বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে "ক্রুশ"-"ওঁ"-"গণেশ" ইত্যাদি জায়েজ আর কুরআনের আয়াত নাজায়েজ?!
লিখেছেন লিখেছেন পুস্পিতা ১০ জুলাই, ২০১৪, ০৫:৪৬:১২ বিকাল
১। কলেজে আমাদের ফিজিক্সের টিচার ছিলেন তিনি। হিন্দু ধর্মের। খুবই ভাল টিচার ছিলেন। তার কাছে প্রাইভেট পড়তাম। স্যারের মেয়েও আমাদের সাথে একই ক্লাসে পড়তেন। মেয়ের সাথে ঘনিষ্টতা সাথে প্রাইভেট ছাত্রী হিসেবে স্যারের বাসায় যাওয়া আসা ছিল, স্যারও খুব পছন্দ করতেন। তিনিও আমাদের বাসায় বেশ কয়েকবার এসেছিলেন। এখনো যোগাযোগ আছে, বাসায় যাই। স্যারের বিশ্বাস প্রকৃত সেকুলারিজম যদি সমাজ ও দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে নাকি সমাজে নিশ্চিত শান্তি আসবে, সকল ধর্মের অধিকার নিশ্চিত হবে! পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে তিনি এসবও বলতেন। ভাল ও অমায়িক শিক্ষক হিসেবে স্যারকে পছন্দ করলেও এ বিষয়টির সাথে একমত হতে পারতাম না। কিছুদিন আগে ঢাকায় ছাত্রী সংস্থার ২৪জন ছাত্রী গ্রেফতারের পর স্যারের সাথে দেখা হয়েছিল তার বাসায়। অনেক কথার ফাঁকে স্যারকে বলি, আওয়ামী লীগ তো ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী এবং সংবিধানেও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ আছে, এখন কি সমাজে শান্তি আছে? সকল ধর্মের অধিকার কি এখন নিশ্চিত করা হয়েছে? বিশেষ করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মুসলমানদের কি এখন ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে?
তুমি এভাবে বলছো কেন?
কুরআন পড়ার অনুষ্ঠান থেকে ২৪জন ছাত্রীকে গ্রেফতার, দাঁড়ি, বোরকা ইত্যাদি দেখলে পুলিশের সন্দেহ করা, গ্রেফতার করা, বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের ইসলাম বিরোধী কয়েকটি পদক্ষেপ সহ কয়েকটি উদাহরণ দিলাম এবং বললাম স্যার এসবের মাধ্যমে কি আওয়ামী লীগ প্রমাণ করে দিচ্ছে না ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ মানে আসলে ইসলাম বিরোধীতা?!
স্যার একমত পোষন করলেন এবং বললেন তিনি যে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাস করে তাতে ব্যাক্তিগত ভাবে ধর্ম চর্চায় কোন বাঁধা দেয়া হবে না এবং ওই সব ছাত্রীদের গ্রেফতার করা ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করলেন।
কিন্তু এখন ব্যাক্তিগত ভাবেও ইসলাম চর্চায় বাঁধা দেয়া হচ্ছে এবং আওয়ামী ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে ইসলামের জন্য কোন স্থান নেই!
স্যার, চুপ করে ছিলেন...
২। স্যারের কথা মনে পড়লো আওয়ামী ভিসি ও প্রশাসন কর্তৃক খুলনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে 'রাব্বি যিদনি ইলমা'- কুরআনের আয়াতটি তুলে দেয়ার খবরটি পেয়ে। আওয়ামী লীগ আস্তে আস্তে ঠিক যেন ১৯৭২-৭৫ এর দিকে ফিরে যাচ্ছে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সহ সবকিছুকে দলীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংস করা হচ্ছে। একদলীয় রাজনীতি, সংসদ তৈরি করা হয়েছে। সাথে ৯০% মুসলমানের দেশে প্রকারান্তরে ইসলামকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। যেমনটি করা হয়েছিল স্বাধীনতার পরপর। ২০১৪ সালে এসে যেন বাংলাদেশে ১৯৭২ ফিরে এসেছে। সেই সময়ে যেমন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ইসলাম বাদ দেয়া হয়েছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে কুরআনের আয়াত তুলে দেয়া হয়েছিল ২০১৪ সালে এসে একই কাজ আওয়ামী লীগ করছে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে। সে সময় যেমন ইসলামকে সাংবিধানিক ভাবে বাদ দেয়া হয়েছিল এবারও হয়েছে। সে সময় যেমন মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামের বিপরীত হিসেবে তুলে ধরে হাজার হাজার আলেমকে হত্যা, গ্রেফতার, নির্যাতন করা হয়েছিল এবারও করা হচ্ছে।
৩। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে আওয়ামী লীগের ইসলামবিরোধীতা আরো সর্বগ্রাসী রূপ ধারন করে ফিরে আসছে! আওয়ামী লীগ ৭২ সালে যেমন প্রমাণ করেছিল তাদের ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ আসলে ইসলাম বিরোধীতা এমনকি ব্যাক্তিগত পর্যায়েও ইসলাম পালনে বাঁধা দেয়া ২০১৪ সালে এসে তার আরো ব্যাপক ভাবে প্রমাণ করছে। বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদ্রাসা শিক্ষিতদের ভর্তি বন্ধ করা হয়েছে, বাঁধা দেয়া হচ্ছে, সিলেবাস থেকে ইসলাম মুছে ফেলা হয়েছে, ইসলামী ড্রেস পরে ক্লাসে যেতে বাঁধা দেয়া হচ্ছে, হিজাব পরা ছাত্রীদের হোস্টেল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে, নামাজের ঘরে তালা দেয়া হচ্ছে। ইসলাম বিরোধীতার এধরনের ভুরি ভুরি উদাহরণ হাসিনা এবার তৈরি করেছে। তার সর্বশেষ প্রকাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে কুরআনের আয়াত তুলে দেয়া এবং এসবকিছুই করা হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে!
৪। একটি বিষয় খুবই লক্ষ্যনীয়, আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের নামে শুধুমাত্র ইসলামকেই টার্গেট করেছে। অথচ ধর্মীয় নামে আরো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, যেমন ঢাকার নটরডেম, হলিক্রস ইত্যাদি। সে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মনোগ্রামে "ক্রুশ" চিহ্ন আছে। এরপর সারাদেশে ভারতেশ্বরী হোম, রামকৃষ্ণ মিশন, জগন্নাথ হল, জগন্নাথ কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়, আনন্দ মোহন কলেজ, রাজেন্দ্র কলেজ, ভোলানাথ হিন্দু একাডেমী ইত্যাদি নামে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে এবং তাদের নাম ও মনোগ্রামে ধর্মীয় চিহ্ন আছে। আওয়ামী লীগ ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ধর্মীয় নাম ও চিহ্ন কখনো তুলে দিয়েছিল? কিন্তু ইসলাম, কুরআন যেখানে যেখানে আছে তার সবকিছুই যেন আস্তে আস্তে তুলে দিতে চায়! এর নামই আওয়ামী ধর্মনিরপেক্ষতা?!
৫। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ তার মৌলিক আদর্শ হিসেবে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা ব্যাক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র কোন স্থানেই ইসলামকে স্থান দিতে চায় না। ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ, ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থাকে সংকুচিত করা হচ্ছে, ইসলামী যে কোন অনুষ্ঠান প্রকারান্তরে বন্ধ! এদেশের ৯০% মুসলমানরা হয়ে পড়েছে চতুর্থ/পঞ্চম শ্রেণীর নাগরিক! আওয়ামী বুদ্ধিজীবিরা দাবী তুলছে বিসমিলল্লাহ বা কুরআন তেলোয়াতের মাধ্যমে কোন অনুষ্ঠান শুরু করা যাবে না! এদেশে নাস্তিক, ধর্মবিদ্বেষী কমিউনিস্ট, ইসলাম বিরোধী সেকুলারিজম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই যার যার মতবাদ/ধর্ম অবাধে পালন/প্রচার করতে পারবে কিন্তু ইসলাম নিষিদ্ধ! এই রমজানেই ঢাকায় একটি মসজিদে গিয়ে রাত দশটার ভিতর তারাবী শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে এক এসআই কারণ দশটার পর হলে নাকি হিন্দুদের অসুবিধা হয়! এভাবে আস্তে আস্তে সরকারী পৃষ্টপোষকতায় ইসলাম নিষিদ্ধের দিকে যাচ্ছে। আকবরের দীনে ইলাহী ফিরে আসছে! দীনে ইলাহীতে সকল ধর্মের মিশ্রনে নূতন ধর্ম তৈরি করতে গিয়ে দেখা গিয়েছিল ইসলামকেই নিষিদ্ধ করে অন্য সব ধর্মকে গ্রহণ করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগও কি সেদিকে যাচ্ছে? ১৫কোটি মুসলমানের দেশে কি মুসলমানদের কি হুশ হবে না?! তারা কি এখনও ঘুমাবে?!
বিষয়: বিবিধ
৪৯৮৮ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সবকিছু থেকেই যখন কুরআনের আয়াত, আরবী নাম ইত্যাদি উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে, তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী আম্মজান পীর সাহেব কেবলা হুযুর উনার পরম শ্রদ্ধেয় আব্বাজানের নাম থেকে "রহমান" শব্দটা উঠিয়ে সেখানে কোন ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ ব্যবহার করছেন না কেন? একটি ধর্মনিরপেক্ষ জাতীর পিতার নাম হবে ধার্মিক শব্দ দিয়ে??????? এটা কি ধর্মনিরপেক্ষতার বিপরীত নয়?
আর অশ্লীলতা-বেহায়াপনা-মাস্তানি-খুন-গুম-লুটপাট-মদ-মাদক-উলঙ্গসংস্কৃতি-পরকিয়া-সিরিয়াল-নকল- প্রশ্নফাঁসকে প্রমোট করা, ঘরে-ঘরে বিনামূল্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য তাঁরা মরিয়া হয়ে উঠে পড়ে লেগেছেন!
এর কারণ, এভাবেই দেশে দেশে অবৈধ গণবিরোধী সরকাররা বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেন! আমার এই কথায় যদি কারো সন্দেহ থাকে, প্লিজ আস্ক ইওরসেলফ...ইউ উইল ফাইণ্ড অল আন্সারস উইথ ক্লিয়ার ইভিডেন্সেস!
মূল্যবান ও চমৎকার আই-ওপেনার উপস্থাপনার জন্য অসংখ্য শুকরিয়া আপনাকে! আল্লাহ আপনার সম্মান-যোগ্যতা আরো অনেক ওন্নেক গুনে বাড়িয়ে দিন, কল্যাণ দান করুন, আমীন!
তবে এতে আর কোনো সন্দেহ নেই যে, বাংলার মানুষ আসছে চিরকাল শেখ হাসিনাকে বাংলার ফেরাউন-হিটলার-চেঙ্গিসখান-আতাতুর্ক-বেনআলী-কারজাই-জামাল-নাসের-মোবারক-সিসিদের মতোই স্মরণে রাখবে!
বরং এ্যাড করছে।
আমি মনে করি প্রতিটি মুসলমানকে এসব বিষয়ে কঠিন অবস্থানে আসতে হবে। আমি আওয়ামী লীগ, বিএনপি না জামায়াত এর চেয়ে বড় পরিচয় আমি একজন মুসলামন। ৯০ভাগ মুসলামনের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মনোগ্রামে ক্রুশের ছবি থাকতে পারবে আর কোরআনের আয়াত উঠিয়ে দেয়া হবে এটা কেমন কথা? এটা কেমন ধর্মনিরপেক্ষতা?? ধর্মনিরপেক্ষতা মানে কি ইসলাম বিরোধীতা?
যদি তাই না হয় তবে কেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযু্ক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে কোরআনের আয়াত মুছে দেয়া হলো? অথচ ঢাকার নটরডেম ইউনিভারসিটি এবং হলিক্রস কলেজ ক্রশ চিহ্ন বহাল তবিয়তে আছে।
কিন্তু এই লিখালিখি, আলোচনা-সমালোচনা সহ পজিটিভ শক্তিসমূহ প্রয়োজনীয় পরিবর্তন নিশ্চিত করতে যে পরিমান সময়, শক্তি ও অর্থ ব্যায় করছে - তা লক্ষ্যহীন আনপ্রোডাক্টিভ সাইকেলে ঘুরছে বলে আমার মনে হয়। আমার আরো মনে হয় - পজিটিভ শক্তি সমূহের উচিত নির্মোহ ভাবে মিশরের ঘটনা প্রবাহ, তুরস্কের রাজনীতি, সৌদী, কাতার সহ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, ইরান ও ইসরাইলের রাজনীতি এবং সর্বোপরী পাশ্চিমা শাসন ও শোষন কৌশল নিয়ে বিচার বিশ্লেষন করা। এবং সে সাথে কোরআন ও হাদীসে এ পরিস্থিতি নিয়ে কি বলা হয়েছে - তা দেখা।
উপরোক্ত বিষয়ের আবর্তে পজিটিভ শক্তি সমূহ তাদের করনীয় যতটা এ্যাপ্রোপিয়েটলী পাবে - এবং সাকসেস যতটা পাবে - অন্য কোনভাবে পাবেনা বলেই মুসলিম ব্রাদারহুড, হামাস ইত্যাদি প্রমান করছে। তার বাহিরে ইয়েমেন, খোরাসান ইত্যাদির ঘটনা প্রবাহ ভাবনার বিষয় হয়ে উঠছে। সর্বোপরী ইসরাইলী বর্বরতা, মুসলিম লিডারশীপের পশ্চিমা নির্ভরশীলতা দিনকে দিন - এটাই প্রমান করে 'মুসলিম' মানুষ মাত্রই নবীজির ভবিষ্যতবানী 'এ্যানস্লেইভমেন্ট' এর কবলে নিপতিত হয়েছে।
আপনার স্প্রীট ও অধ্যাবসায়ের জন্য, আমি অনেস্টলী চাই আপনি 'জেরুজালেম ইন কোরআন' বইটি নির্মোহ দৃষ্টিকোন হতে ইংরেজিতে পড়ুন। নিদেনপক্ষে বাংলা অনুবাদে পড়তে পারেন। আমার বিশ্বাস ক্রীটিক্যালী এ্যানালাইসিস করলে পরেও ঐ বই আমাদের দৃষ্টিভংগীতে অনেক পরিবর্তন আনবে এবং শেখ হাসিনা সরকারের অনেক কিছুই বোধগম্য হবে।
ধন্যবাদ।
আর বাংলা ভারশান টার জন্য আপনি www-imranhosein.org আপনি এ সাইট এ গিয়ে বুকস এর আন্ডারে বাংলা ক্লিক করলে পাবেন।
ধন্যবাদ।
http://www.imranhosein.org/media/books/j_in_q.pdf
সচেতন মূলক পোস্টের জন্য ধন্যবাদ। আল্লাহ্ আপনার মেধা এবং যোগ্যতা আরও বাড়িয়ে দিন। রমজান মুবারাক
মন্তব্য করতে লগইন করুন