অন্যমতঃ সংবিধানের ১৬তম সংশোধনীর মূল উদ্দেশ্য কি আসলে শামসুদ্দীন চৌধুরীদের মতো আওয়ামীপতিদের রক্ষা করা?!

লিখেছেন লিখেছেন পুস্পিতা ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১০:১৪:৫২ রাত



গত ৫/৭ বছরে বাংলাদেশের নিম্ম আদালত থেকে নিয়ে একেবারে উচ্চ আদালত পর্যন্ত হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বা ইচ্ছার বাইরে কোন রায় দিয়েছে তেমন নজীর খুব বেশি নেই। বিশেষ করে রাজনৈতিক মামলার ক্ষেত্রে। খুবই অনুল্লেখযোগ্য কিছু রায় হয়তো সরকারের ইচ্ছার বাইরে এসেছে। বিচার বিভাগ বলতে গেলে এখন সরাসরি আওয়ামী লীগের নির্দেশেই চলছে। বর্তমানে কোন মানের দলকানা লোকদের উচ্চ আদালতে এমনকি আপীল বিভাগে পর্যন্ত নিয়োগ দেয়া হয়েছে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, এসকে সিনহা, এনায়েতুর রহিম, বর্তমান প্রধানবিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন, সাবেক প্রধানবিচারপতি খায়রুল হক ও তাদের দেয়া রায় দেখলেই বুঝা যায়। ওই সব বিচারপতিরা একদিকে আওয়ামী লীগের চেয়েও চরম আওয়ামী অন্যদিকে চরম ইসলামবিদ্বেষী। মাওলানা সাঈদীর ব্যাপারে আপীল বিভাগের অন্য সকল বিচারপতি মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও (এমনকি বিচারপতি ওয়াহাব মিয়া সকল অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছে) একমাত্র ঘাদানিকের পক্ষ থেকে নিয়োগ পাওয়া শামসুদ্দিন চৌধুরীর রায় ছিল সাঈদীকে ফাঁসিই দিতে হবে! শামসুদ্দীন চৌধূরীর সহ আপীল বিভাগে সর্বশেষ কয়েকজন বিচারপতিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র-একমাত্র জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী ও ঘাদানিকের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য।

প্রধানবিচারপতি খায়রুল হক থেকে নিয়ে মোজাম্মেল হোসেনের চলতি মেয়াদ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিরোধীদের পক্ষে বাংলাদেশের সু্প্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ কোন রায় বা সিদ্ধান্ত দিয়েছে তা দেখা যায় না। বরং উচ্চ আদালত এমন আচরণ করেছে যাতে একদলীয় শাসন বাংলাদেশে কায়েমের পথ সুগম হয়েছে। উচ্চ আদালতের রাজনৈতিক রায়ের কারণে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এখন জনগণের কাছে যেতে হয় না। ঢাকায় বসে নির্বাচন ছাড়ায় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি হওয়া যায়, সরকার গঠন করা যায় এমনকি বিরোধী দলের নেত্রীও নিয়োগ দেয়া যায়। গভীর ভাবে চিন্তা করলে আওয়ামী লীগকে এই ধরনের চরম অগণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করার পথ করে দিয়েছে তথাকথিত বিচারপতি নামের আওয়ামীপতিরা।

অর্থাৎ বাংলাদেশের উচ্চ আদালত এখন বলতে গেলে আওয়ামী লীগের বি-টিম। বিচারবিভাগের পক্ষ থেকে সরকারের অগণতান্ত্রিক, সংবিধানবিরোধী কর্মকান্ডের উপর কোন হুমকি, বাঁধা আদতে নেই। এ অবস্থায়ও বিচারপতিদের অপসারণের বিষয়টি হাসিনা সংসদের হাতে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো কেন?

সবাই বলছে বিচারবিভাগের উপর প্রভাব বিস্তার করার জন্যেই নাকি এ বিধান! আসলে কি বর্তমান বিচারবিভাগ সরকারের প্রভাবের বাইরে?! বরং আওয়ামী লীগের চেয়েও বড় আওয়ামী লীগ হয়ে আছে বিচারপতিরা। আওয়ামী লীগকে বিচারবিভাগের উপর প্রভাব বিস্তার করতে হচ্ছে না বরং আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগ পাওয়া বিচারপতিরাই আওয়ামী লীগের সকল অবৈধ ইচ্ছা পূরণের হাতিয়ার হয়েছে। সংবিধান থেকে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল, আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দেয়া, তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা-সমাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনা সহ সংবিধানকে যে চরম অগণতান্ত্রিক করা হয়েছে তার সবকিছুই করার সুযোগ করে দিয়েছে উচ্চ আদালতই। তাই বিচারবিভাগের উপর হস্তক্ষেপ, প্রভাব বিস্তারের জন্যেই সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী তা মনে হয় না। এখানে অন্য কোন বিশাল উদ্দেশ্য আছে। তাহলে সেটি কি?!

১। আওয়ামী লীগ জানে জনগণ তাদের চায় না। দুই বছর পর হোক, পাঁচ বছর পর হোক বা দশ বছর পর হোক আওয়ামী লীগকে চরম ভাবে বিদায় নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী বিচারপতিরা যে রাজনৈতিক অনাচার বিচারের নামে চালাচ্ছে তার প্রতিকার করে বিচারবিভাগকে জনগণের আশা আখাঙ্ক্ষার আলোকে সাজাতে হলে ওই সব আওয়ামীপতিদের অপসারণ করতেই হবে এবং তা সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে যথাযথ নিয়ম মেনে করা যত সহজ হবে বর্তমান সংশোধনীর আলোকে করা তত কঠিন হবে। আওয়ামী লীগ হয়তো আশা করছে ভবিষ্যতে তাদের বিরোধীরা দুই-তৃতীয়াংশ আসন নাও পেতে পারে। না পেলে আওয়ামীপতিদের বর্তমান সংশোধনীর আলোকে অপসারণ করা সম্ভব নয়। আবার দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে ওই সব দলবাজ বিচারপতিদের অপসারণের উদ্যোগ নিলে আওয়ামী মিডিয়ার মাধ্যমে বিচারবিভাগের উপর সরকার হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে মর্মে প্রচারণা চালানো যাবে এবং চাপ সৃষ্ঠি করা হবে।

২। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হলে তার ও তার দলের সকল অনাচারের বিচার করতে গেলেও দেখা যাবে ঘুরে ফিরে আওয়ামীপতিদের হাতেই বিচারের ভার পড়ছে। কারণ আওয়ামী লীগ এমন ভাবে দলকানাদের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে তাতে তাদের বহাল রাখলে আগামী ৫০বছরেও বাংলাদেশের উচ্চআদালত ওদের হাত থেকে মুক্ত হবে না। এ অবস্থায় সেই দলীয় বিচারপতিদের ভবিষ্যতে কোন ভাবেই যেন অপসারণ করা না যায় তাই ১৬তম সংশোধনীর মূল উদ্দেশ্য বলে মনে হয়। ফলশ্রুতিতে অন্য কোন সরকারের পক্ষে আওয়ামী অনাচারের বিচার করা যেমন সম্ভব হবে না তেমন আওয়ামী লীগের তৈরি করা চকের বাইরেও সরকার যেতে পারবে না। কিছু করতে গেলেই উচ্চআদালতের আওয়ামীপতিরা রুল ইস্যু করে তা বানচাল করে দিতে পারে।

এ ধরনের সুদুরপ্রসারী লক্ষ্যেকে সামনে রেখেই কি বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দিয়ে সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী আনা হয়েছে?!

বিষয়: বিবিধ

১৯০০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

266415
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০১:৫৪
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
266428
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:২২
শেখের পোলা লিখেছেন : রাজা রাণী যা চাইবেন তাই হবে৷ কারণ বাঙ্গালী খাল কেটেই তাদের এনেছে৷
266434
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:০৫
ভিশু লিখেছেন : মানুষকে সাঈদী-রায়-জ্বরে ব্যস্ত রেখে কৌশলে এই সংশোধনীর মাধ্যমে সেই প্রতিশ্রুত 'বিচার-বিভাগের-স্বাধীনতা' প্রদানের সম্পূর্ণ উল্টো ধাপ্পা দিয়েছে আওয়ামী লীগ! চুয়াত্তরের বাকশালের চেয়েও এককাঠি কঠিন...স্যরি সরস হয়েছে এই পদ্ধতি! এখন আমরা একটি সুস্পষ্ট কমিউনিস্ট-নিয়ন্ত্রিত, একাট্টা ধর্মবিরোধী, প্রতিশ্রুতিশীল তাঁবেদার ও আধুনিক একনায়ক-পরিচালিত ডিজিটাল জাতি হিসেবে বুক ফুলিয়ে গর্ব করতে পারি!
266489
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৩৬
সালাম আজাদী লিখেছেন : আহারে, সেই আওয়ামিদের সাথে আজো কেনো যে কেও কেও বসে!!
ঘেন্না ধরেছে এই সব রাজনীতি সর্বস্ব ইসলামিস্ট দের উপর
266695
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:০২
egypt12 লিখেছেন : খারাপ না ভালোই বলেছেন Rose
266725
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:৪৯
নূর আল আমিন লিখেছেন : আদালত কি আর আদালত আছে আদালত এখন পাদালত হাইকোর্ট জজকোট সুপ্রিম তো এখন মুজিবকোট

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File