হেফাজতের সঙ্গে সরকার চায় সমঝোতা, কর্মীরা আন্দোলন
লিখেছেন লিখেছেন কৃষিবিদ১২ ২৫ মে, ২০১৩, ০৩:৪৪:৫৯ দুপুর
হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকার সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছাড়াও গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং প্রশাসনিক লোকজন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফির সঙ্গে গত ৫ মে'র ঘটনার পর একাধিক নেতা ও কর্মকর্তা সাক্ষাত্ করেছেন বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছেন। এমনকি সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার এসবি'র অতিরিক্ত এক ডিআইজি'র রুদ্ধদ্বার বৈঠক নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ওই বৈঠকে হেফাজতের ঢাকার কয়েক শীর্ষ নেতাও উপস্থিত ছিলেন। সরকার সমঝোতা কারার চেষ্টা করলেও নেতা কর্মীরা আবার আন্দোলন করতে চান বলে সূত্র জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ জানান, মূলতঃ সরকার হেফাজতে ইসলামকে তাদের সকল প্রকার কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার ব্যাপারেই বোঝানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। একইসাথে তাদের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ও সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই মামলার কারণে আত্মগোপন করে আছেন। অনেকে নাম গোপন রাখার শর্তে কথা বলতে রাজি হচ্ছেন।
হেফাজতের মধ্যম সারির নেতৃবৃন্দের মধ্যে প্রতিনিয়ত শলা-পরামর্শ ও বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। হেফাজতে ইসলামের কোন শক্ত সাংগঠনিক কাঠামো না থাকায় পুনরায় সংগঠিত হতে সময় নিচ্ছে। তবে হেফাজতে ইসলাম কওমী মাদ্রাসা কেন্দি ক হওয়ায় এবং ছাত্ররা আবাসিক পরিমন্ডলে কঠোর প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকায় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগে তেমন একটা সমস্যা হচ্ছে না বলে জানা যায়। ৫ মে'র ঘটনার পর হতাহত ও আটক ছাড়া প্রায় সকলেই আবার তাদের মাদ্রাসায় পৌঁছেছে। অবশ্য মামলার কারণে মাদ্রাসার শিক্ষক ও শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এক প্রকার পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রধান হিসেবে আল্লামা শফি সরকারি সকল পর্যায়ের নেতা ও কর্মকর্তাদের চাপ যেমন সামাল দিচ্ছেন, একই সাথে প্রতিদিন সারাদেশের বিভিন্ন জেলা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ আল্লামা শফি'র সাথে সাক্ষাত্ করছেন।
নেতাকর্মীরা আগামী দিনের দিক নির্দেশনার কথা জানতে চাচ্ছেন। তাদের ভাষায় ৫ মে'র সরকারের গণহত্যার সমুচিত জবাব দিতে হবে। এতে করে আল্লামা শফি উভয়দিকের চাপ ও দাবির বিষয় খুবই সতর্কতার সাথে সামাল দিচ্ছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ নেতৃবৃন্দ জানান। তারা জানান, ৬ এপ্রিল ও ৫ মে সারাদেশ থেকে ঢাকা অভিমুখী লংমার্চ ও অবরোধের পরিকল্পনা যতটুকু না সাংগঠনিক ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল ওলামা-মাশায়েখের আধ্যাত্মিক ধর্মীয় চেতনার প্রবল বহিঃপ্রকাশ। তাদের বক্তব্য ছিল কাউকে ক্ষমতা থেকে উত্খাত করা কিংবা কাউকে ক্ষমতায় বসানোর রাজনৈতিক অভিলাস তাদের নেই। যদিও সরকার ও সরকারের সমর্থক রাজনৈতিক দলসমূহ থেকে বলা হচ্ছে বিরোধী দলের প্রত্যক্ষ মদদে হেফাজতে ইসলাম সরকার উত্খাতের আন্দোলনে নেমেছে। কিন্তু হেফাজতের আমীর আল্লামা শফি বলেছেন, ১৩ দফা দাবি আদায়ই মূল লক্ষ্য। এ থেকে তিনি এবং হেফাজতের নেতা কর্মীরা কোনভাবেই পিছপা হবে না। ১৮ দলের কোন প্রকার সহায়তা নিয়ে নয় বরং ধর্মীয় চেতনার কারণেই হেফাজতে ইসলাম মাঠে নেমেছে বলে আল্লামা শফি বিবৃতি দিয়েছেন। আটক বাবুনগরী তার ১৬৪ ধারার জবানবন্দীতে ১৮ দলের আর্থিক সহায়তার কথা প্রত্যাখান করেছেন। গত বুধবার সন্ধ্যায় তার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি বিবৃতি পত্রিকায় পাঠানোর পর রাতে আবার প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়। হেফাজতের সংশ্লিষ্ট এক নেতা বলেন, এর থেকেই সকলকে বুঝতে হবে আল্লামা শফি হুজুর কতটুকু চাপে রয়েছেন।
হেফাজতে ইসলামের কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়াসহ অনেক এলাকার রাজনৈতিক নেতাদের কিন্তু এ নিয়ে বেশি উচ্চবাচ্চ করতে তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। ওই সকল এলাকায় বিপুল সংখ্যক কওমী মাদ্রাসা থাকায় আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সবাই সতর্ক ভূমিকা নিয়েছেন। অনেকে আবার আল্লামা শফি'র সাথে যোগাযোগও রক্ষা করে চলেছেন।
আল্লামা শফিসহ হেফাজতের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, বর্তমানে তারা কৌশলে এগুচ্ছেন। আগামী একমাস তথা রমজানের পূর্ব পর্যন্ত কওমী মাদ্রাসাসমূহের ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় তারা কোন ধরনের সভা-সমাবেশসহ বৃহত্তর কর্মসূচি থেকে বিরত রয়েছেন।
হেফাজতে ইসলামের সাহিত্য ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক মুফতী হারুন ইজহার ইত্তেফাককে জানান, হেফাজতের ঝড় দেশের জনগণ যেভাবে দেখেছেন আবার সে ঝড় আসবে। এটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। এটি আমাদের ঈমানী আন্দোলন সরকার ৫ মে গণহত্যা চালিয়ে সরকার যে অবস্থান নিয়েছে তার মাধ্যমে সরকার হেফাজতে ইসলামের সাথে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। হামলা-মামলা দিয়ে সরকার আধ্যাত্মিক চেতনার আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে পারবে না
সুত্রঃ http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDVfMjVfMTNfMV8xXzFfNDM0MTk=
দৈনিক ইত্তেফাক, ২৫ মে, ২০১৩
বিষয়: বিবিধ
১৭১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন