চলে আসলাম আপনাদের মাঝে
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০২:৪০:০৩ দুপুর
এসবিতে জীবনের প্রথম ব্লগি শুরু করেছিলাম। একে একে সামহোয়ার, আমার বর্ণমালা, ওপেষ্টের পর এবার এক ভাইয়ের মাধ্যমে এই ব্লগের লিঙ্ক পেলাম। ইনশাআল্লাহ এখন থেকে এখানে আমার লেখা প্রকাশ করবো।
গতকাল আমার একটি লেখার কারণে সামু আমাকে প্রথমে ব্লক পরে ব্যান করেছে। নোটিশ দিয়েছে :
dear blogger,
your Post Ban access has been temporarily banned for 14 days due to violation of the blog rules. the blog rule attached and pasted,
3d. any fictitious post that is presented in a form of news that may unrest the community.
"৩ঘ. যেকোন ধরণের কল্পিত বা মিথ্যা পোস্ট বিশৃঙ্খলা তৈরীর উদ্দেশ্যে খবরের আকারে প্রকাশ করা হলে ।"
নিম্নের এই লেখার আপনারা দেখে বলুন হত্যাকারীদের বিচার চাওয়া কি অপরাধ?
হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই
গত শুক্রবার রাত ৯ টার দিকে রাজধানী ঢাকার পল্লবী থানার পলাশনগরে আহম্মেদ রাজীব হায়দার শোভন নামক এক শাহবাগ-সমর্থক ব্লগার (ব্লগীয় নাম ‘থাবা বাবা’)কে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
শাহবাগের আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, গতরাত সাড়ে ৯টার দিকে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর থেকে তার মামার বাসা পল্লবীর কালশীতে যাওয়ার সময় পলাশনগরে এ ঘটনা ঘটে। তাকে জবাই করে হত্যার পর রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। মৃতদেহের পাশে তার ল্যাপটপও পড়ে ছিল।
পল্লবী থানার ওসি আবদুল লতিফ জানান, রাত ৯টার দিকে খবর পেয়ে পুলিশ লালমাটিয়া পলাশনগর প্রধান সড়কের কাছ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। নিহত রাজীব হায়দারের বাবা ড. নাজিম উদ্দিন। তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া এলাকায়।
এদিকে আজ সকালে মিরপুরের পলাশনগরে স্থপতি রাজীবের বাসায় যান স¡রাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তিনি ব−গার রাজীবের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেন। এসময় সেখানে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল−াও উপস্থিত ছিলেন। স¡রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজীবের বাবা-মাকে সান্ত্বনা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত যেন হয়, সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এর জন্য যারা দায়ী, তাদের সনাক্ত করে যত দ্রুত সম্ভব গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে।” বলেন তিনি।
আমাদের দেশের ও ঢাকার চলমান বর্তমান পরিস্থিতিতে এধরণের একটি দু:খজনক ঘটনা নি:সন্দেহে এক বিরাট বিপর্যয়ের পথকে উন্মুক্ত করে দিলো। এই হত্যাকান্ডের খুনীদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মুখোশধারী আততায়ীরা কারা ছিলো তা দেশের আইন শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনী অনুসন্ধান করছেন। তদন্ত শেষ হলেই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে বলে সকলেই অপেক্ষায় আছেন। আজকের সকল মিডিয়া এই হত্যাকান্ডের খবরটি যথাযথভাবে সম্প্রচার করেছে। এখনও করছে। আগামী কয়েকদিন এটি মিডিয়াতে সরগরম থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ক্রবার রাতে ঢাকার পল−বীতে নিহত ব−গার আহমেদ রাজীব হায়দারের লাশ তার গ্রামের বাড়ি কাপাসিয়ার তরগাঁওয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। শনিবার রাতে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে জানাজা শেষে তার লাশ কাপাসিয়ায় আনা হবে। এরপর রোববার সকালে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করার কথা আছে।
ব্লগার রাজিব ঢাকাতে নিহত হয় শুক্রবার রাত ৯টার দিকে। অবশ্য এদিন দুপুরেই জুমআর নামাজের পর কক্সবাজারে শহরের প্রধান সড়কের হাশেমিয়া মাদরাসা ও খুরুস্কুল রাস্তার মাথা এলাকায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের মিছিলে পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে ৪ জন নিহত এবং ৩০ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ জামায়াত-শিবিরের ১১৭ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ এ সময় অন্তত ৩০০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেছে। এই সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে একজন দোকানদারসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুজন জামায়াতে ইসলামীর কর্মী। নিহতরা হলেন কক্সবাজার শহরের গোদারপাড়া এলাকার কলিম উল−াহর ছেলে তোফায়েল আহমদ (২৫), চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকার হামিদ আলীর ছেলে সালেহ আহমদ (৪০), কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ধর্মছড়া এলাকার মোহাম্মদ আলমের ছেলে নুরুল হক ওরফে মিয়া (৩৫) ও সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের নয়াপাড়ার মোস্তাক আহমদের ছেলে আবদুল−াহ (২২)। নিহতদের মধ্যে সালেহ আহমদ হাশেমিয়া মাদরাসা এলাকার একটি দোকানের ম্যানেজার ও নুরুল হক ওরফে মিয়া ইসলামপুর বাজারের মুদি দোকানদার। তিনি দোকানের বাজার করার জন্য কক্সবাজার এসেছিলেন।
পুলিশের বর্বর হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে সোমবার সারাদেশে হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী। এছাড়া কক্সবাজারে আজ ও কাল টানা ৪৮ ঘন্টার হরতালের ডাক দিয়েছে স্থানীয় জামায়াত। পুলিশি হত্যার প্রতিবাদে গতকাল তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত ও শিবির বিক্ষোভ করেছে।
আহম্মেদ রাজীব হায়দার শোভন নামক ব্লগার ‘থাবা-বাবা’ যেই সামহোয়ার ব্লগে ব্লগিং করতেন আমিও সেই একই ব্লগে ব্লগিং করেছি। এই হিসেবে আমরা ছিলাম ব্লগার ভাই। একজন সহব্লগারের এমন করুণ মৃত্যু সত্যিই খুবই দু:খজনক। এখানে তার এবং আমার ব্লগার পরিসংখ্যান উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক মনে করছি:
ব্লগার রাজিব এর পরিসংখ্যান :
থাবা-বাবা (ব্লগীয় নাম)
আমি আমিই, অন্য কেউ নই!!! (ব্লগীয় শ্লোগান)
আর এস এস ফিড
ব−গার পরিসংখ্যান
পোস্ট করেছেন: ১০টি
মন্তব্য করেছেন: ২৫৩টি।
মন্তব্য পেয়েছেন: ৭৭টি।
ব−গ লিখেছেন: ৩ বছর ৩ মাস।
ব−গটি মোট ৭৮১৩ বার দেখা হয়েছে।
ইন্টারনেটের লিঙ্ক: http://www.somewhereinblog.net/blog/thaba_baba
আমিও এই ব্লগের একজন ব্লগার। এখানে আমার পরিসংখ্যান হচ্ছে:
... (ব্লগীয় নাম উহ্য রাখার জন্য দু:খিত )
আই অ্যাম এ মুসলিম। এটি একটি বিশ¡াসী লোকের ব−গ পেজ, তাই এখানে অশ−ীল ও অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকার জন্য বিনীত অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। (ব্লগীয় শ্লোগান)
সংক্ষিপ্ত প্রফাইল দেখুন । এডিট
আর এস এস ফিড
মডারেশন স্ট্যাটাস:
আপনি একজন নিরাপদ ব−গার আপনার লেখা সরাসরি প্রথম পাতায় সকল পোস্ট অংশে প্রকাশিত হবে। আর সম্পাদকের বিবেচনা সাপেক্ষে তা নির্বাচিত পাতায়ও প্রকাশ হতে পারে।
ব−গার পরিসংখ্যান
পোস্ট করেছেন: ৬৪টি
মন্তব্য করেছেন: ৩৭৯টি
মন্তব্য পেয়েছেন: ৬৬৮টি
ব−গ লিখেছেন: ২ বছর ২ মাস
ব−গটি মোট ১৪১৭১ বার দেখা হয়েছে
‘থাবা-বাবা’ নিকের অধিকারী রাজিবের সামহোয়ার ছাড়াও নিজস্ব একটি ওয়েব সাইট ছিলো। http://nuranichapa.wordpress.com/ নামক এই ওয়েব সম্ভবত তার নিজের ব্যক্তিগত। এছাড়াও তিনি ‘ধর্মকারী’ নামক ইসলাম বিদ্বেষী চরম নাস্তিক একটি ব্লগেও নিয়মিত লিখতেন। তার অধিকাংশ লেখাই সভ্যতার মাত্রা অতিক্র করে অনেককেই ক্ষিপ্ত করে তুলেছিলো।
বাংলা ভাষায় আমার দৃষ্টিতে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও ভিজিটর-ব্লগারদের সর্বাধিক সম্মিলন হয় সামহোয়ার ব্লগে। কিন্তু এই ব্লগ কর্তৃপক্ষের অধিকাংশই বাম ঘরানার হওয়ায় আমাদের মতো ডানপন্থী ব্লগারগণ এখানে খুবই বিব্রত অবস্থায় থাকতে হয়। যৌক্তিক হলেও কর্তৃপক্ষ ও বামদের মনোপুত: না হওয়ায় অনেক স্বনামধন্য ব্লগারের লেখাকেই মুছে দেয়া হয়েছে। অনেককেই ব্যন করা হয়েছে। ইসলামে নারী অধিকার বিষয়ক আমার একটি সিরীজ লেখার কারণে একাধারে তিন দিন পর্যন্ত এখানকার শীর্ষ নাস্তিক ব্লগারদের সাথে আমার একটি বিতর্ক হয়। এতে তারা তিন দিন পর্যন্ত আমার সাথে বাস্তবিক আলোচনা ও যৌক্তিক বিতর্কে না পেরে শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষকে চাপ প্রয়োগ করে আমার সেই লেখাটি মুছে দেন এবং আমাকেও সতর্ক করে দেন। এরপর আর সামনে বাড়লে সহজেই এখানে আমাকে ব্যন করা হতো। তাই সেই থেকে এখানে খুব কম লিখি।
এই ব্লগ ছাড়াও আরো তিনটি ব্লগে আমি লিখি। এর মধ্যে এসবি ব্লগেই আমার সবচেয়ে বেশি লেখা পোষ্ট করা হয়েছে। এসবিতে গত ২ বছর দুই তিন মাসের মধ্যে ২৩১ টি লেখা আমি লিখেছি। এখানে গতকাল পর্যন্ত আমার ব্লগে ক্লিক হয়েছে ১ লক্ষেরও অধিক। এসবি ব্লগটি আজ ওপেন হচ্ছে না। হ্যাক লেখা আসছে। এছাড়াও আমার বর্ণমালা এবং ওপেষ্ট নামক ব্লগেও আমার একই নামে রেজিষ্ট্রেশন আছে। কিন্তু সেগুলোতে ভিজিটর ও ব্লগারদের ভীড় কম হওয়ার কারণে সেখানে তেমন একটা যাওয়া হয় না। নেটে এবং ব্লগে আমার মতো অনেক নিরীহ লেখক আছেন। যারা ডান-বামদের ক্যাচালের মধ্যে যেতে চান না। এক্ষেত্রে আমার দৃষ্টিভঙ্গি হলো যদি কেউ যৌক্তিকভাবে কোনো বিষয় বুঝতে না চায় তাহলে তাকে জোর করে বোঝানোর দরকার নেই। আর যারা স্বেচ্ছায় ঝগড়া করতে চায় তাদেরকে এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। কারণ ঝগড়া করে কখনো কাউকে কোনো বিষয় মানানো যায় না। বিতর্ক করে কাউকে পরাজিত করেও তাকে নিজের মতের সাথে মিলানো যায় না। বরং কারো ভিন্ন মতকে সহমর্মিতা ও উদারতার মাধ্যমেই জয় করা সম্ভব। গত ২ বছর ৩ মাসের ব্লগীয় এবং নেটের জগতে এধরণের বেশ কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার ফলে তাই এখন এধরণের যে কোনো ক্যাচাল থেকেই স্বযতেœ নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করি। তাই গতকাল বিকেলে যখন নেটে কক্সবাজারের খবর দেখেছিলাম তখন খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। একইভাবে রাতে যখন ব্লগার রাজীবের নিহত হওয়ার খবর মোবাইলে নেটে পড়ছিলাম তখনও একইভাবে ব্যথিত হলাম।
গতকাল শুক্রবার একই দিন সামান্য কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে বিকাল আর রাতে কক্সবাজার ও ঢাকায় দু’টি হত্যাকান্ড ঘটে। কিন্তু এই দু’টি হত্যাকান্ডের প্রতিক্রিয়া দু’রকম পাওয়া যাচ্ছে। মিডিয়ার সম্প্রচার আর আমাদের রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পদে আসীনদের উপলব্ধিও হয়তো দুই রকম। যার কারণে আজকের সকল মিডিয়া একজন রাজিবের হত্যাকান্ডের এই খবরটি যথাযথভাবে সম্প্রচার করলেও কক্সবাজারে নিহত হওয়া ৪ জন অসহায় মানুষের কথা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেছে। রাজিবের পরিবারকে শান্তনা দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় এমপি গেলেও এখন পর্যন্ত কক্সবাজারের ঘটনা নিহত হওয়া হতভাগ্য ৪ জনের পরিবারের সেই সৌভাগ্য হয়নি। রাজিবের পরিবারের উদ্দেশ্যে আমাদের শিক্ষামন্ত্রীর বাণী মিডিয়াতে প্রচারিত হলেও কক্সবাজারে নিহত হওয়া কারো ব্যাপারে এমনটি এই লেখা পর্যন্ত চোখে পড়েনি। সম্ভবত এর মূল কারণ হচ্ছে রাজিব ছিলেন বামপন্থী যুবক। স্বাভাবিকভাবেই ইসলাম এ ইসলামী বিষয় তার কাছে সীমাহীন ঘৃনিত একটি বিষয় ছিলো। যার কারণে তিনি তার প্রায় সকল লেখাতেই ইসলাম, প্রিয়নবী সা. তাঁর পবিত্র সহধর্মীণীগণ সম্পর্কে সীমাহীন জঘন্য ভাষায় কটাক্ষ করেছেন, আক্রমণ করেছেন থাবা মেরেছেন একজন শক্তিশালী ‘থাবা বাবা’র মতোই। একারণেই আজ তিনি সকল বামপন্থীদের কাছে তরুণ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধার সম্মান পেয়েছেন। অনেকে তাকে শহীদ (!) ঘোষণারও দাবি জানাচ্ছেন। কিন্তু বাকি চারজন যেহেতু ডানপন্থী ছিলেন, ইসলামকে তারা ভালোবাসেন। রাজিবের মতো ইসলামের উপর ‘থাবা বাবা’ নাম নিয়ে হিংস্র থাবা দিতে অগ্রসর হতে পারেন নি। তাই তারা মুক্তিকামী বা ন্যায়ের জন্য সংগ্রামী পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার পরিবর্তে বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী হিসেবে মিডিয়াতে তিরস্কৃত হচ্ছেন। যে কোনো সময় তারা জঙ্গি বলেও আখ্যায়িত হতে পারেন। তাদের পরিবারকে সরকার ও প্রশাসন সহমর্মিতা জানানোর পরিবর্তে তথাকথিত ‘জঙ্গি’র সহযোগী হিসেবে গ্রেফতার করলেও আশ্চর্যের কিছু থাকবে না।
অন্যদের কাছে এক এক মানুষের জীবন ও রক্তের একেক ধরণের মূল্যায়ন হলেও আমার কাছে সকল মানুষ এমনকি সেই ব্যক্তি মুসলিম বা অমুসলিম হলেও অন্যায়ভাবে তার রক্তপাত বা তার সম্পদহানী সমানভাবে হারাম। কুরআন-সুন্নাহ থেকে যতোটুকু বুঝেছি নিরীহ কোনো ব্যক্তিকে যদি কেউ অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে তাহলে এজন্য সে মহান আল্লার দরবারে সীমাহীন শাস্তির উপযোগী হবে। এ প্রসঙ্গে একটি আয়াত উদ্ধৃত করতে হচ্ছে:
অর্থ: “যে ব্যক্তি মানুষ হত্যার অপরাধ বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজের হেতু ছাড়া কাউকে হত্যা করলো সে যেন সমস্ত মানুষকেই হত্যা করলো। আর যে কাউকে রক্ষা করলো সে যেন সারা বিশ্ববাসীকে রক্ষা করলো।” (সূরা, মায়েদা : আয়াত ৩৬)
প্রিয়নবী সা. তাঁর হাদীসের মাঝেও বলেছেন,
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যেই ব্যক্তি কোন মুসলমানের উপর অন্যায়ভাবে অস্ত্র প্রয়োগ করল, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং ধোঁকা দেয় সেও আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’’ (মুসলিম শরীফ)
এজন্যই যারা কোনো মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবে তাদের সীমাহীন শাস্তি অবশ্য প্রাপ্য। রাষ্ট্রের উপর আবশ্যিক কর্তব্য হচ্ছে খুনীদের পরিচয়ের দিকে না তাকিয়ে দল, মত, ধর্ম, বর্ণের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে খুনী ও ঘাতকদেরকে আইনের হাতে তুলে দেয়া। স্বচ্ছ এবং যথাযোগ্যভাবে তাদের বিচার নিশ্চিত করে পুরো জাতির সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই ভবিষ্যতে অন্যান্য মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। কিন্তু অতীতে এমন চাঞ্চল্যকর অনেক হত্যাকান্ডেরই বিচার না হওয়ায় এবং অনেক ফাসীর দন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করা এবং দাগী আসামীদেরকে জেল থেকে ছেড়ে দেয়াটা আসলে খুনীদেরকেই উৎসাহ দিচ্ছে।
রাজিব নিহত হওয়ার স্থান মিরপুর সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে তারা ভালোভাবেই জানেন যে মিরপুরের পলাশনগর, লালমাটিয়া, কালশী এবং তার পার্শ্ববর্তী ভাষানটেক এলাকা গত ৫ বছর আগেও সন্ত্রাসী আর নানাবিধ অপরাধের স্বর্গরাজ্য ছিলো এটি। শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীর, ফালাইন্নাসহ অনেক সন্ত্রাসীর উত্থান হয়েছিলো এই বস্তি এলাকা থেকেই। সময়ের ব্যবধানে বর্তমানে এই এলাকার বাহ্যিক রুপ কিছুটা উন্নতহলেও সকল সন্ত্রাসী যে এখান থেকে হিজরত করেছে বিষয়টি এমন নয়। এক সময় এখানে কোরবানীর ঈদে গরু কোরবানী দিতেও সন্ত্রাসীদেরকে আলাদা চাদা দিতে হতো। বাড়ি ক্রয় বিক্রয় বা ব্যবসার জন্য তো কথাই নেই। এখানকার বাসীন্দাদেরই বক্তব্য এখনও এখানে অল্প টাকার বিনিময়ে ছিচকে চোর, ডাকাত আর সন্ত্রাসীদের দিয়ে যে কোনো অপরাধ করানো যায়। আর বর্তমানে এই এলাকাটি সরকারে ক্ষমতাসীন দলের ঘাটি হিসেবেই পরিচিত। এখান থেকে গত নির্বাচনেও আওয়ামীলীগের প্রার্থীই বিজয়ী হয়েছেন। এর আগের টার্মে এই আসনের অন্য সব কেন্দ্রে চারদলীয় প্রার্থী বিজয়ী হলেও সেই সময় এই লালমাটিয়া, পলাশনগর এলাকাসমূহের কেন্দ্রগুলোতেও নৌকা মার্কায়ই ভোট বেশি পড়েছিলো।
এই কথাটি এজন্য বলা যে, হত্যাকান্ডের পর যথোপযুক্ত তদন্ত না করে তাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার একটি দূরারোগ্য ব্যধি আমাদের দেশের রাজনৈতিক কালচারে পরিণত হয়েছে। রাজীব হত্যান্ডের সাথে সাথেই এ বিষয়টিও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। তদন্ত শুরুর আগেই অনেকে এর সাথে ব্যক্তি বা দল বিশেষের সম্পৃক্ততাও পেয়ে যাচ্ছেন। যারা এমন ‘দিবা স্বপ্ন’ দেখে প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদের প্রতি অনুরোধ এই হত্যাকান্ডের পেছনে পেশাদার খুনী চক্র, না বামপন্থী স্বার্থের দ্বন্দ না ডানপন্থীদের কারো মদদ’ কি ছিলো তা আগে নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকাশ করা হোক। এক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তি কি তোফায়েল আহমদ, নুরুল হক, আবদুল−াহ না রাজিব না বিশ্বজিৎ নামক হিন্দু ধর্মাবলম্বী -এসকল বিষয় বিবেচনায় আনা সীমাহীন অন্যায়। নিহত ব্যক্তি মজলুম আর হত্যাকারী জালিম। সকল জালিমের চেহারাই এক আর সকল মজলুমের রক্তই অভিন্ন। এই সত্য যত দ্রুত আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিগণ বুঝতে পারবেন ততই মঙ্গল। তারপর অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন। না হলে অন্যান্য অপরাধের মতো এবারের অপরাধীরাও যে পার পেয়ে যাবে তা বলাহই বাহুল্য।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে এই কঠিন সত্য যথাযথভাবে উপলব্ধি করার তাওফীক দিন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন