ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও তার ডিজিটাল নতুন প্রজন্ম

লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ২০ আগস্ট, ২০১৩, ০৭:২৪:০৫ সকাল



দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এক নতুনত্বের ছোঁয়া ও বিপ্লবের ব্যাপক আশাবাদ জানিয়ে পাশ্চাত্যের ধ্যান-ধারণাকে পুঁজি করে চালু হয়েছিলো এক নতুন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা- ইংলিশ মিডিয়াম। হাই সোসাইটির মধ্যে হাই ডিমান্ডের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের আভ্যন্তরণী কঠিন বাস্তবতার খানিকটা তুলে ধরার চেষ্টা করবো বাস্তব কয়েকটি ঘটনায়। এখানে বর্ণিত প্রথম ঘটনাটি আমার কাছে বর্ণনা করেছে প্রত্যক্ষদর্শী। শুধু নাম ও বর্ণনায় একটু সাবলীলতা আনার চেষ্টা করা হয়েছে।

ঘটনা : ১

আনিক। মিরপুর, ঢাকার একটি নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের প্রেপ-২ এর ছাত্র। বয়স ৭ বছর ৫ মাস। কয়েকদিন যাবত আনিক কেমন যেনো একটু মনমরা হয়ে আছে। ক্লাসের অতি চঞ্চল আর দুষ্টু আনিক কেমন যেনো নিজেকে একটু গুটিয়ে নিয়েছে। অন্য সহপাঠিদের থেকেও একটু আলাদা থাকতে চাচ্ছে। নিজেকে কেমন যেনো আড়াল করার চেষ্টা করছে। হঠাৎ একদিন স্কুলে তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু আবিদ আবিস্কার করলো একটি আশ্চর্য বিষয়। টিফিনের বিরতিতে নাস্তা শেষে এক সাথে হাত ধোয়ার সময় আবিদ দেখলো আনিকের ডান হাতে কব্জি ও কনুয়ের মাঝখানে এলোমেলো কতগুলো কালো দাগের গভীর ক্ষত। ক্লাসের সবার চাইতে বেশি ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব ও আন্তরিক সম্পর্ক থাকলেও গত কয়েকদিন শার্টের হাতা গুটিয়ে রাখার কারণে আনিকের হাতের এই দাগগুলো আবিদের নজরে পরেনি। আজ হঠাৎ দেখতে পেয়ে তাই আবিদ খুবই আশ্চর্যের সাথে চেচিয়ে উঠলো। কাছে এসে প্রিয় বন্ধুর হাত ভালো করে দেখতে চাইলো।

অন্যমনস্কতার সুযোগে হাতের দাগগুলো আবিদ দেখে ফেলায় চমকে উঠলো আনিক। তারা তারি সে শার্টের হাতা গুটিয়ে ঢেকে ফেললো কালো দাগ গুলো। খানিকটা রুষ্টও হলো সে আবিদের উপর। কিন্তু আবিদ তো নাছোর বান্দা। প্রিয় বন্ধুর হাতে কি হয়েছে সে দেখবেই। বাসার টিফিন থেকে শুরু করে স্কুলের প্রায় সকল কাজে প্রতিদিন এক সাথে দুই বন্ধু গলায় গলা ভাব। আর সেই প্রিয় আনিকই আজ কেমন যেনো আবিদ থেকে কিছু লুকোচ্ছে। এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না আবিদ। তাই সে দেখবেই। কিন্তু আনিক ও অনমনীয়। সে দেখাবে না। কি হয়েছে হাতে? বার বার আবিদ জিজ্ঞাসা করলেও সে বলছে না। শুধু এড়িয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আনিককে হুমকি দিলো আবিদ। তাকে না দেখালে বা কি হয়েছে তা খুলে না বললে স্কুলের শিক্ষক এমনকি আঙ্কেল-আন্টিকে বলে দোর হুমকি দিলো সে প্রিয় বন্ধুকে। পরিশেষে বলতে বাধ্য হলো আনিক। আনিক যা বললো তাতে চমকে উঠলো আবিদ। বিষয়টি এমন-

একই স্কুলের এক ক্লাস জুনিয়র তানহাকে এরই মধ্যে পছন্দ করে ফেলেছে আনিক। গত কয়েক মাসে নাকি ওদের মধ্যে বেশ ভালো বন্ধুত্বও হয়ে গেছে। বাসায় সারাক্ষণ আধুনিক ডিশ এন্টেনা, কম্পিউটার আর মোবাইলের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দেশী-বিদেশী বিভিন্ন নাটক, সিনেমা, আর গানের অনুষ্ঠানের বদৌলতে ইতোমধ্যে সাড়ে সাত বছরের আনিক বুঝে ফেলেছে ‘প্রেম’ কি জিনিষ। কিভাবে গার্লফ্রেন্ডকে প্রপোজ করতে হয় তাও সে শিখে ফেলেছে। একইভাবে তানহাও জেনে গেছে বয়ফ্রেন্ড পছন্দ হলে কিভাবে তাকে পটাতে হয়।

কিন্তু সমস্যা হয়েছে গত সপ্তাহ খানেক আগে। আনিকের সাথে মাত্র ৪-৫ মাসের সম্পর্কে এরই মধ্যে নাকি তানহা বেশ হতাশ হয়ে পড়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে সে আনিক থেকেও বেশি স্মার্ট ও আকর্ষণীয় নাফিসের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করছে। প্রথম কয়েকদিন আনিককে বিষয়টি সরাসরি না বললেও এই সপ্তাহের শুরুর দিকে সে পরিস্কারভাবে বিষয়টি আনিককে বলেও দিয়েছে। কারণ টিভি ও ডিজিটাল উপকরণের সহজলভ্য অবাধ ব্যবহারের কারণে বয়ফ্রেন্ড পছন্দ না হলে কিভাবে সম্পর্কে ‘ব্রেক’ এনে তাকে ‘ইগনোর’ করতে হয় সে ব্যাপারে তানহা আনিকের চাইতে এক কাঠি বেশিই হাতে কলমের দীক্ষা নিয়ে ফেলেছে। তাই ‘ব্র্রেক’ হয়ে গেছে তানহা ও আনিকের সম্পর্ক। আনিকের এই শিশুবয়সে প্রথম হালকা প্রেম ও তাতেই প্রথম ধাক্কা! বেশ কনফিউজড তাই আনিক!! কি করবে সে ভেবে পাচ্ছে না। রাগে, ক্ষোভে শেষ পর্যন্ত বাবার রেজরের ব্লেড খুলে তা দিয়েই নিজের ডান হাতে কাটা-কাটি করেছে। রক্ত ঝড়িয়ে তাতে ক্ষত বানিয়েছে। আম্মু-আব্বু সারাদিন তাদের অফিস, টিভি সিরিয়াল আর হাই সোসাইটির বিভিন্ন পার্টি ও আড্ডার ব্যস্ততায় ছেলেকে সময় দিতে না পারায় এ কয়দিন তাদের থেকেও সে বিষয়টি লুকিয়ে রাখতে পেরেছে। কিন্তু আজ প্রিয় বন্ধু আবিদের কাছে ধরা খেয়ে এখন সে কাচু-মাচু করতে লাগলো। বিনীতভাবে আবিদকে বিষয়টি চেপে যাওয়ার অনুরোধ জানালো। আর সামনে কি করবে তারও পরামর্শ চাইলো।

চলবে...

বিষয়: বিবিধ

২৮২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File