অতি আত্মবিশ্বাসী-অহংকারী শেখ হাসিনা ও ইতিহাসের পরিণতি...
লিখেছেন লিখেছেন পুস্পিতা ০৩ জুন, ২০১৪, ১০:২২:২৪ রাত
'কাদের মোল্লার ফাঁসি যাতে কার্যকর না হয়, সে জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিসহ অনেকেই ফোন করেছিলেন। এ দেশে আর কে আছে, এসব ফোনের পর ফাঁসি কার্যকর করতে পারে? বঙ্গবন্ধুর কন্যাই এটা পারে।'
চোর ও সন্ত্রাসীদের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নেয়া, বিচারপতিদের ধমক দেয়া, বিএনপি সহ অন্যান্য দলকে তাচ্ছিল্য করা, পুলিশ-র্যাব-বিজিবি দিয়ে বিরোধী দল দমনে গর্ব করা সহ নানারকম তাক লাগানো উক্তিতে ভরপূর ছিল শেখ হাসিনার সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলন। ভারতের সহযোগীতায় অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলে রাখা শেখ হাসিনার জাপান সফরের পর করা সেই সাংবাদিক সম্মেলনের কথা, বডিল্যাংগুয়েজ ইত্যাদি বুঝিয়ে দিচ্ছে তিনি এখন খুবই আত্মবিশ্বাসী, অতি অহংকারী! কাউকেই পরোয়া করিনা, না দেশের মানুষ, না বিদেশ, না স্বদেশ, কাউকেই না, কাউকেই না!
শেখ হাসিনার সেদিনের কথাবার্তা গুলো পড়েছি, শুনেছি, বুঝার চেষ্ঠা করেছি। যত শুনছি ততই শেখ মুজিবের কথা মনে পড়ছিল। সাথে সাথে হুমায়ুন আজাদের 'আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম?' বইতে লিখা শেখ মুজিবের সেই সময়ের কথাগুলো মনে ভেসে উঠছিল।
মুজিবের কথা মনে হলে আমার জুলিয়াস সিজারের কথাই মনে পড়ে।
মুজিব ক্রমশ হয়ে উঠতে থাকেন একনায়ক, গণতান্ত্রিক জুলিয়াস সিজার হয়ে উঠতে থাকেন একনায়ক সম্রাট জুলিয়াস সিজার, কিন্তু মুজিবের দুর্ভাগ্য তাঁর কোনো আন্তোনি ছিলো না।
মুজিব পরিবৃত ছিলেন দুষ্ট রাজনীতিক, বিশ্বাসঘাতক, ও স্তাবকদের দ্বারা, স্বার্থপরতা আর কৃতঘ্নতা ছাড়া যাদের আর কোনো প্রতিভা ছিলো না। তাঁরা অনেক আগে থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে থাকে, তিনি তা বুঝতে পারেন নি। চক্রান্ত করার থেকে যা ভয়াবহ তা হচ্ছে তারা তাঁকে দূষিত করতে থাকে; জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে থাকে।
মুজিবও ভুলে যাচ্ছিলেন নিজেকে ও জনগণকে।
মুজিবকে রাজমুকুট দেয়া হয় নি, দেয়া হয়েছিলো সংবিধানের ‘চতুর্থ সংশোধনী’। সেটি তিনি হাতে ঠেলে সরিয়ে দেন নি, গ্রহণ করেছেন; সেটি ছিলো রাজমুকুটের চেয়েও শক্তিশালী।
মুজিবকে ‘চতুর্থ সংশোধনী’র মাধ্যমে অর্পণ করা হয় মহারাজমুকুট, ক্ষমতা দেয়া হয় স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি। একনায়ক হওয়ার দিকে কেনো তিনি ঝুঁকেছিলেন? তাঁর কি মনে হয়েছিলো, তাঁর পুজোরীরা কি তাঁকে বুঝিয়েছিলো, যে তাঁকে বিধাতা হতে হবে?
তিনি কি চেয়েছিলেন আমরণ বাঙলাদেশের অধীশ্বর থাকতে? তিনি কি একটি রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে রেখে যেতে চেয়েছিলেন যুবরাজদের, যারা তাঁর পরে হবে বাঙলাদেশের নিরঙ্কুশ অধীশ্বর?
‘চতুর্থ সংশোধনী’টি পড়ার সময় রক্ত ঠাণ্ডা হয়ে যায়; করুণা জাগে, এবং দেশ ও তার মহাননেতার ভবিষ্যৎ ভেবে হাহাকার করতে ইচ্ছা করে।
মুজিবই ছিলেন বাঙলাদেশে প্রকৃত একনায়ক-মহাএকনায়ক; তাঁর পরে যে সামরিক স্বৈরাচারীরা এসেছে, তারা তাঁর পাশে তুচ্ছ, আমের আঁটির ভেঁপু বাজানো বালকমাত্র।
চতুর্থ সংশোধনী তাঁকে করে তুলেছিলো মহাএকনায়ক; কিন্তু ওটি ছিলো তাঁর জন্য আত্মহত্যা; তারপর তিনি বেশিদিন জীবিত ছিলেন না, নৃশংসভাবে ঘাতকদের হাতে নিহত হয়েছিলেন; নিহত যদি নাও হতেন, চতুর্থ সংশোধনীর পর তাঁর জীবন হতো ধারাবাহিকভাবে আত্মহত্যা, মহানেতার শোচনীয় মর্মস্পর্শী পরিণতি।
১৯৭২ এ মুজিবের নেতৃত্বে প্রণীত হয় একটি অসাধারণ সংবিধান; কিন্তু ১৯৭৫ এর ২৫ জানুয়ারিতে তাঁরই হাতে নিহত হয় তাঁরই অসামান্য সংবিধানঃ বাঙলাদেশ গণতন্ত্র থেকে পা দেয় চরম একনায়কতন্ত্রে।
মুজিবের সামন্ততান্ত্রিক বঙ্গীয় দাম্ভিকতা সম্পর্কে আমার কিছু ধারণা ছিলো, ‘আমি’ ও ‘আমার’ ছিলো তাঁর প্রিয় শব্দ এবং ‘তুই’, তিনি তাঁর প্রিয় বা নিম্নদের ‘তুই’ বলতেই পছন্দ করতেন বলে শুনেছি; মুজিব ‘বাঙলাদেশ’-এর জায়গায় ব্যবহার করতেন ‘আমি’:যেখানে তাঁর বলার কথা ছিলো ‘বাঙলাদেশের জনগণ’, ‘বাঙলাদেশের সেনাবাহিনী’, সেখানে তিনি বলতেন, ‘আমার জনগণ, আমার সেনাবাহিনী’।
মুজিবপুত্রের বিয়েতে রাজমুকুট পরানো হচ্ছে, পথে পথে লাশ পড়ে থাকছে, লাশ বিক্রি হচ্ছে, হিংস্র রক্ষীবাহিনী ত্রাস সৃষ্টি করে চলছে-এসব সংবাদেন রক্ত কাঁপতো, বাঙলাদেশের মানচিত্রকে সোনার জুতাপরা পায়ে দলিত রুগ্ন জীর্ন অনাহারে মৃত ভিখিরির লাশ মনে হতো।
প্রকৃতি বেশি আতিশয্য সহ্য করে না, ইতিহাসও করে না।
১৯৭৫ অব্দের ২৫ জানুয়ারি বাঙালি, বাঙলাদেশ, ও মুজিবের জন্যে রাহুগ্রাসের দিন-ওই দিন মধ্যাহ্নেই অস্তমিত হয় বাঙলাদেশের সূর্য; ওই দিন বাঙলাদেশের সংবিধানকে ঠাণ্ডা মাথায় বলি দিয়ে গ্রহণ করা হয় ‘চতুর্থ সংশোধনী’।
২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ মুজিব একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যে গ্রহণ করিয়ে নেন চতুর্থ সংশোধনী বিল। বিলটি চরম একনায়কত্বের বিল, এতো ভয়াবহ যে ভাবতেও বুকের রক্ত তুষার হয়ে ওঠে।
সংসদে এটি নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি, কেননা আলোচনা করা সম্ভব ছিলো না; মুজিব তা চেয়েছিলেন আর তাঁর স্তাবকেরা হয়তো আরো বেশি চেয়েছিলো।
মাত্র ১ ঘণ্টায় বাঙলাদেশের মহান সংবিধানকে হত্যা করা হয়।
ওটা ছিলো হত্যাকাণ্ডই, দীর্ঘ ছুরিকার দিন-ছুরিকার পর ছুরিকা চালিয়ে ছিন্নভিন্ন করা হয় বাঙলাদেশের সংবিধানকে। পড়ে থাকে সংবিধানের মৃতদেহ।
একজনকে সর্বশক্তিমান করার জন্যে এটি তৈরি করা হয়, এটি একজনকে রাষ্ট্রবিধাতা করার শোচনীয় পুন্যগ্রন্থ। মুজিব হন রাষ্ট্রপতি, বাঙলাদেশের বিধাতা; দেশের স্থপতি দেখা দেন মহাএকনায়করূপে।
মুজিব হয়ে উঠেন প্রভু, সংবিধান হয়ে উঠে তার পদতলের পাপোশ!
মুজিব কি হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন? সিজার? নেপোলিয়ঁ? হিটলার? স্টালিন? কী হ'তে চেয়েছিলেন তিনি? তার কেনো এত ক্ষমতার প্রয়োজন হয়েছিল? এত ক্ষমতা শুধু পতন ডেকে আনে।
এর পরের ঘটনা সকলে জানা, ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি ঘটে গেলো। এই হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী, এক সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয়, যার কথাই ছিল আইন, সংবিধান, আদালত, বিচার সবকিছু সেই মুজিবের পরিণতি। মুজিব এমনই শক্তিশালী ছিল তার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারতো এমন মানুষ একজনও ছিল না বাংলাদেশে। কিন্তু এত প্রতাপশালী ব্যাক্তিও পতনের আগ পর্যন্ত বুঝতে পারেনি আলটিমেইট পরিণতি। এবার মুজিবের সাথে তার কন্যা শেখ হাসিনার আচরণ তুলনা করুন। প্রায় একইরকম বা তার চেয়েও বেশি স্বৈরাচারি।
পৃথিবীর সকল স্বৈরশাসক, জালিম শেখ হাসিনার মতোই এই ধরনের অতি আত্মবিশ্বাসে ভুগে থাকে। তারা চিন্তা করতে থাকে পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসী দিয়ে সবকিছুকে ঠান্ডা করে দেয়া যায়। কিন্তু এই অতি আত্মবিশ্বাসই তাদের জন্য কাল হয়ে উঠেছিল। যেমন হয়েছিল শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবের জন্য। শিক্ষা তারাতারি নেয়া ভাল, না নিলে ইতিহাস তার আপন গতিতেই চলবে।
বিষয়: বিবিধ
২২৪৩ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে দুঃখের বিষয়: ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না।
We want to breathe again.
এটাতো হাদিসেরই কথা, হাসিনার আর দোষ কি? এ জাতি যে গতিতে আপন দ্বীনের পথ থেকে দুরে সরছে, তাতে আমাদের উপর এর চেয়েও বড় যিল্লতি অবধারিত।
দ্বিতীয়ত-আপনার এই লেখাগুলোর একটাও টুডে ব্লগ কর্তৃপক্ষ স্টিকি করতে পারে না কেন সেটাও বুঝলাম । ওরা যেই ধরণের লুতুপুতু আবেগময় বিয়ের গল্প বা পারিবারিক ইটিশপিটিশ দেখতে চায় সেটা আপনি লিখতে পারেন না । কারণ আপনার লেখা সব অবিবাহিত বিদ্রোহীদের মতো
আল্লাহ ভাল জানেন - তবে ওনার পুরো সাক্ষাৎকার ও শব্দ চয়ন বিশ্লেষন করলে মনে হয় - উনি ইতোমধ্যে ট্রান্সগ্রেস করে গেছেন - ঠিক যেমন আবু জাহেল, ঠিক যেমন ফেরাউন, কিংবা কে জানে সুরা কাহাফের ঐ অহংকারী প্রতিবেশীর ন্যায়।
আল্লাহ ভদ্র মহিলাকে যথাযথ সেন্স এর উপর আসতে সহায়ক হোক - এটা প্রত্যাশা করি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভ্রূ কুঁচকে জবাব দিলেন এতে উপভোগের কি আছে? আমি তো দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি!
অপর সাংবাদিকের প্রশ্নের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের বৈধতার ব্যাপারে যারা বলে তাদের দলের জম্মের বৈধতা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটাও স্বীকার করেছেন তিনি (জবরদস্তিমূলক) ক্ষমতায় আছেন উন্নয়ন ও স্হীতিশীলতা বজায় রাখার জন্য! আবার (সবার অংশগ্রহণমূলক) নির্বাচন দিলে (বিএনপি ক্ষমতায় আসবে) আবারও জ্বালাও- পোড়াও হবে! তিনি প্রশ্ন করেন আপনারা কি সেটা চান? চাইলে উঁনি নির্বাচন দিবেন। তাতে তাঁর কি (কিছু আসে যায়না)? তিনি আবার এটাও স্মরণ করিয়ে দিলেন একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যাই দেশের উন্নয়ন করতে পারেন!
মাত্র ১৪ মিনিটে মহান নেতা বাকশাল কায়েমের মত মহান অগণতান্ত্রিক কাজটা করে নিজের কবর রচনা করেছিলেন।
মহান নেতার মহা কন্যাও এখ সে দিকেই হাটছে।
আপনার দেয়া সমীকরণটা হয়তো খুবই তাড়াতাড়ি হবে।
অহংকার যারা করে তাদের পরিণতি এমন ই হয়। মুজিব যেমন প্রথম ছিলেন না তেমন তিনি শেষ ও না।
যারা ৭৫ ঘটিয়েছিল তাদের পেছনে শক্ত ব্যাক-আপ ছিল ।
এখন অনেক কঠিন হয়ে গেছে সব কিছু আপু !
আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে , তবে অন লাইনটা চালু আছে । আপনি কি প্রথম আলো ছাড়া আর কোন পত্রিকাই পড়েন না ?
কতদিন চলবে এ ধাপ্পাবাজি? আর কতকাল প্রলম্বিত হবে এ ভণ্ডামি? জাতি হিসাবে আমরা কি কোনোদিনই অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যু, বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, জিডিপি, এসব নিয়ে রাজনীতি করতে পারবো না? একজনকে পিতার আসনে, অন্য জনকে ঘোষকের চেয়ারে বসিয়ে আমাদের কি আজীবন তাদের ছেলে, মেয়ে, নাতি-পুতিদের বিদেশ বিভূঁইয়ে নিরাপদ জীবন গড়ার কারিগর হিসাবে কাজ করে যেতে হবে?
মন্তব্য করতে লগইন করুন