ঢাবিতে হিজাব ও নামাজ বিরোধী অভিযানঃ কয়েকটি দৃশ্যপট এবং লীগ নেত্রীদের দিনকাল...

লিখেছেন লিখেছেন পুস্পিতা ০৭ নভেম্বর, ২০১৪, ০৪:২২:৫১ বিকাল



দৃশ্যপট-১

এই এদিকে আয়! গর্জন শুনে হতচকিত হয়ে ছাত্রীটি নেত্রীর কাছে যেতেই শুরু অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি। অপরাধ সকালে নেত্রীর বিছানা ও কাপড় চোপড় ধুয়ে ঠিক করে না রাখা। ছাত্রীটি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, আপা আমার আজ পরীক্ষা ছিল, তাই সকালে সময় করতে পারিনি। এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব, মুখের উপর কথা বলিস। কোন লাট সাহেবের বেটি হয়েছিস, সময় করতে পারিসনি। হলে থাকলে চাইলে পরীক্ষা-টরীক্ষা বুঝি না, যখন যা বলব তা করবি। যা সামনে থেকে, এখন গিয়ে সব ঠিক কর।

দৃশ্যপট-২

কেন্দ্রীয় এক নেতার ফোন। জি ভাইয়া, জি..। না ঠিক আছে, আমি নিজেই পাঠিয়ে দিব। আচ্ছা, রাত ১১ টার মধ্যেই পৌঁছে যাবে। সাথে একজনকে পাঠাব। সে আপনার কাছে আরো কয়েকবার গিয়েছিল। জি, জি, আপনি কোন চিন্তা করবেন না। কান্না-কাটি! না ভাইয়া, কান্নাকাটি করলে আমাকে সাথে সাথে বলবেন। লাথি দিয়ে হল থেকে বের করে দিব।

দৃশ্যপট-৩

এই তোরা সব আগামীকাল ১১ টায় চারুকলার সামনে চলে যাবি। দেশরত্নের জন্মদিন। আনন্দ মিছিল হবে। দেরি করলে কিন্তু অসুবিধা হবে। এই তুই তো খুব বেড়ে গেছিস মনে হয়। গতবার মিছিলে আসিসনি কেন? আপা ক্লাসটেষ্ট ছিল। চুপ বেয়াদব! এটা কি মামাবাড়ির আবদার পেয়েছিস, ক্লাসটেষ্ট! আগামীকাল না আসলে চুলের ঝুটি ধরে বের করে দিব, মনে রাখিস!

দৃশ্যপট-৪

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু! দেশ রত্নের জন্মদিনের আনন্দ মিছিল শুরু। কিছুদুর যাওয়ার পর একটি ধাক্কা, পায়ের স্যান্ডেল খুলে যায়। ঠাস…!! থাপ্পড় আরেক নেত্রীর গালে। কিছু বুঝে উঠার আগেই চুলোচুলি শুরু। গালাগালি, চেচামেচি…। নেত্রীর চুল ধরে টেনে আরেক গ্রুপ মাটিতে শুইয়ে দিয়েছে। পায়ের নিচে দেশরত্নের ছবি। তুমুল মারামারি, চুলোচুলি, চেচামেচি, গালাগালি। গায়ের কাপড়-চোপড়ের অবস্থা তথৈবচ। নেত্রী গুরুতর আহত।

দৃশ্যপট-৫

হলে ফিরে নেত্রীকে আহত করার প্রতিবাদে নেত্রীর গ্রুপের মিছিল, প্রতিপক্ষ গ্রুপের কর্মীদের বহিঃস্কারের দাবীতে প্রভোষ্টের অফিস অবরোধ, ভাংচুর, প্রভোষ্ট লাঞ্ছিত! প্রক্টরের আগমন। প্রক্টরের সামনেই আবার দু’গ্রুপের চুলোচুলি শুরু, মারামারি। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে প্রক্টর সহ কয়েকজন শিক্ষক আহত, লাঞ্ছিত। পুলিশের আগমন। ঘন্টা খানেক মারামারি, চুলোচুলির পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।

দৃশ্যপট-৬

মারামারি, ভাংচুর ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা তদন্তে ও দোষীদের বের করতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিঠি গঠন, ৭ দিনের ভিতর রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ। ইতোমধ্যে বিবদমান গ্রুপ গুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে দেহব্যবসা, নেতাদের মনোরঞ্জের জন্য ছাত্রীদের জোর করে পাঠানো, নির্যাতন, ফাও খাওয়া, মাদক ব্যবসা সহ নানা রকম সুশীলিয় কাজের বর্ণনা দেয়া শুরু করেছে। বিভিন্ন পত্রিকায় তা নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে। এদিকে তদন্ত কমিঠি কয়েকবার সময় বাড়িয়ে সর্বশেষ প্রভোষ্ট, প্রক্টরের সামনে ঘটনা ঘটার পরও কাউকে চিহ্নিত করা করা সম্ভব হয়নি মর্মে রিপোর্ট পেশ, কিছু সুপারিশ!

দৃশ্যপট-৭

আপা হল কি মাদ্রাসা হয়ে গিয়েছে!? কেন? ১০৯, ৩২০৩, ৪০০৬, নম্বর রুমে যারা থাকে তারা প্রতিদিন দেখি নামাজ পড়ে! মিছিলে যেতে বললে যায় না। আবার সবসময় মাথায় কাপড় দেয়, বোরকাও পরে! বলিস কি!? আগে জানাসনি কেন? কয়েকদিন চোখে চোখে রাখ, আর কারা নামাজ পড়ে তারও খবর নে, নেত্রীর নির্দেশ।

চলে যাওয়ার সময় নেত্রীর আবার ডাক, এই শোন, গতরাতে যে চেমরি গুলোকে বড় ভাইদের কাছে পাঠিয়েছিলাম তাদের খবর দিসনি কেন? পেমেন্টের খবর কি? আপা সব ঠিক আছে। শুধু দু’জন নাকি বেশী কান্নাকাটি করেছিল। কোন দুটো? গোপালগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের দু’জন। এখনই গিয়ে থাপ্পড় দিবি। ন্যাকামি করে, না!? হলে থাকবে আবার কোথাও পাঠালে কান্না করবে। বেয়াদব কোথাকার।

দৃশ্যপট-৮

দু’জন ছাত্রীকে নামাজ রুম থেকে ধরে নেত্রীর কাছে নিয়ে আসা হয়েছে। আপা এ দুজনকে দেখলাম নামাজ রুমে বসে আছে। সাহস দেখেছেন?! আরো কয়েকজনকে বিভিন্ন রুম থেকে ধরে আনা হয়েছে। তাদেরকে গেস্টরুমে আটক রেখে নির্যাতন ও মারধর করা হয়। এর মধ্যেই প্রভোষ্টের কাছে খবর গিয়েছে। প্রভোষ্ট, প্রক্টর হাজির। আটককৃতদের রুম সার্চ করা হলো, জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো, সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। তারপরও নেত্রীর হুকুম, তাদেরকে বহিঃস্কার করতে হবে। কারণ নামাজ রুমে পর্দা, নামাজ-রোজা সংক্রান্ত কয়েটি বই পাওয়া গিয়েছে এবং ওরা নামাজ পড়ে! প্রভোষ্ট ও প্রক্টর নেত্রীর সাথে একমত হয়ে ৩ ছাত্রীকে হল থেকে বহিঃস্কারের সিদ্ধান্ত।

দৃশ্যপট-৯

ওফ! অনেক ধকল গেল। ওদের মতো আর কে কে আছে খোঁজ নিবি। নামাজ ও বোরকা পরা দেখলেই আমাকে খবর দিবি। এই তুই আমার বিছানা ঠিক কর। আর তুই আমার হাত-পা গুলো ম্যাসেজ করে দিবি। শরীর বেশী ক্লান্ত লাগছে। আর বড় ভাইদের সাথে যোগাযোগ করে দেখ কিছু লাগবে কিনা!

দৃশ্যপট-১০

অবশেষে পর্দানশীল ও নামাজী ছাত্রীদের হল থেকে বহিস্কার! এর আগে একই অপরাধে (?!) আরো ২০জনকে বহিস্কার! সাথে একাডেমিক ব্যবস্থা সহ পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার ঘোষণা!

বিষয়: বিবিধ

৪২৪২ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

282037
০৭ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৮
হতভাগা লিখেছেন : শিবিরের আপুরা ! আপনারা আর কত কাল এসব অন্যায় , অত্যাচার সহ্য করে যাবেন ?

সময় এসেছে ফাইট করার । It's Pay back time


০৭ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৮
225573
পুস্পিতা লিখেছেন : ফাইট অস্ত্র দিয়ে করতে হবে না, নৈতিক চরিত্র দিয়ে করতে হবে।
০৭ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:০৬
225583
হতভাগা লিখেছেন : অস্ত্র দিয়ে ফাইট করা লাস্ট ট্রাই । যখন সবকিছু বোঝানো শেষ হয়ে যায় তখন অস্ত্রের সাহারা নিতেই হয় ।

এটা স্বীকৃত ।
০৮ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:৫৮
225689
ইসলামী দুনিয়া লিখেছেন : প্রশিক্ষন দাতা আপনাকেই সিলেক্ট করা হয়েছে।
১৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:১৯
227133
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : ঠিক আছে ।এটা সময়ের ব্যাপার । পুরুষেরা রক্ষা করতে না পারলে নারীরা এভাবে নামতে বাধ্য হবে
282044
০৭ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৭
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : পৃথিবী ধ্বংসের নিদর্শন এসবকিছু!
০৭ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৯
225574
পুস্পিতা লিখেছেন : ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ যে আসলে ইসলাম বিদ্বেষী ও বিরোধী তা আওয়ামীরা বারবার প্রমাণ করে দিচ্ছে।
১৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৩১
227141
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : আন্নে কি ভাবেন কেয়ামত হবে না ? দাজ্জালি মিশন চলতেছে কিন্তু আমরা মাহদি মিশন চালাইতে পারছি না
282051
০৭ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৮
ইসলামী দুনিয়া লিখেছেন : এজন্যই ইসলামী খেলাফত দরকার।
০৭ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৯
225575
পুস্পিতা লিখেছেন : হুমম... গণতান্ত্রিক পথে।
১৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২০
227134
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : ইসলামী খেলাফত তাও আবার গণতন্ত্র দিয়ে Surprised
282055
০৭ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৫
০৭ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৯
225577
পুস্পিতা লিখেছেন : ধন্যবাদ...
282070
০৭ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:১৮
সাবু আলু লিখেছেন : প্রকৃত সত্য তুলে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ । এদের নির্মূল করার মত কেউ নেই । যে দলই আসবে সেই দলই লুটেপুটে খাবে আর অত্যাচার সইতে হবে গ্রাম থেকে আসা কষ্ট করে ঢাবিতে চান্স পাওয়া মায়ের আদরের সন্তানদের । যারা লজ্জায় কাউকে কিছু বলতে পারবে না । শুধু সয়ে যাবে :(
১৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৩০
227140
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : উপায় নেই আলু ভাই <:-P
282100
০৭ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:০৮
শেখের পোলা লিখেছেন : দৃশ্যপট শেষ নয় আরও আসবে। এ সবই চেতনা৷ ৪৩ বৎসর আগে এ সব বাস্তবায়ণের সব বাধা দূর করা হয়েছে।এখন শুধুই উন্নয়ন৷
282161
০৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০১:০৯
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। একটি তথ্যবহুল পোস্ট এর জন্য। কমেন্টস এ দেখলাম একটা উপদ্রব, জঙ্গিদের ছবি দিয়ে আপনাকে উস্কানি দিচ্ছে, সুন্দর একটা পোষ্টকে হ্বেয় করার নিলজ্জ প্রয়াস। এর কমেন্টস দেখলে আমার খুব হাসি পায়, পাগলা মখা আলমগিরের কথা খুব মনে পড়ে ।
১৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৯
227139
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : জঙ্গি অর্থ যে জঙ্গ করে ।অর্থাৎ যে যুদ্ধ করে সেই জঙ্গি *-Happy তবে আন্নে যেভাবে তাদের জঙ্গি বলতেছেন তাতে কাফেরের অপবাদের মতোই মনে হচ্ছে Waiting Winking)
282273
০৮ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৪৮
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, ছাত্র নির্যাতনের নিরাপত্তাহীন ফ্যাসিষ্ঠ কারাগারে বন্দী দেশের ছাত্র সমাজ,তাদের শিক্ষা জীবন। বাংলাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চিত্র একই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্র রাজনীতি তুলে দেয়া উচিত।
১৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৭
227138
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই বন্ধ করে দেওয়ার দাবী তোলেন আমিও পাশে থাকুম
282353
০৮ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:২৪
আবু আশফাক লিখেছেন : আমাদের মনুষত্ব, বিবেক, মুসলমানিত্ব, ঈমানদারিত্ব সব নষ্ট হওয়ার কারণে এসব দেখে-শুনেও অন্ধ, বধির, মূক হয়ে আছি।
১৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৫
227137
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : শুধু চোখ খুলে থেকেও লাভ নাই
১০
282834
১০ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:৪৭
মোঃফজলুল হক লিখেছেন : ওদের বিবেক আজ লুপ্ত,তাই ওরা অনৈতিক কাজ করিয়ে নিচ্ছে ক্ষমতার দাপটে।ওরা একদিন পানিশমেন্টের পরণতি ভোগ করবে।পুস্পিতা আপনি চমৎকার ভাবে লিখেছেন করুন বাস্তব কাহিনী।ধন্যবাদ
১৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৫
227136
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : ক্ষমতার পাওয়ার আরকি <:-P <:-P
১১
283425
১২ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০২:৩৪
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : আমরা একটু উদার হলে এই মেয়েগুলোর হলে থাকার প্রয়োজন হয়না। পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়া পর্যন্ত আর কি করার আছে?
১৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৪
227135
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : লাভ নাই । পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম
১২
283979
১৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৩
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : বিরক্ত ধরে গেছে এসব নিউজে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টা কি ছাত্রলীগের আর ছাত্র ইউনিওনের বাপ দাদার সম্পদ ?? m/ Thumbs Down
১৩
284414
১৫ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:২০
এস এম আবু নাছের লিখেছেন : জালেমের অত্যাচার বেশিদিন স্থায়ী হয়না। আল্লাহর সাহায্য খুব সন্নিকটে ইনশাআল্লাহ। তবে আমরা কি সেই সাহায্যের মোহতাজ হতে রাজি আছি? নিজেদের আমল, ইখলাস আর নিয়াতের পরিবর্তন প্রয়োজন বৈকি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। আমীন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File