একটি ভয়ঙ্কর রাত- ৫ মে প্রসঙ্গ
লিখেছেন লিখেছেন পারভেজ ০৭ মে, ২০১৩, ০২:৫১:৫০ দুপুর
হেফাজতের আহবানে সারা বাংলাদেশের তৌহিদী জনতা যখন ৫ মে সকাল থেকে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো অবরোধ করে রেখেছিল, আমরা দেখেছি কত সুশৃঙ্খলভাবে তাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান ছিল। কিন্তু যখনই তারা অবরোধ পরবর্তী সময়ে সমাবেশ করার অনুমতি চায় ঠিক তখনই সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ একটু নড়েচড়ে বসে। তারা পরিস্কার জানিয়ে দেন কোন সমাবেশ করা যাবে না এবং কোন জায়গাও দেয়া হবে না। কিন্তু এই মানুষগুলোর প্রশাসনিক ক্ষমতা না থাকলেও এদের এদেশে সভা-সমাবেশ করার অধিকার আছে। তা হলে সমস্যাটা কোথায়। আর এদের দাবিও তো অযৌক্তিক নয়। মাত্র ১৩ টি দাবি। সরকার কি দাবিগুলোর একটিও বাস্তবায়ন করার সম্ভাবনায় তাদের আস্বস্ত করতে পারতো না? তা হলেতো আর অবরোধ বা সমাবেশ করার প্রয়োজন হতো না।
আজ আমরা ক্ষমতাশীন দলের কাছে জিম্মি। তাদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলা যাবে না। যেভাবে চলতে বলবে ঠিক সেই ভাবেই চলতে হবে। এই হলো আমাদের দেশ পরিচালক, যাকে মানুষ ক্ষমতায় বসিয়েছিল একটু পরিবর্তনের জন্য। পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটা দেশের প্রয়োজনে নয় বরং নিজেদের নাম-ক্ষ্যাতি অর্জন হয়েছে বেশ। ক্ষমতাশীন দলের বা দোষ কোথায়। এদেশে কিছু সুবিধাভোগী মানুষ আছে যারা চোখ-কান বন্ধ করে শুধু তৈল চর্যায় ব্যস্ত। কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক তা বলার প্রয়োজন মনে করে না। তেল মালিশ করে যদি নিজের পকেট ভরানো যায় বা পদমর্যায় কয়েকধাপ এগিয়ে যাওয়া যায় তাতে সমস্যা কোথায়।
বর্তমান ক্ষমতাশীন দলের একটা প্রসংশা না করলে অন্যায় করা হবে। এরা বিরোধি দলে থাকুক আর ক্ষমাতাশীনদলেই থাকুক। এই দল জানে কিভাবে আন্দোন করতে হয়, আবার কিভাবে কোন আন্দোলন ঠেকাতে হয়। যার প্রমান আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি। এখানে আমার মন ব্যথিত এই জন্য যে, কত লোক হত্যা করেছে এ ক্ষমতাশীন দল তারা নিজেরাও হিসাব দিতে পারবে না। যেখানেই তাদের বিরুদ্ধে কেউ মাথা তুলেছে সেখাই তা শেষ করে দিয়েছে। অপূর্ব ক্ষমতা। যা ইতিহাস হয়ে থাকবে। হয়তো একশত বছর বা এরও পর এসব ইতিহাস এদেশের আগামী প্রযš§ পড়ে কিছু শিখবে। যা আমরা এখন সেই হালাকু খান, চেঙ্গিস খানসহ ইত্যাদি রাজা বাদশাদের ইতিহাস পড়ে শিখছি।
হেফাজতে ইসলাম এদেশের কোন অংশ তাদের নামে লিখে নিতে চায় নি। কিংবা কোন স্থাপনার নামও তাদের নামে করতে চায়নি। চেয়েছে শুধু ইসলামের নৈতিক দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে। যা তাদের ঈমানের দাবির একটা অংশ। এদেশের বিশিষ্ট আলেমগন বলেছেন সারকার যদি ১৩ দফা দাবি না মানে তবে ধরে নেয়া হবে সরকার ইসলামের পক্ষে নয়। আজ আমরা দেখছি ১৩ দফা দাবি তো মানা দুরের কথা উল্টো তাদের সাথে এমন আচরণ করা হলো যা দেখে যেন আর কেউ সরকারের কাছে কোন দাবি দাওয়া নিয়ে না আসে। এতে ক্ষমতাশীন দল সফল। তা হলে কি আর বলা যাবে না এদেশে ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান, তা হলে এদেশের পরিচয় কি হবে, উত্তর মিলাতে পারছি না। যাই হোক পুরো দেশ কি শান্ত। মনে হয় এ দেশে গত ৫ বছরেও কোন দুর্ঘটনা ঘটে নি। আসলে ক্ষমতাশীন দল যদি চায় কোন কিছু পরিবর্তন করবে তা সম্ভব। পরিবর্তন যেমনই হোক আজ দু’দিন আমরা দেখছি। শান্ত এক বাংলাদেশ। এদেশের মানুষ কত শান্তি প্রিয়।
শান্তি প্রিয় তৌহিদি জনতার সমাবেশে কে বা কাদের উস্কানিতে শুরু হলো ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। সেটা কি কেউ ক্ষমতাশীন দলের কাছে জানতে চেয়েছে? কেউ নেই, এদেশের সত্য কথা বলার। আর যে কাজটি ক্ষমতাশীন দল ঘটিয়েছে, তা সত্যি দুঃখ জনক এবং লজ্জা কর। রাতের আধারে অভিযান পরিচালনা করার কি বিরত্য রয়েছে, বুঝে আসছে না। তাও আবার ঘুমন্ত আর নিরস্র জনতার উপর। হাজার হাজার সরকারী প্রশিক্ষত বাহিনীর যুদ্ধাবেশে আক্রমন। এটাতো দিনের আলোতেও করা যেত। নাকি এমন পরিস্থিত দেশ বাশি বা বিশ্ব বাশি দেখে ফেলবে। দেখলে সমস্যা কোথায়। ক্ষমতাশীনরাতো আর অন্যায়ভাবে কিছু করে নি। তারা জনগনের জান মাল রক্ষার জন্য যা যা করার প্রয়োজন ছিল তাই করেছে। মানুষ এতে বাহ বাহ দেয়ার কথা। তাই নয় কি?
যাই হোক সব শেষে বলছি- মনের মাঝে একটা প্রশ্ন বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে। তা হলো, সে রাতের গনহত্যার সংখ্যা কত ছিল, কেনই বা ক্ষমতাশীনরা রাতের আধারে অভিযান চালিয়েছে। সমস্ত মিডিয়া চুপ কেন। নয়াদিগন্ত আর ইসলামিক টিভি বন্ধ কেন? সব বন্ধ করে এ অভিযানের মানে কি? সাধারণ জনতা কি এতটাই ভয়ংকর ছিল যে রাতের আধারে ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের শেষ করে না দিতে পারলে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা যাবে না। এটাই কি ভয় ছিল। আজ শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন মনে উকি ঝুকি মারছে।
-৭ মে ১৩-
বিষয়: বিবিধ
১৭১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন