কারা মুরতাদ?

লিখেছেন লিখেছেন মনসুর আহামেদ ২৫ মার্চ, ২০১৩, ১২:০৫:৫৪ রাত

কারা মুরতাদ?

মুনতাসির মামুন আরেক মিথ্যা বলেছেন মুরতাদ শব্দের ব্যবহার নিয়ে। জনকন্ঠের নিবন্ধে তিনি লিখেছেন,“আমি বিচারপতি হাবিবুর রহমানের ‘কোরানসূত্র’ ঘেঁটে দেখেছি,সেখানে ‘মুরতাদ’ বলে কোন শব্দ নেই।” তিনি লিখেছেন,“পাকিস্তানে (১৯৭১ সালের আগে) জামায়াত নেতা মওদুদী প্রথম মুরতাদ শব্দটি ব্যবহার শুরু করেন। তার প্রতিষ্ঠার জন্য বিরুদ্ধবাদীদের দমনের ক্ষেত্রে মুরতাদ ঘোষণা করা ছিল এক ধরনের হাতিয়ার। মওদুদী ‘মুরতাদ কী সাজা’ নামে একটি বইও লিখে ফেলেন। এবং সেখানে নানাভাবে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড।” মুনতাসির মামুন যে কতটা মিথ্যাচারি ও ইসলামে মৌলিক বিষয়ে তিনি যে কতটা অজ্ঞ সেটি প্রমাণিত হয় তার এ লেখনিতে। তিনি বিশ্ববিদ্যাদয়ের একজন শিক্ষক, অথচ মুরতাদ শব্দটি তাকে খুঁজতে হয়েছে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের বইতে। অথচ শব্দটির সাথে বাংলাদেশের বহু স্কুলছাত্র ও মাদ্রাসা ছাত্রও পরিচিত। বিশেষ করে সালমান রুশদি ও তসলিমা নাসরীনের কুফরি আচরণের পর। প্রশ্ন হলো, এরূপ বিদ্যাবুদ্ধি নিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকতা করেন কীরূপে? তিনি বলতে চেয়েছেন,পাকিস্তানে মুরতাদ শব্দের প্রথম প্রচলন করেছেন মাওলানা মওদুদী। অথচ প্রকৃত সত্য হলো, ইসলামের নামায-রোযা হজ-যাকাত ও জিহাদের ন্যায় মুরতাদ শব্দটিরও প্রচলন ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই। নবীজীর জীবদ্দশাতে কেউ কেউ ইসলাম কবুলের পর ইসলাম ত্যাগ করে কাফেরদের দলে শামিল হয়েছে। নবীজীর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডও ঘোষিত হয়েছে। এ শব্দের আবিস্কারক তাই মাওলানা মওদুদী নন।

দেহ জীবিত থাকলে তা থেকে দৈহীক শক্তির ন্যায় বর্জও উংপাদিত হয়। দেহের স্বাস্থ্য বাঁচাতে হলে সে বর্জকে নিয়মিত বর্জন করতে হয়। মলমুত্র বন্ধ হয়ে গেলে কি দেহ বাঁচে। মুরতাদগণ হলো উম্মাহর দেহের বর্জ। যে সমাজ মোজাহিদ তৈরী হয় সে সমাজে মুরতাদও তৈরী হয়। মুরতাদ তারাই যারা মুসলমান সমাজের মাঝে প্রকাশ্যে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং শত্রুদের দলে গিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কোন দেশেই জেলে, তাঁতি,কৃষক বা রাখালকে ধরে সামরিক বাহিনী কোর্ট মার্শাল করে না।দেশের বিরুদ্ধে গাদ্দারির অভিযোগে তাদের প্রাণদন্ড দেয়া হয় না।কোর্টমার্শাল তো ঘটে সেনাবাহিনীর সদস্যদের বেলায়। সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার ব্যাপারে অধিকাংশ দেশেই বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু সেনাবাহিনীতে একবার যোগ দিলে যেমন উচ্চ মান-মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা আছে তেমনি অলংঘ্যনীয় দায়বদ্ধতাও আছে। সে দায়বদ্ধতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কঠোর শাস্তিও আছে। তেমনি ইসলাম কাউকে মুসলমান হতে বাধ্য করে না। ধর্মে জোর-জবরদস্তি নেই – তার ব্যাখা তো এটাই। কিন্তু মুসলমান হওয়ার অর্থই হলো আল্লাহর সৈনিক রূপে নিজেকে শামিল করা এবং শয়তানি শক্তির পক্ষ থেকে যেখানেই হামলা সেখানে গিয়ে হাজির হওয়া। মুরতাদ হলো তারাই যারা আল্লাহর ও মুসলিম উম্মাহর নিরাপত্তার সাথে গাদ্দারি করে। এবং সে গাদ্দারির শাস্তি মৃত্যদন্ড। নানা ফেরকা ও নানা মাজহাবের উলামাদের মাঝে নানা বিষয়ে মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু ইসলামের মৌল বিষয়ের ন্যায় মুরতাদের সংজ্ঞা ও শাস্তি নিয়ে কোন মতভেদ নাই।

মুরতাদের শাস্তিঃ ইসলাম ও অন্যধর্মে

ইংরেজী ভাষায় ব্লাসফেমি একটি বহুল প্রচলিত শব্দ। এর আভিধানিক অর্থঃ খৃষ্টান ধর্মের উপাস্য ইশ্বরের বিরুদ্ধে অমর্যাদাকর, অবজ্ঞামূলক, আক্রমণাত্মক বা শিষ্ঠাচারবহির্ভূত কিছু বলা বা করা। খৃষ্টান এবং ইহুদী – এ উভয় ধর্মেই এমন অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। সে শাস্তির কথা এসেছে ওল্ড টেস্টামেন্টে। বলা হয়েছেঃ “এবং যে ব্যক্তি প্রভুর নামের বিরুদ্ধে ব্লাসফেমি তথা অপমানকর, অমর্যাদাকর বা শিষ্ঠাচার বহির্ভূত কোন কথা বলবে বা কিছু করবে তবে তার নিশ্চিত শাস্তি হলো তাকে হত্যা করা। জমায়েতের সকলে তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করবে।” –(বুক অব লেভিটিকাস ২৪:১৬)। অপর দিকে হিন্দুধর্মে ব্লাসফেমি শুধু ইশ্বরের বিরুদ্ধে কিছু বলাই নয় বরং কোন ধর্মগুরু বা পুরোহিতের বিরুদ্ধে বলাও। হিন্দুধর্মের আইন বিষয়ক গ্রন্থ মনুষস্মতিতে বলা হয়েছে, “যদি নিম্মজাতের কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন পুরোহিতকে অবমাননা করে বা তার সাথে খারাপ আচরণ করে তবে রাজার দায়িত্ব হবে দৈহীক শাস্তি বা প্রাণদন্ড দেয়া যাতে সে প্রকম্পিত হয়। -(মনুষস্মতি ২৪:১৬)।

মুনতাসির মামুন কোরআনে বিভিন্ন আয়াতের উদ্ধৃতি তুলে প্রশ্ন তুলেছেন, কোরআনে কোথায় লেখা আছে মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড? বুঝা যায়, মুনতাসির মামুন এখানে ব্যর্থ হয়েছেন কোরআন ও ইসলামের ইতিহাস বুঝতে। ইসলামে মৃত্যুদন্ড রয়েছে খুনীদের জন্য। মৃত্যদন্ড রয়েছে বিবাহিত ব্যভিচারিদের জন্য। কিন্তু এসব অপরাধীদের চেয়েও বড় অপরাধটি সংঘটিত হয় তাদের দ্বারা যারা নিজেদের গলা থেকে আল্লাহর আনুগত্যের রশি দূরে ফেলে দিয়ে বিদ্রোহের পতাকা হাতে তুলে নেয়। এবং লিপ্ত হয় মুসলিম উম্মাহর নিরাপত্তার বিরুদ্ধে। এরাই কাফেরদের সাথে মিলে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। বাংলাদেশে তো তারা তেমন একটি যুদ্ধই শুরু করেছে। সে যুদ্ধকে তারা বলছে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। সে যুদ্ধে তারা ভারতের সর্ববিধ সহযোগিতাও পাচ্ছে। কোন মুসলিম এমন যুদ্ধাবস্থায় গুমুতে পারে? তাছাড়া মুসলিম উম্মাহ কিছুসংখ্যক খুনি বা ব্যাভিচারের পাপে বিপন্ন হয় না। বিপন্ন হয় যখন মুরতাদদের বিদ্রোহ দেখা দেয়। কোন রাজা কি তার রাজ্যে বিদ্রোহীদের ক্ষমা করেন? সেটি হলে কি তার রাজ্য বাঁচে? তাই আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ও সাহাবাগণ এসব বিদ্রোহীদের নির্মূল করেছেন মৃত্যুদন্ড দিয়ে। নবীজীর প্রসিদ্ধ হাদীস, “মান বাদ্দালা দ্বীনাহু, ফাকতুলুহ’। অর্থঃ যে ব্যক্তি তার দ্বীনকে পাল্টিয়ে নিল, তাকে হত্যা কর”। ফলে পাকিস্তানে মাওলানা মওদূদী মুরতাদ ও মুরতাদের শাস্তির ধারণাটি প্রথমে পেশ করেন –মুনতাসির মামুনের এমন মতের কি কোন ভিত্তি থাকে? পাকিস্তানে আজ যে ব্লাসফেমি আইন সেটির প্রবর্তক কি মাওলানা মওদূদী? সালমান রুশদির বিরুদ্ধে হত্যার ফতওয়া দিয়েছিলেন ইমাম খোমিনী। তিনি কি জামায়াতে ইসলামীর সদস্য ছিলেন? মুরতাদের শাস্তি যে মৃত্যুদন্ড তা নিয়ে হানাফি, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলী ফেকাহর মধ্যে যেমন দ্বিমত নেই, তেমনি দ্বিমত নেই শিয়াদের মাঝেও। বাংলাদেশেও তা নিয়ে কোন নানাদল, নানা ফেরকা ও নানা মাদ্রাসার আলেম উলামাদের মাঝে তিলমাত্র বিভেদ নাই। নানা মুনতাসির মামুন সেটি না জানলে সেটি তার অজ্ঞতার দোষ, এজন্য কোরআন-হাদীসকে দায়ী করা যায় না।

তথ্য সূএে: http://drfirozmahboobkamal.com/2010-03-24-10-21-22/917-muntasir-mamuns-murtad-issue-and-a-strong-push-on-hasinas-tilted-chair.html

বিষয়: বিবিধ

১৪৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File