মায়া পর্ব ২

লিখেছেন লিখেছেন ডাঃ নোমান ১৬ জুন, ২০১৩, ০৪:০২:৫৫ বিকাল



হাসির ইংরেজী শিক্ষক রাকিব ভার্সিটিতে ইংরেজীতে ফাইনাল ইয়ারে পড়ে। প্রায় ছয় মাস ধরে পড়াচ্ছে হাসিকে । হাসিকে পড়ানো শুরু করার পর বাকি টিউশনি দুটি বাদ দিয়েছে রাকিব । কখন যে মনের অজান্তে তাকে প্রশ্রয় দিয়েছে হাসি বুঝতে পারেনি । সাধারনত একাকী থাকতে ভালোবাসলেও রাকিবের কাছে এসে মুখের অর্গল খুলে যায় হাসির । সারা দিনের জমা হওয়া সব কথা বলতে থাকে একের পর এক নিরাসক্ত ভঙ্গীতে কোন আবেগ নাই কোন জড়তা নাই । রাকিব মনোযোগ দিয়ে শোনে কখনোবা হাসে কখনোবা দুঃখ পায় এভাবে কিভাবে যে দুজনের হৃদয় কাছাকাছি এসে একই তীরে মিলিত হবার উপক্রম হয়েছে তা খেয়াল ছিল না কারো ।

প্রথম খেয়াল করল হাসি । সেদিন রাকিব পড়াতে আসেনি । পড়ানো শুরু করার মধ্যে এই প্রথম বিরতি দিল রাকিব । সমস্ত বিকালটা অপেক্ষায় ছিল হাসি । কার জন্য বলার অপেক্ষা রাখেনা নিজের মনকে একবার প্রশ্ন করেছিল উত্তর পেয়ে শিউরে উঠেছে হাসি । অজানা এক আতংকে মনটা ছটফট করে উঠেছিল তার ।

এই আতংকই তাকে স্বাভাবিক হতে দেয় না । কি যেন এক ভয়াবহ স্মৃতি সবসময় তাড়া করে তাকে। সতের বছর বয়সের একজন তরুনীর যে উচ্ছ্বলতা স্বাভাবিকভাবে কাম্য তার ছিটেফোটাও নেই হাসির মধ্যে কেমন যেন সবসময় আঁটসাঁট একটা ভাব । তার যে চোখ দুটিতে কবিতার পরতে আঁকা জীবন স্মরনিকা আর লাজুক হরিণীর লজ্জা থাকার কথা সেখানে আছে একধরনের আড়ষ্টভাব । সারা রাত ঘুমাতেও পারেনি হাসি । অনেক দিন পর পুরাতন দুঃস্বপ্নগুলো তাজাদম সিপাই হয়ে তীর ছুড়ছে তার দিকে আর দগদগে করে তুলছে পুরাতন জখমগুলোকে প্রচন্ড মাইগ্রেনের ব্যথা কাতর করে দিচ্ছে তাকে বারবার । তাই ঘুমের ঔষধ খেয়ে শুয়ে পড়ল হাসি ।

সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসতেই লক্ষ্য করল আবার সেই ভয়াবহ দুঃস্বপ্নগুলো ভর করছে তার উপর তাই মাথার চুল খামছে ধরে বসে আছে যন্ত্রনায় নীল হয়ে যাওয়া মেয়েটি । দুঃস্বপ্নের মাঝে একে একে মনে পড়ছে মা বড় আপা ভাইয়া একটি হাসিখুশি সংসারের কথা তারপরই একটা ভুমিকম্প সব ভেংগে খান খান একটা বিভত্স লাশ ভেসে উঠল চোখের সামনে মাথায় রক্ত মাটিতে রক্তে রাঙ্গানো একটি ইট না আর ভাবতে পারছে না হাসি ভয়ে আতংকে চিত্কার করে উঠল ।

কি হয়েছে মা ? আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে দিল সালেহা বেগম ।

চিৎকার শুনে রান্নাঘর থেকে ছুটে এসেছে সালেহা । চুপি চুপি আরো একজন এসেছে সালেহার সাথে হাসির বাবা ।

কিছু না বলে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে জোর করে সালেহাকে জড়িয়ে ধরল হাসি ।

হঠাত্ দেখল দরজায় বাবা দাঁড়িয়ে আছেন ।

চমকে উঠেই স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে হাসি নিজের যত অন্তর্নিহিত শক্তি আছে সবগুলোকেই কাজে লাগাচ্ছে হাসির মস্তিষ্ক কিন্তু পেরে উঠছে না শরীর কাঁপছে। কিন্তু পারতেই যে হবে হাসিকে সে তার কোন কষ্টকে দেখাতে চায়না তার বাবাকে ক্ষমার অযোগ্য মনসুর সাহেবকে । কিন্তু হাসির বাবা কি সত্যি ক্ষমার অযোগ্য ?

হয়তবা হাসির মনের অবস্থা বুঝেই মনসুর সাহেব সরে গেলেন দরজা থেকে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এল হাসি ।

বিষয়: বিবিধ

১০২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File