ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও তার ডিজিটাল নতুন প্রজন্ম -২
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ২১ আগস্ট, ২০১৩, ০৫:১৯:২০ সকাল
আগের লেখা:
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও তার ডিজিটাল নতুন প্রজন্ম -১
ঘটনা : ২
সায়মা। উত্তরার একটি অতি আধূনিক ইংলিশ মিডিয়াম স্কলের কেজি ১ এর ছাত্রী। বয়স এখনও ৮ এর ঘর পেরোয়নি। দারুন মেধাবি। অনেক চঞ্চল আর দুষ্টু। চটপট স্বভাবের হওয়ায় ক্লাসের সবার কাছে তার একটা আলাদা ভাব সদা বিরাজমান। ক্লাসে আসার ক্ষেত্রে সবার চেয়ে অগ্রগামী সে। কোনোদিন তার ১০ মিনিটও লেট হয় না। সকল ক্লাসের হাজিরায় সে ফার্স্ট। তো হঠাৎ কয়েকদিন ক্লাসে অনুপস্থিত সায়মা। সবাই উদ্বিগ্ন কি হলো সায়মার? ক্লাসের সহপাঠি ও টিচাররাও চিন্তিত। সায়মার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানালেন সায়মা অসুস্থ। কি একটি রোগে সে বিছানায়। হাসপাতালে কয়েকদিন থেকে প্রায় সপ্তাহ খানেক পর আবারও সে স্কুলে নিয়মিত হলো। কিন্তু প্রথমদিন থেকেই সবাই লক্ষ্য করলো সেই আগের সায়মা আর আজকের সায়মার মাঝে অনেক ব্যবধান। ব্যবধান সায়মার শারীরিক অয়ববে যেমন সুস্পষ্ট, একইভাবে তার মন-মানসিকতা ও খেই হারিয়ে ফেলা সেই শিশু সূলভ চাঞ্চল্যের অনুপস্থিতির মাঝেও সমানভাবে বিরাজমান।
ঝকঝকে, তকতকে নাদুস-নুদুস চেহারা ও চমৎকার গড়নের ছোট্ট সায়মা এই এক সপ্তাহেই শূকিয়ে যেনো অর্ধেক হয়ে গেছে। চেহারার সেই লালিমা এখন আর দেখা যাচ্ছে না। পূর্বের সেই তীক্ষè দৃষ্টি আর অন্তরভেদী চাহনী এখন আর নেই। কেমন যেনো নি®প্রভ চোখ দুটো কেবল হতাশার সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে। আগের মতো ক্লাসের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে বেড়ানো ও সকলকে মাতিয়ে রাখা সায়মা যেনো আজকের সায়মা থেকে হারিয়ে গেছে কোনো সুদূর বনে।
কয়েকদিন এভাবে চলার পর অন্যরা বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারলেও ক্লাসে সায়মার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী রুবাইয়া বিষয়টি মেনে নিতে পারলো না। কি হয়েছে তা জানার জন্য প্রথমদিন থেকেই সে খোঁচাতে লাগলো সায়মাকে। ‘পেটে ব্যথা ও আমাশয়’ অন্য সকলকে সন্তুষ্ট করা এই উত্তরে ঘনিষ্ট বান্ধবী রুবাইয়া কেনো যেনো তৃপ্তি পাচ্ছে না। তার মনে হচ্ছে সায়মা এবং তার পরিবারের সকলে যেনো কোনো একটি বিষয় তাদের থেকে এবং টিচারদের থেকেও লুকোচ্ছে। তাই সে অজানা সেই রহস্য জানার জন্য টিকটিকির মতো সায়মার পেছনে লেগে রইলো।
টানা ৫ দিন পর অবশেষে সফল হলো রুবাইয়া। অনেক শর্ত, অনেক বিধি-নিষেধ কবুলের পর শেষ পর্যন্ত রুবাইয়ার কাছে সায়মা প্রকাশ করলো তার সেই রহস্যময় অসুস্থতার বিষয়। সে যা জানালো তাতে রুবাইয়া যেনো আকাশ থেকে পড়লো। সায়মা যা বললো তার সরল অনুবাদ এমন-
২ বছরের বড় আপন খালাতো ভাই কাকনকে নাকি পছন্দ করে ফেলেছিলো সায়মা। তার সাথে গত বছরখানেক যাবত চলছিলো তার সর্বঘনিষ্ট সম্পর্ক। নাটক-সিনেমার ভাষায় যাকে বলে কঠিন ‘প্রেম’। তো মাস খানেক যাবত কি এক দূর্বোধ্য কারণে কাকন এড়িয়ে চলা শুরু করলো সায়মাকে। বিষয়টি জেদি সায়মা প্রথম কয়েকদিনেই উপলব্ধি করতে পারলো। শেষ পর্যন্ত কাকনের এই হঠাৎ বদলে যাওয়ার মূল কারণও সে তার মেধা ও গোয়েন্দাগিরি করে ঠিকই খুঁজে বের করলো। সে জেনে অবাক হলো যে কাকন নাকি এখন তার স্কুলের অন্য কোন একটি মেয়েকে পছন্দ করে। তাকে নিয়েই এখন সে বেশি ব্যস্ত। তাই সায়মাকে দেয়ার মতো সময় এখন আর কাকনের হাতে নেই।
এমন একটি শক খেয়ে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেলো সায়মা। অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে সে ডিসিশান নিলো সুইসাইড করার। প্রিয় প্রেমিকের এমন হঠকারিতা সবশেষ মনে করে আত্মহত্যা করতে চাইলো সে। বিদায় নিতে চাইলো এই রঙিন পৃথিবী ছেড়ে। কিন্তু কিভাবে সে সুইসাইড করবে?
অনেক অনুসন্ধানের পর সে একটি সিনেমায় নায়ক থেকে প্রত্যখ্যাত নায়িকার বিষপানে আত্মহত্যার বিষয়টি জানতে পারলো। তাই এবার সায়মাও সিদ্ধান্ত নিলো সে বিষপান করে আত্মহত্যা করবে। কিন্তু সে বিষয় কোথায় পাবে?
অনেক খোঁজা-খুঁজি করে অবশেষে সে আবিষ্কার করলো তাদের রান্না ঘরে কয়েকমাস আগে ইঁদুরের উৎপাত হয়েছিলো। সে সময় কাজের বুয়া ইঁদুর মারার জন্য বাজার থেকে কি যেনো বিষ কিনে এনে ছিলো। চানাচুরের সাথে সেই ইঁদুর মারা বিষ মিশিয়ে তারা ঘরের অনেক গুলো ইুঁদুর মারতে সক্ষমও হয়েছিলো। এ থেকে বুদ্ধিমান সায়মা বুঝতে পারলো ইঁদুরের বিষ খেয়েও সে মরতে পারবে। হয়তো একটু বেশি খেতে হবে এই আর কি।
তো যেই ভাবা সেই কাজ। কয়েকদিন খুজে অবশেষে ইঁদুরের সেই বিষের প্যাকেটটি রান্নাঘরের এক কোনা থেকে আবিস্কার করলো সায়মা। সবার আড়ালে এবার সে প্যাকেট টি লুকিয়ে রাখলো নিজের কাছে এবং পরদিন স্কুল থেকে ফিরে দুপুরের সময় যখন সবাই খেয়ে ঘুমাতে যায় তখন সে সেই প্যাকেট বের করে তাতে বিদ্যমান সবটুকু বিষ পানিতে মিশিয়ে খেয়ে ফেললো।
কিন্তু বিধিবাম! একে তো ইঁদুরের ঔষধ তার উপর বাংলাদেশী জিনজিরা কোম্পানী সুতরাং ভেজাল না হয়ে আর যাবে কোথায়! তাই শুরু হলো বমি। ঘরময় চিৎকার চেচোমেচি। দৌঁড়ে এলো কাজের বুয়া। অবস্থা বেগতিক দেখে ফোন দিলো বড় সাহেব আর ম্যাডামকে। তারাও অফিস থেকে দ্রুত বাসায় ফিরলেন। কিন্তু ইতোমধ্যে বিষের বেশ কিছু অংশ চলে গেছে সায়মার পাকস্থলীতে। ইঁদুর মারা ঔষদের প্যাকেট বিষয় বিষয়টি বোঝা তাদের জন্য তেমন কঠিন হলো না। দ্রুত নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে। সেখানে একটানা চিকিৎসা চললো ৬ দিন। ডাক্তাররা সায়মার পেট থেকে বিষের ক্রিয়া ও প্রভাব কমানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলেন। অনেক ঔষধও দেয়া হলো। ফলাফল হলো এই যে সায়মাকে তারা বাঁচাতে পারলেন, কিন্তু পূর্বের সেই চাঞ্চল্যকে তারা আর ফিরিয়ে দিতে পারলেন না। বিষাক্ত পদার্থের কারণে সায়মার পেটে একটি দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত হয়ে গেলো। যা স্থায়ী আমাশয় ও আরো কিছু অসুখের বীজ বপন করে গেলো ছোট্ট এই শিশুটির শরীরে। কবে নাগাদ এই অসুখের প্রকোপ পুরোপুরি কমবে বা আদৌ এর সম্পর্ণ নিরাময় হবে কি না, তার গ্যারান্টি কেউই আর দিতে পারলেন না।
চলবে...
বিষয়: বিবিধ
২৩০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন