লতিফ সিদ্দীকির (আসলে হাসিনার) প্রোডাকশান-ডিডাকশান থিউরী ও তার তাৎপর্য...
লিখেছেন লিখেছেন পুস্পিতা ০১ অক্টোবর, ২০১৪, ০৫:৩০:৩৩ বিকাল
১। বাংলাদেশে সম্ভবতঃ দুই কোটি মানুষ আছে যাদের বয়স ৭০এর উপরে। যাদের ৯৯% কোন কাজ করে না অর্থাৎ কোন প্রোডাকশান নেই। এখন প্রতি মাসে যদি এভারেজে তাদের জীবন যাপনের পিছনে দুই হাজার টাকা করে প্রতিটি পরিবারকে খরচ করতে হয় তাহলে চার হাজার কোটি টাকা ডিডাকশান হয়! বছরে হয় ৪৮ হাজার কোটি টাকা! বাংলাদেশের বাজেটের প্রায় চারভাগের এক ভাগ! কি পরিমাণ ডিডাকশান চিন্তা করা যায়?! এ ক্ষতি তো ধর্মনিরপেক্ষ দেশ বাংলাদেশ মেনে নিতে পারে না!
তো এখন কি করতে হবে?!
সবগুলোরে দুই মাসের ভিতর ক্রসফায়ারে দিয়ে সমুদ্রে ফেলে দেয়ার ব্যবস্থা জাতির এত বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে হবে! র্যাব এর এখন একমাত্র কাজ হবে জাতিকে ডিডাকশান থেকে রক্ষা করা!
২। সদ্য জন্মগ্রহণ করা শিশু থেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের প্রোডাকশান কি? ওদের পিছনে পিতা-মাতা ও রাষ্ট্রের ডিডাকশান ছাড়া অন্য কোন বর্তমান প্রোডাকশান আছে?! এই বয়সীদের সংখ্যা সম্ভবতঃ দেশের অর্ধেক! আচ্ছা ধরলাম ৭ কোটি। এখন এই ৭ কোটির পিছনেও যদি মাসে এভারেজে ২ হাজার করে ডিডাকশান ধরা হয় তাহলে হয় ১৪ হাজার কোটি! ওহ মাই গড এত ডিডাকশান! এই শিশুরা কখন বড় হবে, শিক্ষার্থীরা কখন লেখাপড়া শেষ করবে, শেষ করার পরও প্রোডাকশানের যোগ্য হবে, এসবের ১০০% নিশ্চয়তা আছে?! নেই! তাই এখনই সন্তান জন্মদান বন্ধ করতে হবে! এরপর বর্তমান যারা আছে তাদেরও বিজিবি'র হাতে তুলে দিতে হবে, দেশকে ডিডাকশান থকে বাঁচানোর বাকী কাজ তারা করবে! সাথে বেকারের সংখ্যাও নাকি প্রায় কোটি বা দুই কোটি! ওদেরকে বাঁচিয়ে রেখে দেশকে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ডিডাকশানে ফেলা কি উচিত হবে?! সবাইকে সীমান্তে কাঁটা তারের সাথে বেঁধে রেখে বিএসএফকে খবর দিলে হবে, বাংলাদেশের মতো এত আপন প্রতিবেশীকে ডিডাকশান থেকে রক্ষা করতে তারা নিশ্চয় বাকী কাজ ফ্রিতে করে দেবে!
৩। প্রায় ২০কোটি মানুষকে যে দৈনন্দিন কাপড় চোপড় পরতে হয়, কিনতে হয় এসবে প্রতি বছর ডিডাকশানের পরিমাণ চিন্তা করা যায়?! পরণের কাপড়ের কি কোন প্রোডাকশান আছে ডিডাকশান ছাড়া?! এই ডিডাকশান থেকে বাঁচার জন্য হাসিনা-লতিফ সিদ্দীকি, তাদের পরিবার পরিজন সহ সবাইকে কি সেই আদিম যুগের স্টাইলে ফিরিয়ে নেয়া উচিত নয়?!
দেশকে ডিডাকশান থেকে রক্ষা করে প্রোডাকশানের দিকে নিয়ে যাওয়ার এই সুমহান (!) আইডিয়া কিন্তু আমার নয়, জননেত্রী-দেশরত্ন (!) শেখ হাসিনার। তিনি গবেষণা করে বুঝতে পেরেছেন প্রতি বছর দেশের প্রায় ৫০০কোটি টাকা ডিডাকশান হচ্ছে হজ্ব উপলক্ষে এদেশের মুসলিমরা ক্বাবা শরিফে গেলে কারণ সেখানে কোন প্রোডাকশান নেই এবং গবেষণাটি তিনি প্রচারের দায়িত্ব দিয়েছেন তারই সুযোগ্য (!) মন্ত্রী লতিফ সিদ্দীকিকে!" তাই লতিফ সিদ্দীকি হাসিনার সেই ফর্মুলা প্রচার করে ঘোষণা দিয়েছেন তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়েছেন এবং তিনি তা করে যাচ্ছেন!
৪। আচ্ছা ৫০০কোটি টাকা ডিডাকশানে ক্ষতি বেশি না উপরে দেখানো তিনটি খাতে যে ডিডাকশান হচ্ছে তাতে ক্ষতি বেশি?! এখন দেশকে ডিডাকশানের ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য কি শেখ হাসিনার উচিত নয় এদেশের প্রায় দুই কোটি বৃদ্ধ, সাত কোটি শিশু, কিশোর, ছাত্র-ছাত্রী ও এক বা দুই কোটি বেকারকে নিশ্চিন্ন করে ফেলা?! তাদের সবাইকে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়াই কি উচিত নয়?! তো শেখ হাসিনা তার ফর্মূলা অনুযায়ী দেশকে এত বড় ডিডাকশান থেকে রক্ষা করার এই মহান কাজ কখন থেকে শুরু করবেন? কি ফর্মূলা কি পছন্দ হয়েছে মহামতি (!) হাসিনা?!
৫। হাসিনার মন্ত্রী লতিফ সিদ্দীকির বক্তব্য শুনার পর থেকে চিন্তা করছি কথিত ডিডাকশানের বিশাল বিশাল খাত থাকার পরও হজ্ব বা ইসলামের দিকে হাসিনার নজর পরলো কেন?! হাসিনার ফর্মূলা অনুযায়ী উপরের তিনটি খাত কি ডিডাকশানের পর্যায়ে পড়ে না? অবশ্যই পড়ে। তাহলে হাসিনা কি এখন সেই ডিডাকশানের খাত গুলো বন্ধ করবে? যদি করতে চায় তাহলে কি তাকে কেউ সুস্থ বলবে?! তাহলে কি হাসিনা মানসিক ভাবে অসুস্থ? না তা নয়। তিনি সুস্থ, খুবই সুস্থ। আসলে মুসলিম দেশে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ সম্পর্কে যারা জানে তারা সহজেই বুঝবে হাসিনার এই ডিডাকশান ফর্মূলা আর্থিক ডিডাকশান চিন্তা করে নয়, তার মূল উদ্দেশ্য স্বয়ং ইসলামকেই ডিডাকশান করা। ইতিহাস স্বাক্ষী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশে যখনই তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা ক্ষমতায় এসেছে তারা চলে-বলে-কৌশলে চেষ্ঠা করেছে ইসলামী রীতিনীতি, জীবনাচার ইত্যাদি নিষিদ্ধ করতে এবং হাসিনাও সেদিকে যাচ্ছে। লতিফ সিদ্দীকি বা হাসিনার মন্ত্রীরা কি এই প্রথম ইসলামের মূল একটি বিষয় নিয়ে কটাক্ষ করেছে? বরং সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দেয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ভাবে ইসলাম চর্চা নিষিদ্ধের মাধ্যমে তারা শুরু করেছিল এবং আস্তে আস্তে ব্যাক্তিগত ভাবেও ইসলাম চর্চা নিষিদ্ধ করছে। সেই নিষিদ্ধের ধারাবাহিকতাই হলো হজ্ব, রাসুল (সাঃ), সাহাবি (রাঃ) ইত্যাদির বিরুদ্ধে কটাক্ষ। আর্থিক ক্ষতির কথা বলে হজ্ব নিষিদ্ধ, শারিরীক ক্ষতির কথা বলে রোজা নিষিদ্ধ, সময়ের ক্ষতির কথা বলে নামাজ নিষিদ্ধ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ক্ষতির কথা বলে পুরো ইসলামই নিষিদ্ধ! এসব কিছুই হাসিনার নীতি। এখানে লতিফ সিদ্দীকি শুধু ফর্মূলা প্রচারকারী, ফর্মূলা কিন্তু হাসিনার! সে কারণে লতিফ সিদ্দীকির স্পষ্ট কথা, আমার নেতা হাসিনা যদি বলে তখনই আমি সে ফর্মূলা তুলে নিতে পারি। কারণ ফর্মূলা যার তার কথা মতোই তো কাজ করতে হবে!
পুনশ্চঃ- ইসলাম সম্পর্কে চরম কটাক্ষের পর জনরোষ দেখে আওয়ামীরা গুঞ্জন তুলেছে লতিফ সিদ্দীকিকে মন্ত্রীসভা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এর আগে আরো অনেক মন্ত্রী ইসলাম নিয়ে কটাক্ষ করেছে, তাদের কাউকে বাদ দেয়া হয়নি বরং প্রমোশন হয়েছে। আল্লাহ-রাসুল (সাঃ) কে গালাগালি করে কেউ কেউ দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদের মর্যাদা পেয়েছে হাসিনার কাছ থেকে। কিন্তু লতিফ সিদ্দীকির মন্ত্রীত্ব কেন যাবে?! বিষয়টি যদি সঠিকও হয় তাহলে তা ইসলাম নিয়ে কটাক্ষের জন্য নয়। বেশি কথা যারা বলে তারা কিছু অতিরিক্তও বলে ফেলে। লতিফ সিদ্দীকি সেভাবে আওয়ামী দেবতা মুজিবের নাতি জয় সম্পর্কে কিছু কথা বলেছেন। সেখানে অন্যান্য কথার ভিতর নাকি এটাও বলেছে যে জয়-কে মাসিক ২লাখ ডলার বেতন দেয়া হচ্ছে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী হাসিনার তথাকথিত আইটি উপদেষ্টা হিসেবে। এ ধরনের বেশ কিছু তথ্য প্রকাশ করা এবং জয়কে দেবতার মতো সম্মান দিয়ে কথা না বলার জন্যেই লতিফের মন্ত্রীত্ব হয়তো যাবে। ইসলামকে কটাক্ষ করে যা বলা হয়েছে তা আওয়ামী নীতির ধারাবাহিকতা ও শেখ হাসিনার ইচ্ছাতেই। ইসলাম নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ করা তো আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য...
বিষয়: বিবিধ
১৮৭৯ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক সুন্দর লিখা... আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
অতীতের সকল ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, তারা ইসলামের সাথে চরম শত্রুর মত আচরণ করেছে।
আপনার সুন্দর প্রতিবেদনের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আসলে এই মন্ত্রি তো এখন বলির পাঁঠা কিংবা কুরবানির গরু!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন