দুই কেজি মুরগীর কতটুকু খাবেন? (ইসলাম, অন্যান্য মতবাদ ও নাস্তিকতার একটি সরল অংক)
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ২১ অক্টোবর, ২০১৩, ০৩:০৬:৩৩ দুপুর
প্রফেসর ডা. হারেস ইবনে হাম্মাম সাহেব বিদেশ থেকে বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছেন। ব্যবসা-গবেষণা ইত্যাদি নিয়ে বিশাল ব্যস্ত হারেস সাহেব ইতিপূর্বে কখনো নিজে মুরগী কিনেন নি। মুরগী যবাই কিংবা পরিস্কার করে রান্না করে খাওয়ার অভিজ্ঞতাও তার নেই। তাই বাংলাদেশ ঘুরে দেখতে এসে এবার তার শখ হয়েছে বাংলাদেশের বাজার থেকে খুচরা দামে একটি মুরগী নিজে গিয়ে কিনবেন এবং তারপর তা খাওয়া পর্যন্ত কি কি করতে হয় তা স্বচক্ষে অবলোকন করবেন। অবশ্য বলে নেয়া ভালো যে ডা. সাহেব জীবনে পয়সা কড়ি অনেক কামালেও খরচের ক্ষেত্রে তিনি খুবই কৃপণ প্রকৃতির। লোকে কথায় বলে তার হাত থেকে নাকি পানিও পরে না।
তো যাই হোক হারেস সাহেব বাজারে গেলেন। অনেক দোকান ঘুরে মুরগীর দোকানে এলেন। দেশী মুরগীর দাম বেশি দেখে ফার্মের মুরগী কেনার সিদ্ধান্ত নিলেন। ফার্মের মুরগীর দামও বেড়েছে শুনে তিনি চিন্তিত হলেন। অবশেষে কয়েকটি দোকান ঘুরে শেষ পর্যন্ত ১৬০ টাকা কেজি দরে দুই কেজি ওজনের একটি মুরগী কিনলেন।
মুরগী কেনার পর কি করতে হয়? এটা জানেন না হারেস সাহেব। সহকারীকে জিজ্ঞেস করলেন এখন কি করবো? সে জানালো এখন এটিকে যবাই করে ডেসিং করতে হবে বা হাতে পরিষ্কার করে রান্না করতে হবে। তো কোথায় ড্রেসিং করবেন তার জন্যও তিনি মুরগীর দোকানের পাশেই কয়েকটি ড্রেসিংয়ের দোকানও দেখতে পেলেন। এবার তিনি ড্রেসিং করানোর জন্য প্রথম দোকানে এলেন। এসে দোকানদারকে বললেন, "এই নাও আমার দুই কেজি ওজনের মুরগী। এটিকে যবাই করে মাংস করে দাও। তবে মাংসের ওজন জেনো না কমে। দুই কেজিই ফেরত চাই।"
দোকানদার ক্রেতার হাব-ভাব দেখেই বুঝে ফেলেছেন ইনি আজব মানুষ। তাই তিনি মুচকি হেসে বললেন, "জনাব! আমি কয়েক পদ্ধতিতে মুরগী বানাতে পারি। আপনি যেভাবে চাচ্ছেন সেটি হলো নাস্তিক্যবাদী পদ্ধতি। এছাড়াও আমার জানা আছে ইসলামী পদ্ধতি ও অন্যান্য কয়েকটি ধর্মের অনুসারীদের ইচ্ছানুরূপ পদ্ধতিতে মুরগী তৈরীর নিয়ম-কানুন।"
প্রফেসর সাহেব এবার একটু নড়ে চড়ে দাঁড়ালেন। জীবনে তিনি এমন কথা আগে আর কখনো শোনেন নি। তাই তিনি দোকানদারকে বললেন, "কোন পদ্ধতি কেমন, আমাকে বিষয়টি একটু খুলে বলো ভাই।"
এবার দোকানদার বললো, "আমি শেষ থেকে বলি। এই ধরুন ইসলামী পদ্ধতিতে মুরগী বানাতে চাইলে প্রথমে একে যবেহ করে এর প্রবাহিত রক্ত ফেলে দিতে হবে। এরপর এর পেট চিড়ে ময়লা-আবর্জনা ফেলে দিতে হবে। গরম পানিতে দিয়ে এর লোম-পশম-নখ ইত্যাদি অনেক বস্তুও তুলে ফেলতে হবে। এভাবে করলে আপনার দুই কেজি ওজনের মুরগী কমে আনুমানিক ১ কেজি ২৫০ গ্রাম হয়ে যাবে। ১৬০ টাকা কেজি হিসেবে কেনা আপনার এই মুরগীর প্রায় ৭৫০ গ্রাম ফেলে দিতে হবে। এতে আপনার প্রায় ১২০ টাকার মতো কমে যাবে। আবার আমাকে চার্জও দিতে হবে।
আর যদি পাশ্চাত্যের বিভিন্ন মতবাদের আলোকে আংশিক স্বাধীন পদ্ধতিতে মুরগী বানাতে বলেন তাহলে তাও পারবো। তাতে মুরগীর রক্ত-বর্জ্য ও কিছু অংশ ফেলে দিতে হবে। তখন আপনার ২ কেজি মুরগী ১ কেজি ৫০০ গ্রামে আসবে। ৫০০ গ্রাম বা আধা কেজির মতো মুরগী আপনার নাই হবে। এতে আপনার ৮০ টাকার মতো কমে যাবে। আবার আমাকে চার্জও দিতে হবে।
যদি এর চেয়েও উদার ও স্বাধীন পদ্ধতিতে, অধিক মুনাফা অর্জনের হিসেবে মুরগী বানাতে বলেন তাহলে শুধু রক্ত-বর্জ ফেলে দিয়ে আপনাকে তা প্রস্তুত করে দিতে পারবো। এক্ষেত্রে আপনার ২ কেজি মুরগীর ১ কেজি ৭৫০ গ্রামে টিকবে। ২৫০ গ্রাম বা এক পোয়া মতো মুরগী আপনার নাই হবে। এতে আপনার ৪০ টাকার মতো কমে যাবে। আবার আমাকে চার্জও দিতে হবে।
আর যদি নাস্তিক্যবাদী পদ্ধতির কথা বলেন তাহলে আরো সহজ। তখন আর আমাকে তেমন কিছুই করতে হবে না। আপনার এই মুরগী আপনার সামনে কয়েকটি টুকরো করে দিয়ে দিবো। এর সাথে এর রক্ত-বর্জ-পশমসহ সব কিছুই থাকবে। আপনার ২ কেজি মুরগীর পুরোটাই থাকবে। একটুও কমবে না। এক্ষেত্রে আমাকে কোনো চার্জ দিতে হবে না। উপরন্তু দরকার হলে আমার দোকান থেকেও কিছু তার সাথে যুক্ত করে দিতে পারবো। প্রথম পদ্ধতি ছাড়া বাকি পদ্ধতিগুলোর কোনোটির মাধ্যমে আপনার মুরগী তৈরী করা করতে বললে তা সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে নিতে হবে! তা খেয়ে আপনার কোনো অসুখ হলে বা ক্ষতি হলে আমাকে দোষ দিতে পারবেন না কিন্তু!
এবার বলুন জনাব! কোন পদ্ধতিতে আপনার মুরগী তৈরী করবো? আপনার মুরগীর কতটুকু অংশ আপনি খেতে চান?
-উপরের লেখাটি একটি উপমা মাত্র। কাউকে খাটো করার জন্য এটা বলা হয়নি, বরং ইসলামের সাথে অন্যান্য কিছু মতবাদ, ধর্ম এবং নাস্তিক্যবাদের ব্যবহারিক ও বাস্তবিক পার্থক্যটি কেবলমাত্র বোঝানোর জন্য এই তুলনাটি করা হয়েছে। কারণ আপনি যদি ইসলাম অনুযায়ী আপনার জীবন চালাতে চান তাহলে জীবনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে আপনাকে অনেক ন্যায়-অন্যায়, বৈধ-অবৈধ চিন্তা করে চলতে হবে। যেমন খুশি তেমন চলা যাবে না।
কিন্তু আপনি পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদী মতাদর্শের আলোকে স্বাধীন ভাবে কিংবা অতি উদারভাবে চলতে চান তাহলে আপনার জীবনে মুসলিম চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীনতা পাবেন। রাষ্ট্রীয় কিছু নিয়ম ছাড়া অবাধ স্বাধীনতার নামে আপনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন। পার্থিব জীবনকে যেমন খুশি লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে উপভোগ করতে পারবেন। কেউ আপনাকে বাধা দিতে আসবে না। ইচ্ছে করলে যবাই না করে বলি দিয়েও আপনি পশু খেতে পারবেন। অনেক হিন্দুর কাছে গরুর চনা পবিত্র পানীয়! ভারতে গাভীর চনা, গোবর এমনকি ইদূরের বর্জ দিয়ে তৈরী খাদ্যের এক বিশাল বিপনী বিতানের তালিকা দেখলাম সেদিন। সুতরাং গরু এবং ইদূরের বর্জ্য যদি খাদ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে এই হিসেবে মুরগীর খানিকটা খেতেও আপত্তি থাকার কথা নয়।
আর যদি নাস্তিক হন তাহলে তো কথাই নেই। আপনার জীবন হয়ে উঠবে পাগলা ঘোড়ার মতো। যখন যেদিকে খুশি ছুটতে পারবেন। কোনো বাধা নেই। কোনো নিষেধ নেই। মন যা বলবে তাই করতে পারবেন। (তবে উল্লেখ্য যে, ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো পদ্ধতি ও জীবনাদর্শে নিজের জীবন পরিচালিত করলে তার খেসার নিজ দায়িত্বেই নিতে হবে। কেউ কিন্তু সেদিন আর আপনার সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে না)
প্রিয় পাঠক! এবার আপনিই বলুন! কোন পদ্ধতিতে মুরগী খেতে চান? কাদের মতো করে নিজের জীবন চালাতে চান?
(পূর্বে সামু ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিলো যার লিংক: http://www.somewhereinblog.net/blog/funhappy/29450123
বিষয়: বিবিধ
১৮২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন