মদীনার আওস খাজরাজ ও আমাদের আওয়ামী-বিএনপি..
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৯:২০:০৩ সকাল
আওস এবং খাজরাজ। ইহুদীদের কূটনামী আর চক্রান্তে শতবর্ষব্যাপী আত্মঘাতি ও ভাতৃঘাতী এক যুদ্ধে লিপ্ত ছিলো আরবের শক্তিশালী মদীনার এই দুটি যোদ্ধা জাতি। 'জঙ্গে বুয়াস' চলছিলো তাদের মধ্যে শতাব্দী জুড়ে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
অবশষে এই যুদ্ধে তারা উভয় গোত্র নিজেদের নেতাদের হারালো। তাদের পাতি নেতারাও পটল তুললো। যুদ্ধে পারঙ্গম ও সক্ষম বীর যোদ্ধাদের অবশিষ্ট অধিকাংশই আহত হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী হলো।
শতবর্ষ মারামারি করে নিজেদের সকল রক্ত ঝড়িয়ে এক পর্যায়ে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারলো। ইহুদীদের চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্রও টের পেলো। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাদের সকল নেতার কবরে বিদ্যমান হাড্ডিও নিশ্চিন্হ হয়েছে।
অবশেষে...
তারা এমন এক অবস্থায় উপনীত হলো যে তাদের একজন নেতাও আর অবশিষ্ট্য নেই। শেষ পর্যন্ত তারা দেখতে লম্বা, বুদ্ধিতে মোটামুটি, 'আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই' নামক এক গবেটকেই 'নাই বনে শিয়াল রাজা'র মতো রাজা বানাতে উদ্যোগী হলো। তার জন্য মুকূটও তৈরী করলো। কিন্তু বিধি বাম!
কারণ মহান আল্লাহ তো কপট আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের জন্য আওস-খাজরাজের দুর্নীতিবাজ শাসকশ্রেণী থেকে মদীনার জমিকে পবিত্র করেন নি! বরং তিনি এটি করেছিলেন সেখানে ইসলামের মারকাজ বানাতে। তাঁর প্রিয় হাবীব, আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মাদ সা. ই ছিলেন তাঁর নির্বাচিত, তাঁর মনোনীত। বিশ্বমানবের মুক্তির দূত এবং ইসলামের ঝান্ডা উড়াবার জন্য এক টুকরো পবিত্র ভূখন্ডের প্রত্যাশায় মক্কা, তায়েফ আর আরবের বিস্তীর্ণ বালুচর চষে বেড়ানো নির্ভীক মুসাফির মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. এর দাওয়াত আর আহ্বান তাই মদীনাবাসীর পছন্দ হলো। তারা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সলূল নামক মাথামোটা, লম্বা গবেটের পরিবর্তে নিজেদের রাজ মুকূট আর মনের সিংহাসন উজার করে দিলো মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ওয়া রাসূলুল্লাহর পদতলে।
ফলে-
ইসলাম আসলো খুন-খারাবীর শহর ইয়াসরিবে। রাসূল আসলেন মদীনায়। প্রিয়নবীর ছোঁয়া পেয়ে, প্রিয় রাসূলের সান্নিধ্যে ইয়াসরিব হয়ে গেলো মদীনা, মাদীনাতু রাসূলিল্লাহ -আল্লাহর প্রেরিত রাসূলের প্রিয় শহর।
আরবের সবচেয়ে খুনোখুনি প্রবণ এবং বিষাক্ত আবহাওয়ার শহরটি প্রিয় রাসূলের সুরভি মেখে দেখতে না দেখতে পরিণত হলো পৃথিবীর সবচাইতে নিরাপদ আর উত্তম আবহাওয়ার আঁধার রূপে।
ইসলাম এবং খিলাফত আসলো মদীনার বুকে। শুধু মদীনাই নয়, এরপর মদীনাকে কেন্দ্র করে ধীরে ধীরে মক্কা, খায়বর, হুনায়ন, তাবুক পেরিয়ে মদীনার সেই সে সুরভি পর্যায়ক্রমে মোহিত করে চললো রোম-পারস্যের দুর্গন্ধময় অন্ধকারাচ্ছন্ন অঞ্চল গুলোকেও।...
আজ আমাদের দেশের আওস এবং খাজরাজ তথা আওয়ামীলীগ ও বিএনপি কলহে লিপ্ত। তারা মারছে একে অপরকে। জনগণও এর মাঝে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। আওয়ামী বিএনপির নেতা-কর্মীরাও মারা যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে আরবের বড় বড় অনেক যোদ্ধা এবং ইসলামের বিরুদ্ধে শক্তি হিসেবে পরিচিত বেন আলী, হোসনি মোবারক, মুয়াম্মার গাদ্দাফী, সাদ্দাম, পারভেজ মোশাররফ নামক অনেক গাদ্দার আর মুসলিম উম্মাহর বুকে চেপে বসে থাকা দালালদের সফল অপারেশন হয়েছে তাদেরই এক সময়কার মিত্রদের হাতে।
তাই বলা যায় না-
সদা ঘূর্ণায়মান সময়ের আবহে সারা বিশ্বে এবং বিশেষত: আমাদের এই ছোট্ট ভূমিতে আল্লাহ চাইলে আবারও ইসলাম আসতে পারে। ইসলাম আসার প্রারম্ভ হিসেবে সেখানকার ক্ষমতাশীল, দূর্নীতিবাজ শাসকদের অপসারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক পূর্বশর্ত। বলা যায় না, মহান আল্লাহ কি সেই প্রেক্ষাপটই প্রস্তুত করছেন কি না...
তবে যে যাই বলুক-
আমি কিন্তু নিশ্চিত। বিশ্বজুড়ে ইসলাম আবারও আসছে। মুসলিমরা জাগছে। মানব রচিত মতবাদ আর মতাদর্শের বিষাক্ত আবহাওয়ায় ব্যধিগ্রস্থ, গণতন্ত্রের পঁচা মড়ক আর মোড়কে বন্দী এই বিশ্ব ইনশাআল্লাহ শীঘ্রই ইসলামের সুশীতল রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং কুরআন ও হাদীসের জীবনী শক্তিতে আবারও প্রাণ ফিরে পাবে। আমরা যদি জেগে উঠি তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের জীবদ্দশাতেই দেখতে পাবো মহান আল্লাহর সেই অঙ্গীকার ও ঘোষণার বাস্তব রূপ, যা তিনি বলেছিলেন এভাবে-
وَعَدَ اللهُ الَّذِينَ آَمَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِنْ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِي لا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا وَمَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ (55) وَأَقِيمُوا الصَّلاةَ وَآَتُوا الزَّكَاةَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ (56)
অর্থ: "তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে এ মর্মে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি নিশ্চিতভাবে তাদেরকে যমীনের প্রতিনিধিত্ব প্রদান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদের এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দীনকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি তাদের ভয়-ভীতি শান্তি-নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা আমারই ইবাদাত করবে, আমার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। আর এরপর যারা কুফরী করবে তারাই ফাসিক।
আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হতে পার।" (সূরা নূর ৩৪, আয়াত ৫৫-৫৬)
বিষয়: বিবিধ
২০২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন