এলোমেলো ভাবনা ও একটি কামনা...

লিখেছেন লিখেছেন পুস্পিতা ০১ জুন, ২০১৩, ০৭:৩৫:৪৩ সন্ধ্যা



অনেক কিছু ভাবি, কিন্তু লিখি না। লিখি না বললে অবশ্য ভুল হবে, লিখতে পারি না। না পারার অন্যতম কারণ ভাবনা গুলো এত বেশি লাফালাফি করে গুছিয়ে আর আনা সম্ভব হয়ে উঠে না। এক বিষয়ে লিখতে গেলে অনেক বিষয় মনে ভেসে উঠে।

এক স্যারের বাসায় গিয়েছিলাম ছবি ও কিছু সার্টিফিকেট এটেস্টেড করানোর জন্য। আন্টি অসুস্থ তাকেও দেখে আসা উদ্দেশ্য। বাসায় গেলে দুয়েকটি ইসলামী বই তিনি সবসময় গিফট করেন। এবারও করলেন। স্যার মাওলানা সাঈদীর জন্য খুব আফসোস করলেন এবং আশা রাখেন মাওলানা সাঈদীকে ফাঁসি আওয়ামী লীগ দিতে পারবে না। কারণ হিসেবে বললেন সাঈদীর আপিল শেষ হতে হতে সরকারের মেয়াদ থাকবে না। আর মেয়াদ শেষ হলে এই সরকার আর ক্ষমতায় আসবে না। ফাঁসিও দিতে পারবে না।

তবে আমার নিজস্ব ভাবনা অন্য রকম। আওয়ামী লীগ এত সহজে ক্ষমতা ছাড়বে বলে মনে হয় না। বিশেষ করে জামায়াত নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। জামায়াতে ইসলামী তার প্রায় ৭০/৭৫বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবার সবচেয়ে কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির মূল শক্তি এই প্রথমবারই আল্লাহর বাণীর বাস্তব সাক্ষ্য দিচ্ছে। এর মধ্যেই সম্ভবতঃ ৩০০জনের অধিক শাহাদাত বরণ করেছেন। কারাগার ও অন্যান্য নির্যাতন তো অগণিত। এমনকি নারীরাও নির্যাতিত। আমার মতে এটি শুরু। সামনে অবস্থা আরও কঠিন হতে পারে। হওয়াটা স্বাভাবিক।

আচ্ছা এভাবে নির্যাতন, নীপিড়নের কারণে কি জামায়াতে ইসলামী দূর্বল হয়ে যায়? সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত যে সব মিডিয়া নির্বাচনের জয়-পরাজয় নিয়ে রিপোর্ট করেছে তারা সবাই বলছে জামায়াতের ভোটই নিয়ামক শক্তি। তাই এমনকি সিলেটের আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাকি কারাগারে জামায়াত নেতাদের কাছে ধর্না দিচ্ছে সমর্থন লাভের আশায়। এই রিপোর্ট গুলো বেশির ভাগই কিন্তু সেই সব মিডিয়ার যারা জামায়াতের ধ্বংস চেয়ে উম্মাদ!

এই ধরনের রিপোর্টের পর জামায়াত ধ্বংসের সেনাপতি শাহরিয়ার কবির বা মুনতাসীর মামুনদের ভাবনা কি তা জানা যায়নি। তারা সবসময় বলে আসছিল যুদ্ধাপরাধের বিচার নামের নাটকটি শেষ করতে পারলে জামায়াত-শিবির মরে যাবে। বাস্তবে কি তা হচ্ছে? অন্ততঃ জামায়াত বিরোধী মিডিয়া গুলোর সাম্প্রতিক রিপোর্ট তা বলে না। বরং জামায়াত শক্তিশালী হচ্ছে।

এত নির্যাতনের পরও জামায়াত শক্তিশালী আছে তার মানে কিন্তু সেক্রিফাইস আর করতে হবে না, তা নয়। বরং পরিবেশ আরো কঠিন হবে এবং সেক্রিফাইসের পরিমাণও বাড়বে। কারণ ওই যে বললাম, জামায়াত তার ইতিহাসে এই প্রথমবার ব্যাপক গন্ডিতে আল্লাহর কথার বাস্তব সাক্ষ্য দিচ্ছে এবং তা শুরু। এটি চলবে এবং আরও অনেক অনেক দিতে হবে।

স্যার একমনে কথাগুলো শুনছিলেন। তার মানে কি আরও বেশি নির্যাতন চলবে?

হ্যাঁ স্যার ইতিহাস তো তাই বলে। ইসলাম প্রতিষ্ঠা চাইবে কিন্তু সেক্রিফাইস করবে না তা কি হয়?

তবে স্যারের ভাবনা কতদিন জামায়াত-শিবির এভাবে ঠিকে থাকতে পারবে। রাষ্ট্রশক্তির নীপিড়নের বিরুদ্ধে তারা নিজেদের আদর্শের উপর অটুট থাকতে পারবে? হ্যাঁ, এটি আসলেই এক বিরাট প্রশ্ন। আচ্ছা ফ্যাসিবাদী শক্তির পতন দেরি হবে বা হতে পারে দেখে কি ইসলামপন্থীরা ভয় পেয়ে যাবে?

অন্ধকার দূর করে আলোর পথ দেখানোর কঠিন সিদ্ধান্ত যারা নিয়েছে তারা আওয়ামী লীগের নির্যাতনে ভয় পেয়ে দূর্বল হয়ে যাবে, এটা মানতে মন সায় দেয় না। কারণ আসলেই আমরা তাদের দিকে চেয়ে আছি। প্রবল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ওদের সাহসী পদক্ষেপ দেখে মনের ভিতর অবচেতন মনেই বদর যুদ্ধের সাহাবীদের ব্যাপারে রাসুল (সাঃ) যেভাবে দোয়া করেছিলেন তা চলে আসে। “হে আল্লাহ! এ ক্ষুদ্র দলটি যদি আজ শেষ হয়ে যায়, তবে তোমার ইবাদত করার মত কেউ থাকবে না।” আজকেও পরিস্থিতি সেই পর্যায়ে এসেছে। জামায়াত-শিবির যদি আসলেই নির্মূল হয়ে যায় এই অঞ্চলে ইসলামী রাজনীতির নাম নেয়া কঠিন হয়ে উঠবে। তাই মনের ভিতর এই কথাটি বারবার ঘুরতে থাকে। ওরা জয়ী হবে। আমরা ওদের দিকে চেয়ে আছি...

বিষয়: বিবিধ

৪৮০২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File