ক্ষমতার মসনদ খান খান হবেই আজ হোক বা কাল।
লিখেছেন লিখেছেন বিবেকের কান্না ০৩ মে, ২০১৩, ০৯:৪৮:০১ সকাল
১৯৬০ থেকে ১৯৭৯ সালের ইরান ।
২০০৮ থেকে ২০১৩ সালের বাংলাদেশ।
খুবই গুরুত্বপূর্ন ইতিহাস।
আমরা ইতহাস থেকে শিক্ষা নিই না।
তবুও জানা দরকার।
কি মিল আর অমিল আছে অতীতের সাথে বর্তমানের।
অনেকে হয়ত পড়েছেন।
যারা পড়েননি মূলত তাদের জন্যই আমি এখানে পেশ করার গুরুত্ব উপলব্ধি করছি।
" তিনি ইরানের দুর্দান্ত শাহ। কাকতালীয় হলেও সত্য, তিনিও ১৯৭৫ সালে সব দল বিলুপ্ত করে বাকশালের মতো ‘রাস্তাখিজ’ নামের একদলীয় শাসন কায়েম করে বলেছিলেন, এখন থেকে ইরানের জন্য দু’টি পথ খোলা। এক. যারা মানবে না ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইরান ছাড়বে। দুই. অন্যদেরকে ‘রাস্তাখিজ’ দলের আদেশ মানতে হবে। বাকশালের মতো ইরানি শাহেরও হিমালয় সমান দুর্নীতি এবং স্বৈরাচারী শাসন তার পতনের অন্যতম কারণ। ইরানের মানুষ যখন না খেয়ে থাকছে তখন ১৯৭১ সালে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে ময়ূরের গোশত দিয়ে পশ্চিমাদের নিয়ে পারস্য সাম্রাজ্যের ২৫০০ বর্ষপূর্তি পালন করে দুনিয়াজোড়া যে কলঙ্কের সৃষ্টি করেছিলেন, তা এখন পর্যন্ত ইরানের মানুষদের জন্য নাইটমেয়ার। বিরোধীকণ্ঠ স্তব্ধ করতেই আয়াতুল্লাহ খোমেনিকে বের করে দেন ১৯৬৩ সালে। ইরানের মোড়ে মোড়ে রাজার ছবি এবং মূর্তি ছিল বাধ্যতামূলক। এমনকি সিনেমা হলেও জাতীয় সঙ্গীতের সাথে সাথে নানা দুর্দান্ত পোশাকে রাজার ছবি দেখানোর হুকুম। আমাদের মতোই ১০০০ থেকে ১ টাকার নোট, সর্বত্রই শাহ। অথচ ১৯৭৯ সালের অভ্যুত্থানের পর প্রতাপশালী শাহজাহানের ময়ূর সিংহাসনে শপথ নেয়া এই দুর্ধর্ষ শাহ একটু আশ্রয়ের জন্য পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কেউ ঝুঁকি নিতে রাজি হননি। পরে হালেডালে মৃত্যু হয়েছে। ধনসম্পদ আর রাজত্বের বেদনায় দুই প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান আত্মহত্যা করেছে। বেঁচে থাকলে এরাও রাজা-রানী হয়ে বাবার মতো দুঃশাসনে লিপ্ত হতেন। ইরানে কতটুকু গণতন্ত্র আছে সেটা প্রশ্ন নয় বরং বৃহত্তর জনগোষ্ঠী খোমেনির প্রত্যাবর্তনকে সমর্থন করেছিল বলেই এই বিপ্লব সফল হয়েছিল। পাবলিক রেকর্ড অনুযায়ী মুজিব হত্যার প্রতিবাদে একটি মিছিল পর্যন্ত হয়নি। কাদের সিদ্দিকীর দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধও জনসমর্থনের অভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
যা বলতে চাই, ইতিহাসের এসব ঘটনা খাটো করে দেখলে অবস্থা হতে পারে আফ্রিকার গৃহযুদ্ধকবলিত দেশগুলোর মতো, যুদ্ধ যেখানে রুটিন। বর্তমান সামাজিক আর রাজনৈতিক জীবনে যে অব্যাহত উছৃঙ্খলতা, বৃহত্তর স্বার্থে কিছু ত্যাগ স্বীকার জরুরি। সব সমালোচনাই নর্দমায় না দিয়ে বরং আলোচনা করলে লাভ হবে। এই পরিস্থিতি বিশ্ব মিডিয়ার কাছে পৌঁছানো ছাড়া উপায় নেই। স্বেচ্ছায় গণগ্রেফতার কর্মসূচি দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অক্যুপাই ওয়াল স্ট্রিটের মতো অবস্থান নিতে হবে। রাষ্ট্রদূতদের অফিস ঘেরাও করতে হবে। আরব বসন্ত এভাবেই প্রচার পেয়েছিল। অন্যথায় পাখির মতো মরতে মরতে খাঁচাশূন্য হয়ে যাবে।
২০২১ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনা কোথাও যাচ্ছেন না। এখন আর মধুচন্দ্রিমার সময় নেই। কিউবার বাতিস্তাকে উৎখাতের সময়ে ক্যাস্ট্রোর সাথে সৈন্য ছিল মাত্র কয়েক শ’ কিন্তু তার ছিল বিপুল জনসমর্থন, যে জনসমর্থন শেখ মুজিবেরও ছিল কিন্তু নেতাজির ছিল না, থাকলে হয়তো পাকিস্তানের জন্ম হতো না। আর বিপুল জনসমর্থনের কারণেই ৭ নভেম্বর সফল হয়েছিল। লেখাটির মাধ্যমে কোনো পক্ষকেই সমর্থন বা বর্জন করছি না তবে হেফাজতের জনসমুদ্র এবং চরমোনাই পীরের মতো ইসলামিক জাগরণ দেখে মনে হওয়াই স্বাভাবিক ’৭১-এর নামে যে চেতনার প্রাদুর্ভাব হয়েছিল, ৪২ বছর পর তা ভিত্তি হারাচ্ছে। রাজনীতি আর সংস্কৃতির নামে উচ্ছৃঙ্খল আর অশৃঙ্খলতা এড়াতে এরা রাস্তায় নামছে। সরকারকে দিয়ে বাঙালির উৎসবগুলোকে ’৭১-এর চেতনা বলে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে যার ৯০ শতাংশই ওপার থেকে আমদানি করা। গত ১০ বছর থেকে একটি অদৃশ্য শক্তি জোর করে এসব ঢুকিয়ে দিচ্ছে নানা প্রতিষ্ঠানে। ফলে রবীন্দ্রনাথের ভারে তলিয়ে যাচ্ছেন নজরুল। আর এসব কারণেই না চাইলেও মধ্যরাতের জমজ ভাইয়ের অনুকরণে ইসলামিক রিপাবলিক সময়ের ব্যাপার মাত্র। যারা দ্বিমত পোষণ করেন, তারা ইতিহাসমূর্খ।
সত্য যে, আগে মুসলমানের স্বার্থ রক্ষা না হলে হিন্দুদেরও হবে না। বাঙালি মুসলমানেরা সাম্প্রদায়িক নন, কিন্তু ধর্মের বিষয়ে কোনো রকম ছাড় দেন না, তার প্রমাণ প্রত্য সংগ্রাম থেকে দেশ বিভাগে এদের ভূমিকা। ’৭১-এর চেতনা নামে মুক্তিযুদ্ধের প-বিপরে নামে যে লড়াই চালু করেছে আওয়ামী লীগ এখন তা এপিডেমিকে রূপ নিতে নিতে প্রায় মরার পথে। এর মূলে কারা আমরা তা জানি। জামায়াত-শিবিরকে রাস্তায় নামতে দেয় না, মূর্তি-মন্দির এরা ভাঙছে না বরং দেশজুড়ে সংখ্যালঘুদের ওপর তাণ্ডব সৃষ্টি করে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে প্রথম বিশ্বে লবি করছে আওয়ামী লীগ। সাথে পেয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের মতো ব্যর্থ এবং প্রোপাগান্ডা সংগঠনগুলোকে। তলে তলে এরা গুপ্তচরের কাজটি করছে। বরং এদের কারণেই বাংলাদেশের হিন্দুরা মানুষের মর্যাদা অর্জন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে কথায় কথায় দেশ ছাড়ছে। এই কিস্তিতে গেছে অনেক। সুপরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করে ভোটের ত্রে তৈরি করা অব্যাহত। আমি একজন সংখ্যালঘু পরিবারের সন্তান সুতরাং এই আঘাত আমিও অনুভব করি। যদি দিল্লির স্বার্থ বড় করে দেখতে হয়, ’৪৭ কে কবর দিয়ে ’৭১ কে জীবিত রাখলে রাজনীতির নিম্নচাপে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ মুসলমানেরা ভবিষ্যতে না-ও দেখতে পারে। ড. মিজানুর রহমানের কথাই ঠিক, ২০ বছর পর হয়তো এ দেশে হিন্দু থাকবে না। আমার ভয়, ২০ বছর লাগবে না। যদি তা-ই হয় তাহলে সব দায়িত্ব শেখ হাসিনাকেই নিতে হবে। কারণ নখের নাগালে তিন মিনিটের সমাধান উপেক্ষা করে বেছে নিলেন বাশার আল আসাদের পথ।
মানুষের জীবনের চেয়ে বড় দুই নেত্রীর ব্যক্তিগত ঝগড়াঝাটি। জয়হিন্দ আর বাংলাদেশ জিন্দাবাদ আদর্শের দুই নেত্রীর অবস্থান হলো, একজন ফিলিস্তিনে, অন্যজন ইসরাইলে। আর আমরা কিনা দুইজনকে এক টেবিলে বসানোর জন্য আদালত পর্যন্ত চুরমার করি। কথায় বলে, মূর্খের অশেষ দোষ, ক্ষণে হাত্তি, ক্ষণে মোষ। যে জাতি জয়হিন্দ আর জিন্দাবাদের পার্থক্য বোঝে না সেই জাতি জ্বলেপুড়ে না মরলে কি ইউরোপিয়ান-আমেরিকানরা জ্বলবে? নিউ ইয়র্কে সাংবাদিক সাদেক খানের মন্তব্য, ৫ মের মধ্যে সেনাশাসনের সম্ভাবনা। আমার ধারণা, আসন্ন বিপ্লবে সরকার এবং সরকার সমর্থকরা যতই বাধা দেবে আরব বসন্তের মতো এই আন্দোলন ততই ছড়িয়ে যাবে।"
সূত্র ঃ http://www.dailynayadiganta.com/?p=175454
বিষয়: বিবিধ
১৬৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন