মাতৃত্ব
লিখেছেন লিখেছেন ডাঃ নোমান ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০১:২৪:৪৫ রাত
একটা বাচ্চা শুয়ে আছে পেডিয়াট্রিকস বেডে। নড়াচড়ার শক্তি নেই আশেপাশের বাচ্চাগুলো একটু একটু করে আরোগ্যের দিকে পা বাড়ালেও এই বাচ্চাটা নিশ্চুপ।
সিস্টার বলল বাচ্চাটা চার দিন থেকে আছে সংগে কেউ নেই।
চমকে উঠলাম ঔষধ পাচ্ছে কোথায়? খাবার?
বলল অন্য বাচ্চাদের থেকে যা বাঁচে তাই দেয়া হয় তার মানে আজ এমপিসিলিন বাঁচলে এমপিসিলিন পাবে কাল মেরোপেনাম বাঁচলে মেরোপেনাম! ৪ দিন বয়সের বাচ্চা যার বুকের দুধ খেয়েই বাঁচার কথা সে টিকে আছে উচ্ছিষ্টে।
এক খালাকে পাঠালাম লেবার ওয়ার্ডে। একটা আশা ছিল মাকে পাবার। কোন মা ই এমন নিষ্ঠুর হতে পারে না বাচ্চাকে হাসপাতালের কোন বেডে রেখে নিজে বাড়িতে শুয়ে থাকতে। ঐ খালা গিয়ে অনেক্ষন চিতকার চেঁচামেচি করে ঘুরে এল। ওখানকার কারো বাড়ি গাইবান্ধায় না। বাচ্চার ভর্তি কাগজে বাড়ি গাইবান্ধা লেখা।
বাচ্চাটাকে দেখাশুনার ভার ঐ খালাই নিল। সহাস্যেই। গরীব মানুষ তবুও সব নিজেই দিবে। আমরা হেল্প করব শুনেই বলে উঠল না না স্যার আমার ছেলে। আমি হাত পাতব কেন?
স্রষ্টা অনেক কিছুতেই রহস্য রেখেছেন। মাতৃত্বেও। নদীর পানির মত। প্রবাহমান। এখানে শুধু জোয়ার আসে দুকুল উপচায়ে নিয়ে যায় ভাটার টান কখনো আসে না।
এরপর যেদিনই ওয়ার্ডে গেছি দেখি বাচ্চাটার বেডের কাছে খালা ঠায় দাঁড়ায়ে আছে। ওয়ার্ডে অন্য কাজ করতে দৌড় দেয় আবার দৌড়ে বাচ্চার কাছে। অলিম্পিক দৌড়ের মত থামাথামি নাই।
খালার পাগলামী দেখে আমি অবাক এ কি? শুনলাম খালার কোন বাচ্চা নাই। সবাইকে বলতে লাগলেন বাচ্চার দাদা বলে গেছে এই বাচ্চা খুব অসুস্থ্য ভালো করার সাধ্য আমাদের নাই। যে ভালো করবে বাচ্চা তার। সুক্ষ্ম সাইকোলজিক্যাল গেম। খালা চাচ্ছিলেন বাচ্চা ভালো হলে কেউ যেন উটকো দাবি নিয়ে না আসেন! আমি কেবল হাসতাম।
একদিন সকল কিছুর মিমাংশা হলো স্রষ্টার হাত ধরে। যার কোলে পাঠিয়েছিলেন তার অবর্তমানে খালার কোলে ঐ বাচ্চা সইল না। স্রষ্টা নিয়ে গেলেন তার নিষ্পাপ সৃষ্টিকে। ডেথ সার্টিফিকেট অনেক লিখতে হয় সেদিন ও লিখলাম। কিন্তু মাটিতে আছঁড়ে পড়া খালার দিকে তাকানোর সাহস পেলাম না। দুনিয়া বড় অদ্ভুত তার চেয়ে ও বড় অদ্ভুত মাতৃত্বের ভালোবাসার দ্বার খুলে রাখা এই মা গুলো যাদের ভালোবাসার গভীরতা দুনিয়ার প্রচলিত স্কেলে মাপা অসম্ভব।
বিষয়: বিবিধ
১৩১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন