তাওহীদ-র্শিক-তাগুত । ইসলামী সমাজ।
লিখেছেন লিখেছেন মনসুর আহামেদ ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৭:২২:৪২ সন্ধ্যা
সমগ্র সৃষ্টিকুলের উপর সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে বড় ফরয হচ্ছে তাওহীদ গ্রহণ ও র্শিক বর্জন। তাওহীদই হলো ইসলামের ভিত্তি ও মুসলিমদের প্রেরণা বা চালিকাশক্তি আর র্শিক হলো মানবতার প্রতি সবচেয়ে বড় যুলুম। সুতরাং তাওহীদ ও র্শিক সম্পর্কে ইলম (জ্ঞান) না থাকলে কোন ইলম-ই পরিপূর্ণ হতে পারে না। তাওহীদ বিহীন র্শিক যুক্ত কোন আমলই আল্লাহ্’র নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। কালামে পাকে আল্লাহ্ ফরমান :
“তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্বে গত হওয়া সকল নাবী রাসূলদের প্রতি এই ওহী পাঠানো হয়েছে যে, যদি তুমি র্শিক করো, তাহলে তোমার সকল আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত।” (সূরা আয যুমার ৩৯:৬৫)
তাগুতের সমর্থক আলিমগণ কর্তৃক মুসলিম জনগণকে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা সত্বেও দ্বীনের অপরিহার্য দাবী এই যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালাই সার্বভৌম ক্ষমতার একমাত্র মালিক এবং আইন-বিধান প্রণয়নের অধিকার একমাত্র তাঁরই। তিনিই সিদ্ধান্ত দিতে পারেন কোনটি হক্ব (গ্রহণযোগ্য) আর কোনটি বাতিল (পরিত্যাজ্য) এবং মানুষ কিভাবে তাদের জীবন পরিচালনা করবে। আমরা দুনিয়াতে এসেছি একমাত্র আল্লাহ্’র সার্বভৌমত্বের গোলামী করার জন্য এবং আমাদেরকে অবশ্যই তাঁর অধিকার সম্পর্কে বুঝতে হবে অতঃপর একমাত্র তাঁরই আইন বা হুকুম মানার মাধ্যমে আমাদের সকল আনুগত্যকে তাঁর দিকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
মুসলিম উম্মাহর পুনরুত্থানের পথে সবচেয়ে বড় বাধার প্রাচীর হলো র্শিক সম্পর্কে অজ্ঞতা। অর্থাৎ বর্তমান সময়ের প্রতিষ্ঠিত র্শিককে র্শিক হিসেবে চিহ্নিত করতে না পারা। সকল সমস্যার মূল হলো এই র্শিককে চিনতে না পারার সমস্যা। আল্লাহ্’র আইনের মুকাবিলায় মানুষকে আইন প্রণয়নের অবৈধ ক্ষমতা প্রদান, অত্যাচারী শাসকগণ কর্তৃক সেই আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রয়োগ ও জনগণকে তাদের আইন মানার জন্য নির্দেশ দান হলো সেই বিষ যা ইসলামের মূল, কান্ড ও শাখা-প্রশাখাকে ধ্বংস করে চলেছে।
একশ্রেণীর পোষা আলিম আছেন যারা র্শিক-বিদ’আত বলতে মাজার-কবর-তাবিজের বাইরে কিছু দেখতে পান না। মূর্তি পূজা, কবর-মাজারে সিজদাহ্ করা অবশ্যই র্শিক। কিন্তু অজ্ঞতার কারণে মানুষের তৈরী মূর্তির পূজা, অন্ধ আবেগে মৃত মানুষের কবর-মাজারে সিজদাহ্ দেয়াকে যারা র্শিকে আকবর বলে অভিহিত করে থাকেন, অথচ আল্লাহ্দ্রোহী শক্তির আইন-বিধান প্রনয়ণের ক্ষমতা ও তা মান্য করাকে র্শিক বলে আখ্যায়িত করেন না এবং মূর্তি পূজারী, মাজার পূজারীকে মুশরিক মনে করেন, কিন্তু তাগুতী শক্তি তথা মানব রচিত আইনের প্রণেতা, রক্ষক ও অনুসারীদের র্শিককারী-মুশরিক মনে করেন না, তারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্’র কিতাব কুরআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহর প্রকৃত জ্ঞান লাভ করতে পারেননি। যদ্বারা বুঝা যায় ঈমানদার দাবী করা সত্বেও তারা ইসলামকে পরিপূর্ণরূপে গ্রহণ করেননি। দুনিয়াবী স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার ভয়ে যারা কুরআন ও সুন্নাহর ফায়সালা জানা থাকা সত্বেও তদনুযায়ী আমল (কাজ) করেন না, তাদের সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
“হযরত বুরাইদা (রাযিআল্লাহু আনহু) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “তিন ধরনের বিচারক রয়েছে। এক শ্রেণী জান্নাতে যাবে এবং দু’শ্রেণী জাহান্নামে যাবে। যে জান্নাতে যাবে সে ব্যক্তিতো এমন, যে হক্বকে (সত্যকে) জানার পর তদনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করবে। পক্ষান্তরে যে বিচারক হক্বকে হক্ব হিসেবে জানার পরও স্বীয় বিচার-ফয়সালায় জুলুম করবে সে জাহান্নামে যাবে। আর যে ব্যক্তি অজ্ঞতাবশতঃ হক্বের জ্ঞান ছাড়াই ভুল বিচার করবে সেও জাহান্নামে যাবে।” [আবু দাউদ-অনুচ্ছেদ/৩৮৬-হা/৩৫৩৫-ই.ফা.বা, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী]
মূলতঃ তাগুতকে অস্বীকার করে তাওহীদ গ্রহণ করার মাধ্যমে ঈমানদার হতে হয়। সুতরাং একজন মানুষকে আল্লাহ্’র নিকট ঈমানদার মুসলিম হিসেবে পরিগণিত হতে হলে তার তাওহীদ, র্শিক ও তাগুত সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান ও উপলব্ধি থাকতে হবে। আল্লাহ্’র রুবুবিয়্যাতে তাওহীদ, উলুহিয়্যাতে তাওহীদ সম্পর্কে না জানলে যেমন ঈমান গ্রহণ করা যায় না তদরূপ র্শিক ও তাগুত না চিনলে ঈমান আনার পূর্বশর্ত পূরণ করা যায় না। তাই কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে তাওহীদ, র্শিক ও তাগুত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত অথচ মৌলিক কিছু আলোচনা করা হয়েছে যাতে দুনিয়া ও আখিরাতের উভয় জীবনের কল্যাণকামী মানুষরা তাদের ঈমান ও আমলকে সংশোধন করে নিতে পারেন।
বিষয়: বিবিধ
১১০৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন