স্টার জলসা, জি-বাংলার কাছে হুসাইনের ভালবাসা এবং তার পরাজয়
লিখেছেন লিখেছেন পারভেজ ১৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০৪:০০:৪৩ বিকাল
এ লেখাটি আমার দেখা একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে- স্টার জলসা, জি-বাংলার কাছে হুসাইনের ভালবাসা এবং তার পরাজয়।
হুসাইন, বাংলাদেশের একটি মধ্যবৃত্ত সনামধন্য মুসলিম পরিবারে জন্ম তার। জন্মের পর যখন জীবন সম্পর্কে বুঝতে শিখেছে, ঠিক তখন থেকেই মনের মধ্যে একটা ইচ্ছা পুষেছিল, তা হলো এ জীবনে সঙ্গী হিসেবে যাকে ঘরে আনবে, তাকে শিক্ষিত, মার্জিত এবং অবশ্যই পরদাশীল হতে হবে। হলোও তাই। মাদ্রাসা থেকে কামিল পাশ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে অনার্স-মাস্টার্স। তার ঘরে এসেই পড়ালেখা শেষ করে। হুসাইন নিজেও মাদ্রাসা ও কলেজের ছাত্র ছিল। আল্লাহ তার মনের আশা পূর্ণ করেছেন।
সম্ভবত ২০১০ সালে প্রথম হুসাইনের বাসায় টিভি কার্ড ও ডিস লাইনের সংযোগ নেয়। উদ্দেশ্য ছিল ফুটবল বিশ্বকাপ খেলা দেখার। এর আগে কখনো তাদের বাসায় টিভি ছিলনা। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের চোখকে ফাকি দিয়ে টিভি না কিনে টিভি কার্ড কিনেছে, মনিটরে দেখবে বলে। তখন তার স্ত্রী তাকে খুব করে নিষেধ করেছিল। কিন্তু হুসাইন তার কথা শুনিনি। শুরু হলো হুসাইনের বাসার শয়তানের আনা গোনা। যার একমাত্র মাধ্যম সে নিজে। যাইহোক-
হুসাইনের বাসার আশে পাশে কিছু শিক্ষীতা- অশিক্ষীতা মহিলা আছে। কেউ কেউ আবার চাকুরিও করে। মহিলাদের যে অভ্যাসটা চির সত্য, সুযোগ পেলেই আড্ডা গল্পে জড়ানো। যেহেতু হুসাইনের স্ত্রী পর্দার মধ্যেই থাকতে পছন্দ করে তাই সে সবসময় ঘরেই থাকতো। পাশের মহিলারা তার ঘরে আসতে তো আর বাধা নেই। এই আশা যাওয়ার মাঝে অনেকই হুসাইনের স্ত্রী কে বলতো স্বামীর উপর এত বিশ্বাস ভাল না। কেউ বলতো এত পড়ালেখা করেছেন কি ঘরে বসে থাকার জন্য? আবার কেউ নিজের উদাহরণ দিয়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতো। আবার কেউ তাকে এমনও বলতো যে, টাকার প্রয়োজন হলে তাদের কাছ থেকে ধার হিসেবে নিতে। কেউ তাকে সরাসরি চাকুরিও অফার করতো। হুসাইন রাত্রে বাসায় ফিরে এলে তার স্ত্রী ঐসব মহিলাদের কথাগুলো তাকে বলে দিত আর বলতো মহিলাগুলো কত খারাপ। হুসাইনের স্ত্রী নাকি তখন তাদের কথাগুলোর প্রতিবাদও করতো। ঐ সময়ই ‘মা’ ‘টাপুরটুপুর’ নামের বিভিন্ন নাটকের গল্প করতো এবং একসাথে হুসাইনের বাসাই দেখতো।
এক সময় বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা শেষ হলো। বাদ দেয়া হলো না টিভি আর ডিস লাইন। কিন্তু এখন আর টিভির রিমোর্ট হুসাইনের হাতে থাকে না। একটার পর একটা অনুষ্ঠান তার স্ত্রীর দেখতে হবে। হুসাইনকে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়। তাও আবার রাত ১১ টার পর। সেখানেও সমস্যা- ১১ টার পর হুসাইন টকশো বা খবরাখবর দেখবে, তা পারবে না। কারণ রুমে লাইট জালালে স্ত্রীর ঘুমতে অসুবিধা হয়। ঠিক আছে লাইট অফ। টিভির শব্দে তার ঘুম আসে না, ঠিক আছে সাউন্ড কমানো হলো। হুসাইনের যন্ত্রনায় তার স্ত্রী ঘুমাতে পর্যন্ত পারে না। সবশেষ মন্তব্য ‘তোমার বাসায় আসা দরকার কি’। প্রথম প্রথম এগুলোকে হুসাইন মজা হিসেবে নিত এবং ইচ্ছে করেই তাকে রাগানো জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতো। একসময় হুসাইনের মনে হলো সে যেটাকে দুষ্টমি মনে করছে তার স্ত্রী তা সিরিয়াসলি নিচ্ছে। একদিন তো তার স্ত্রী পাশের বাসায় চলে গেল সিরিয়াল দেখার জন্য। যেন হুসাইন না থাকলেও চলবে, তবুও স্টার জলসা আর জিবাংলাকে ছাড়া চলবে না। তখন হুসাইন বুঝতে পারে স্টার জলসা আর জি-বাংলার কাছে তার ভালবাসা এবং সে হেরে গেছে। হুসাইন মনে বিষণ কষ্ট পায় এবং এখনো তা অনুভব করে।
হুসাইন বিয়ে করে ২০০৬ এর জানুয়ারি মাসে। তখন থেকে হুসাইন দেখেছে, সে যখন বাসায় ফিরতো, খুব আন্তরিকতার সাতে তাকে তার স্ত্রী রিসিভ করতো। আমরা শিশুদের যেভাবে কেয়ার করি ঠিক সে রকম। তা এখানে লিখে বুঝাতে আমি অক্ষম তাদের তখনকার সুখময় স্মৃতিগুলো। আজ সে বুঝতে পারছে, তার স্ত্রীর মাঝে শুক্ষ্ম পরিবর্তন ঘটছে। আজ তার স্ত্রী ঘরের বাহিরে যেতে চায়, চাকুরি করবে বলে। আজ সে ভবিষ্যৎ চিন্তায় মগ্ন, অথচ জীবন যেকোন সময় থেমে যেতে পারে, তা সে ভুলে গেছে। আজ সে একা চলার সাহস করে, অথচ সে ভুলে গেছে সে কারো স্ত্রী। হুসাইন কখনো তার স্বাধীনতায় বাধা হয়ে দাড়াই নি। বরং পুরো সংসার পরিচালনার সুযোগটা তাকেই দিয়েছে। হুসাইন যা রোজগার করে বর্তমানে তা যথেষ্ট, আলহামদুলিল্লাহ।
আজ হুসাইন মনে করছে সেই বড় অপরাধী। এই স্টারজলসা, জি-বাংলা’র তার ঘরে প্রবেশের সুযোগতো সে নিজেই করেছিল। খাল কেটে কুমির আনার মতো। জোর করে কিছু বলতেও পারছে না। কেননা খালি চোখে তা বুঝা বা দেখা যায় না। শুধু হুসাইন নিজেই তা বুঝে। কিন্তু আস্তে আস্তে তার জীবন সঙ্গীর মনের ভিতর, আচরণগত যে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা কিভাবে যে, তাকে বুঝাবে হুসাইন বুঝে উঠতে পারছে না। তার মনে হচ্ছে সামনে বিপদ আসন্ন।
বারতীয় নাটক বা সিরিয়ালগুলো যে একটি আদর্শ সামাজ ও পারিবারকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তা হুসাইন স্পস্টই দেখতে পাচ্ছে। কেননা এদের নাকটক বা সিরিয়ালগুলোর প্রায় সব কাহিনী একই রকম। বেশিরভাগই পরকীয়া, একজনের একাধিক বিয়ে, নারীর স্বাধীনতার নামে বেহায়াপনা ইত্যাদি। যেন ভারতে কোন সাংবিধানিক আইন কানুন নেই। কিন্তু তাদের না থাকুক হুসাইন যে দেশে বাস করে, মানে বাংলাদেশে আছে। বিশেষ করে মুসলমানদের আল্লাহ প্রদত্ত সুস্পস্ট জীবন বিধান আছে। এখনই এই চেনেলগুলোর বিরুদ্ধে একটা ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
সবশেষে সকলের কাছে দোয়ার দরখাস্ত রইল, আল্লাহ যেন আমাদের হেদায়েত দেন।
বিষয়: বিবিধ
১৫৬৭ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমরা যদ্দিন বিকল্প সংস্কৃতি ও বিনোদন প্রচুর পরিমানে ও সহজলভ্য করতে না পারবো ততদিন এসবের সমাধান হবেনা!
বিনোদন ও সংস্কৃতির জগত এখন
জ্ঞান ও তথ্য জগতের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা,
একটা থেকে দূরে থাকলে অপরটাও দূরে রয়ে যায়
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
ধন্যবাদ আপনাকে মূল্যবান সময় ব্যয় করে পোষ্টটি পড়ার এবং মন্তব্য পেশ করার জন্য।
কিন্তু ভাই বিকল্প সংস্কৃতির জন্য তো মুখে আর লিখনিতে বললে হবে না। আমরা প্রায় এসব লিখনিতেই সিমাবদ্ধ রাখি। কাউকে তো এগিয়ে আসতে হবে।
সেই কেউটাতো আকাশ থেকে আসবেননা, আমাদেরই কেউ হবেন!
এসব কাজের জন্য সবার আগে দরকার দুটো জিনিস-
(১)সমাজের সকল স্তরে ব্যাপক দাওয়াতী কাজ- যাকে বলে গণসংযোগ ও জনমত গঠন, এটা হলে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপও রুখে দেয়া যায়
(২)রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার- এজন্য রাজনৈতিক আন্দোলন, যার প্রথম ধাপই হবে এলাকায় এমন নেতৃত্বএর টীম তৈরী করা যারা সকল অবস্থায় নীতির প্রশ্নে অটল থাকবেন এবং জনআস্থার ধারক হবেন!
যতক্ষণ আপনি আমি এদুটো কাজের জন্য ময়দানে ততপর আছি ততক্ষণ আখেরাতের পাকড়াও থেকে বাঁচার একটা উসিলা থাকলো!
আর যদি এদুটো কাজে ফাঁকি দেই তবে আখেরাতেও ফাঁকি আমার কাছেই ফিরে আসবে!
কলমযোদ্ধা ও সংস্কৃতিকর্মীদের জন্যও একই কাজ, পদ্ধতিটা আলাদা!
এর জন্য আমরা কিন্তু কয়েকভাবেই দায়ি। প্রথম থেকেই যদি তার স্ত্রী টেলিভিশন দেখত এবং ভাল ও থারাপ অনুষ্ঠান এর পার্থক্য করতে পারত তা হলে আর এই সমস্যা হতোনা। অন্যদিকে এই চ্যানেলগুলি নিষিদ্ধ করার দায়িত্ব সরকারের।
মন্তব্য করতে লগইন করুন