এমন এক নিস্তব্ধতা যা মনে করিয়ে দেয় জীবনের সব ত্রুটি বিচ্যুতি গুলো।
লিখেছেন লিখেছেন বিবেকের কান্না ০২ জুন, ২০১৩, ০৩:৩৪:১২ দুপুর
মনের কোনে একটু ভয় আর নীরবতা নিয়ে দু’কদম এক কদম করে সামনে এগুতে থাকলাম। বিভিন্ন গাছ গাছালি আর ফুল ফলের গাছে ঘেরা এক অপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবেশ। এই সুমিষ্ঠ প্রাকৃতিক ছায়ার মধ্যেও কেন যেন মনের মধ্যে কোন ধরনের উৎফুল্লতা অনুভব করছি না। এ ধরনের ছাঁয়া ঘেরা নির্মল পরিবেশে কোন মানুষের উৎফুল্ল না হবার কথা নয়। কিন্তু এখানে শুধু আমার নয়, সবারই মন মলিন। কোন এক অজানা চাপ সবাইকে যেন নীরব আর নিস্তেজ করে দিয়েছে। পুরো পরিবেশে বিরাজ করছে এক মহা নিস্তব্ধতা। এমন এক নিস্তব্ধতা যা মনে করিয়ে দেয় সারা জীবনের সব ত্রুটি বিচ্যুতি গুলোর কথা।
আমি ধীর গতিতে হাঁটছি। আমার সামনে পিছনে সবাই খুব ধীরেই হাঁটছে। জোর কদমে হাটবে এমন শক্তি নিয়ে কে বা আসে এখানে ? এখানে আসলে সবার শক্তিই তো নিস্তেজ হয়ে যায়। এখানে এসে মানুষ তার ভাল কাজ কতটুকু করেছে তার হিসাব কষে না । এখানে হিসাব কষে তার জীবনে ঘটে যাওয়া পাপাচার গুলো নিয়ে। চোখের কোনে দু’ ফোঁটা পানি জমে আল্লাহর রাহে পাপ মুক্তির আশায়।
আমাদের দৃষ্টি সীমার বাহিরে এখানে লক্ষ মানুষের অবস্থান। ছোট বড় ধনী গরীব সব মানুষই এখানে শায়িত আছে। আমি ধীর কদমে হেঁটে চলেছি আর চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মনে মনে বলছি “আসসালামু আলাইকুম ইয়া আইয়্যুহাল কুবুর”। চারিদিকে সারি সারি কবরের চিহ্ন। অনেক পরিস্কার পরিছন্ন আর পরিপাটি করে গোছানো কবরগুলো। আমার বন্ধুর শাশুড়ীকে কবরে শায়িত করা হল। আমার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু নীরবে ঝরতে লাগল। আমি অনুভব করতে থাকলাম ঠিক একই ভাবে আমাকেও একদিন আমার আপন জনেরা এভা্েব চিরবিদায় দিবে। বন্ধুর শাশুড়ীর প্রতি ভালবাসার জন্য আমার এ কান্না নয়। আমার চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে থাকল মৃত্যুর পর নিজের পরিনাম কি হবে তা ভেবে। কয়েকটি সূরা পড়লাম আর দোয়া করলাম হে আল্লাহ তুমি আমাকে ও আমার বাবা মা স্ত্রী সন্তান সহ সবাইকে কবরের কঠিন আজাব থেকে মুক্তি দিও। আর এখানে যারা শায়িত আছে তাদেরকে কবরের কঠিন আজাব থেকে মুক্তি দাও।
ছোট ছোট সাইনবোর্ডে কবরে শায়িত ব্যক্তির নাম পরিচয় লেখা আছে। কোন কোন কবর তো ইট পাথরের দালান দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে ! যা একেবারেই ইসলাম সম্মত নয়। সামাজিক পদ পদবী উল্লেখ করে কবরে শায়িত ব্যাক্তির নাম পরিচয় লিখে রাখা হয়েছে। অধ্যক্ষ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সংসদ সদস্য ইত্যাদি পরিচয়গুলো খুব ভালভাবে প্রকাশ করার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব পদ পদবীর বদলৌতে কবরে যে কোন খাতির পাওয়া যাবে না তা আমরা ক’জনই বা বুঝি। এসব এলো মেলো অনেক ভাবনা ভাবতে ভাবতে আজিম পুর কবর স্থান থেকে বেরিয়ে এলাম। ছুটে চললাম খুব দ্রুত গতিতে আবারও সেই দুনিয়ার টানে, যা কিনা আমাদেরকে আল্লাহ বিমূখ করে রেখেছে।
বিষয়: বিবিধ
৩২৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন