রক্তাক্ত বাংলাদেশে! রক্তাক্ত বাংলাদেশে! রক্তাক্ত বাংলাদেশে !

লিখেছেন লিখেছেন সত্য চিরন্তন ০১ মার্চ, ২০১৩, ০২:৩২:৩৬ দুপুর

সারা বাংলাদেশে প্রায় ১০০ জন শহীদ ৭১ এর পর এক দিন এই তান্দব দেখল বাংলাদেশের জনগণ ।

এর দায় কে নেবে ????

আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সাঈদীর রায়

সেকুলার বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডাদেশ

বিশ্ব মিডিয়ায় বৃহস্পতিবার জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায় ফলাও করে প্রকাশ করা হয়। প্রায় সব মিডিয়ায় বলা হয়, সেকুলার বিক্ষোভকারীরা ফাঁসি দেয়ার যে দাবি জানিয়ে আসছিল, তার প্রেক্ষাপটে বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করা হলো।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আলজাজিরায় বলা হয়, আন্তর্জাতিক কোনো তদারকি ছাড়াই কেবল দেশীয় বিচারালয় হিসেবে বিচারকাজ সম্পন্ন করে। ট্রাইব্যুনালকে ঘিরে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এতে কেবল বিরোধীদলের লোকজনকে টার্গেট করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে।

এই রায় দেয়া উপলক্ষে রাজধানীতে ১০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সরকার সহিংসতা প্রতিহত করতে বিজিবিও মোতায়েন করে। জামায়াতে ইসলামী হরতাল আহ্বান করার প্রেক্ষাপটে ঢাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ থাকে, শহরের রাস্তাগুলো ছিল ফাঁকা।

এতে বলা হয়, ফেব্রুয়ারিতে ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলে ইসলামপন্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে। এ সময় ১৬ জন নিহত হয়। ওই রায়ের পর সেকুলার বিক্ষোভকারীরা একে ‘হালকা সাজা’ অভিহিত করে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দাবি করতে থাকে।

বিবিসির খবরে সাঈদী ও অন্যদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করা হয়।

এতে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দাবি করে বুধবার রাজধানীতে শাহবাগ আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভের কথাও উল্লেখ করা হয়।

বিবিসির খবরে আরো বলা হয়, বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালের এটা তৃতীয় রায় প্রদান। এই ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের ৯ জন এবং বিএনপির দুইজনের বিচার করা হচ্ছে।

যুদ্ধাপরাধ বিচারকাজ নিয়ে ঢাকায় সহিংসতার সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, এই ঘটনায় অনেক লোক নিহত হয়েছে।

এতে বলা হয়, মানবাধিকার গ্রুপগুলো বলছে, ট্রাইব্যুনালটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী গঠন করা হয়নি। জামায়াত ও বিএনপি অভিযোগ করেছে, বর্তমান সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে।

ভারতের বিভিন্ন মিডিয়ায় সেদেশের বার্তা সংস্থা পিটিআই পরিবেশিত খবর প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ১২০ পৃষ্ঠার রায়ে ট্রাইব্যুনাল ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটির সত্যতা পায়।

এ দিকে গার্ডিয়ান পত্রিকায় বলা হয়, ট্রাইব্যুনালের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশে সহিংস বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ নিয়ে সৃষ্ট আন্দোলনের ফলে বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা যুদ্ধপরবর্তী অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারেনি, তাই প্রকটভাবে দেখা গেল।

নিউ ইয়র্ক টাইমসেও বাংলাদেশে ১৯৭১ সাল নিয়ে বিভক্তির কথা তুলে ধরা হয়। এতে শাহবাগের আন্দোলনকারীদের ফাঁসির দাবির কথাও উল্লেখ করা হয়। এতে বিশিষ্ট মানবাধিকার নেত্রী সুলতানা কামালের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানানোতে তিনি লজ্জিত। তিনি বলেন, তিনি মনে করেন, এই যুদ্ধাপরাধীদের যুগের পর যুগ শাস্তি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।

সুলতানা কামাল বলেন, তাদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দাবিটি আমাদের গ্রহণ করতে সমস্যা আছে। তবে তাদের দেশের প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া না হলে এসব লোক আবার ফিরে আসবে।

‘সৌদি গেজেট’ তার অনলাইনে শিরোনাম করেছে- ‘বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ আদালতে ইসলামপন্থীকে মৃত্যুদণ্ড।’ বার্তা সংস্থা এএফপিকে উদ্ধৃত করা ওই সংবাদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একটি বিশেষ আদালত একজন সিনিয়র ইসলামপন্থী বিরোধী নেতাকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণের অভিযোগে বৃহস্পতিবার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদী যথেষ্ট বিতর্কিত অভ্যন্তরীণ এই ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়া দ্বিতীয় রাজনীতিবিদ।

‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ শিরোনাম করেছে- ‘বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ আদালতে ইসলামী দলের এক নেতার মৃত্যুদণ্ড।’ সংবাদে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাংলাদেশের মৌলবাদী জামায়াতে ইসলামী দলের একজন শীর্ষ নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় এই নেতা গণহত্যা ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণে অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। বাংলাদেশের একটি বিশেষ আদালত জামায়াতের ডাকা দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের মধ্যেই দলটির ভাইস প্রেসিডেন্ট দেলাওয়ার সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিলো। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান এ টি এম ফজলে কবির ঘোষণা করেন যে- তার মৃত্যু পর্যন্ত তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা হবে।

সংবাদে বলা হয়, ১২০ পৃষ্ঠার এই রায়ে ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে আনা ২০টি অভিযোগের ৮টিতে এই ইসলামপন্থী নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। তার রায় ঘোষণা উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকা ও দেশটির বড় শহরগুলোতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সারা দেশে সহিংসতা শুরু হলে ‘রয়টার্স’ শিরোনাম করে- ‘বাংলাদেশে ইসলামপন্থী নেতাকে মৃত্যুদণ্ড : সহিংসতায় ১৫ জন নিহত।’ সংবাদে বলা হয়, বাংলাদেশের একটি আদালত ইসলামপন্থী দলের এক নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দিলে তার সমর্থকরা দেশব্যাপী বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং তাতে কমপক্ষে ১৫ জন (বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে আটটা) নিহত হন। জামায়াতে ইসলামী দলের ৭৩ বছর বয়সী এই নেতাকে গণহত্যা, ধর্ষণ, নিষ্ঠুরতা, লুট ও জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। কর্মকর্তারা বলেন, ১৯৭১ সালে দেশটির স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তিনি এসব অপরাধ করেন। এই রায় ঘোষণার দিন ইসলামি দলটি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করে। পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও গণমাধ্যমগুলো বলছে, রায় ঘোষণার পর এক ডজনের বেশি জেলায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ও জামায়াত কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ জন নিহত ও ২০০ জন আহত হয়। বিক্ষোভকারীরা দেশটির নোয়াখালী জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি ধর্মীয় উপাসানালয় ও কয়েকটি বাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কক্সবাজার জেলায় একটি থানায় হামলা চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, রায় ঘোষণার সময় সাঈদী আদালতের কাঠগড়ায় স্পর্ধিত ভঙ্গিতে শান্তভাবে বসা ছিলেন। রায় ঘোষণার পর আদালতকে সাঈদী বলেন, ‘আমি কোনো অপরাধ করিনি। বিচারকরা তাদের বিবেক থেকে এ রায় দিতে পারেননি। তারা শাহবাগের আন্দোলনকারীদের চাপে প্রভাবিত হয়ে এ রায় দিয়েছেন।’ সাঈদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, তার দণ্ড রাজনৈতিকভাবে প্রভাবান্বিত। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো। রয়টার্সের খবরে আরো বলা হয়, এই ট্রাইব্যুনালের মান নিয়ে মানবাধিকার গ্রুপগুলো সবসময় সমালোচনা করে আসছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, আসামিপক্ষের আইনজীবীগণ, সাক্ষী ও তদন্ত কর্মকর্তারা হুমকির মুখোমুখি হয়েছেন।

সমালোচকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী প্রধান দু’টি বিরোধীদলের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা বেগম খালেদা জিয়া এই ট্রাইব্যুনালকে ‘প্রহসন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে হাসিনার দল কোনো প্রকার পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ১৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দক্ষিণ এশিয়ার এই মুসলিম দেশটি আগামী জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের আগে আরো অনেক সহিংস পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন। জামায়াত বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির একটি বড় মিত্র এবং একটি বড় ভোটব্যাংক। দেশটি এক সময় পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত ছিল এবং ১৯৭১ সালে নয় মাস যুদ্ধের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পৃথক হয়ে যায়। জামায়াতসহ বাংলাদেশের জনগণের একটি অংশ সে সময় পাকিস্তান ভাঙার বিরোধিতা করে। তবে জামায়াত নেতারা কোনো প্রকার মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন।

http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=128698

বিষয়: রাজনীতি

১১৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File