মহাবিজয়ের পদধ্বনী শুনতে কি পাও!
লিখেছেন লিখেছেন মাই নেম ইজ খান ১৮ জুন, ২০১৩, ০৪:৩০:৫০ রাত
শীর্ষ প্রতিবেদন, আলোর মিনার জুন, ২০১৩
http://www.facebook.com/alorminar24
দীনের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন উলামায়ে কিরাম : ঈমান ও দেশ রক্ষায় সহস্র আলেমের আত্মত্যাগে উজ্জীবিত উম্মাহ : ঈমান ও দেশ বিরোধী কথিত পশ্চিমা কূটনীতিকদের চাপ, সাম্রাজ্যবাদীদের নির্দেশনা ও মুশরিকদের সহযোগিতায় আলেম হত্যা বুমেরং হয়েছে
গত ৫-৬ মে রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে ঘটে গেছে শতাব্দীর সবচেয়ে আলোচিত এক বেদনাদায়ক ঘটনা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত এদেশের মানুষ এমন ঘটনা আর কখনো প্রত্যক্ষ করে নি। নাম, জশ, খ্যতি কিংবা পার্থিব কোনো স্বার্থ হাসিলের জন্য নয় বরং গুটি কতেক নাস্তিক ও তাদের সহযোগী কর্তৃক প্রিয়নবী সা., তার সহধর্মিনীগণ, সাহাবায়ে কিরাম, ইসলামের মৌলিক বিধানাবলী এমনকি স্বয়ং মহান আল্লাহকেও কটাক্ষ করা, গালি দেয়া, কুৎসিত ও অশ্লীল আক্রমণে জর্জরিত করার প্রতিবাদে, একমাত্র ঈমানের তাগিদেই সেদিন সারা দেশ থেকে রাজধানী ঢাকা অভিমুখে ছুটে এসেছিলো তাওহীদী জনতা। নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষী ব্লগারদের শাস্তি ও প্রিয়নবী সা. এবং ইসলামের অবমাননার বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি নিয়ে তারা অবরোধ পরবর্তী অবস্থান কর্মসূচী পালন করছিলো মতিঝিলের শাপলা চত্বরে।
এক সাথে এতো আলেম-উলামা এবং ইসলামপ্রিয় নিরীহ জনতার এমন মহাজাগরণ ও অবরোধ পরবর্তী শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে আক্রমণের এই অনাকাঙ্খিত ঘটনায় হত-বিহব্বল হয়ে গেছে পুরো দেশ, জাতি। দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই হত্যাকান্ড সৃষ্টি করেছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার। হত্যাকান্ডে হতাহতদের প্রকৃত সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। সরকারের পক্ষ থেকে কখনো ‘কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।’ আবার কখনো ‘মাত্র ৮-১০ জন নিহত হয়েছে।’
বলে জানানো হলেও প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতদের হিসাব অনুসারে এখানে শহীদ হয়েছেন কয়েক হাজার। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে আড়াই হাজার। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘শাপলা চত্বরের ঘটনায় প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা সরকার প্রকাশ করেনি।’ হেফাজতের দাবী সেদিন তিন হাজার শহীদ হয়েছেন। সংখ্যা যাই হোক, এটি যে একটি ভয়াবহতম গণহত্যা এবং নারকীয় ঘটনা সে বিষয়ে সামান্যতমও বিবেকবান কাউকে আজ পর্যন্ত দ্বিমত পোষণ করতে দেখা যায় নি।
এই ঘটনার পর কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের বার্ষিক পরীক্ষা, আসন্ন রমজান ইত্যাদির কারণে বাহ্যিকভাবে হেফাজতে ইসলামের সাময়িকের জন্য নীরব ও স্তিমিত হয়ে যাওয়াকে একেকজন একেকভাবে ব্যখ্যা করছেন। কেউ কেউ বলছেন হেফাজতের আন্দেলন শেষ। কেউ মন্তব্য করছেন, এই ঘটনায় ইসলামের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেলো।
কিন্তু আসলে কি হয়েছে?
এই আন্দোলনে কি অর্জিত হলো আর কিইবা কি হারালো? এর ফলে ইসলাম বিরোধী শক্তির কতটুকু লাভ-লস হলো?
বাহ্যিকভাবে এই ঘটনাকে হেফাজত ও ইসলামী অঙ্গনে একটি পরাজয় বা ক্ষতিকর বলে মনে হলেও বোদ্ধামহল এর মাঝেই দেখছেন প্রকৃত বিজয়। শুধু বিজয়ই নয়, ৫-৬ তারিখের ঘটনা এই ভূখন্ডে ইসলামের মহাবিজয়ের সূচনা বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।
একটু পেছনের দিকে যদি ফিরে তাকাই তাহলে আমরা দেখতে পাবো শাহবাগ কেন্দ্রিক একটি আন্দোলনকে ঘিরে নাস্তিকদের হঠাৎ উজ্জীবিত হয়ে ওঠা, প্রশাসন, মিডিয়া এবং সাম্রাজ্যবাদীদের সর্বাত্মক সহযোগিতায় খেই হারানো বাগী আন্দোলন ধীরে ধীরে যখন ইসলাম ও ইসলামী রাজনীতি এবং পর্যায়ক্রমে আলেম-উলামাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার শুরু করলো, দাঁড়ি-টুপি ও ইসলামী পোষাককে লাঞ্ছিত ও অপমান করার ষোলকলা পূর্ণ করার দ্বারপ্রান্তে, বিশাল সমর্থন আর প্রশাসনের সহযোগিতায় পুরো দেশ যখন আতঙ্কিত ও শঙ্কিত তাদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের বিষয়টিই যখন অনেকের কাছে অসম্ভব বলে মনে হচ্ছিলো। ঠিক সেই মুহূর্তে দৃশ্যপটে উঠে আসলেন আল্লামা আহমাদ শফী দা. বা.। ঢাকা থেকে বহু দূরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে তিনি হুংকার দিলেন। ইসলামের উপর আক্রমণ ও রাসূলের শানে বেয়াদবীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেন। অল্প কিছুদিন পূর্বের তার প্রতিষ্ঠিত অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতের ব্যানারে শুরু হলো প্রতিবাদ। ধীরে ধীরে ঈমান ও আমল রক্ষার এই প্রতিবাদী আন্দোলনে পুরো জাতি ঘুরে দাঁড়ালো। ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি তোলা শাহবাগ মঞ্চ ধীরে ধীরে মুমিনদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মুখে জৌলুস হারাতে লাগলো। মাত্র কিছু দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি এমন একটি পর্যায়ে এসে উপনীত হলো যে, এখন আর কেউ প্রকাশ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস হারিয়ে ফেললো। এক সময়কার ‘নাস্তিক’ বলে নিজেদেরকে ভাবধারণকারীরাও এবার বেড়ালের মতো মিঁউ মিঁউ শুরু করলো। জনগণের কাছ থেকে নিজেদের পিঠ বাঁচাবার তাগিদে নিজেদেরকে মুসলিম এবং ইসলামের দরদী প্রকাশে তারা মরিয়া হয়ে উঠলো। শেষ পর্যন্ত নাস্তিক শব্দটি হয়ে গেলো এক সর্বনিকৃষ্ট গালি। ফলে প্রথমে মঞ্চ ছোট করা ও পরে তাকে প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে নাস্তিকরা উঠিয়ে নিতে বাধ্য হলো।
ইসলাম বিরোধীদের সেই বিশাল উত্থান কর্পূরের মতো উবে যাওয়া এবং এদেশে আগামী একশ’ বছরের জন্য নাস্তিক্যবাদকে একটি প্রতিষ্ঠিত নষ্ট ও বিকৃত মস্তিস্কের ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করাটা হেফাজতের এতোগুলো তাজা প্রাণেরই অর্জন -তাতে আসা করি কারো দ্বিমত নেই।
প্রিয়নবী সা. এর পর থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত বিগত দিনের ইসলামী ইতিহাসে মুসলিমদের কাছে কখনই শহীদ ও শাহাদাতের বিষয়টি পরাজয়ের কিছু ছিলো না। বরং সব যুগে, সব সময়েই মুসলিমদের শাহাদাতের বিষয়টি বিজয় ও মহাবিজয়ের সুসংবাদ বলেই অভিহিত হয়ে আসছে। গত ১৪ শত বছরের মুসলিম ইতিহাসে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে কোনো ভূখন্ডে ইসলামের নিরংকুশ বিজয়ের জন্য সেখানে মুসলিমদের ব্যাপক আকারে শাহাদাত বরণ একটি অপরিহার্য বিষয়। শহীদের রক্ত ছাড়া কোনো ভূমিই ইসলামের জন্য উর্বর হয় না। শহীদের রক্তের স্রোত বেয়েই কিন্তু বিজয় আসে।
এছাড়াও এই ভূখন্ডের উলামায়ে কিরামের কাছে ইসলামের জন্য জীবন দেয়াটি একটি স্বাভাবিক বিষয়। ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনে উলামায়ে দেওবন্দ কওমী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাই করেছিলেন এই ভূখন্ডে ইসলামের সংরক্ষণ ও হেফাজতের জন্য। ইলম ও আমলের সমন্বিত রূপই হচ্ছে উলামায়ে কিরাম। আমাদের দেওবন্দের আকাবীরগণ নিজেদের জীবন-সম্পদ সব উজার করে দিয়ে ইসলামকে রক্ষা করেছেন। কুরআন-হাদীসকে নিজেদের বুকের মাঝে রেখে সংরক্ষণ করেছেন। সুতরাং তাদের উত্তরসূরীদের কাছে ইসলামের জন্য আত্মত্যাগ অস্বাভাবিক বা নূতন কিছু নয়। তবে অনেক দিন যাবত মাঠে ময়দানে, সমাজ ও রাষ্ট্রে আমাদের দেশের আলেম-উলামাগণ বিচরণ না করায় যেই দূরত্ব ও জটিলতা তৈরী হয়েছিলো গত ৫-৬ তারিখের ঘটনা তাও পরিস্কার করে দিয়েছে। এই ঘটনা মুমিন, মুনাফিক আর কুফরের দোসরদের পরিচয় পরিস্কার করে দিয়েছে।
নবীন-প্রবীণ আলেমের মাঝে যে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে তা নি:সন্দেহে এই ভূখন্ডে আগামী দিনের সোনালী সকাল উপহার দিবে।
এরপরও যারা হতাশা ভোগেন তাদের জন্য কুরআনের দু’টি আয়াত:
অর্থ: “হে নবী আপনি বলে দিন! আল্লাহ আমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন তার বাইরে আমাদের কিছুই হবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক, আর আল্লাহর উপরই যেন মুমিনরা তাওয়াক্কুল করে।
হে নবী আপনি (অবিশ্বাসীদেরকে) বলে দিন! তোমরা কেবল আমাদের জন্য দু’টি কল্যাণের একটিরই অপেক্ষা করছ (হয়তো আমরা তোমাদের হাতে শহীদ হবো অথবা বিজয়ী হবো) আর আমরাও তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি মহান আল্লাহর আযাবের। হয়তো এই আযাব তিনি স্বয়ং তোমাদেরকে দিবেন অথবা আমাদের মাধ্যমে তোমাদের উপর এই আযাবের বাস্তবায়ন করবেন। অতএব তোমরা অপেক্ষা কর, নিশ্চয়ই আমরাও তোমাদের সাথে অপেক্ষমাণ।” (সূরা তাওবা, আয়াত ৫১-৫২)
বিজয় অতি নিকটে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ বলেন,
অর্থ: “আর তোমরা ভয় পেয়ো না এবং দুঃখিতও হয়ো না, (কারণ সাময়িক বিপদের পরে) তোমরাই বিজয়ী হবে -যদি মুমিন হয়ে থাকো।
যদি তোমাদেরকে কোন আঘাত স্পর্শ করে থাকে তবে তার অনুরূপ আঘাত উক্ত কওমকেও স্পর্শ করেছে। আর এইসব দিন আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন করি এবং যাতে আল্লাহ ঈমানদারদেরকে জেনে নেন এবং তোমাদের মধ্য থেকে শহীদদেরকে গ্রহণ করেন। আর আল্লাহ জালিমদেরকে ভালবাসেন না।
(সত্য মিথ্যার এই সংঘাত আল্লাহ এজন্য সংগঠিত করেন) যাতে আল্লাহ পরিশুদ্ধ করেন ঈমানদারদেরকে এবং (এই লড়াইয়ের মাধ্যমে) ধ্বংস করে দেন কাফিরদেরকে।
তোমরা কি মনে করো যে, তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনো প্রত্যক্ষ করে দেখে নেননি যে তোমাদের মধ্যে কারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে এবং জানেন নি ধৈর্যশীলদেরকে।” (সূরা আলে ইমরান, ১৩৯-১৪২)
এই আলোচনা শেষ করার আগে সূরায় ফাতহের দু’টি আয়াত উদ্ধৃত করছি। যেখানে বায়আতে রিদওয়ানের ঘটনায় বাহ্যিকভাবে সেটি মুসলিমদের পরাজয় বলে মনে হলেও আসলে তার মাধ্যমেই যে মহান আল্লাহ মুসলিমদের মহা বিজয়ের দ্বার উন্মুক্ত করেছিলেন তার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এখন দেখার বিষয় হলো আমরা কারা কারা মহান আল্লাহর দীন বিজয়ের জন্য নিজেদের সর্বস্ব নিয়ে কাজ করবো, তার উপর ভিত্তি করেই নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ বিজয় দিবেন।
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দিয়েছি। যেন আল্লাহ তোমার পূর্বের ও পরের পাপ ক্ষমা করেন, তোমার উপর তাঁর নিআমত পূর্ণ করেন আর তোমাকে সরল পথের হিদায়াত দেন।” (সূরা ফাতহ, আয়াত ১-২)
বিষয়: বিবিধ
১৮০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন