পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ হত্যা, এইচ টি ইমামের মতে প্রশিক্ষিত বাহিনীর কাজ- তাহলে কারা সেই প্রশিক্ষিত বাহিনী?!
লিখেছেন লিখেছেন পুস্পিতা ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৫:৪৪:০৫ বিকাল
পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ হত্যা- এইচ টি ইমামের মতে প্রশিক্ষিত বাহিনীর কাজ এসব, তাহলে কি এইচ টি ইমামদের রিক্রুটেড যাদের দিয়ে নির্বাচন নামের নাটক তারা মঞ্চত্ব করেছিল সেই প্রশিক্ষিত বাহিনীই এখন জনগণের ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা শুরু করেছে?
১। হাসিনা, মনমোহন মিলে ৫ জানুয়ারী ২০১৪ সালে নির্বাচনের নামে যে নাটক হয়েছে তা সকলেই জানে। নাটক শেষ হওয়ার পর হাসিনা নাটককেই বাস্তব বলে প্রচার করতে শুরু করে। সাথে আওয়ামী মিডিয়াও একই হুক্কা হুয়া রব তুলতে থাকে। জনগণ যতই জোরে বলছে তার চেয়েও জোরে আওয়ামীরা নাটককে বাস্তব বলে প্রচার করতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে সেই নাটকের প্রযোজক এইচ টি ইমাম মুখ ফসকে বলে দিলেন আসলে সেটি নাটকই ছিল এবং আমরা সবাই মিলেই নাটকটি মঞ্চত্ব করেছি। ওটি যে নাটক ছিল তা জনগণ জানার পরও হাসিনা ও আওয়ামী মিডিয়ার বিপরীতে এইচ টি ইমামের মুখ ফসকে বলা কথাটির গুরুত্ব ছিল অনেক অনেক বেশি। জনগণ ও বিরোধী দলের কথাকে সারা বিশ্বের সামনে অফিসিয়ালি প্রমাণ করার জন্য এইচ টি ইমামের ওই একটি কথাই যথেষ্ট ছিল।
২। ডিসেম্বর ২০১৩ সালে যখন অবৈধ নির্বাচন বর্জন করার আন্দোলন চলছিল তখনও হঠাৎ করে বিভিন্ন গাড়িতে পেট্রোল বোমা হামলায় নিয়মিত মানুষ মারা যেতে শুরু করে। আশ্চর্যজনক ভাবে দেখা যায় বিহঙ্গ পরিবহণ নামের কিছু গাড়িতে পেট্রোল বোমা পড়ছিল এবং তাতেই বেশি মানুষ মারা যাচ্ছিল। আরো আশ্চর্যজনক ঘটনা হলো সেই বিহঙ্গ পরিহবনের মালিক আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ ভট্টাচার্য যিনি আবার বর্তমান অবৈধ সংসদের একজন সাংসদও! এসব মৃত্যুর পর মিডিয়ার হেডিং পরিবর্তন হয়ে যায়। মিডিয়ার কাছে হাসিনা, মনমোহন ও আওয়ামী কর্তৃক গণতন্ত্রকে হত্যা করার যে আয়োজন চলছিল তা হয়ে যায় গৌণ এবং পেট্রোল বোমা ও বার্ন ইউনিট হয়ে উঠে মূখ্য। বিরোধী দলের আন্দোলনকে ভিন্ন রঙ দেয়া খুব ভাল ভাবেই সে সময় পংকজ ভট্টাচার্যরা ও মিডিয়া করতে পেরেছিল।
৩। সেই নির্বাচন নামের নাটকের পরপর সারাদেশে একদিকে শুরু হয় ব্যাপকভাবে ক্রসফায়ারের নামে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী হত্যা এবং সাথে সাথে বিশেষ কিছু এলাকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর-মন্দিরের উপর হামলা। ফলশ্রুতিতে আবারও মিডিয়ার হেডিং পরিবর্তন। প্রকাশ্য গণতন্ত্রকে হত্যা করা, আস্তে আস্তে গড়ে উঠা দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে তছনছ করে দেয়া, বিরোধী দলের আহবানে ৯৮% জনগণের সাড়া দিয়ে ভোট বর্জনের বিপ্লব, ২-৩% ভোটকে ৪০% দেখানো ইত্যাদি অবিশ্বাস্য সব ঘটনা গৌণ হয়ে গিয়ে মিডিয়ায় মূখ্য সংবাদ হয়ে উঠে তথাকথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন! কোন রকম তদন্ত ছাড়ায় সে সব ঘটনাকে বিরোধী দল কর্তৃক ঘটানো হচ্ছিল বলে ব্যাপক প্রচার করে আওয়ামী লীগ, মিডিয়া ও ভারত গণতন্ত্র হত্যাকে জায়েজ করে নিচ্ছিল! অথচ প্রায় সব জায়গায় আওয়ামীরা স্বয়ং ওই সব কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের সাথে জড়িত বলে খবর পাওয়া যাচ্ছিল এবং কিছু কিছু ছিল সামাজিক বা পারিবারিক ঘটনা।
৪। একবছর পর ২০১৫ সালে আবার যখন ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন জনগণ শুরু করে তখন আওয়ামীরা যেন সেই পুরোনো কৌশলই আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে শুরু করে। আন্দোলন শুরুর সাথে সাথে শুরু হয় বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে জামায়াত প্রভাবাধীন এলাকায় মানুষ সহ গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করা। ফলে এটিই হয়ে উঠে আওয়ামী মিডিয়ার প্রধান খবর। সাথে চলে জামায়াত-শিবির বিরোধী হিংসাত্মক প্রচারণা। এসব খবরের আড়ালে আওয়ামী মিডিয়া যেন চাপা দিয়ে দিতে চায় ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের স্পিরিটকে। বার্ন ইউনিট দেখিয়ে আড়াল করতে চায় পুলিশ-র্যা ব কর্তৃক ক্রসফায়ারের নামে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হত্যাকান্ডকে। সব মিডিয়ারই মূখ্য খবর এবং পেট্রোল বোমা ও বার্ন ইউনিট এবং তদন্ত ছাড়ায় পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ হত্যার সবকিছুই চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে আন্দোলনরত দলগুলোর উপর।
৫। নির্বাচন নামের নাটককে বৈধতার রঙ লাগারোর চরম প্রচেষ্ঠা যখন আওয়ামীরা চালাচ্ছিল তখন এইচ টি ইমামের মুখ দিয়ে বজ্রপাতের মতো বের হয়ে আসে সেই নাটকের আসল খবর। আওয়ামী মিডিয়ার প্রচারণার আড়ালে আবারও সেই এইচ টি ইমামের মুখ দিয়েই যেন ফসকে বের হয়ে এলো পেট্রোল বোমার আসল খবর। কুমিল্লায় গাড়িতে আগুন দিয়ে ৮জনকে হত্যার পর তিনি বলেছেন প্রশিক্ষিত বাহিনীরই কাজ এটি। তার এ মন্তব্যেটি নির্বাচন নিয়ে করা মন্তব্যটির মতোই খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু মিডিয়া এইচ টি ইমামের সেই বক্তব্যকে পারলে যেন গোপন করে রাখে। অন্যদিকে তদন্ত ছাড়ায় জামায়াত-শিবির ও বিরোধীদের উপর ওই ঘটনা চাপিয়ে দিতে থাকে। হ্যাঁ, আমরাও তা বলতে চাই গাড়িতে আগুন লাগিয়ে মানুষ হত্যা নিশ্চিতই কোন প্রশিক্ষিত বাহিনীর কাজ। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে রাত তিনটা-চারটার দিকে খালি রাস্তায় ১১০/১২০ কিমি স্পীডে চলা গাড়িতে একটি মাত্র পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা পুরো গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া কোন ভাবেই সম্ভব বলে মনে হয় না। তার উপর প্রচন্ড শীতের রাতে গাড়ির সব দরজা-জ্বানালা বন্ধ থাকার কথা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রোডে চলাচলকারী গাড়ি গুলোর দরজা-জ্বানালার কাচ শহরাঞ্চলের লোকাল বাসের কাঁচের মতো এত ভঙ্গুর হওয়ারও কথা নয় যে সামান্য একটি বোতল ছুড়ে মেরে দিলেই তা ভেঙ্গে যাবে এবং পুরো গাড়িতে আগুন লেগে যাবে।
৬। তাই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ঘটনাটি নিশ্চিতই প্রমাণ করে তা অবশ্যই প্রশিক্ষিত বাহিনীর কাজ। তাহলে কি এইচ টি ইমামদের রিক্রুটেড যাদের দিয়ে নির্বাচন নামের নাটক তারা মঞ্চত্ব করেছিল সেই প্রশিক্ষিত বাহিনীই এখন জনগণের ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা শুরু করেছে? এইচ টি ইমামের প্রশিক্ষিত বাহিনীর কাছেই শুধু এমন কোন অস্ত্র থাকা সম্ভব যা দিয়ে ওই ধরনের স্পীডে চলা গাড়িতে দূর থেকে আগুন ধরিয়ে দেয়া যায়। র্যা ব প্রধান গোপালী বেনজির, বিজিবি প্রধান শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফের ভাই আজীজরাই কি ওসব প্রশিক্ষিত গোপন বাহিনী পরিচালনা করছে?! তাই গাড়িতে আগুন লাগিয়ে মানুষ হত্যার পরপর গোপালী বেনজিররা ছুটে যাচ্ছে এবং রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে আসছে? সাথে সাথে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে চিরুনী অভিযান চালাচ্ছে?! এইচ টি ইমাম মুখ ফসকে কি ওদের কথাই বলে দিয়েছে যেমনটি বলেছিল নির্বাচনের নামের নাটকের ব্যাপারে?! এইচ টি ইমামদের রিক্রুটেড প্রশিক্ষিত বাহিনীর অপকর্মকে লুকানোর জন্যেই কি তথাকথিত সুশীল মিডিয়াও কোন রকম তদন্ত ছাড়ায় আওয়ামীদের সাথে সুর মিলিয়ে সবকিছুর জন্য বিরোধী দলকে দায়ী করে চলেছে? সে কারণেই কি বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের বিভিন্ন সন্ত্রাসীরা পেট্রোল বোমা ও বিষ্ফোরক সহ ধরা পরলেও তা প্রচার করা হচ্ছে না?
বিষয়: বিবিধ
১৭৭১ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে আপনার সুন্দর গঠনমূলক ও হৃদয়স্পর্শী লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
এটা শেখা জরুরী রাজনীতিতে সাকসেসফুল হতে হলে
অপেক্ষায় রইলাম, সত্যের ধারক ও বাহকদের হাতেই শীঘ্রই খমতা আসবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন