমা নেই।
ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. এই বিষয়ে বলেন, এটি পরিস্কার এবং মজবুত প্রমাণ যে, সবচেয়ে বড়ো অপরাধ হচ্ছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কটাক্ষ করা। কারণ, উপরোক্ত এই বিষয়গুলো অর্থাৎ মক্কার সকল লোকদেরকে নিরাপত্তা দেয়া, তাদের নারী হওয়া, প্রকৃতভাবেই তাদের কোন যুদ্ধও না করা এবং তাদের ক্রীতদাসী হওয়ার পরও তাদের আলাদা করা হয়েছিলো সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য! -এটিই প্রমাণ করে যে, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অবমাননা একটি বিরাট অপরাধ! (আস সারিমিল মাসলূল আলা শাতিমির রাসূল)
এছাড়াও আল্লাহ এবং তার রাসূলকে অবমাননার মাধ্যমে কষ্ট দেয়া আরো কয়েক নিকৃষ্ট শয়তানকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিলো। তাদের মধ্যে একজন ছিলো আল হুয়াইরিদ বিন লুকাইদ। সেও তার সাহিত্য ও ভাষার মাধ্যমে নিজ মুখ দিয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আঘাত করতো। সে তার বাসায় লুকিয়ে ছিলো। রাসূল সা. এর নির্দেশে আলী ইবনে আবী তালিব রা. তার বাসায় এসে তাকে হত্যা করেন।
এছাড়াও একই অপরাধে আব্দুল্লাহ ইবনে জাবারিয়া এবং মুগীরাহ ইবনে আবী ওয়াহাব এর মতো লোকদেরকেও হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো।
বদর যুদ্ধের পর ধৃত ৭০ বন্দীর প্রায় সকলকেই সামান্য মুক্তিপণ কিংবা মুসলিমদেরকে অক্ষর শিক্ষাদেয়ার বিনিময়ে মুক্তি দেয়া হলেও দু'জন পাপিষ্টকে হত্যা করা হয়েছিলো। তাদের একজন ছিলো উকবা ইবনে আবী মুয়িদ এবং অপরজন নাদার ইবনে আবী হারিস। তাদের অপরাধ ছিলো তারা আল্লাহ, রাসূল এবং ইসলামের বিরুদ্ধে ভাষা, বক্তৃতা ও মিডিয়ার মাধ্যমে বিদ্বেষ ছড়াতো। রাসূলের অবমাননা করতো। উকবার ক্ষেত্রে রাসূল সা. যেমনটি পরিস্কার করে বলে দিয়েছিলেন-
لعداوتك لله ورسوله
অর্থ: “এর কারণ হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে তোমার বিদ্বেষ!”
বিষয়: বিবিধ
১১৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন