হাটহাজারীতে লাখো জনতার মহাসমাবেশে আলেমদের হুশিয়ারি : শাহবাগিদের আস্ফাালন বন্ধ না হলে ঢাকা অবরোধ : মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করলে সারাদেশে আগুন জ্বলবে
লিখেছেন লিখেছেন সোনামণি ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৭:৩৯:২৪ সকাল
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে লাখো তৌহিদি জনতার মহাসমাবেশে আলেম ওলামাগণ হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, মহান আল্লাহ ও হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি অবমাননাকারী শাহবাগকেন্দ্রিক নাস্তিক মুরতাদদের উচ্ছেদ ও তাদের ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত তৌহিদি জনতা ঘরে ফিরে যাবে না। নাস্তিকদের বিরুদ্ধে সারাদেশ গর্জে উঠেছে। তাদের ঠাঁই বাংলার মাটিতে হবে না। এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ মহানবীর অবমাননা কোনোভাবেই সহ্য করবে না। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে শাহবাগিরা আস্ফাালন বন্ধ করে প্রজন্ম চত্বর ত্যাগ না করলে ঢাকা অবরোধসহ বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়ারও হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
এছাড়া নাস্তিক ব্লগারদের ব্লগগুলো বন্ধ করা, ইসলামী রাজনীতি বন্ধের ষড়যন্ত্র বাদ দেয়া, পুলিশের গুলিতে শহীদ ১৯ জনের খুনিদের বিচারসহ ১৩ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব দাবি পূরণ না হলে আগামী শুক্রবার উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল, বিভাগীয় শহরে লাখো মুসল্লির মহাসমাবেশ ও লংমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এই বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে।
মহাসমাবেশে বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকার পবিত্র ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই সরকার নাস্তিক-মুরতাদদের মদতদাতা। নাস্তিকদের পক্ষ অবলম্বন করে জাতীয় সংসদে ধন্যবাদ প্রস্তাব পাসের উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশের পবিত্র সংসদকে অপবিত্র করেছে। গত কয়েকদিনে মুসলিম জনতার আন্দোলনে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজির নির্দেশে নির্বিচারে পাখির মতো গুলি করে ১৯ জন মুসল্লি ও আলেম এবং মসজিদের খতিবকে শহীদ করেছে। এ হত্যার মদতদাতা হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
সমাবেশ থেকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ধারক ও ইসলামপ্রিয় মানুষের কণ্ঠস্বর দৈনিক আমার দেশ বন্ধের ষড়যন্ত্র এবং সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে প্রাণনাশের হুমকি ও মিথ্যা মামলায় তাকে গ্রেফতারের সরকারি ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষ অকুতোভয় কলমসৈনিক মাহমুদুর রহমানের পাশে রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করা হলে সারাদেশে আগুন জ্বলবে। বক্তারা বলেন, শাহবাগের নাস্তিকদের কথায় দেশ চলবে না। দেশ চালাতে হবে এদেশের আলেম ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কথায়। সরকারকে মনে রাখতে হবে নাস্তিক-মুরতাদরা এদেশে থাকবে না। থাকবে দাড়ি টুপিধারী আলেম সমাজ।
গতকাল দুপুরে স্থানীয় পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হাটহাজারী ওলামা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ্ আহমাদ শফির আহ্বানে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। হাটহাজারী ওলামা পরিষদের সভাপতি মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ শামসুল আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির ও হাটহাজারী দারুল উলুম মাদরাসার মুহাদ্দিস আল্লামা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ্ বাবুনগরী। প্রধান বক্তা ছিলেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ জোনায়েদ বাবুনগরী।
মহাসমাবেশে দেশের শীর্ষ আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফির উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। মহাসমাবেশ উপলক্ষে সকাল থেকেই মিছিলসহকারে হাটহাজারী ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার তৌহিদি জনতা সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন। সব পথ যেন মিশে গিয়েছিল হাটহাজারী পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। দুপুর নাগাদ সমাবেশস্থলে জড়ো হন লাখো জনতা। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে উত্তর চট্টগ্রামের সর্ববৃহত্ এই উন্মুক্ত ময়দান। একপর্যায়ে মাঠ ছাড়িয়ে জনতার ঢেউ আছড়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কে। মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠে গোটা হাটহাজারী। ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, নাস্তিকদের ফাঁসি চাই,’ ‘শাহবাগিদের আস্তানা, এই বাংলায় হবে না’ ইত্যাদি স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে গোটা এলাকা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, আওয়ামী লীগে থাকা যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার করতে হবে। আজ দাড়ি-টুপিকে নিয়ে উপহাস করা হয়। পাঞ্জাবি পায়জামা পরলে রাজাকার বলা হয়। বাংলাদেশের মানুষ কোনো দলকে মুক্তিযোদ্ধার এজেন্সি দেয়নি। আজ সারাদেশের মসজিদ মাদরাসায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা হামলা চালিয়ে আলেম-ওলামা, খতিব ও মাদরাসা ছাত্রদের কুপিয়ে জখম করে হাজার হাজার মানুষকে আহত করেছে এবং সারাদেশে প্রায় দেড় হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে দেড় লাখ আলেম ওলামাকে আসামি করা হয়েছে। সরকারের এসব ইসলামবিদ্বেষী এজেন্ডার প্রতিবাদে সব শ্রেণীর ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতাকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
প্রধান বক্তা আল্লামা জোনায়েদ বাবুনগরী বলেন, আমাদের আন্দোলনকে জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলন বলা হচ্ছে। জামায়াতের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। মুসলিম জনতার আন্দোলনকে নস্যাত্ করার জন্য অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সরকারের গুম হত্যা, দুর্নীতি, আত্মসাতের কথা বললে জামায়াত-শিবির বলে মিথ্যা মামলা দিয়ে ছাত্রলীগ হামলা চালাচ্ছে। আমরা আমাদের নবীর কথা বলছি, নবীর ইজ্জতের কথা বলছি।
সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা শামসুল আলম বলেন, আমাদের সঙ্গে শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক নেই। আমরা আল্লাহ ও রাসুলের পাগল। নাস্তিকরা আল্লাহ ও রাসুলকে গালি দিয়ে বাংলাদেশে থাকতে পারবে না। তিনি আল্লামা শাহ আহম্মদ শফীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে যেতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
মহাসমাবেশে ১৩ দফা পেশ : মহাসমাবেশে মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনিরী ১৩ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো—এক, কথিত গণজাগরণ মঞ্চের মূল উদ্যোক্তা আসিফ মহিনউদ্দীন, আশরাফুল ইসলাম রাতুল, নিহত রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবা, ডা. ইমরান, ঘাদানিক নেতা শাহরিয়ার কবির, লেখক জাফর ইকবালসহ স্বঘোষিত নাস্তিকরা নিজেদের ব্লগে (সামহোয়্যারইন, মুক্তমনা, ধর্মকারী, নুরানী চাপা প্রভৃতি) আল্লাহ ও রাসুল (সা.) তথা ইসলাম সম্পর্কে চরম অবমাননাকর জঘন্য মন্তব্য করেছে সেগুলো অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। দুই, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশে পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো ইসলামি রাজনীতি চালু থাকবে। তিন, গত কয়েকদিন থেকে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে শহীদ ১৯ জন ওলামায়েকেরাম ও সাধারণ মুসল্লিদের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। চার, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব আল্লামা জাফর উল্যাহ খানসহ সারাদেশে গ্রেফতারকৃত দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে।
পাঁচ, সংবিধানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপনসহ কোরআন সুন্নাহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক নারী উন্নয়ন নীতিমালাসহ সব ইসলামবিরোধী আইন বাতিল করতে হবে। ছয়, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শাহবাগসহ সারাদেশে অনুষ্ঠিতব্য ইসলামবিরোধী ও দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী প্রজন্ম চত্বর প্রত্যাহার করতে হবে। সাত, হাইকোর্টের বিচারপতি মিজানুর রহমান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। আট, প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীসহ যুদ্ধ পরবর্তী সব মানবতাবিরোধী অপরাধের স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের গ্রহণযোগ্য বিচার করতে হবে। নয়, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারসহ সব সংবাদিক, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে স্বাধীনভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। দশ, হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের মদতপুষ্ট করার অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে। এগার, নাস্তিক ও সরকারের দালাল ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, শামীম আফজলসহ সব দালালকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। বার, নাস্তিক মুরতাদ, ব্লগারসহ সব ধর্মদ্রোহীর বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাস করতে হবে এবং তের, জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমসহ সব মসজিদ মাদরাসায় হামলাকারী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের বিচার ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
কর্মসূচি : সমাবেশে ৫ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ১৩ দফা দাবি মানা না হলে আগামী ১লা মার্চ শুক্রবার সারাদেশে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে মহাসমাবেশ ও জাতীয় সংসদ অভিমুখে সব জেলা থেকে লংমার্চ আহ্বান করা হবে। বাংলাদেশের অন্যতম যুদ্ধাপরাধী এবং ধর্মদ্রোহী মুসল্লিদের খুনি রাজাকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে পদত্যাগ করতে হবে। আগামী শুক্রবার থেকে দেশের সাড়ে চার লাখ মসজিদে নাস্তিক মুরতাদদের পতনের জন্য ফজরের নামাযে ‘কুনুতে নাজেলা’ (বিশেষ দোয়া) পড়া হবে। আগামী মাসে দেশের সাড়ে ৪ লাখ মসজিদের ৯ লাখ ঈমাম মোয়াজ্জিন নিয়ে মহাসমাবেশ করা হবে এবং পরবর্তী দেশের ৪০ লাখ ওলামা মাশায়েখের মহাসমাবেশ আহ্বান করা হবে।
মহাসমাবেশে হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ্ আহমাদ শফীর রোগমুক্তি ও আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের জন্য দোয়া করা হয়।
মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও ইসলামি উত্তর জেলার সেক্রেটারি মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনির ও ওলামা পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মীর ইদরীসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল মালেক হালিম, নাজিরহাট বড় মাদরাসা আল্লামা মোহাম্মদ ইদ্রিস, মেখল মাদরাসা মাওলানা নোমান, হাটহাজারী মাদরাসার মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি জসিম উদ্দীন, ইসলামী ঐক্যজোট, চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী, নেজামে ইসলাম পার্টির যুগ্ম মহাসচিব আবদুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
বিষয়: বিবিধ
১৩১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন