মাওলানা নিজামীঃ সত্য পথের যাত্রীরা আপনাদের মনে রাখবে...
লিখেছেন লিখেছেন পুস্পিতা ০৭ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৪:৩০:০২ বিকাল
তাঁরা চাইলে দুনিয়ার জীবন খুব আয়েশী ও সুখেই কাটাতে পারতেন। দুনিয়াতে যা কিছুকে আমরা সুখ-সাচ্ছন্দ্য মনে করি তার সবকিছুই অর্জনের সামর্থ্য-সুযোগ মহান আল্লাহ তাঁদের দিয়েছিলেন। প্রাচ্য-পাশ্চাত্য যে কোন দেশে যে কোন সময় আলিশান জীবন-যাপনের সুযোগ সব মানুষ পায় না, ইসলামী আন্দোলনের সেনানী হিসেবে তাদেরকে গ্রহণ করার জন্য পৃথিবীর প্রায় সব দেশের সত্যের সৈনিকরা তৈরি ছিল। আধিপত্যবাদী এক শক্তির খপ্পরে দেশকে রেখে দিয়ে বিদেশে সুখে জীবন যাপন করা তাদের বিবেক সায় দেয়নি। তাই দুনিয়াবী সবকিছুকে পিছনে ফেলে বাংলাদেশেই তারা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সত্যের আলো জ্বালানোর এক দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নিয়ে, যে আলোর দ্বারাই সম্ভব এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং পারলৌকিক মুক্তি। সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথেই তাঁরা অতিবাহিত করেছেন পুরো জীবন। তাঁরা স্বপ্ন দেখতেন সাধারণ মানুষ, শিক্ষিত মানুষ, আধুনিক মানুষ সবাই ইসলামের আলোতে আলোকিত হবেন। তাঁরা যে স্বপ্ন দেখতেন সে স্বপ্নের পথে এখন পথ চলছে এদেশের লক্ষ-কোটি জনতা। কোটি-কোটি মানুষের ভিতর ইসলামের মৌলিক আলো তাঁরা জ্বালিয়েছেন। তাঁদের ত্যাগ-কর্মনিষ্টা-চিন্তার কারণে আজ বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতি সকল অর্থে এক দূর্দমনীয় শক্তিতে পরিণত হয়েছে।
সত্যের বাস্তব স্বাক্ষ্য দেয়ার সাহস তাঁদের ছিল এবং দিয়েছেন। তাঁরা জানতেন যে পথে তাঁরা চলতে চাচ্ছেন সে পথ কোন সহজ পথ নয়। এদেশের লক্ষ-কোটি তরুণ-তরুণীর হৃদয়ে যে আলোর প্রদীপ জ্বালিয়ে দিচ্ছেন সে জন্য তাঁদের কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। সে কঠিন পথকেই তারা গ্রহণ করেছেন মৃত্যুর হুমকির পরও একে একে জালিমের কাছে পরাজয় স্বীকার না করে হাসিমুখে মৃত্যুকে গ্রহণ করার মাধ্যমে। জালিমের ফাঁসির রজ্জু গলায় পরে সাহসিকাতার সাথে মহান রবের কাছে চলে গিয়ে তাঁরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন সবকিছু জেনে বুঝেই তাঁরা এই কঠিন পথে এসেছেন। তাঁরা বাস্তবে দেখিয়েছেন আল্লাহর পথে চলা সাধারণ কোন মানুষের কাজ নয়। এ পথে তাঁরাই চলতে পারে যারা দুনিয়ার সবকিছুকে উপেক্ষা করে সত্যের পথে চলার দুঃসাহস রাখে। এই দুঃসাহস সবার ভিতর জন্ম নেয় না। যারা নিশ্চিতই জানে এ পথেই রয়েছে আসল মুক্তি তারাই শুধু পারে এ পথে চলতে। সেই দুঃসাহসিক পথের সিপাহসালার হচ্ছেন গোলাম আযম, মাওলানা নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লারা।
প্রায় ৯০% মুসলমানের এদেশ থেকে ইসলামকে নিভিয়ে দেয়ার যে ষড়যন্ত্র তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা শুরু করেছিল ১৯৭১ এর পর তা পূরণ হয়ে যেতো যদি না গোলাম আযম, নিজামীরা এগিয়ে আসতেন। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা ইসলামকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে না পারলেও অন্ততঃ এমন অবস্থায় নিয়ে যেতে চেয়েছিল যেন ইসলাম থাকবে শুধু কিছু আনুষ্ঠানিকতার ভিতর, শুধু মসজিদের ভিতর। তাদের সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হয়নি নিজামী, গোলাম আযম ও তাঁদের সাথীদের কারণে। তাঁরা ইসলামকে নিছক আনুষ্ঠানিকতা, মসজিদ, মাদ্রাসা থেকে বের করে নিয়ে সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল সহ সবকিছুতেই নিয়ে এসে ইসলামকে মহান ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। হাজার-হাজার আধুনিক শিক্ষিত তরুণ-তরুণী তৈরি করেছেন যারা ইসলামের আলোকে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থায় ছড়িয়ে দেয়ার হিম্মত রাখেন। গোলাম আযম, নিজামীদের এ সিদ্ধান্ত ও কৌশলের কারণে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনি এদেশ থেকে ইসলামকে নির্বাসিত করা।
যাদের কারণে ধর্মনিপেক্ষতাবাদ এদেশে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি তারা সবসময় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের ক্রোধের মুখে থাকবে, তা তো স্বাভাবিক। সে কারণে ৯২ বছর বয়সেও গোলাম আযমের মতো এক বয়োবৃদ্ধ নেতাকে কারাগারে জীবন দিতে হয়েছে, নিজামী. মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লাদের একে একে হত্যা করে চলেছে বিচার নামের নাটকের মাধ্যমে। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা ভুলে গিয়েছে কারাগার, ফাঁসি, শাহাদাত ইত্যাদি আসবে জেনেই তারা ইসলামের পথে এসেছিল। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে ইসলামের যে আলো তারা জ্বালাতে চেয়েছিল সে আলোর দিকে ছুটে চলেছে এদেশের লক্ষ-কোটি জনতা। যে স্বপ্ন তারা দেখেছিল সে স্বপ্নের বাস্তবায়নও তারা দেখেছে। এটিই জীবনের সফলতা। ঠিক এ কারণেই অধ্যাপক গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ সহ ইসলামী আন্দোলনের কান্ডারীদের সারাবিশ্বের সত্য পথের যাত্রীরা মনে রাখবে এবং ইসলামে আলো ছড়িয়ে দেয়ার কাফেলায় তারা আজীবন উদ্যোম যুগিয়ে যাবে।
চোখের কোণে বাঁধ ভাঙ্গা অশ্রুকণা নিয়ে আল্লাহর কাছে কামনা করছি যে আলো জ্বালাতে গিয়ে নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লারা তাদের জীবনটিও দিয়ে যাচ্ছে সে আলোকে আপনি নিভিয়ে দিবেন না, যার ওয়াদা আপনি করেছিলেন। আমাদের ভিতরও সেই সাহস তৈরি করে দিন যাতে এই আলোর পথে, ওদের মতো হাসিমুখে সবকিছু বিলিয়ে দিতে পারি...
বিষয়: বিবিধ
১৭৮৩ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমীন....
জাযাকিল্লাহ..
সত্যের বাস্তব স্বাক্ষ্য দেয়ার সাহস তাঁদের ছিল এবং দিয়েছেন।"
জাজাকাল্লাহ খায়ের।
নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান কিংবা কাদের মোল্লা - ওনারা ওনাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং ও ওনাদের সমসাময়িক বিশ্ব পরিস্থিতিকে বিচার বিবেচনা করে ইসলামের জন্য কাজ করেছেন এবং সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন - এবং নিশ্চয়ই পরবর্তী জেনারেশান এর জন্য উদাহরন সৃষ্টি করেছেন ত্যাগের, আদর্শের।
কিন্তু যারা বেঁচে আছেন এবং ইসলামের জন্য কাজ করছেন এবং করতে চাইছেন - তাদের অবশ্যই উচিত অতীতের ও বর্তমানের সিদ্ধান্ত ও কর্মকান্ডকে কোরআন ও হাদীসানুযায়ী পুনঃমূল্যায়ন করা - নিজেদেরকে নিতান্তই মানুষ মনে করে করে প্রয়োজনীয় সংশোধনী নিশ্চিত করা। কোরান ও হাদীসের আদেশ ও নিষেধকে তথাকথিত হেকমাহ, আধুনিক যুগ কিংবা বিশ্বব্যবস্থার দোহাই দিয়ে - পার পেতে গেলে - তা আর যাই হোক - ইসলাম থাকে না, ইসলাম হয় না।
বুঝার চেষ্টা করতে হবে, আল্লাহর সাহায্য আর আমেরিকার সাহায্য ও সন্তুষ্টি এক সাথে যেতে পারে না - প্রকাশ্যেও না, গোপনেও না।
এতে করে ফাঁসীতে ঝুললেও - তাই ই সই।
ধন্যবাদ। আপনার ওভার অল লিখার সেন্টিমেন্ট এর সাথে সহমত পোষন করছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন