আল্লামা শাহ্ আহ্্মদ শফীর বিবৃতি : কোনো যুদ্ধপীড়িত দেশেও সচরাচর একদিনে এত মানুষ মারা যায় না

লিখেছেন লিখেছেন সোনামণি ০৪ মার্চ, ২০১৩, ১০:৩৫:২০ সকাল



আল্লাহ, রাসুল (সা.) এবং ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান নিয়ে কটূক্তিকারী নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তি, মসজিদ, মাদরাসা, আলেম-ওলামা ও মাদরাসা ছাত্রদের ওপর বিভিন্ন স্থানে হামলা-মামলা ও দমন-পীড়ন বন্ধ এবং প্রতিবাদী ধর্মপ্রাণ জনসাধারণকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ আলেম হযরত আল্লামা শাহ্্ শফী (দা. বা.)। গতকাল বিকাল ৩টা থেকে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত সভায় এশিয়ার অন্যতম বিখ্যাত ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালকের কার্যালয়ে ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক মুরতাদদের অপপ্রচার, দেশের বিভিন্ন স্থানে কওমি মাদরাসা ও মসজিদের ইমাম-খতিবদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, রাস্তাঘাটে দাঁড়ি-টুপি-পাঞ্জাবিধারী মুসলমানদের নাজেহাল এবং দেশের চলমান সঙ্কটময় পরিস্থিতি নিয়ে হাটহাজারী মাদরাসার সব শিক্ষক মহোদয়ের উপস্থিতিতে এক জরুরি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আল্লামা শাহ্্ আহ্্মদ শফীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, হাটহাজারী মাদরাসার প্রবীণ মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ শামসুল আলম, মুহাদ্দিস আল্লামা মুহাম্মদ হারুন, মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, মুহাদ্দিস আল্লামা মুফতি নূর আহ্্মদ, মুহাদ্দিস হাফেজ মুাহাম্মদ শোয়াইব, মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহ্্ইয়া, মাওলানা মমতাজুল করীম, মুফতি কিফায়াতুল্লাহ্, মুফতি জসীমউদ্দীন, মাওলানা মুহাম্মদ ওমর, মাওলানা কবীর আহ্্মদ, মাওলানা আশরাফ আলী, মুফতি ফরিদুল হক, মাওলানা মুহাম্মদ আনাস, মাওলানা মুনির আহ্্মদ, মাওলানা শফিউল আলমসহ মাদ্রাসার সব মুহাদ্দিস, মুফতি ও শিক্ষকরা।

সভায় সব শিক্ষক গত কয়েকদিনে বিপুলসংখ্যক আলেম-ওলামা, মাদ্রাসা শিক্ষক, ছাত্র ও সাধারণ জনসাধারণের হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক মুরতাদদের অপপ্রচার, দেশের বিভিন্ন স্থানে কওমি মাদরাসা ও মসজিদের ইমাম-খতিবদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, রাস্তাঘাটে দাঁড়ি-টুপি-পাঞ্জাবিধারী মুসলমানদের নাজেহাল এবং দেশের চলমান সঙ্কটময় পরিস্থিতির গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এ বক্তব্য দেন।

তিনি আরও বলেন, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ইসলাম ও ধর্মের পক্ষ নিয়ে লেখালেখি করায় তাকে হত্যা করার জন্য হুমকি দিচ্ছে শাহবাগ থেকে এবং একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। সত্য কথা বলায় ১৬ কোটি মুসলমানের দেশে শাহবাগিরা তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।

সভায় এশিয়ার অন্যতম বিখ্যাত ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) সভাপতি এবং অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর সভাপতি পীরে কামেল আল্লামা শাহ্ আহ্্মদ শফী বলেন, সরকারের কোনো পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত মনঃপূত না হলে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা আইনসম্মত নাগরিক অধিকার। এবং সরকারের কাছে সব নাগরিকেরই সমান সুযোগ ও আচরণ পাওয়া কাম্য। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে যে হারে বিপুলসংখ্যক জনসাধারণ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছেন, বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসা, আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্রসহ জনসাধারণের জানমালের ওপর নির্বিচার হামলা, দমন-পীড়ন ও অগ্নিসংযোগ হচ্ছে, তা খুবই হতাশা ও দুর্ভাগ্যজনক। দেশে নির্বাচিত সরকার বহাল থাকা অবস্থায় জনসাধারণের এমন অসহায়ত্ব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। মাত্র কয়েক দিনে যে পরিমাণ মানুষ নির্বিচারে খুন ও হত্যার শিকার হয়েছে, কোনো যুদ্ধপীড়িত দেশেও সচরাচর একদিনে এত মানুষ মারা যায় না। জাতি হিসেবে আমাদের জন্য এটা অত্যন্ত কলঙ্কের ও ভয়াবহ হতাশার। তিনি সরকারের প্রতি খুন-হত্যা ও সব জুলুম-অত্যাচার বন্ধে নিরপেক্ষভাবে পদক্ষেপ এবং জনসাধারণের প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সদয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্যথায় জাতি বিভক্ত হয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে; যা হবে খুবই হতাশার।

আল্লামা শাহ্্ আহ্্মদ শফী আরও বলেন, যে পরিস্থিতি এখন দেশে বিরাজ করছে, তা একইসঙ্গে অভূতপূর্ব, অনভিপ্রেত এবং চরম উদ্বেগজনক। সামনের দিনগুলোতে দেশ কোনো দিকে যাবে, কী হবে, তা নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে দুর্ভাবনা ও গভীর হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করে বলছেন, দেশ আফগান-ইরাকের মতো পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে। ওইসব দেশে যুদ্ধ, যুদ্ধপরিস্থিতি কিংবা গৃহযুদ্ধের কারণে জনগণের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। হামলা-প্রতি হামলায় প্রায় প্রতিদিনই মানুষ মরছে। শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক-নিরাপদ জীবনযাপন কল্পনাতীত। বাংলাদেশে কোনো কারণে আফগান-ইরাকের মতো অনুরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক, তা কোনো বিবেচনাতেই প্রত্যাশিত হতে পারে না। কেন মানুষের ক্ষোভ জাগছে, কেন মানুষ প্রতিবাদমুখর হচ্ছে, তার কারণ উদ্ঘাটন করে প্রশমনের দায়িত্ব রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে এটা সরকারের।

তিনি বলেন, উপমহাদেশগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশই সন্ত্রাস-সহিংসতামুক্ত দেশ। এখানে জাতিগত, ধর্মগত, গোষ্ঠীগত, বর্ণগত, ভাষাগত কেনো বিরোধ-বিসম্বাদ নেই বললেই চলে। এমন একটি দেশে সংঘাত-সহিংসতার বিস্তার ঘটবে, গৃহযুদ্ধপরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, এটা কীভাবে এদেশের মানুষের কাম্য হতে পারে? সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্দ্বিধায় বলা যায়, দেশ এখন একটা বড় ধরনের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। স্পর্শকাতর নানা ইস্যুতে রাজনীতি, রাজনৈতিক দল ও জনগণ বিভক্ত হয়ে আছে। এমতাবস্থায় স্বার্থ শিকারি শক্তিগুলো সক্রিয় ও তত্পর হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশে শান্তি-স্থিতিশীলতা বজায় থাক, বাংলাদেশ সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হোক, এটা সব দেশ চায়, তাও মনে করার কারণ নেই।

আল্লামা শাহ্ আহ্্মদ শফী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, চিহ্নিত কিছু নাস্তিক এদেশের বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতে মারাত্মক আঘাত হেনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.), পবিত্র কোরআন, ইসলাম ধর্ম ও ইসলামের রীতিনীতি নিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট, অশ্লীল ও উদ্ভট কল্পকাহিনী প্রচার এবং সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট করার যে অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিল, সরকারের প্রতি এসব বন্ধের দাবি এবং অপরাধীদের বিচারের দাবি জানিয়ে এদেশের কোটি কোটি মুসলমান শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলে এবং বিভিন্ন মসজিদ মাদরাসায় পুলিশ ও কিছু সন্ত্রাসী হামলা, ভাংচুর ও গুলিবর্ষণ করে হত্যাকাসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। অথচ এসব বন্ধে সরকারের তত্পরতা চোখে পড়ছে না; যা কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন পাস করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা সরকারের কাছে কীভাবে আশা করা যায়? সরকার এ পর্যন্ত ইসলামবিদ্বেষী ও রাসুল (রা.)-এর অবমাননাকারী নাস্তিকদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার কোনো পদক্ষেপ তো নেয়নি; বরং আলেম-ওলামার ওপর দমনাভিযান এবং মসজিদ-মাদরাসায় হামলা আরও বেড়ে গেছে। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলামের দুশমনরা আল্লাহ-রাসুল ও ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে যাবে, সরকার এদের বিচারের আওতায় আনবে না এবং মুসলমানরা স্বাধীনভাবে ধর্মকর্ম পালন, মসজিদ-মাদরাসা পরিচালনা, দাঁড়ি-টুপি-পাঞ্জাবি পরে হাঁটা-চলায় অসহায়ত্ববোধ করবে, এটা খুবই হতাশার।

আল্লামা শাহ্ আহ্্মদ শফী আরও বলেন, শোনা যাচ্ছে চলমান বিশৃঙ্খলতার সুযোগ নিয়ে কিছু কিছু জায়গায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের ধর্মীয় উপাসনালয় ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটছে। দেশে বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি ও জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ্-রাসুল (রা.)-এর অবমাননাকারী একই মহলই এদেশের উজ্জ্বল সাম্প্রাদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য এ অপকর্মে জড়িত কি না, খুঁজে দেখা দরকার। কারণ এদেশের সাধারণ মুসলমান কখনও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি বিদ্বেষপোষণ করে না এবং তাদের উপাসনা ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টি করে না। কোনো আলেম-ওলামা ওয়াজ মাহফিলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি আক্রোশমূলক কিছু বলেন না।

বিষয়: বিবিধ

১৩২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File