আম্মু....
লিখেছেন লিখেছেন সোজা কথা ফেসবুক পেজ ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০২:৩৯:০৯ দুপুর
আমাদের সাথেই থাকুন
আমাদের মা-ছেলের সম্পর্কটা অনেকটাই আবেগহীন । অনেক আবেগী কথার ফুলঝুড়িতে ভালোবাসার উপচানো প্রকাশ নেই । কথাবার্তাতেও খুব একটা গাঢ়ত্ব নেই । অনেক আবেগসিক্ত প্রসঙ্গও মাঝে মাঝে এতোটা সাধারণ ভাবে আওড়ে যাই যা গল্প সাহিত্যের মা ছেলের সম্পর্কের সাথে অনেকটাই বেমানান । যখন মায়ের কাছে থাকতাম তখনো তার বুকে মাথা রেখে গুমড়ে কেদেছি কিংবা আনন্দের আতিশয্যে খুব অন্তরঙ্গ উচ্ছাস প্রকাশ করেছি এমনটা খুব হয়নি । আমাদের পরিবারে এরকম একাঙ্কিকার দেখা পাওয়া ভার ।আর এখনতো লেখাপড়ার জন্য ঘরছাড়া । তাও অনেকবছরের কথা ।
অনেকদিন পরপর বাড়ি যাই । ক্ষণজন্মা কিছু স্মৃতির মতো করে মায়ের স্পর্শ নিয়ে দ্রুতই ঘরে ফিরি । বাড়িতে গেলেই আমাদের নিয়ে আম্মুর অগনিত আশংকার ছাপ আঁকা উত্কন্ঠিত মুখটা দেখি । মেহমানের মতো দু একদিন বেড়িয়ে আবার যখন চলে আসি নিজের জায়গায় তখন বিদায়ের সময়ও এ অশ্রু লুকোনোর এক প্রতিযোগিতা লেগে যায় । তারপর আবার বিরতি । মাঝখানে আবার দাড়িয়ে যায় অনেকগুলো দিন, অনেক ব্যস্ততা পড়াশোনার চাপ । আম্মু প্রায়ই ফোন দেন । অনেক আশঙ্কা আর দুশ্চিন্তার একটা রাশ উপলব্ধি করি । কিন্তু কথা গুলো হয় একদম নিরুত্তাপ কন্ঠে । দুজনই বুঝতে পারি বুকের ভেতর কিছু একটা উথলে এসে গলার কাছে জড়ো হয় । অনেকদিন তাকে দেখতে না পারার এক অব্যক্ত বেদনায় চোখগুলো কেমন জ্বলতে থাকে । তবু দুজনেই খুব সন্তর্পনে ব্যাপারগুলো এড়িয়ে যাই । কন্ঠস্বর যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করি । আর মনে মনে ভাবি; যাক, দূরালাপনীর এ দূরত্ব আমাদের এ অভিনয়টুকু সহজ করে দিয়েছে । তা নাহলে আম্মুর সামনে চোখের জল নিয়ে কি বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপারটাই না হতো ! আম্মু অবশ্য অতটা ভালো অভিনয় করতে পারেন না । প্রায়ই আমার কাছে ধরা পড়ে যান । আমি তবু তাকে বুঝতে দেই না । থাক না আমার এই লুকিয়ে ফেলা চোখের জলের এই পবিত্র ধারা । যারা অবিরল ধারায় আমি অনুভব করতে পারি এক পবিত্র সুনিশ্চিত আন্তরিক দোয়ার আবাহন, কল্যাণকামীতার উষ্ণ প্রসবণ ।
আমরা মা ছেলে দুজনই এদেশের সবুজ ভূখন্ডকে ভালোবেসে এর জন্য সবচেয়ে সেরা উপহার হিসেবে একটা কালেমা খচিত পতাকা দেয়ার সপ্নে কাজ করে যাচ্ছি । অগনিত অন্যায় অবক্ষয় আর অব্যাবস্থাপনার জন্জাল ঠেলতে গিয়ে অনেক বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় । আম্মু আমাকে সবরের উপদেশ দেন । কাজের খোজ খবর নেন । আমিও মাঝে মাঝে নেই । ইদানীং ফ্যাসিবাদী শক্তির ক্রমান্বয় জুলুম নির্যাতন যায়গায় যায়গায় আমাদের অগণিত ভাইদেরকে গৃহহারা করেছে, আল্লাহর দেয়া এই জমীনে তার বিধান প্রতিষ্ঠাকামী বান্দাকে কারাগারে নিক্ষেপ করছে আর অগনিত ভাইকে শহীদ করে দিচ্ছে । তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে জুলুমের খড়গ । অনেকদূর থেকে আমার মা তার চোখের পানিতে জায়নামাজ ভিজিয়ে ফেলছেন । অনেক উত্কন্ঠিত কন্ঠে খোজ নিচ্ছেন । তার আবেগ লুকানোর সেই প্রচেষ্টাটুকুও খুব দেখতে পাচ্ছি না । দ্বীন কায়েমের এ কাফেলার সাথে জড়িত থাকায় কর্মসূচীগুলোতে যেতে না করেন না । কিন্তু সাবধানে থাকতে বলেও স্বস্তিতে থাকতে পারেন না । বাড়িতেও সাংগঠনিক পরিচয় থাকায় সেখানেও নিরাপত্তা নেই । ফ্যাসিষ্টরা সারাদেশেই জুলুমের পসরা সাজিয়ে রেখেছে ।তারাও সেখানে খুব ভালো নেই । আম্মুর কথাগুলোতে আমি শিহরিত হই । নতুন শপথে উদ্দীপিত হই । কৃতজ্ঞতায় স্রষ্টার কাছে শোকর আদায় করি তিনি আমাকে এমন মা দিয়েছেন । যিনি আমাকে শাহাদাতের অনুপ্রেরণা দিতে পারেন । অনেক সংশয়িত মূহূর্তে আমাকে আলোড়িত করতে পারেন ।
কিছুক্ষণ আগে nullফোন করেছিলেন । কিছুক্ষণ থেমে থেমে কথাগুলো বলছিলেন । এক পর্যায়ে আমাদের শহীদ ভাইদের কথা চলে এলো । ওঁদের কথা বলতে বলতে একসময় তার কথা আটকে যেতে লাগলো । বুঝতে পারলাম আম্মু এখন আর সামলাতে পারবেন না নিজেকে ।আমি আমার মেকী নিরাসক্ততা বজায় রাখার চেষ্টা করছিলাম । একটা পর্যায়ে যখন দেখলাম আর পারছি না খুব দ্রুত কথা শেষ করে ফোনটা কেটে দিলাম । আবেগের এ দেয়ালটুকু নাইবা ভাঙ্গলাম ।দেখি মা ছেলের এই অভিনয়টুকু আর কতোদিন চালানো যায় । খুব ভালো হতো যদি একেবারে জান্নাতে গিয়ে যদি আমার মাকে আমার আবেগের কথাগুলো খুলে বলতে পারতাম, আমার শাহাদাতের সাক্ষ্য তাকে বানাতে পারতাম । মহান আল্লাহ কী আমায় দেবেন সে সুযোগ ? দেবেন সেই ইর্ষণীয় সৌভাগ্য ?
বিষয়: বিবিধ
১০২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন