প্রভু, ছোট্ট এই প্রদীপটি যদি নিভে যায় তাহলে অনৈতিকতার অন্ধকারে আলো জ্বালানোর মতো আর কেউ থাকবে না...
লিখেছেন লিখেছেন পুস্পিতা ১৭ জুন, ২০১৪, ১১:১৪:৫৬ রাত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। তার সাথে পরিচয় ওর বড় বোনের মাধ্যমে। সে আজ দুপুরে কথা বলছিল। আপু, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের একছাত্রকে নৃশংস ভাবে আক্রমণ করে পা বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে, খবরটি কি পেয়েছেন?
হ্যাঁ, গতকাল সন্ধ্যায় পেয়েছিলাম।
আপনি তো সবসময় লিখেন। কি নৃশংস ও ভয়াবহ ভাবে পঙ্গু করে দিল একজন ছাত্রকে, এ বিষয়ে আপনি কিছু লিখলেন না?!
আসলে মেডিকেল থেকে বাসায় ফিরে খবরটি পেয়েছিলাম এবং ছবি সহ স্যোশাল মিডিয়ার কয়েকটি লিংকও দেখেছি। মন খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল তাই লিখতে গিয়েও লিখতে পারিনি। বারবার সেই ছাত্রটির বিচ্ছিন্ন পা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। ছবি দেখার পরপর আম্মাকে বলেছি, আম্মা দোয়া করবেন শিবিরের একটি ছেলের খুবই ভয়াবহ অবস্থা। কুপিয়ে পা বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে।
কি বলিস? কোথায়?
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। পুলিশ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী সবার সামনে তাকে কুপিয়েছে ছাত্রলীগ।
ছবি দেখে আম্মা, ভাবী সহ আমরা কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। আজ সারাদিন খবর নেয়ার চেষ্ঠা করেছি, ছাত্রটির সর্বশেষ অবস্থা জানার। কিছুটা স্থিতিশীল বলে জানলাম। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য কোথাও আনতে পারবে কিনা তা জানতে পারিনি কারণ যারা কুপিয়েছে সেই সন্ত্রাসীদেরকে গ্রেফতার না করে আহত ছাত্রটিকেই নাকি কয়েকটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ নামের কীটগুলো!
ছাত্রটির কথা চিন্তা করছি, কি কঠিন সিদ্ধান্তই না তারা নিয়েছে এই দুনিয়ার জীবনে। শিবিরের এই ছাত্রগুলো চাইলেই ইয়াবা, নারী, অশ্লীলতা, নেশা, ছিনতাই, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি নিয়ে পড়ে থাকতে পারতো এবং খুব সহজেই তথাকথিত আনন্দের জীবন পরিচালনা করতে পারতো। কিন্তু তারা এসবকে এড়িয়ে গিয়ে এক কঠিন পথের যাত্রী হয়েছে শুধুমাত্র এদেশকে নৈতিকতার আলোতে আলোকিত করার এক দুঃসাহসিক লক্ষ্য নিয়ে। বারবার ভাবতে থাকি ওদেরকে নিয়ে। বিগত ৫/৬ বছরে ওদের ত্যাগ, সাহস এদেশের মানুষ একদিন অবশ্যই বিবেচনা করবে। ওদের রক্ত একদিন কথা বলবে। এই ধরনের অনেক কিছু চিন্তা করছি, কিন্তু মনকে কোন ভাবেই সান্ত্বনা দিতে পারছি না। কি বলবো, কিভাবে বলবো তা বুঝতে পারছি না। তবে প্রতিটি নামাজের পর যখন ওদের কথা চিন্তা করি, তখন বদর যুদ্ধের দিন অংশগ্রহণকারী সাহাবীদের উদ্দেশ্য করে রাসুল (সাঃ) করা দোয়াটি মনে ভেসে উঠে। ‘প্রভু, মুসলমানদের এই ছোট্ট দলটি যদি আজ শেষ হয়ে যায়, তাহলে এই দুনিয়ার বুকে ইবাদতের জন্য আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। সুতরাং আপনি আপনার সেই সাহায্য অবতরণ করুন, যা দেয়ার অঙ্গীকার আপনি আমার সঙ্গে করেছেন।’
গত ৫/৬ বছর ধরে নিয়মিত এই কামনাটি করে আসছি। প্রভু, বাংলাদেশে শিবির নামের এই ছোট্টদলটি যদি নিশ্চিন্ন হয়ে যায় তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের বিপরীতে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের নাম নেয়ার মতো আর কাউকেই হয়তো পাওয়া যাবে না। চরম অনৈতিকতার ভিতরেও যে ছোট্ট একটি প্রদীপ এখনো জ্বলে আছে তা তুমি নিভিয়ে দিও না। তুমি ওদের সাহায্য করো।
বাংলাদেশ আজ কোন মানবিক ভুখন্ডের নাম নয়। আওয়ামী নামের হায়েনাদের কবলে পড়ে এটি পুরোপুরি জংলীরূপ ধারণ করেছে। এখানে মানুষের জীবন, সম্মানের কোন দাম নেই। হাসিনার বাংলাদেশে দাম আছে শুধু আওয়ামী লম্পটদের। ভয়ংকর অবস্থা। এই ধরনের অমানবিক ও নৃশংস হতে পারে মানুষ? না মানুষ পারে না। কিন্তু লীগ নামের পশুগুলো পারে। হাসিনা নামের ডাইনী পারে। সে কারণে হাসিনা সারাদেশে সন্ত্রাসের ওপেন লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছে তার বাহিনীগুলোকে। রক্তের হোলি খেলা চলছে প্রতিটি প্রান্তে। সেই হোলি খেলায় প্রধান অনুঘটক হয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনীগুলো। কি র্যাব, কি পুলিশ, কি বিজিবি, কি সেনাবাহিনী! সবাই সবাই যেন দাঁড়িয়ে পড়েছে এদেশের জনগণের বিরুদ্ধে। তাদের একমাত্র কাজ ও দায়িত্ব সন্ত্রাসী ও খুনিদের পাহারা দিয়ে নৃশংসতা চালিয়ে যেতে সহযোগীতা করা। এক চরম পরিণতির দিকে যাচ্ছে দেশ। নৈতিকতার বিরুদ্ধে অনৈতিকতার চুড়ান্ত যুদ্ধ মনে হয় শুরু হবে।
এই যুদ্ধে ঠিকে থাকা সাধারণ ও দূর্বল নৈতিকতার কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। পারবে শুধু রাসেলদের মতো সবকিছুর বিপরীতে যারা দাঁড়িয়ে যাওয়ার চরম সাহস রাখে। পা কাটবে, হাত কাটা যাবে এমনকি জীবনটিও চলে যাবে। কিন্তু রাসেলদের মতো নৈতিক শক্তি সম্পন্নরা দৃঢ় ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে এবং সময়ের ব্যবধানে আওয়ামীরা, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা পরাজিত হবেই। কাটা পা নিয়েই রাসেলরা দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে যাবে সেই সত্যের পানে যার আলোতে পুরো দেশকে আলোকিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েই তারা এ পথে নেমেছিল।
প্রভু তুমি তাদের সহায় হও। এই পথের পথিকদের সাহায্যের অঙ্গীকার আপনি নিজেই করেছেন। বাংলাদেশ আসলেই চেয়ে আছে ওদের দিকে। আলোর পথের যাত্রীদের জন্য আপনিই যথেষ্ঠ। শেখ মুজিব, ফিরাউন, উতবা, শায়বা নামের স্বৈরাচাররা সময়ের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে নির্মূল হয়েছে, হাসিনাও হবে। ইতিহাসের পরিণতি কেউ ঠেকাতে পারবে না।
বিষয়: বিবিধ
২৭৬৮ বার পঠিত, ৫৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর যেভাবে হৃদয়-স্পর্শী করে লিখেছেন, আর পারি নাহ!
"তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং সন্ধির জন্য আহ্বান করো না৷ তোমরাই বিজয়ী থাকবে৷ আল্লাহ তোমাদের সাথে আছেন৷ তিনি তোমাদের আমল কখনো নষ্ট করবেন না৷"
সুরা মুহাম্মাদ ৩৫
তাই রাজনৈতিক যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আরো অনেক অনেক চিন্তা করা উচিত এবং এমন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত তা দূরদর্শী হবে এবং ভবিষ্যতের জন্য ভাল হবে।
ভাবছি ইসলাম কি আসলেই আমাকে অতটা ধৈর্য ধরতে বলেছে - যে, দুনিয়ায় একের পর এক ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী বিস্ট গুলোকে বিচারের লুফ এড়িয়ে যেতে দেওয়া যথার্থ বলে বিবেচিত হবে?
কোরআন-হাদিস কি আমাকে অন্য কোন বিকল্প দেয়নি?
আল্লাহ আমাদেরকে গাইড করুন, সত্য জানার ও বোঝার তৌফিক দিন এবং ইসলামের পথে আমাদের সিদ্ধান্ত নেবার শক্তি আরো বাড়িয়ে দিন।
আর এসব ধিক্কাররের প্রতিটি শব্দ এসব পশুদের কবরকে করবে আজাবে আজাবে পরিপূর্ণ :(
হায় মানবতা, হায় সভ্যতা। ধীক, ধীক এই সভ্যতাকে, ধীক এই দেশের শিক্ষিত তথাকথিত বুদ্ধি জীবী নামক কুলাঙ্গার দেরকে। ধীক সাংবাদিক, মিডিয়া, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাষনের চেয়ারে বসা পা চাটা কুত্তা গুলোকে। দেশে কি একটা মানুষও নাই? আসলেই এই দেশে কোনো মানুষ নাই। সবাই অমানুষ। সবাই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন