জীবন খুবই ছোট, সেটিকে পৃথিবীতেই নরক বানানোর প্রয়োজন কি?!
লিখেছেন লিখেছেন পুস্পিতা ০৭ জুন, ২০১৪, ০৭:৫২:০২ সন্ধ্যা
আপু মন খারাপ নাকি?
হুমম... সামান্য।
কেন কি হয়েছে?
আর বলিস না, আমার ডিউটি ছিল বিকালে। তোর ভাইয়া সন্ধ্যায় ফিরে তাইফকে (আপুর ৫বছরের বাচ্চা) নাকি দেখেছে কাজের মেয়ে সহ টিভি দেখতে। আমার শাশুড়ি বাসায় ছিল। তিনি ইমার্জেন্সি আমার ননদের বাসায় গিয়েছে। খুব বেশি সময়ের জন্য না। কিন্তু এর মধ্যেই তোদের ভাইয়া বাসায় গিয়ে দেখে কাজের মেয়েটি জি বাংলা দেখছে আর তাইফ সেখানে বসা। এরপর আমি বাসায় ফিরার পর সেকি রাগ। কেন কাজের মেয়েকে শাসন করি না, কেন সে বাচ্চার সামনে টিভি দেখছে! ইত্যাদি, ইত্যাদি...
তারপর?
তারপর আর কি, সে আবার কাজের মেয়েকে কিছু বলবে না, বাচ্চাও তো আর বড় না যে তাকে রেগে কিছু বললে বুঝবে। যা রাগ দেখানো আমার উপর দেখালো আর কি! ওর ধারনা আমি ওই মেয়েটিকে লাই দিতে দিতে মাথায় তুলেছি! আচ্ছ বল, কাজের মেয়ের যে ক্রাইসিস, তাদেরকে কি বেশি বকাবকি করা যায়?!
এটা ঠিক, বেশি বললে যদি চলে যায় তারপর তো মহা সমস্যা। তবে কাজের মেয়েদের একটু শাসন করতে হয় এবং বাচ্চাকে নিয়ে যেন কখনই টিভি না দেখে।
সেটা ঠিক আছে, তাই বলে এত রাগ দেখাবে আর বকাবকি করবে? বেশি যখন রাগারাগি করছে তখন আমিও করেছি। মেজাজ আর কতক্ষণ ঠিক রাখা যায় বল? রাত দশটার পর বাসায় গিয়ে কি এত কথা শুনতে ভাল লাগে? কিন্তু দেখ, বেশি বকেছে সে অথচ এমন ভাব নিয়ে আছে যেন আমি বেশি রাগারাগি করেছি!
তার মানে সকাল পর্যন্ত রাগ ভাঙ্গেনি এবং কথা বলা শুরু হয়নি?!
হ্যাঁ, তবে এবার ওর পালা, গতবার আমার ছিল, আমি আগে কথা বলে ঠিক করে ফেলেছি এবার ওকে শুরু করতে হবে আগে!
আমাদের একজন সিনিয়র আপু ও তার হাজবেন্ড, উভয়ই ডাক্তার। এক ছেলে। সুখী পরিবার। কিন্তু ঝগড়া যে নেই তা বলা যাবে না। সেটা ছাড়া নাকি পরিবার জমে না! কিন্তু আপু এবং ভাইয়ার ভিতর একটি অলিখিত আইন আছে। খুবই স্ট্রং আইন!
১। ঝগড়া, খুনসুটি হবে কিন্তু তা রুমের ভিতরেই থাকবে। অন্য কারো সামনে করা যাবে না। বিশেষ করে বাচ্চার সামনে।
২। আওয়াজ কম হবে এবং তা বেড রুমের বাইরে যাবে না। কোন ধরনের খারাপ. অশ্লীল গালি দেয়া চলবে না।
৩। বিশেষ বিশেষ সময়ে আপু একটু বেশি রাগারাগি করলে ভাইয়া চুপ থাকবে। (আমাদের একজন টিচার বলতেন, তোমাদের ম্যাডামের সাথে আমার এত ভাল সম্পর্ক কেন জানো? কারণ তার মেজাজ খিটখিটে হওয়ার সময়ে আমি কখনোই তার কথার বাইরে যাই না!)
৪। উভয়ের পিতা-মাতার ব্যাপারে কেউ কটু কথা বলবে না, আপু তার শশুড়-শাশুড়ির ব্যাপারে ভাইয়ার কাছে কোন অভিযোগ করবে না, ভাইয়াও আপুর মা-বাবার ব্যাপারে করবে না! পিতা-মাতা নিয়ে কথা বললে নাকি মেজাজ উভয়ের চরমে উঠে!
৫। আইনের সবচেয়ে বড় বিধি হলো, ঝগড়ার পর একবার আপু নিজ থেকে কথা বলে পরিবেশ স্বাভাবিক করে নেবে, আরেকবার আপুর হাজবেন্ড করবে (ঝগড়া যার কারণেই হোক না কেন)। এভাবে পালাবদল করে তারা ঠিকঠাক করে নেবে।
এ পর্যন্ত তারা ওই নিয়ম মেনে চলছে। মাঝে মাঝে আইন কিছুটা ভঙ্গ যে হয় না তা নয় তবে তা খুবই মাইনর এবং তারা চেষ্ঠা করে নিজেদের ঠিক করে নেয়া আইন মেনে চলার। ব্লগে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক দায়িত্ব, অধিকার, স্বামী নির্যাতন না স্ত্রী নির্যাতন ইত্যাদি নিয়ে কয়েকটি পোস্ট দেখে আপুর ব্যাপারটি মনে পড়লো। আপু ও তার স্বামী সব বিষয়ে একমত হন বা সব সময় সবকিছুই ঠিকঠাক মতো চলে তা নয়। ঝগড়া হয়, ভুল বুঝাবুঝি হয়। কিন্তু তারা সহনশীল। নিজের ও পরিবারের অন্যান্যদের মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন। পরস্পরকে সম্মান করে। ভালবাসে। নিজেদের ভবিষ্যৎ বংশধর সম্পর্কে সচেতন। ঝগড়া হলেও তার ইফেক্ট যেন সন্তানের উপর না পড়ে তা বিবেচনা করে। কোন কোন বিষয়ে একমত হতে পারে না বলে, অন্য সবকিছু ভুলে যান না।
তাই মনে হচ্ছে দুজনের বুঝাপড়া যদি ঠিক মতো হয়, বুঝাপড়া করে নেয়া যায় তাহলে উভয়ে-উভয়কে সম্মান করবে, পারস্পরিক সমস্যাগুলো বুঝবে, একসাথে সমাধানের চেষ্ঠা করবে। অপ্রয়োজনীয় কর্তৃত্ব পরায়নতা স্বামী-স্ত্রী উভয়ে যদি না দেখায় তাহলে জীবন অনেক সহজ বলে মনে হবে। তারপরও আসলে জীবন সহজ না, কিন্তু নিজেরা নিজেদের ভিতর ঝামেলা করে বা ঝামলে লাগলে তা দীর্ঘসময় ধরে টেনে নিয়ে সেই কঠিন জীবনকে আরো কঠিনতর করার প্রয়োজন কি?
অনেক সময় কে সেরা বা কে বস তা নিয়েও নাকি ঝগড়া বাঁধে। আসলে মায়া-মমতা দিয়ে সন্তানকে মানুষ করার ক্ষেত্রে মা শ্রেষ্ঠ, আর শাসনের মাধ্যমে করার ক্ষেত্রে পিতা শ্রেষ্ঠ। পরিবারকে সাজানোর ক্ষেত্রে নারীই উপযুক্ত আর পুরুষ পরিবার চালানোর ক্ষেত্রে। উভয়েই উভয়ের ক্ষেত্রে অতুলনীয়। এসব ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ কে তা রিলেটিভ বিষয়। বিষয়টি অনুধাবন করলে তো স্বামী-স্ত্রী একজনকে আরেকজনের উপর ডিকটেটরশীপ চালাতে হয় না!
বাইরে প্রয়োজন না থাকলে মেয়েদের যতবেশি সম্ভব ঘরে সময় দেয়া উচিত। আবার দুজনকেই যদি বাইরে সময় দিতে হয় তাহলে উভয়ের পরামর্শ করা উচিত কি করে সন্তান ও পরিবার ঠিক রাখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সেক্টরে প্রতিষ্ঠিত পিতা-মাতা, যারা পরিবারে সময় দেয় না, দিতে পারে না তাদের সন্তারনাই নষ্ট হয়। তাই এখন কে কখন কিভাবে সময় ম্যানেজ করবে তা ভাবা উচিত। প্রফেশনের কারণে বাইরে সময় দিবে কিন্তু তার মানে যেন এমন না হয় অনৈতিকতার খপ্পড়ে পরে একদিকে সন্তান ও পরিবারের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হতে থাকবে অন্যদিকে নজর থাকবে শুধু ক্যারিয়ারের দিকে।
জীবন খুব অল্প সময়ের, ঝগড়া-মারামারি করে সেই জীবনকে পৃথিবীতেই নরক বানানোর কি প্রয়োজন?
বিষয়: বিবিধ
২২৯৮ বার পঠিত, ৫৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
১টু কেন্নো!? পুরোটাই কর্তে হবে!!! তাও তিন দিনের জন্য!!
এ দুটো লাইন খেয়াল করলেই অনেক ঝগড়া-বিবাদ থেকেই দুরে থাকা যাবে!
চমৎকার লিখেছেন আপু! খুব ভালো লাগলো!!
তাই বাচ্চাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য যে কোন একজনকে বাসায় থাকা জরুরী বলেই মনে করি।
আর ইয়ে মানে আমরা দ'জন ঝগড়া করি অনেক অনেক বেশী; আবার দু'জন আলাদাও ঘুমাতে পারি না যতই ঝগড়া হউক। বাসায় না থাকলে পুরুাই মরুভূমি মনে হয়
আর তিনি কিছৃ জায়গায় পুরুষকে দিয়েছেন নারিদের চেয়ে সম্মান আবার নারিকেও দিয়েছেন তান যথাযথ সম্মান।
দুজনে মিলেই = ১০০
আর তিনি কিছৃ জায়গায় পুরুষকে দিয়েছেন নারিদের চেয়ে সম্মান আবার নারিকেও দিয়েছেন তার যথাযথ সম্মান।
দুজনে মিলেই = ১০০
কারো সাথে ঝগড়ার মতো কেউ এই অধমের নাই, তাই সে অন্য বিষয়ে ভাবছে!
িইসলাম আমাদেরকে একটা নিয়মের মধ্যে দিয়ে চলতে বলে । এর ব্যাত্যায় হলে পরিবারে অশান্তি নেমে আসবেই , কারণ এসব নিয়ম আল্লাহর বানানো । আল্লাহই ভাল জানেন মানুষের অতীত ,বর্তমান এবং ভবিষ্যত ।
আপনার আপু শরিয়ত অনুযায়ী সংসার করছেন না । স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্বামীর সম্পদের হেফাজত করা তার উচিত ছিল আল্লাহর হেফাজতের মাধ্যমে । সূরা নিসা - আয়াত ৩৪ ।
সেটা সে করেনি , কারণ স্বামীর সন্তান তার মায়ের সঙ্গ পাচ্ছিলো না ঐ সময়ে । সেখানে তাকে সময় দিচ্ছিল কাজের মেয়েটি । যেটা মা হিসেবে আপনার আপুরই করার কথা ছিল সেটা করছে কাজের মেয়েটি । এখন উনার স্বামী যদি উনাকে যে উপহার দিতেন সময় সময় তা যদি কাজের মেয়েটিকেই দেন তাহলে কি আপনার আপু সেটা ভালভাবে নেবে ?
স্বামী সামলাবে বাইরের দিক আর স্ত্রী ভেতরেরটা - এটাই থিম আমাদের শরিয়তে । বিশেষ কোন আবশ্যকতা যদি পড়ে তাহলে স্ত্রী চাকুরীতে নামতে পারে এবং তা অবশ্যই স্বামীর অনুমতি নিয়ে ।
আপনার আপুদের কি কঠিন সময় যাচ্ছিল বা উনার স্বামী কি সংসার টানতে পারছিলেন না বলে স্ত্রীকে চাকুরি করতে পাঠিয়েছেন তার নিজের সংসারের সাথে কম্প্রমাইজ করে ?
যেহেতু স্বামীরাই খরচ করে তার স্ত্রীর জন্য সেহেতু স্ত্রী হিসেবে আপনার আপুর তার স্বামীর বাধ্য হওয়া উচিত ছিল ।
।
া আপনার আপু যেহেতু চাকরি করছে সেহেতু ধরে নেওয়া যায় যে আপনার আপু উনার স্বামীর অনুগত নন । তাহলে স্ত্রী যদি অনুগত না থাকে তাহলে উনার তার জন্য ব্যয় করা কি উচিত ?
যেখানে স্বামীরই কর্তৃত্ব করার কথা সেখানে দুইজনেই এ সমান হয় তাহলে সেই দাম্পত্য জীবন হয়ত বা ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক গঠিত হয়েছে তবে শরিয়ত মোতাবেক চলছে না । যেহেতু স্বামীকেই কর্তৃত্ব করার কথা বলা আছে সেখানে স্ত্রীকে বসিংয়ে আনার কোন সুযোগ শরিয়তেই দেয় না ।
আল্লাহ পিতার সম্পত্তিতে ভাই পাবে দুই বোনের সমান এটা বলে দিয়েছেন । এখানে পিতার কোনই সুযোগ নেই তার সম্পত্তি ছেলে মেয়ে উভয়ের মাঝে সমান ভাগে ভাগ করে দেবার ।
হয়ত আপনার আপু এত বছর ধরে ডাক্তারী পড়েছে কি বসে বসে খাবার জন্য - এই ধোঁয়া তুলে চাকরিতে যায় , তাহলে তার বিয়ের আগেই ডিসাইড করা উচিত ছিল তার কাছে সংসার আগে না কি ক্যারিয়ার / চাকরি আগে । কারণ একটা আরেকটার বিপরীত । একটা ধরলে আরেকটা হয় না । কেউ হয়ত বলবে যে উনারা দুটৈ সামাল দিচ্ছেন । কিন্তু তারা এটা বোঝেন না যে এখানে তারা প্রতারণা করছেন তার স্বামীর সাথে , প্রতারনা করছেন তার সন্তানের সাথে।
এরকম ফ্যামিলির সন্তানেরা বা তাদের বংশধরেরা পরবর্তীতে ডিরেইলড হয়ে যায় ।
াআজাদ সাহেবের রত্ন গর্ভা মায়েদের কজন ক্যারিয়ারিস্ট ? তাদের কাহিনী শুনলে জানা যাবে যে , তারা ঘরেরটা সামলিয়েছে এবং তাদের স্বামীরা সামলিয়েছে বাইরের টা ।
নারীদের অবস্থানই হচ্ছে ঘরের ভেতরে । যখন থেকেই তারা ঘরের বাইরে বের হয়েছে তখন থেকেই সমস্যা শুরু হয়েছে ।
আর একে রেগে গেলে অন্যে চুপ থাকলে সেটা জ্বলে উঠতে পারেনা। ধৈর্যের উপরে জিনিস নেই। উপরের উপদেশ বা আইনটি বেশ কার্যকরী মনে হয়েছে।
সুন্দর শিক্ষণীয় পোস্টটি স্টিকি করা হোক।
অনেক উপকার হল।
আামাদের নিজেদের একটি আইন আছে। তাহল
আমরা কেউ কারোর ব্যক্তিত্বে আঘাত করি না। নিয়ম হল - রাগের মাথায় কেউ এটা করলে অন্যজন তা স্বরণ করিয়ে দেই।
চলছে ভাল। আপনার ট্রিপ্স গুলো আরো কাজে লাগবে। শোকরান।
অতপর, লিখিত/অলিখিত আইন দিয়ে হয়তো সম্পর্কগুলোকে সুন্দর সাজানো যায়না। প্রয়োজন দুজনের মধ্যে দারুন বোঝাপরা, একে অপরকে সম্মান করা, একে অপরের প্রতি ত্যাগী হওয়া, সঙ্গীকে নিজের অস্তিত্ব মনে করে তাকে সুখী করার চেষ্টা করা, তিলাতি সুখ ভাগ করে ভোগ করা তেমনি পাহাড় পরিমান বিপদে একসাথে পথচলা - এই সব মিলেই হতে পারে সার্থক দাম্পত্য জীবন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন