কওমী মাদ্রাসা : আমার ভালোবাসা
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ১৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:৪৬:২৪ দুপুর
ঠান্ডা মাটিতে সামান্য একটি মোটা কাঁথা বিছিয়ে, আরেকটি শত ছিন্ন কাঁথা গায়ে মুড়িয়ে, এক থেকে দেড় হাত পরিমাণ স্থানে লম্বা লম্বিভাবে রাতের পর রাত কাটিয়ে দেয়া, সকাল, দুপুর বিকাল প্রায় সময়ই আহার বলতে এক প্লেট ভাত, সাথে পাতলা ডাল। কখনো সখনো সামান্য ভাজি বা সবজি। সপ্তাহে কোনো দিন তাকদীর ভালো হলে মাছ বা গোশতের দূর্লভ সাক্ষাত হলেও হতে পারে।
এভাবেই চলছে এই দেশের লাখো লাখো কওমী মাদ্রাসা ছাত্রদের শিক্ষাজীবন। পারিপার্শ্বিক শত-সহস্র বাহ্যিক অভাব-অনটনের মধ্য দিয়েও একমাত্র মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে উদগ্রীব শিক্ষার্থীদের দিনগুলো কিন্তু মনস্তাত্বিকভাবে মোটামুটি ভালোই কেটে যায়।
তারা দুনিয়াবী হিসেবে অনেক কষ্টের মধ্যে থাকলেও মানসিকভাবে যে বিশাল আশা-আকাঙ্খা আর রব্বে কায়েনাতের উপর নির্ভরতার কারণে এক অনাবিল প্রশান্তিতে দিনাতিপাত করে চলেন তার বাস্তব উপাখ্যান শব্দের গাঁথুনি কিংবা বাক্যের বুননে কাউকে বোঝানো সম্ভব নয়।
কওমী মাদ্রাসা গুলোতে ভর্তি হওয়ার পর প্রথমদিনের ক্লাসেই একজন শিক্ষার্থীকে যে বিষয়টি পরিস্কারভাবে বলে দেয়া হয়, বুঝিয়ে দেয়া হয় তাহলো- এই প্রতিষ্ঠান এবং এখানকার শিক্ষা দিয়ে তুমি পার্থিব হিসেবে হয়তো তেমন কিছুই করতে পারবে না, কোথাও চাকরী-বাকরী বা কোনো তদবিরে হয়তো এর সার্টিফিকেট তোমাকে তেমন কোনো সহযোগিতা করতে পারবে না, কিন্তু তুমি যদি মহান প্রভূর প্রকৃত বান্দা হতে চাও, এখান থেকে তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল এবং মহান আল্লাহর সাথে আপন সম্পর্ক গড়ে নিতে পারো, তবে দুনিয়াতে তো বটেই দুনিয়ার ওপারের সেই অনাদি অনন্ত জীবনের পরকাল সম্পর্কেও তোমাকে কোনোদিন পেরেশান হতে হবে না। দুনিয়ার বাহ্যিক জৌলুষ আর চাকিচিক্যের দেখা তুমি না পেলেও তোমার রিযক আর দুনিয়াবী নূন্যতম উপকরণ একভাবে না একভাবে ইনশাআল্লাহ ব্যবস্থা হয়েই যাবে।
তাই তুমি এখনই তোমার লক্ষ্য স্থির করে নাও। চূড়ান্ত গন্তব্য নির্ধারণ করে নাও। যদি কেবল দুনিয়া চাও তবে অন্য কোনো পথে অনুসন্ধান করো। দুনিয়াবী সামান্য সাফল্যের দিশা পেতে অন্য কোনো গাড়িতে তুমি আরোহন করতে পারো। কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যদি তুমি পরকাল এবং তোমার রবের সন্তুষ্টি চাও, তবে নিশ্চিতভাবে তুমি এই বিশ্বাসে বদ্ধমূল হয়ে যেতে পারো যে, তোমার জন্য এই নববী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।...
চলবে...
বিষয়: বিবিধ
১৬১৮ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এ বিষয় গুলো পরের পর্বে লেখার চিন্তা করছিলাম...
ভালো লাগলো, অনেক ধন্যবাদ।
মিডিয়ার উপর গতকাল আপনি লেখা শুরু করেছিলেন। ভাবছিলাম হয়তো পরবর্তী লেখাটাও তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করবেন। কিন্তু আজকে বিষয়টা পরিবর্তন করেছেন। আমার ধারণা ছিল আপনার লেখার সম্পূরক হিসেবে আমিও কিছু লেখালেখি করবো এ বিষয়ে।
তবে সংস্কার বিষয়ে কিছু কথা আসবে পরবর্তী পর্বে ইনশাআল্লাহ।
শিক্ষা থেকে যখন ধর্মিয় জিবন দর্শন উঠিয়ে নেয়া হয় তখন ডঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ এর ভাষায় শিক্ষার্থি পরিনিত হয় রাসকেল এ। আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা তাই প্রমান করে। এর মধ্যেও কওমি মাদ্রাসা গুলি ব্যাতিক্রম। তবে কওমি মাদ্রাসার দুর্বলতা হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই গবেষনা ও নিজস্ব চিন্তার বিকাশ এর পরিবর্তে শিক্ষক এর অন্ধ অনুকরন শিখান হয়। যারা কওমি মাদ্রাসার পরিবেশ নিয়ে ব্যাঙ্গ করেন তারাই আবার রবিন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন নিয়ে বুঁদ হয়ে যান। অথচ রবিন্দ্রনাথ হিন্দু ধর্মিয় ঐতিহ্যের আলোকে এভাবেই শান্তিনিকেতন যেখানে প্লেইন লিভিং এর মাধ্যমে জ্ঞানার্জন এর শিক্ষা দেয়া হবে তাই চেয়েছিলেন। যদিও বর্তমানে তা নষ্ট হয়েগেছে। রবিন্দ্রনাথও ধর্মহীন শিক্ষায় বিশ্বাস করতেননা।
আন্তরিক ধন্যবাদ।
আলোর মিনার পত্রিকার জানুয়ারী সংখ্যায় আপনার লেখা ছাপা হয়েছে। চট্টগ্রামে হাটহাজারী এবং শহরে পত্রিকা পৌঁছেছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন