বরং সে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী, আরও বেশি সক্রিয়।
লিখেছেন লিখেছেন পুস্পিতা ০২ জুন, ২০১৩, ০৯:০৭:১১ রাত
কিরে তোর কোন খবর নেই। খুব ব্যস্ত নাকি? তোর ভাইকেও তো বেশ কিছুদিন দেখি না। কেমন আছিস? মেডিকেলে দেখার পর জিজ্ঞেস করলাম বান্ধবীকে। সহপাঠী বান্ধবীর ছোট ভাই। দারুণ চঞ্চল ছেলেটি। বিভিন্ন উপলক্ষ নিয়ে টাকার জন্য আসবে আর বছরের শুরুতে ওদের ক্যালেন্ডার ও ডায়েরি দিয়ে যাবে। আমরা নাকি ওদের শুভাকাঙ্ক্ষী।
ওহ তুই জানিস না?
কেন কি হয়েছে?
সে তো এরেস্ট হয়েছে।
ওহ মাই গড, কখন, কিভাবে?
আর বলিস না, ওর সহপাঠীদের সাথে দেখা করার জন্য একটি বাসায় গিয়েছে। সেখান থেকে পুলিশ আরও কয়েকজনের সাথে ওকে নিয়ে গিয়ে দু'টি মামলাতে এরেস্ট দেখিয়েছে। এখন তো মাসের উপরে হয়ে গিয়েছে। ওরা নাকি শিবির ক্যাডার!
খুব কষ্ট পেলাম। অপরাধীও মনে হলো নিজেকে। এত মেধাবী ছেলেটি আমাদের সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখে অথচ সে যে এরেস্ট হয়েছে আমরা জানি না।
বান্ধবীকে সান্তনা দিলাম। বাসায়ও গিয়েছি। আন্টিকে খুব মনমরা দেখলাম। সবসময় রোজা রাখছে ছেলের মুক্তির জন্য।
এরপর থেকে নিয়মিত খবর নিতাম। কেমন আছে সে। শরীর কেমন আছে, খুব কষ্টে আছে নাকি ইত্যাদি ইত্যাদি।
মামলা নিয়ে নাকি বান্ধবীদের ভাবতে হচ্ছে না। শিবিরের লোকেরাই দেখে। আশা করছে ম্যাক্সিমাম দুই মাস পর জামিন হয়ে যাবে। ওকে দেখতে কারাগারে আমিও যাব চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু যাওয়া হয়ে উঠেনি। তবে বান্ধবীর কথা, দেখতে গেলে সে নাকি বলে খুবই ভাল আছে। মামলা নিয়ে ওর ফ্যামিলিকে চিন্তা করতে হচ্ছে না, এটিতে তারা খুবই স্বস্তিতে আছে।
হ্যাঁ, এরেস্ট হওয়ার প্রায় দুই মাস পর ছেলেটির জামিন হয়েছিল। বের হওয়ার পরপরই বান্ধবী খবর দিয়েছিল। কারাগারে যেতে না পারলেও বাসায় গিয়েছি। আমি খুবই উৎসাহী ছিলাম আসলে কারাগারে সে কেমন ছিল তা জানতে।
আগের মতোই উচ্ছল সে।
তো কেমন ছিলে কারাগারে?
আপু, ভালই ছিলাম। প্রথম প্রথম একটু মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়েছে।
কারাগারে নাকি খাওদা-দাওয়ার খুব কষ্ট?
না, আমাদের জন্য এত খাবার যেত, আরও বেঁচে যেত। আর শিবিরের পক্ষ থেকে নাকি ওদের সবার জন্য নির্দিষ্ট হারে টাকা জমা দিত। কারাগারে নাকি সে সিস্টেম আছে। যা দিয়ে নিজের পছন্দ মতো খাবার কিনে খেতে পারত।
ওহ তাই নাকি?
হ্যাঁ, আপু নিয়মিত নামাজ-তাহাজ্জুদ সবকিছু হতো। পড়ালেখাও। সবকিছু নিয়মিত। ভালই ছিলাম আপু, আল্লাহর রহমতে।
কোন কষ্টই তাহলে তোমাদের হয়নি?
আপু, কারাগার তো কারাগারই। তবে আমাদের যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের সবার ভিতরই একটি ফিলিংস আছে যে আমরা ইসলামের জন্য গ্রেফতার হয়েছি। তাই অন্য কোন কষ্টকে, কষ্ট মনে হয়নি।
আরও অনেক কথা সে বলেছে। সবকিছু পজিটিভ। কথার পরপরই ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে বের হয়ে যায় সে। সবকিছুই যেন ঠিক আগের মতোই।
আন্টিকে আবারও এবার হাসিখুশি পাওয়া গেল। ছেলেটি ফিরে এসেছে তাই খুব খুশি। তবে অন্য যারা এখনও কারাগারে আছে তাদের মুক্তির জন্য তিনি নিয়মিত রোজা রাখেন।
ওর কাছ থেকে শুনে একটু মানসিক শান্তি পেলাম। আমি যেভাবে মনে করেছিলাম শতশত নিরপরাধ শিবির কর্মী যারা এরেস্ট হচ্ছে তারা আবার মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ছে না তো!
না, পিচ্ছিটির কথা ও আচরণে তার কোন প্রমান পাওয়া গেল না। বরং সে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী। আরও বেশি সক্রিয়। তবে আন্টি এবং বান্ধবী একটু ভয়ে আছে বলে মনে হলো। ভবিষ্যতে আবার কি হয়ে যায়।
জামায়াত-শিবিরের যারা সিনিয়র তারা কারাগারকে ভয় পাবে না এমন একটি বিশ্বাস ছিল। কিন্তু এই ধরনের কম বয়সীরাও যে সরকারী নির্যাতনের পরও নিজের চলার পথে অটুট থাকার সাহস দেখাবে তা আমাকে অন্ততঃ আশ্চর্য করেছে।
হ্যাঁ, আসলেই এদের দিয়ে পরিবর্তন আসবে। ফ্যাসিবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের চরম নির্যাতনের পরীক্ষার সম্মূখীন হওয়া জামায়াত-শিবির এমন একটি প্রজন্ম পাচ্ছে যারা ভবিষ্যতে ইসলামের সোনালী পথে নিজেদের অটুট রাখতে পারবে। এই নির্যাতন না আসলে গতানুগতিক কিছু কর্মী হয়তো জামায়াত-শিবির পেতো। কিন্তু এত আত্মবিশ্বাসী ও অটুট মনোবলের কর্মী পাওয়া যেতো না।
আমার বিশ্বাস জন্মেছে শাহরিয়ার কবিরদের মতো সেকুলার অর্বাচিনদের কাছে ইসলাম পরাজিত হবে না। মনের গভীরে বারবার ভেসে উঠে কারাগার থেকে বের হওয়া সেই উচ্ছল ও সাহসী চেহারাটি যাতে ইসলামী বিপ্লবের আভা ফুটে উঠছে।
প্রভু ওদের তুমি কবুল করো...
বিষয়: বিবিধ
২৮৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন