বর্তমান সময়ে সৎভাবে ব্যবসা করা হাতে আগুন নিয়ে চলার চেয়েও কঠিন
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ১৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৮:৩৩:২৩ রাত
(টাক মাথা নাকি বেলতলা একবারই যায় বা যেতে পারে কিন্তু আমাদের যাদের মাথায় খানিকটা চুল আছে তাদের অবশ্য বারবারই ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় বেলতলায় যেতে হয়। এটি তেমনই একটি পুরাতন লেখা। ইজতেমা আবারও এসে পরেছে। আবারও মনে হয় বেলতলায় যেতে হবে লেখায় বিস্তারিত কিছু তথ্য আছে কারো কাজে লাগলেও লাগতে পারে)
অনেক দিন যাবত লিখব লিখব করছি। কিন্তু সময় সুযোগ করতে পারছি না। ইতোমধ্যে বেশ কিছু বিষয় মাথায় এসেছে, লিখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মনে মনে সাজিয়ে রেখেছি কিন্তু জীবন-জীবিকা ও প্রাসঙ্গিক নানাবিধ ব্যস্ততা আমাকে নিস্তার দিচ্ছে না।
গত ১১, ১২, ১৩ ই জানুয়ারী এবং এরপর ১৮, ১৯, ২০ জানুয়ারী দুই পর্বে টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো বিশ্ব ইজতিমা। প্রতিবছর এই ইজতিমা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে এবং বিশেষভাবে আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চল থেকে লাখো লাখো মানুষ এখানে সমবেত হন। তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে সারা দেশে এবং বিশ্বে বেশ কিছু ভালো কাজ হচ্ছে। অনেক মানুষ ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারছে। নিজেদের আমল আখলাকে পরিবর্তন আনতে পারছে। তবে কিছু অসঙ্গতিও যে এখানে নেই তাও কিন্তু নয়। কিছু ক্ষেত্রে তাদের দূর্বলতা এখনও আছে। এ বিষয়ে অন্য কোনো দিন বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা আছে।
ইজতেমা উপলক্ষ্যে প্রতিবছরই যেহেতু টঙ্গীতে লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত হয় তাই এখানে অন্যান্য বিষয়ের মতো বিভিন্ন পন্য সামগ্রী নিয়ে অনেক ধরণের ব্যবসায়ীরাও আসেন। হাজারো ব্যবসায়ী এবং তাদের লাখো পন্যও এখান থেকে ক্ষেত্র বিশেষে কম মূল্যে গ্রাহকগণ কিনতে পারেন। অনেকে আবার এখান থেকে যে প্রতারিত হন না তাও কিন্তু নয়।
এই ইজতিমায় অন্যান্য বিষয়ের মতো বইয়ের জন্যও অনেক প্রকাশক ও বিক্রেতারা আসেন। তারা ষ্টল ভাড়া নেন। ৬ দিন দোকানদারী করেন। নিজেদের বই সমূহ জনগণের সামনে তুলে ধরেন। প্রতিবছর এখানে অনেক বই-পুস্তকও বিক্রি হয়।
একজন প্রকাশক হিসেবে এই ইজতিমায় প্রায় সময়েই আমরা অংশগ্রহণ করে থাকি। এবারও অংশগ্রহণ করেছিলাম। এখানে আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো আমাদের আধুনিক ও নতুন ধারার গুরুত্বপূর্ণ বই গুলো পাঠক ও ক্রেতাদের কাছে পরিচিত করে তোলা। বিক্রিটাও একটি উল্লেখযোগ্য দিক। তবে দিন দিন প্রকৃত ব্যবসায়ীদের জন্য পারিপার্শ্বিক অবস্থা এতোই খারাপ হয়ে যাচ্ছে যে এখন সৎভাবে ব্যবসা করা খুবই কঠিন।
এই ইজতিমায় দোকান দিতে হলে ৬ দিনের জন্য ভাড়া দিতে হয়। আমরা বাংলাবাজার বা অন্য যে কোনো স্থানে পুরো এক মাসের জন্য ভাড়া দেই ৫-৭ হাজার টাকা। কিন্তু এখানে বিগত বছর গুলোতে যেখানে ৫ হাত দোকানের জন্য ৩, ৫, ৭, ১০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হতো এবার সেখানে আমাদের ভাড়া দিতে হয়েছে ১৫ টাকা। অনেকটা নীরব চাঁদাবাজির মতো। অনেক ক্ষেত্রে ৫ হাত দোকান দেয়ার কথা হলেও শেষ পর্যন্ত সাড়ে তিন হাত দোকান দিয়েছে। কিন্তু ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে কমানোর নাম নেই।
৬ দিন সন্ধ্যার পর থেকে ফজর পর্যন্ত ৩০ ওয়াটের একটি এনার্জি লাইট দোকানে জ্বলবে। এজন্য সরকারী বিদু্ৎ বিল কত হতে পারে?
কমার্শিয়াল বিল হলে সর্বোচ্চ ৩০-৪০ টাকা হওয়ার কথা। এর বেশি হলে ৫০ টাকা। না হলে ১০০ টাকাই হলো। তার টানা ও সংযোগ চার্যসহ আরো ১০০ টাকা যোগ করলেও সর্বোচ্চ ২০০ টাকা বিল নিতে পারে। কিন্তু সেখানে এবার আমাদেরকে প্রতি দোকানের একটি লাইটের বিদুৎ বিল দিতে হয়েছে ১৫০০ টাকা! এছাড়াও খুচরা চাঁদাবাজি তো বোনাস হিসেবে আছেই।
অবাক হলেন!
অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটিই এখন বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের জন্য স্বাভাবিক পরিস্থিতি। এর কম বিল বা ভাড়া দিলে আপনার মাল-সামানা রেখে দিবে। আপনার দোকানের সামনে দলবেঁধে ভীড় করে আপনাকে হেনস্থা করবে।
এর কোনো প্রতিকার নেই। কারণ সরকারী প্রশস্ত রাস্তার দুই পার্শ্বে এভাবে দোকান দোকান হতে তোলা কয়েক কোটি টাকার ভাগ পেয়েছে এলাকার ছিঁচকে চোর, ডাকাত, লীগসদস্য থেকে শুরু করে মেম্বার, চেয়্যারম্যান, এমপি, মন্ত্রী, পুলিশের বিভিন্ন স্তরের পদস্থ লোকেরাও।
এমন বিপাকে পরেও ব্যবসা করবেন?
করলে করেন না হলে ডাকাতি করেন!
হ্যাঁ এটাই তাদের কথা। আর তাই অনেক ব্যবসায়ীও এভাবে বিপদে পড়ে শেষ পর্যন্ত গ্রাহক বা ক্রেতাদেরকে ঠকান। ৬ দিনের জন্য যখন খরচ হয় ৩০-৫০ হাজার টাকা তখন এই খরচ উঠিয়ে লাভ করতে হলে হয়তো ১০-১২ লাখ টাকা সেল করতে হবে। কিন্তু অনেক দোকান থাকায় প্রতি দোকানে সর্বোচ্চ সেল হবে গড়ে ৩ লাখ টাকার মতো। অনেক দোকানে ২ লাখেরও কম!
তারা কি করবে? কিভাবে তাদের খরচ উঠাবে?
এক্ষেত্রে দু'টি পথ। একটি হয়তো আপনি আপনার পন্যের মান ঠিক রেখে, গ্রাহককে না ঠকিয়ে ন্যায্য মূল্যে এই কয়দিন অমানুষিক পরিশ্রম করে তাদের কাছে পন্য বিক্রি করবেন। ফলাফল দাড়াবে আপনার নীট লস অন্তত: ৩০ হাজার টাকা।
অথবা আপনিও এবার ডাকাত হয়ে যান। বিভিন্ন কায়দায় গ্রাহককে সস্থা পন্য ও মানহীন দ্রব্য চড়া দামে বিক্রি করুন। মান সম্মত পন্য বিক্রি করলে সেখানেও দাম রাখতে হবে ন্যায্য মূল্য থেকে অন্তত: ২০% বেশি। এক্ষেত্রে ক্রেতা আপনার পন্য ক্রয় না করার সম্ভাবনাই বেশি। তাই শেষ পন্থা আপনাকে মানহীন বা একেবারেই সাধারণ লেবেলের পন্য দেশ-গ্রামের সাধারণ মানুষগুলোর কাছে বেশি দামে বিক্রি করতে হবে সেখান থেকে অনেক মুনাফা করে নিজের খরচ ও লাভ তুলতে হবে।
অনেকে এমনটিই করে। এমনকি আমার দোকানের পাশের কয়েকটি দোকানদারও এমন করেছে। জেনে বুঝে অনেক নকল বই বিক্রি করেছে। নিয়ামুল কুরআন, মকসুদুল মোমেনীন, তাবীজের কিতাব, লজ্জাতুন্নেসা... ইত্যাদির মতো ভুলে ভরা, মানহীন, বাজারী কঠিন বিষাক্ত বই দেদারসে বিক্রি হয়েছে।
কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ বিবেকের বন্ধন এবং বিশ্বাসের কঠিন প্রত্যয় অটুট থাকায় আমাদের দ্বারা এমনটি করা সম্ভব হয়নি। আল্লাহ যেনো কখনো এমনটি না করান। ফলে আমরা আমাদের প্রকাশনীর বই ব্যতীত কেবল নির্দিষ্ট কিছু মানসম্মত বই বিক্রির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলাম। সেগুলোর ক্ষেত্রেও বই প্রতি ৫-১৫ টাকা বেশি নিতে হয়েছে। অনেক সময় আমরা গ্রাহককে বিষয়টি বুঝিয়ে বলেছি। তারাও অনেকেই বুঝেছেন এবং মেনে নিয়েছেন। অনেকে বুঝতে চাননি।
ফলাফল আমার পাশের অনেক দোকানদার ৬ দিনে ৩ লাখ বা আড়াইল লাখ বিক্রি করেছেন। আমার দোকানে টোটাল সেল হয়েছে ১ লক্ষ বিশ হাজার টাকা। এর থেকে খরচ ২৫ হাজার টাকা। টাকার অংকে লস ২০ হাজার টাকা। তবে আমাদের পন্য গুলোর প্রচার হয়েছে এবং কিছু মানসম্মত ভালো বই গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি এটিই আমাদের স্বার্থকতা। তবে আমাদের উপর এমন জুলুম গুলো না হলে বা জুলুমের পরিমাণ একটু কমলে আমরা আরো বেশি বই গ্রাহকদের কাছে আরো কম মূল্যে দিতে পারতাম। সে দিন কবে আসবে, তা একমাত্র মহান আল্লাহই ভালো জানেন।
আল্লাহ সকলকে হিদায়াত দিন। দীনের সঠিক বুঝ দিন। আমাদেরকে তার দীনের জন্য কবুল করুন। আমীন।
(এবারের টঙ্গীতে দোকান ভাড়া আগের চাইতে নাকি অনেক বেশি। সামান্য ৪ হাতের দোকান ১৫ হাজার থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করছে দালালরা। কালকে সকালে যাবো চিন্তা করছি। দেখা যাক বেলতলায় এবার কি হয়।)
বিষয়: বিবিধ
২০৩১ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি চাইলেও আপনার আশেপাশের লোক আপনাকে সত থাকতে দেবে না । কারণ আপনার সত থাকা তাদের আয়ের জন্য ক্ষতিকর ।
যারা এসব বরদাস্ত করতে পারে না সুযোগ পেলে এরা দেশের বাইরে চলে যায় । ফলে এ দেশ মেধা শূন্য হয়ে যাবে একসময় ।
এরকম মেধা শূন্য জাতিতে এক ঘাটে কিনে দশ ঘাটে বিক্রি করা সহজ ।
কারণ উনারা প্রায় সকলেই আসমানের উপর আর যমীনের নিচের বিষয় নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন কি না!
"বর্তমান সময়ে সৎভাবে ব্যবসা করা হাতে আগুন নিয়ে চলার চেয়েও কঠিন" - একমত।
মিথ্যাচার (-অতিরিক্ত মূল্যধরা, নিম্ন-মানের পন্যের প্রসার, ফাঁকিবাজি ইত্যাদি), জুলুমবাজি (-বেশি আংগীকার করে জোরকরে কম দেওয়া, পরিপূরক সেবা না দেওয়া ইত্যাদি), এবং সর্বোপরি জুয়া আর সুদের যৌথ আক্রমনে "সৎ ব্যবসায়ীরা" আজ নিঃস্ব হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে।
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
কিন্তু ওই যে বললাম-
কর্তৃপক্ষ যে আসমানের উপর আর যমীনের নিচের বিষয় নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন কি না!
আর ভাইয়া আপনার নিয়তের কারনে আল্লাহ আপনকে অবশ্যই আখিরাতে প্রতিদান দিবেন।
চিন্তার বিষয়।
আমারতো মনে হয়, আপনি ওখানে আপনার বিনিয়োগ বিবেচনায় নিয়ে মুল্য নির্ধারণ করলে সেটিই যুক্তিযুক্ত হতো।
তবে আমি বিক্রেতা হিসেবে যেটি মনে করি তা হচ্ছে-
যতক্ষণ আমি আমার পন্যের মাণ ও কোয়ালিটি এবং ক্রেতার অবস্থা ও অবস্থান অনুযায়ী তার উপর জুলুম না করছি, ততক্ষণ ঠিক আছে।
অন্যদের কাছে এটি কেমন মনে হবে জানি না।
দেশে বাহিরে অনেকে দোকান পাট চালাতে গেলেও চিন্তা করতে বিক্রিয় মাল গুলো হালাল কিনা। চাকুরীর বেলাই ঠিক তাই
মন্তব্য করতে লগইন করুন