লড়াই লড়াই লড়াই চাই WRITTEN BY ফরীদ আহমদ রেজা

লিখেছেন লিখেছেন মনসুর আহামেদ ২০ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১২:১৮:১৬ রাত



………………………………………………………………………………………

এক.

হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেলো। বাইরে অনেক মানুষের কথা শোনা যাচ্ছে। বারান্দার আবছা আলোয় ঘড়িতে দেখলাম রাত ১২টা। আবার গগন বিদারী চিৎকার কানে এলো, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘রব-জলিলের সৈনিকেরা বেরিয়ে এসো বেরিয়ে এসো।’

সারাদিনের ক্লান্তি শরীরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসের পর কিছু কেনাকাটা ছিল। তা শেষ করে কোন রকম রাতের খাবার খেয়েছি। তারপর হলে এসে শুয়ে পড়েছি। হল মানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দি হল। রব-জলিলের সৈনিকদের চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে গেলো। নজরে পড়লো, কে একজন জানালার পর্দা ফাঁক করে বাইরের দিকে কী যেন দেখছে। ভালো করে চেয়ে দেখলাম, সগির আহমদ। নড়াচড়া টের পেয়ে তিনি আমার দিকে না তাকিয়েই বললেন, ‘রেজা ভাইয়ের ঘুম কি ভেঙে গেছে? জাসদের মিছিল যাচ্ছে। গুনে দেখলাম, মাত্র বিশ থেকে পচিশজন লোক। তবে গলায় তাদের তেজ আছে।’

স্বীকার করতে হবে, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই’ শ্লোগানটি রক্ত গরম করে তোলে। ডাকাতিয়া বাঁশির মতো তরুণদের মধ্যে মাদকতা এনে দেয়, উদ্দাম করে তোলে। আমার তারুণ্যকে এ শ্লোগান বার বারমোহাবিষ্ট করেছে। এক সময় কবিতায় সে মোহকে আবদ্ধ করে রেখেছি।

‘এখন যুদ্ধের কাল………

তুলে রাখো প্রেমপত্র অভিমানী চোখ

আমাকে পরিয়ে দাও যুদ্ধের লেবাস।

ভুলে যাও ভালোবাসা সখাদ নিখাদ

ভুলে যাও মোহময় চোখের ইশারা

তোমার প্রেমের গান যুদ্ধের সঙ্গীত

আমার হৃদয় জুড়ে অস্ত্রের পীরিত

যুবক হৃদয় গুলো চিরে খুলে দেখো

দাউ দাউ জ্বলে সেথা যুদ্ধের আগুন

প্রসাধনে ভেসে আসে বারুদের প্রাণ

অলঙ্কার মনে হয় বন্দীর শিকল।

এখন যুদ্ধের কাল……….

এ যুদ্ধের অবসান চাও?

সকল প্রার্থনা হোক প্রেমের ফসল

পৃথিবী দেখুক মুখ অজস্র যোদ্ধার।’

হ্যাঁ, লড়াই আমাকে টানলেও এর প্রকৃতি নিয়ে নিশ্চিত ছিলাম না। প্রার্থনা, প্রেম এবং লড়াই সেখানে পাশাপাশি বাস করেছে।

কিসের লড়াই, কার বিরুদ্ধে লড়াই, কী ভাবে লড়াই হবে, লড়াই করে কী অর্জিত হবে – তরুণদের এ সকল প্রশ্নের জবাব অন্বেষণের প্রয়োজন পড়ে না। বাঁচতে হলে লড়াই ছাড়া কি আর কোন পথ নেই, এ সব তত্ত্বকথা নিয়ে ভাবার আকাঙ্খা বা সময় কোথায়? গরম শ্লোগান শুনলেই তাদের রক্ত টগবগ করে উঠে। শ্লোগানটা জাসদের এবং জাসদ নিয়ে সাম্প্রতিক অনেক কথা বাজারে এসেছে। অধিকাংশ কথা নানা জনের পক্ষ থেকে আগেও উচ্চারিত হয়েছে। ইসলামী ঘরানার কারো কারো মুখ থেকে এর সাথে মিল রেখে ‘জেহাদ জেহাদ জেহাদ চাই’ বলে চিৎকার শুনেছি। ‘আপোস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’ শ্লোগানও অনেকে দিয়েছে।

একবিংশ শতকের পৃথিবী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের চিন্তার জগতে বিবেচনা ও তর্কের অনেক নতুন বিষয় উন্মোচিত করেছে। বিশ্বায়নযুগের পরিবর্তিত বিশ্ব-পরিস্থিতি নিয়ে এসেছে আরো অনেক চ্যালেঞ্জ। যাদের মধ্যে মানবিকবোধ এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসা আছে তাদের অবশ্যই অন্ধ ও বধির হয়ে থাকলে চলবে না। অতীতকে সঠিক ভাবে চিহ্নিত করে তাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাবার পথ অবশ্যই অন্বেষণ করতে হবে।

জেহাদ শব্দের শাব্দিক অর্থ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা বা চূড়ান্ত চেষ্টা-সাধনা। বাংলায় এ শব্দের কাছাকাছি অর্থ সংগ্রামও হতে পারে। উনসত্তর-সত্তরে আমরা ‘সংগ্রাম সংগ্রাম, চলবে চলবে’ বলে রাজপথ গরম করেছি। অনেকের কাছে জেহাদ মানে সশস্ত্র যুদ্ধ বা লড়াই। পশ্চিমারা এর অর্থ সশস্ত্র যুদ্ধই মনে করে। কুরআনে সশস্ত্র লড়াইকে কিতাল বলা হয়েছে। সশস্ত্র যুদ্ধের অভিযানকে হাদিসে বলা হয়েছে গাজওয়া। জাসদের কার্যক্রম থেকে অনুমান করি, তাদের ‘লড়াই লড়াই’ শ্লোগানের অর্থ একই সাথে সংগ্রাম এবং সশস্ত্র লড়াই ছিল। তারা বলতেন, শ্রেনী সংগ্রাম তরান্বিত করে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্যে আমরা লড়াই করছি। দেশ-বিদেশের খবর যারা রাখেন তারা জানেন, জাসদের ‘লড়াই লড়াই’ শ্লোগান উভয় অর্থে এখন ইসলামী ঘরানার অনেকের কথায় ও কর্মে সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।

এক সময় কুরআনের একটা আয়াত আমার চোখে পড়ে। আয়াতটি মক্কায় নাজিল হয়েছে। সুরা ফুরকানের সে আয়াতে বলা হয়েছে, তুমি তাদের বিরুদ্ধে ‘কুরআনের সাহায্যে’ প্রবলভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাও। কুরআনের ভাষায় ‘জিহাদান কাবিরা’। কুরআনের অন্য জায়গায় মক্কার মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ‘কুফ্ফু আইদিয়াকুম ওয়া আক্বিমুস সালাহ’ – হাত সংযত রাখো এবং নামাজ কায়েম করো। কুরআনের সাহায্যে প্রবলভাবে লড়াইকে সশস্ত্র লড়াই বলে ব্যাখ্যা করার কোন সুযোগ নেই। এর অর্থ হচ্ছে নিজে কুরআন ধারণ করে কুরআনের নির্দেশ অনুসারে এর বাণী মানুষের সামনে প্রচারের জন্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো।

মক্কায় মহানবী (স) কার্যত সে কাজই করেছেন। মক্কার ১৩ বছর মুসলমানদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন কম হয়নি। কুরাইশদের নির্যাতনে সুমাইয়া (রা) সেখানে শাহাদত লাভ করেন। তিনি ইসলামের প্রথম শহীদ। কিন্তু মুসলমানদের তখন কুরাইশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ের অনুমতি দেয়া হয়নি। সশস্ত্র লড়াইয়ের অনুমতি এসেছে মদিনায় হিজরতের পর। সে সময়ও লড়াই হয়েছে মদিনার আশপাশে। মুসলামানরা মক্কায় এসে লড়াই শুরু করেননি। কুরাইশরা-ই বার বার মদিনা আক্রমণ করতে গিয়েছে।

মক্কায় কেন সশস্ত্র লড়াইয়ের অনুমতি দেয়া হয়নি? এটা কি এ কারণে যে মুসলমানরা সংখ্যায় কম ছিলেন? এটা একটা কারণ হতে পারে, কিন্তু একমাত্র কারণ নয়। লড়াই করে মানুষের মনোজগতে পরিবর্তন আনা যায় না। বিশ্বাস বা ঈমান জোর করে সৃষ্টি করার বিষয় নয়। ‘লা-ইকরাহা ফিদ্দিন’ বলে আল্লাহ মানুষের জন্যে ইসলাম গ্রহণ বা বর্জনের অধিকার নিশ্চিত করেছেন। ইসলাম গ্রহণের জন্যে কাউকে বাধ্য করা ইসলামী মূলনীতির পরিপন্থী।সকল প্রকার চাপ বা বাধ্যবাধকতার উর্ধে থেকে মানুষকে বিবেচনার সুযোগ দেয়া জরুরী বিষয়।

ইসলামী দর্শন এবং আদর্শ মক্কার কায়েমী স্বার্থবাদীদের জন্যে বিপদ-ঘন্টা ছিল, এটা ঠিক। সাথে সাথে সেখানকার পুরো জনগোষ্ঠীর কাছে ছিল তা সম্পূর্ণ নতুন এবং অভিনব। নতুন আদর্শকে বুঝা এবং তা আত্মস্থ করার জন্যে মানুষকে সময় দিতে হয়। একজন বা দু জন হুট করে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে পারে। অধিকাংশ মানুষের পক্ষে তা করা সম্ভব হয় না। যারা গ্রহণ করবে এবং যারা বিরোধিতা করবে, উভয় পক্ষকে সিদ্ধান্তে পৌঁছার জন্যে সময়ের প্রয়োজন। সে সময় তাদের প্রদান করা হয়েছে। সব ধরণের নির্যাতন এবং উস্কানির মুকাবেলায় মহানবী (স) পাহাড়ের মতো অটল ও শান্ত থেকেছেন। আঘাতের মুকাবেলায় অঘাত করেননি, কাউকে আঘাত করার অনুমতি দেননি। ছবর করতে বলেছেন, স্বান্ত্বনা দিয়েছেন। তাড়াহুড়া করতে নিষেধ করেছেন। যুদ্ধাবস্থা অথবা সহিংস পরিস্থিতি আদর্শ প্রচারের জন্যে অনুকুল নয়, তা বুঝার মতো প্রজ্ঞা তাঁর মধ্যে ছিল। মদিনায় হিজরতের পরও তিনি সেখানকার ভিন্নমতাবলম্বী জনগোষ্ঠীর সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি অবলম্বন করেন। তাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার প্রদান করেন এবং তাদের নিজস্ব আইন অনুযায়ী নিজেদের বিচার-ফায়সালার সুযোগ বজায় রাখেন। এর নামও লড়াই। কিন্তু তা ছিল যুক্তি, আলোচনা এবং দৃষ্টান্তমূলক কাজের মাধ্যমে।

লড়াই সম্পর্কে আমার এ উপলব্ধি পরবর্তীতে একটি কবিতায় এ ভাবে এসেছে,

‘ঘরে ঘরে এখন যুদ্ধ চলছে

ভাতের ফেন গালতে গালতে অথবা

চায়ের সাথে চিনি মেশাতে মেশাতে

কোন কোন রমনীয় হাত বিদ্রোহ ছড়ায়

নকল খোদাদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে।’

বাংলাদেশে লড়াইয়ের ইতিহাস পুরানো। যতটুকু মনে পড়ে ৭৮ সালে এর শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। উপলক্ষটা মনে রাখা দরকার। স্রেফ চরমপন্থা। কিছু দায়িত্বশীলের হটকারী সিদ্ধান্তের কারণে সদ্যজাত একটি সংগঠনকে প্রশ্নবোধক করে তুলে।বাংলাদেশে এর আগে মারামারিতে লাঠি আর হকি-স্টিক ব্যবহৃত হতো। এখন ব্যবহৃত হয় ছোরা, রামদা, কিরিচ, বোমা এবং নানা প্রকার আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। কার হাতে কী আছে জানি না। কতজনে কত কথা বলে। আলামত দেখে সন্দেহ হয়। বাংলাদেশে সব কিছু-ই পাওয়া যায়। মিশর শুরুতে সশস্ত্র লড়াইয়ে জড়িত হয় ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। এখন অবশ্য ক্ষান্ত দিয়েছে। সিরিয়ায় শুরু হয় বাশারের বাপের আমলে। তারপর কিছু দিন বিরতি দিয়ে আবার শুরু হয়েছে। এখন সেখানে সত্যিকার চতুর্মুখি যুদ্ধ চলছে। এর প্রেক্ষাপটও ভিন্ন।গত শতকের শেষের দিকে আমাদেরই এক আপনজন মিশরীয়দের সাবধান করেছেন। তিনি আজ নেই। আমাদের এখন কে সাবধান করবে?

সহিংসতার মূল শক্তি তরুণ ছাত্ররা। ছাত্রদের রাজনীতির বলির পাঁঠা বানানো কী খুব জরুরী? ছাত্ররা আর কতদিন ক্ষমতায় আরোহণের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হবে? তারা আর কতো জীবন দিবে, পঙ্গু হবে, মা-বাবার কপাল ভাঙবে, তাদের উপর বোঝা হবে? তাঁদের আর কতদিন ক্যারিয়ার স্যাক্রিফাইস করতে হবে? তারাই তো আমাদের ভবিষ্যত। তাদের তৈরি হতে হবে ভবিষ্যতের জন্যে। ছাত্রদের জীবন গঠনের সুযোগ না দিতে পারলে ভবিষ্যত অন্ধার।মালয়েশিয়ার ছাত্ররা, পাকিস্তানের ছাত্ররা যদি পারে, তা হলে আমরা পারি না কেন? ইউরোপের ছাত্ররা কি রাজনীতি জানে না বা করে না? তারা তো মাঠে-ময়দানে মিছিল করে না বা চোঙ্গা ফুঁকে না।আমরা কেন এ রকম নিজের পায়ে কুড়াল মারছি?

আজকের প্রধান লড়াই লাঠি বা অস্ত্র দিয়ে নয়। আজকের লড়াই মেধা ও কৌশলের। যুক্তি ও মননের লড়াই। সাংবাদিকতা ও বুদ্ধিবৃত্তির লড়াই। কূটনীতি ও ডায়লগ সেখানে মুখ্য। চর্বিত চর্বণ দিয়ে এক বিংশ শতাব্দির লড়াইয়ে জেতার উপায় নেই। প্রয়োজন মৌলিক চিন্তার। মৌলিক চিন্তা কার থেকে আসবে? প্রয়োজন দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার। আগামী কাল ক্ষমতায় যাওয়ার খাহেশকে কবর দিতে হবে। আজকের ময়দান বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ নয়।স্যামুয়েল হান্টিংটন তার ‘ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন এন্ড রিমেইকিং অব ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ লিখেছেন ১৯৯৬ সালে। সেটাকে আজকের বিশ্ব পরিস্থিতির ব্লু-প্রিন্ট বলে মনে করা হয়। এর একটা উপযুক্ত কাউন্টার ন্যারেটিভ অদ্যাবধি আমরা কেউ উপস্থাপন করতে পারিনি। না কাজে, না গবেষণায়। আমাদের সম্পদের কি অভাব আছে? এ দুঃখ আমরা কার কাছে বলবো?

দুই.

এমসি কলেজে অনার্স শেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি। অনার্সে থাকতে প্রথমে সিলেট জেলা এবং পরে সিলেট শহরের দায়িত্ব ছিল। তখন প্রায়ই বাইরে সফরে যেত হতো। এ কারণে অনার্সের ক্লাস খুব একটা করতে পারিনি। লেখাপড়া এবং সংগঠনের কাজে ভারসাম্য রাখার ওয়াজ-নসিহত করতাম। কিন্তু ক্লাসের অজুহাতে কখনো সফর বা বৈঠক বাদ দিতে পারিনি। কারো চাপে নয়, ময়দানের তাগিদেই তা করেছি, আগামী কাল বা দ্রুত বিপ্লব সম্পন্ন করার উন্মাদনা থেকে করেছি। শিবিরের আদর্শ গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে বৃহত্তর সিলেটের প্রায় সকল থানায় এবং বহু গ্রামে বার বার সফর করতে হয়েছে।

প্রসঙ্গক্রমে একটি বিষয়উল্লেখ করছি। সিলেটের সুনামগঞ্জ শহরে কাজ শুরু করতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। এক সময় একজন সাহসী এবং ত্যাগী লোক পেলাম। তার বাড়ি মৌলবী বাজার হলেও শুধুমাত্র সংগঠনের প্রয়োজনে তিনি নিজের বাড়ি ছেড়ে সুনামগঞ্জ গিয়ে ছ’ মাস থাকতে রাজি হন। তাঁর নাম শামসুজ্জামান চৌধুরী। জানি না, এখন তিনি কোথায় আছেন এবং কী করছেন। আল্লাহ তাঁর এ ত্যাগকে কবুল করুন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর প্রথম থেকেই কলেজের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তৎপর ছিলাম। ক্লাস শেষে রুমে এসে কিছু লেখাপড়া করার চেষ্টা করতাম। চট্টগ্রাম এলাকার কোন কোন সদস্য-কর্মীর কাছে এটা বিস্ময়ের ব্যাপার ছিল। একজন দায়িত্বশীল সদস্য ক্লাস শেষে পড়ার টেবিলে এসে বসে পড়বেন, এটা দেখে তারা অভ্যস্থ ছিলেন না। এটা যে পরে আমার জন্যে কাল হবে তা ভাবতে পারিনি। চট্টগ্রাম শহরের কেউ কেউ আমার এ কষ্টলব্ধ প্রচেষ্টাকে ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করেন। আমাকে চট্টগ্রাম শহরে নেয়ার জন্যে তাদের উদ্বুদ্ধ হবার পেছনে এটাও একটা যুক্তি ছিল।

চট্টগ্রাম শহরের সভাপতি তখন ছিলেন মফিজুর রহমান। বর্তমানে অধ্যাপক মফিজুর রহমান তুখোড় বক্তা এবং শক্তিশালী সংগঠক। তাঁর ছাত্র জীবন শেষ হয়ে গেছে। তাই চট্টগ্রাম শহরের জন্যে একজন অভিজ্ঞ দায়িত্বশীল দরকার। চট্টগ্রাম শহরের সদস্যদের দৃষ্টি আমার উপর পড়ে। পরবর্তী কার্যকরী পরিষদের বৈঠকের সময় তারা কয়েকজন ঢাকায় গিয়ে হাজির হন। তাদের দাবি, চট্টগ্রাম শহরের জন্যে একজন পরিষদ সদস্য দরকার। চট্টগ্রাম শহরের এক সদস্য আমাকে বলেছেন, সুনির্দিষ্ট ভাবে তারা আমাকে-ই চট্টগ্রাম শহরে দেয়ার জন্যে কেন্দ্রীয় সভাপতির কাছে অনুরোধ করেন। পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় আসে। নিয়ম অনুযায়ী আমাকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে আমার অনুপস্থিতিতে পরিষদ সদস্যরা এ ব্যাপারে আলোচনা করেন। সিদ্ধান্ত হয়, আগামী সেশনে আমাকে চট্টগ্রাম শহরে কাজ করতে হবে।

এর পর পরই ঈদের ছুটি ছিল। পরিষদের বৈঠক শেষে আমি মা-বাবার সাথে ঈদ উদযাপনের জন্যে ঢাকা থেকে আমার গ্রামের বাড়ি সিলেটে চলে যাই। জসিম উদ্দীন সরকার সে সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি। তাঁর সাথে কথা হয়, ফেরার পথে কুমিল্লা হয়ে তাকে নিয়ে চট্টগ্রাম যাবো। এটাও ঠিক হয়, আমি যে দিন বাড়ি থেকে আসবো সেদিনই চট্টগ্রাম শহরে নির্বাচন হবে। নির্বাচনে কেন্দ্রিয় সভাপতি উপস্থিত থাকবেন।

কথামতো কুমিল্লা থেকে জসিম উদ্দীন সরকারকে নিয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছি। বাস থেকে নেমে অন্ধের মতো তার পেছনে পেছনে সভাস্থলে এসে হাজির হই। কারণ তখন চট্টগ্রাম শহরের কিছুই আমি চিনতাম না। আমাকে দেখে সালাম-কালামের পর কেন্দ্রিয় সভাপতি আমার হাতে একটি ব্যালট এগিয়ে দিয়ে বললেন, ভোট গ্রহণ শেষ। আপনার ভোট তাড়াতাড়ি দিয়ে দিন। চট্টগ্রাম শহরের সদস্য সংখ্যা ঢাকা থেকে সামান্য কম হলেও সংখ্যাটা ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। মাত্র দু চারজনকে আমি চিনতাম। তাদের মধ্যে যাকে বেশি উপযুক্ত মনে হয়েছে তার নাম ব্যালট পেপারে লেখে দিয়ে দিলাম।

একটু আড়ালে গিয়ে কেন্দ্রিয় সভাপতি ভোট গণনা করলেন। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে ঘোষণা দিলেন, সদস্যদের ভোটে ফরীদ আহমদ রেজা সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এ ঘোষণা তখন ফাঁসির রায়ের মতো আমার কানে এসে লেগেছে। আচ্ছন্নের মতো সভাপতি হিসেবে শপথ নিলাম। পরদিন সেক্রেটারী এবং অন্যান্য দায়িত্বশীল নিয়োগের উদ্দেশ্যে দিনব্যাপী সকল সদস্যের সাথে ব্যক্তিগত ভাবে কথা বললাম। সাবেক সভাপতির সাথেও পরামর্শ করলাম। সকলের পরামর্শের আলোকে নুরুল আমিন চৌধুরীকে সেক্রেটারীর দায়িত্ব দেয়া হলো। আরো কয়েকজনকে নিয়ে ৫ থেকে ৭ জনের একটি পরামর্শ সভা গঠিত হলো। পরামর্শ সভায় ছিলেন নুরুল আমিন চৌধুরী, মুহাম্মদ রফিক, আব্দুর রব, এ এইচ নুমান, আজম ওবায়েদ, মুহাম্মদ নুরুল আমিন প্রমুখ।

শাখা পুনর্গঠন এবং দায়িত্বশীল ও সাথীদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে কয়েকদিনের মধ্যেই বুঝতে পারি, চট্টগ্রাম শহরে আমার প্রয়োজন ছিল না। নেতা-কর্মীদের সাংগঠনিক যোগ্যতা, ময়দানী-সাহস, স্বতঃস্ফুর্ততা এবং আন্তরিকতা প্রশ্নের উর্ধে ছিল। শুধু কিছুটা অভাব ছিল আত্মবিশ্বাসের। এর অন্যতম কারণ ছিল প্রাক্তন সভাপতির সাথে শাখার সিনিয়র দায়িত্বশীলদের বয়স, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার পার্থক্য। মানুষের মনে এমনি পরিস্থিতি শূন্যতার একটি অবাস্তবঅনুভূতি সৃষ্টি করে। এলাকার উত্তপ্ত পরিবেশও এ জন্যে কিছুটা দায়ী ছিল। আমার মতে, দায়িত্ব অর্পিত হলে এক সময় তাদের মধ্যে প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়ে যেতো।

আমার উপর যখন চট্টগ্রাম শহরের দায়িত্ব আসে তখন সংগঠনের ১১ জন গুরুত্বপূর্ণ সাথী-সদস্য তবারক হত্যা মামলায় পলাতক আসামী। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন খবরের কাগজে ছবিসহ তাদের নাম ছাপা হয়েছে। তারা সবাই চট্টগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কলেজ হিসেবে চিহ্নিত চট্টগ্রাম কলেজে কাজ করতেন। গোটা শহরের অবস্থা থমথমে। বৈঠকাদি গোপনে করতে হয়। সদস্য-কর্মীরা সাবধানের সাথে চলাফেরা করেন । প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে। কোথাও প্রকাশ্যে শিবিরের কাজ করার পরিবেশ নেই। শাখার দৈনন্দিন কাজ পরিচালনার সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করার মতো পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং সাজানো মামলার আসামীদের জামিনে মুক্ত করা ছিল আমার প্রধান দুটো অগ্রাধিকার।

আমার সৌভাগ্য যে শাখা, বিভিন্ন থানা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাদের পেয়েছি তাদের নতুন কিছু শেখাতে হয়নি। সাংগঠনের দাবি, কাজের কৌশল, আনুগত্য ও নিয়ম-শৃঙ্খলা ইত্যাদির ব্যাপারে তারা পুরোপুরি সচেতন ছিলেন। প্রায় চার যুগ পর এখনো তাদের অনেকের চেহারা মনে আছে। অবশ্য কারো কারো নাম ভুলে গেছি। সংগঠনের প্রতি তাদের দরদ এবং আমার প্রতি তাদের ভালোবাসা ভোলার মতো নয়। নুরুল আমিন চৌধুরী, মুহাম্মদ রফিক, এ এইচ নুমান, আজম ওবায়েদ, মুহাম্মদ নুরুল আমিন, মহিউদ্দীন ফারুক প্রমুখ শাখার সাথে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন থানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন আব্দুল রব, রেদওয়ান উল্লাহ শাহেদী, নুরুল আমিন ভূঁইয়া, মনসুর আহমদ, এইচএম হূমায়ুন, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, জাহাঙ্গীর কাসেম, ফরিদুল আলম, আব্দুল গোফরান, মুহাম্মদ রফিক, হামিদ হোসেন আজাদ, ফেরদৌস আহমদ, আমিরুল ইসলাম, রেজাউল করিম এবং আরো অনেকে।

আজম ওবায়েদ ফুলকুঁড়ি ছেড়ে দিলেও তিনি-ই ছিলেন তাদের অভিভাবক। ফুলকুঁড়ির নাটক, অভিনয় এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এখনো আমাকে টানে। ঢাকার জন্যে তা ছিল অনুকরনীয়। স ম রফিক, আমিরুল ইসলাম, শাহরিয়ার এবং আরো কয়েকজন ছিলেন পাঞ্জেরী শিল্পী গোষ্ঠীর সাথে। নিজেদের লোকদের মধ্যে স ম রফিকের মতো সঙ্গীতজ্ঞ আমার নজরে পড়েনি।তারা কে কোথায় আছেন, কী করছেন সে সব খবর আমার জানা নেই। তাদের মধ্যে আজম ওবায়েদ এবং হামিদ হোসেন আজাদ পরবর্তীতে কেন্দ্রিয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। কেন্দ্রের পরামর্শে এক সময় মনসুর আহমদ কুমিল্লা শহরে পাঠিয়ে দিতে হয়, সেখানকার প্রয়োজনে। তিনি চট্টগ্রাম শহরে এক থানার দায়িত্বশীল ছিলেন।

বীর চট্টলার আরো অনেক মধুর স্মৃতি আমাকে মাঝে মধ্যে নস্টালজিক করে। যারা সাংগঠনিক কাজের বাইরে আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, চা পান এবং পান চিবানো, শপিং সেন্টারে কেনাকাটা, ব্যক্তিগত সুখ-অসুখের গল্প, প্রাতঃভ্রমণ এবং সাঁতার কাটা ইত্যাদি কাজে সঙ্গ দিয়েছেন তাদের অনেকের সাথে আলাদা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বিদেশী অতিথি নিয়ে কারে চড়ে চট্টলার নান্দনিক প্রকৃতি উপভোগ করেছি। চট্টগ্রাম শহর থেকে অনেক দূরে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার গিয়েছি। জাহাঙ্গীর কাসেমদের কক্সবাজারের বাড়িতে রূপচাঁদা মাছ আর গলদা চিংড়ি দিয়ে ভুরি ভোজন আর গভীর রাত পর্যন্ত ছাত্র শিবিরের কর্মীদের সাথে আড্ডার কথা কি আমি ভুলতে পারি? আজ সুদূর লন্ডনে বসে চট্টগ্রামের রূপচাঁদা, চিরিং, কুড়াল, চিংড়ি প্রভৃতি হিমায়িত মাছ কিনে আনি, কখনো ক্রয় করি সুটকি। তখন সে সব স্মৃতি আমাকে অনেক সময় আবেগাপ্লুত করে তুলে।

আমার বয়স এবং অভিজ্ঞতা থাকলেও চট্টগ্রামে আমি যাদের সাথে কাজ করেছি তারা সবাই ছিলেন টগবগে তরুণ, উজ্জ্বল বুদ্ধিদীপ্ত ও সংগঠনের প্রতি নিবেদিত প্রাণ। কাজ করতে গিয়ে তাদের মতামতকে আমি প্রাধান্য দিয়েছি, বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের জন্যে সামনে ঠেলে দিয়েছি। কাজ তারাই করেছেন, আমি পেছন থেকে তাদের সাহস এবং উৎসাহ দিয়েছি। যেখানে আটকে গেছেন সেখানে সাহায্য করেছি। আমার টার্গেট ছিল, তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করা যাতে এক বছর পর আমি চলে গেলে আরেকজনকে ধার করে আনার প্রয়োজন না হয়। আমার এটাও সৌভাগ্য যে সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মফিজুর রহমান এবং আমি শুরুর দিকে একই মেসে থেকেছি। এর ফলে বিভিন্ন ব্যাপারে সব সময় তাঁর সাথে পরামর্শ করার সুযোগ পেয়েছি।কিছুদিন পর তিনি অন্য এক বাড়িতে উঠে গেলেও যখনই প্রয়োজন পড়েছে তিনি পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর অনলবর্ষী বক্তৃতা কর্মীদের সতেজ রেখেছে এবং তাঁর কুরআনী জ্ঞান আমাদের সব সময় প্রেরণা যুগিয়েছে।

আমরা অনেকে শহরে কাজ করলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। এ জন্যে কারণে-অকারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে সহযোগিতা করার প্রয়োজন পড়তো। একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট-কারণে এক সাথে প্রায় চল্লিশজন কর্মীকে জেলে যেতে হয়। অল্পের জন্যে আমি তখন গ্রেফতারী এড়াতে সক্ষম হই। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সেক্রেটারী ছিলেন যথাক্রমে জসিম উদ্দীন সরকার এবং আব্দুল গাফফার। জেলার কাজের সাথেও সংযোগ রাখতে হতো। উত্তর জেলার সভাপতি ছিলেন নুরুল আবসার এবং দক্ষিণ জেলায় ছিলেন মুহাম্মদ শাসুল ইসলাম। মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম পরে এক সময় কেন্দ্রিয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

তিন.

আমার শিবির-জীবনের মূলনীতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শুধু এটা বললে কথা পরিস্কার হবে না যে আমার অবস্থান ছিল সন্ত্রাস এবং সহিংসতার বিপক্ষে। সহিংসতা করবো না, ব্যাপারটা এখানেই শেষ নয়। আমার নীতি ছিল সহিংসতার পরিবেশ যাতে তৈরি না হয় সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা। পরিবেশ শান্ত রাখার প্রয়োজনে আমি যে কোন প্রকার ছাড় দিতে সব সময় প্রস্তুত থেকেছি। আমি সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় দায়িত্ব পালনের সময় একই মূলনীতি মেনে চলতে সচেষ্ট থেকেছি।

দেশের যে কোন স্থানে শিবিরের সাথে মারামারি হলে সারা দেশে এর প্রতিক্রিয়া হতো। সিলেটে থাকতে ছাত্রলীগ, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রদল এবং ছাত্র ইউনিয়নের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ ও অনেকের সাথে সুসম্পর্ক ছিল। এক-ই ইয়ারের ছাত্রদের সাথে ছাত্রাবাস বা কলেজ ক্যান্টিনে নিয়মিত আডডা হতো। বয়সে যারা ছোট তাদের অন্তরিক ভাবে আদর করতাম এবং আমার প্রতি তাদের আচরণ দেখে বুঝতাম তারা তা অনুভব করে। সে সময়ের কারো সাথে এখনো দেখা হলে আমাকে সম্মান দেখাতে তারা ত্রুটি করে না।

এমসি কলেজ হোস্টেলে মোট ছয়টি ব্লক। অবসর পেলে নিছক ছাত্রদের সাথে দেখা করার জন্যে বিভিন্ন ব্লকে ঘুরে বেড়াতাম।রুমে রুমে ঢুকে তাদের কুশলাদি জিজ্ঞেস করতাম। একটি ব্লক ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছাত্রদের জন্য নির্দিষ্টি। সে ব্লকেও আমার অবাধ যাতায়াত ছিল। সে ব্লকের একজন ছাত্র দাবা খেলায় খুব পারদর্শী ছিলেন। তার রুমে মাঝে মধ্যে দাবা খেলার আসর বসতো। আমি সেখানে গিয়ে দাবা খেলায় অংশ নিতাম। ফিফথ ব্লকের করিডোরে দাবা এবং ক্যারম খেলার আসর জমতো। সেখানে ছাত্রলীগের কলেজ সভাপতির সাথে আমি অনেক বার দাবা খেলেছি।

একটা ঘটনা এখানে বলছি। একবার চট্টগ্রামে শিবিরের সাথে ছাত্রলীগের মারামারি হয়েছে। এমসি কলেজে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা ছাত্রাবাসের ক্যান্টিনে বসে তা নিয়ে আলোচনা করছেন। এমন সময় আমি সেখানে গিয়ে উপস্থিত হই। আমাকে দেখে তারা চোখ টিপে অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। আমি তাদের টেবিলে গিয়ে বসে কুশলাদি জিজ্ঞেস করি। হঠাৎ তাদের একজন আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘কিছু মনে না করলে রেজা ভাইকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই।’আমি সম্মতি দিলে তিনি বলেন, ‘আপনি জানেন, চট্টগ্রামে আমাদের সাথে আপনাদের মারামারি হয়েছে। সেখানে আপনাদের শক্তি বেশি, তাই আমরা কিছু করতে পারিনি। কিন্তু সিলেটে আমরা আপনাদের চেয়ে শক্তিশালী। সিলেটে আপনাদের সাথে মারামারি হলে আপনি কী সেখানে থাকবেন?’

আমি মুচকি হেসে বললাম, ‘অবশ্যই থাকবো। আপনি তো জানেন আমি শিবিরের সভাপতি। শিবিরের সাথে মারামারি হলে আমি সামনের কাতারে থাকবো।’ আমার কথা শুনে তিনি ঢোক গিলে কিছুটা সময় নেন। তারপর বলেন, ‘আপনি সামনে থাকলে আমরা আপনার সাথে কী ভাবে মারামারি করবো? বললাম, ‘তা হলে মারামারি করবেন না। মারামারি কোন সমাধান নয়। আসুন সবাই মিলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাজ করি। শান্তিপূর্ণ ভাবে সহাবস্থানের নীতি মেনে চলি।’

আরেক বারের ঘটনা। আমি শহর থেকে দেরি করে ছাত্রাবাসে ফিরেছি। এসেই দেখি ছাত্রাবাসের এক জায়গায় ছাত্রদের জটলা এবং চিৎকার। আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত হই। আমাকে দেখে ছাত্রশিবিরের এক কর্মী আমাকে বলেন, ‘আমাদের সাথে ছাত্রলীগের ঝগড়া চলছে। আপনি আমাদের সবাইকে এ দিকে আসতে বলুন। যে কোন সময় মারামারি লেগে যেতে পারে।’ আমি সাথে সাথে রাগতঃ স্বরে বললাম, ‘চুপ, একদম চুপ। জাস্ট ফলো মি।’ কাছে গিয়ে দেখলাম, শিবিরের এবং ছাত্রলীগের কয়েকজন অত্যন্ত উত্তেজিত অবস্থায় মুখোমুখি হয়ে আছে। আমি দৌড়ে গিয়ে তাদের মাঝখানে দাঁড়ালাম। শিবিরের লোকদের শান্ত থাকার ইঙ্গিত দিয়ে ছাত্রলীগের সবচেয়ে উত্তেজিত কর্মীর পিঠে হাত দিয়ে বললাম, ‘আমাকে বলুন কী হয়েছে। শিবিরের কেউ অন্যায় করলে এর যথাযোগ্য প্রতিকার আমি করবো।’ ছাত্রলীগের এ কর্মীকে সবাই ভয় করতো। কিন্তু আমার সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল।

তিনি আমার কথা শুনে কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকলেন। চেয়ে দেখলাম তার চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে। সেটা উপেক্ষা করে তাঁকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করলাম। তখন আমার হাত তাঁর কোমরে গুঁজে রাখা লম্বা ছোরার উপর গিয়ে পড়ে। সাথে সাথে হাত সরিয়ে নেই। মনে মনে কিছুটা ভীত হলেও ছোরা-প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাই। তাকে বলি,‘বললাম তো, আমাকে বলুন কী হয়েছে। শিবিরের কেউ কোন অন্যায় করলে এর বিচার আমি করবো।’ এ সময় ছাত্রলীগের অন্যান্য যারা ছিলেন তাদের একজন এগিয়ে এসে বলেন, ‘ঠিক আছে। রেজা ভাই যখন দায়িত্ব নিচ্ছেন তখন ব্যাপারটা তার হাতে ছেড়ে দাও।’

পরে হোস্টেল সুপারের সহযোগিতায় এ বিরোধ আপোসে শেষ হয়। বিবাদমান দু জন হাত মিলিয়ে ব্যাপারটা ভুলে যাবেন বলে অঙ্গীকার করেন। এর পর আমি সিলেট থাকতে ছাত্রলীগের সাথে এমসি কলেজে আর কোন জটিলতা সৃষ্টি হয়নি।

এ ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের এমন একজনের সাথে অনেক বছর পর আমার দেখা হয়। তার সাথেও আমার ভালো সম্পর্ক ছিল।একান্ত আলাপচারিতার এক পর্যায়ে তিনি আমাকে জানান,সে দিন তাদের ছাত্র শিবিরের সাথে মারামারি করার সিদ্ধান্ত ছিল। কয়েক দিন আগে শহরে বসে এর পরিকল্পনা হয়। আক্রমণের অজুহাত তারা নিজেরাই তৈরি করবেন বলে ঠিক করেন। পরিকল্পনা অনুসারে সবই হয়েছে। হঠাৎ করে ঘটনাস্থলে আমি উপস্থিত হবার কারণে তাদের সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এখানে শিবির এবং ছাত্রলীগের যাদের কথা বললাম তাদের নাম আমার এখনো মনে আছে। জটিলতা এড়াবার জন্যে সবার নাম উহ্য রেখেছি।

আরেকটি ঘটনা বলা দরকার। এটাও সিলেটের।

ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারী জেনারেল এনামুল হক মঞ্জু সিলেট সফরে আসবেন। তাঁকে নিয়ে এমসি কলেজে সাধারণ সভার আয়োজন করবো। যথা নিয়মে কলেজ অডিটোরিয়ামে সভা করার জন্যে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছি। কলেজের প্রবেশ পথ, বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির দেয়াল, ক্যান্টিন – সর্বত্র পোস্টার লাগানো হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে লিফলেট বিলি চলছে।

আগের দিন রাতে খবর পেলাম, জাসদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রিয় সেক্রেটারী সিলেট আসছেন। তার আগমন উপলক্ষে জাসদ ছাত্রলীগ একই দিন একই স্থানে সাধারণ সভা করবে বলে ঘোষণা করেছে। খবরটা শোনে অবাক হলাম। খুব বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হলাম। শিবির সাধারণ সভা করবে, এটা কলেজের কারো অজানা নয়। অগত্যা একই দিনে সভা করতে চাইলে তারা কলেজের অন্য জায়গায় করতে পারে। এমসি কলেজে যারা জাসদ ছাত্রলীগের নেতা তাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। তবে তাদের কারো বাসা আমি চিনি না যে তাদের সাথে যোগাযোগ করবো। যোগাযোগ করলে একটা আপোস-ফরমুলা হয়তো বের করা যেতো।এখনকার মতো তখন মোবাইল ফোনের সুবিধা ছিল না। গাড়ি বা মোটর বাইক ছিল না। দায়িত্বশীলদের কারো বাসায় টেলিফোন নেই।এ সময় আমি একটি মেসে থাকতাম। মেসে বা মেসের কাছাকাছি শিবিরের যারা থাকেন তারা ছাড়া কারো সাথে পরামর্শ করা সম্ভব ছিল না। পরামর্শ করে দেখলাম, সময়ের আগে সভাস্থল দখল ছাড়া আমাদের সামনে অন্য কোন বিকল্প নেই। দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে কোন রকম রাত কাটালাম।

ফজরের পর প্রথমে বিভিন্ন এলাকার জনশক্তির কাছে খবর পাঠালাম, সময়ের আগে যেন তারা সভাস্থলে গিয়ে হাজির হন। তবে যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার জন্যে তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। একজনকে খবর দিলাম, তিনি যেন সেক্রেটারী জেনারেলকে গাড়িতে করে নিয়ে আসার সময় সাবধানতার সাথে আসেন।পরিস্থিতি খারাপ হলে তাকে নিয়ে আসার দরকার নেই। চলে এলেও তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে।

পরিবর্তিত অবস্থার প্রেক্ষিতে আরো কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করে জাসদ ছাত্রলীগের এক নেতার সাথে দেখা করতে বের হলাম। এমসি কলেজের পাশে অবস্থিত ইন্টারমিডিয়েট কলেজ ছাত্র সংসদের তিনি ভিপি ছিলেন। তিনি কোথায় থাকতেন তা আমার জানা ছিল। সব কিছু শোনে তিনি বললেন, এমসি কলেজের জাসদ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সঠিক কাজ করেনি। সাথে সাথে এটাও জানালেন, তার সেখানে করার কিছু নেই। বললেও লাভ হবে না, তারা তার কথা শুনবে না।

এমসি কলেজ অডিটোরিয়ামে আমি যখন পৌঁছি তখন হলরুম কানায় কানায় ভরে গেছে। জাসদ ছাত্রলীগের কয়েকজন স্টেজ দখল করে আছেন। হলরুমের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেখানে আমাদের কর্মীরা সংখ্যায় বেশি। চোখেমুখে টান টান উত্তেজনা থাকলেও তারা ভীত-সন্ত্রস্ত নয়। একপাশে জাসদ ছাত্রলীগের কিছু কর্মী বসেছেন। আমাকে দেখে শিবির-কর্মীরা উচ্চকন্ঠে শ্লোগান দেয়া শুরু করেন। হলে ঢুকে আমি সরাসরি স্টেজে উঠে পড়লাম। স্টেজে দাঁড়ানো জাসদ ছাত্রলীগের কে একজন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘রেজা ভাই চলে এসেছেন। আপনারা সবাই শান্ত হোন। তিনি আমাদের বড় ভাই। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা আমরা সবাই মেনে নেবো। তার কথা আপনারা শুনুন।’

আমি কথা বলার আগে কয়েক সেকেন্ড সময় নিলাম। নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম, কী বলবো? আমি কি বলবো, আমি কিছু বলতে হলে আমাদের লোকদের সাথে পরামর্শ করার সুযোগ দিতে হবে? না কি বলবো, এখানে সাধারণ সভার ঘোষণা আমরা আগে দিয়েছি এবং অনুমতি নিয়েছি। সুতরাং জাসদ ছাত্রলীগের সবাই হল ছেড়ে চলে যান। আমি বললেই কি তারা চলে যাবে? না গেলে সংঘর্ষ লেগে যাবে। লোকবল আমাদের বেশি হলেও এর তাৎক্ষণিক পরিণতি হবে, আজকে আমরা কলেজে সভা করতে পারবো না। কী আমি বলবো? দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হলো।

ভেতরে ভেতরে খুব উত্তেজনা থাকলেও আমি খুব শান্ত ভাবে কথা বলা শুরু করলাম। বললাম, ‘জাসদ ছাত্রলীগের ভাইয়েরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার আমার হাতে ছেড়ে দিয়ে আমাকে সম্মানিত করেছেন, এ জন্যে তাদের ধন্যবাদ। ছাত্র শিবির এখানে সভা করবে, এ ঘোষণা অনেক আগে দিয়েছে। সুতরাং নীতিগতভাবে শিবির এখানে সভা করার বৈধ অধিকারী। যেহেতু এ ব্যাপারে সৃষ্ট বিরোধে সিদ্ধান্ত প্রদানের দায়িত্ব শিবিরের সভাপতি হিসেবে আমাকে প্রদান করা হয়েছে, তাই আমি শিবিরের বৈধ এ অধিকার জাসদ ছাত্রলীগকে প্রদান করছি। ঘোষণা করছি, আমাদের সভা আমরা পামতলায় খোলা মাঠে করবো। শিবিরের সকল কর্মীকে আমি এখনই হল ছেড়ে দিয়ে পামতলায় গিয়ে জমায়েত হতে অনুরোধ করছি।’

আমার ঘোষণাকে উপস্থিত সবাই মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে স্বাগতঃ জানালো। তবে শিবিরের কয়েকজন কর্মীর মুখ দেখে বুঝেছি, তারা আমার ঘোষণায় সন্তুষ্ট হয়নি।যারা এমসি কলেজে যাননি তাদের জন্যে বলছি, পামতলা এমসি কলেজের অভ্যন্তরে একটি খোলা মাঠে অবস্থিত। এখানে সাধারণ সভা করার অর্থ হলো কলেজের সকল ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকের চোখের সামনে তা সম্পন্ন করা।বৃষ্টি না হলে এবং পরিবেশ অনুকুল থাকলে সাধারণ সভার জন্যে এর চেয়ে উপযুক্ত স্থান কলেজে দ্বিতীয়টি আর নেই।

পামতলায় নিরুদ্বেগ চিত্তে সাধারণ সভা শুরু করলাম। হামলা বা কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার শঙ্কা আমাদের মনে তখন ছিল না।প্রথমে স্থানীয় কয়েকজন বক্তৃতা দেয়ার পর প্রধান অতিথি এনামুল হক মঞ্জু বক্তৃতা শুরু করেন। তার বক্তৃতার সময় আমি চারিদিকে বার বার তাকিয়েছি। আমি দেখেছি রাস্তায়, টিলার উপর, অফিস বিল্ডিং-এর বারান্দা এবং আর্টস বিল্ডিং-এর পাশে দাঁড়িয়ে অনেকে তার বক্তৃতা শুনছে। প্রায় ঘন্টা খানেক তিনি বক্তৃতা করেন। এক সময় সাধারণ সভা শেষ হলো। আমার মনে হয় শিবিরের খুব কম সাধারণসভা এ রকম উদ্বেগহীন ভাবে আমার জীবনে সমাপ্ত করতে পেরেছি।

বিকালে ছিল সেক্রেটারী জেনারেলের উপস্থিতিতে সদস্য সভা। সেখানে অন্যান্য বিষয়ের সাথে সাধারণ সভার পর্যালোচনা ছিল অন্যতম ইস্যু। সভায় তীব্রভাবে আমার সমালোচনা শুরু হলো। অনুষ্ঠান সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয়েছে, হলরুমের তুলনায় খোলামাঠ সাধারণ সভার জন্যে অধিকতর উপযুক্ত ছিল, এনামুল হক মঞ্জু দীর্ঘসময় ব্যাপী শিবিরের উদ্দেশ্য-লক্ষ্য এবং কার্যক্রম ব্যাখ্যা করার সুযোগ পেয়েছেন এবং উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক। এ সব বিষয়ে কারো কোন প্রশ্ন ছিল না। আমি কেন কারো সাথে পরামর্শ না করে জাসদ ছাত্রলীগকে অডিটোরিয়াম ছেড়ে দিলাম, এটাই ছিল তাদের সকলের প্রশ্ন।

আমি সবাইকে কথা বলার সুযোগ দিয়ে কানভরে তাদের কথা শুনলাম। তারপর বললাম, ‘আমি স্বীকার করি, আপনাদের সাথে পরামর্শ করা আমার উচিত ছিল। এটা আমার ভুল হয়েছে। এ জন্যে আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। তবে আপনাদের বোঝা দরকার, তখন কারো সাথে পরামর্শ করার পরিবেশ ছিল না। আর সংঘর্ষ এড়ানোর জন্যে আমি এটা করেছি। কারণ সংঘর্ষ হলে আমরা সাধারণ সভা করতে পারবো না, ব্যাপারটা শুধু তা নয়। সংঘর্ষের ক্ষয়-ক্ষতি বাদ দিলেও অন্ততঃ কয়েক মাসের জন্যে এমসি কলেজে কাজের পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে যেতো।’

আমি কথা বলার পর এ প্রসঙ্গে সদস্যদের কেউ আর কোন প্রশ্ন তুলেননি।ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়ে যায়

বিষয়: বিবিধ

১৬৯৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

354694
২০ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ০৮:৩২
সাদাচোখে লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।
লম্বা লিখা। ধৈর্য ধরে পড়লাম। ওভারঅল ভাল লেগেছে - লিখায় ওনার যে আচার আচরন, কাজ কর্ম ও ভাষার প্রয়োগ পুরোটাই স্ট্যান্ডার্ড, প্রশিক্ষিত একজন মানুষের মত মনে হয়েছে। এ পারফেক্ট ম্যান অব শিবির লিডারশিপ। আমার সালাম।

ওনার শান্তিপ্রিয়তা সংশ্লিষ্ট ভূমিকার জন্য আজকের অশান্ত বিশ্বের অনেকের কাছেই ওনাকে নোবেল মানুষ বলে মনে হতে পারে - ঠিক যেমন স্যেকুলার, নাস্তিক, ক্লুলেস পশ্চিমা অর্ডিনারী মানুষের কাছে গান্ধী, মার্টিন লুথার কিং কিংবা নেলসন মেন্ডেলাকে আদর্শ মানুষ মনে করা হয়। অহিংস, শান্তিবাদী প্রাকটিস গান্ধির মডেল এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু নবী রাসুল সঃ এর দের ওভারঅল জীবনে, শিক্ষায়, উদাহরন সৃষ্টিতে - অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, ব্যাভিচার, হানাহানি, নির্যাতন, নিষ্পেষন, জুলুম, ফ্যাসাদ ইত্যাদির বিপরীতে অহিংস, শান্তিবাদীর কোন ভূমিকা ছিলনা। সো আমরা দেখি মুসা আঃ আদেশ করছেন বনী ইসরাইলকে পবিত্র নগরীর দখল নিতে। শান্তিবাদীতা (ফাইটিং এ অনীহা) দেখানোতে ৪০ বছর ঘুরে মরতে হয়েছে, রাসুল সঃ কে দেখি মক্কা দখলে নিতে, ওসমান রাঃ মৃত্যু গুজবকে ফেইস করতে বাইয়াহ রেদওয়ান এর আহ্বান জানাতে, খলিফাহ দের দেখি বাইজাইনটাইন ও পারস্যে অভিযান চালাতে। এর কোনটিই এ জণ্য ছিল না যে ওনারা অশান্তি নিশ্চিত করতে চেয়েছেন, মারামারি করতে চেয়েছেন - র‍্যাদার এটাই সত্য যে ওনারা শান্তি স্থাপন করতে চেয়েছে, জুলুম দূরীভূত করতে চেয়েছেন এবং সব চেয়ে বড় কথা আল্লাহর শরীয়াহ, আল্লাহর মর্যাদা সমুন্নত রাখতে চেয়েছেন।

রেজা ভাইরা যেমন জাসদ ছাত্রলীগকে এম সি কলেজের রুম ছেড়ে দিয়েছেন, অধিকার রক্ষা কিংবা জাস্টিস রক্ষা করতে চান নি, বিচার করতে চান নি, শান্তি রক্ষা করতে চেয়েছেন - বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত এর নেতৃত্ব ও অনুরূপ খালেদা-হাসিনাকে আসন ও সুবিধাদি ছেড়ে দিয়েছেন।

আজ এক কথায় এটা বলা না গেলেও, কঠিন শোনালেও অনেক টা এভাবে বলা যায় - ঠিক সে জন্যই হয়তো জামায়াতে ইসলামীকে, শিবিরকে দেখতে হচ্ছে নিজেদের নেতা কর্মী সম্পূর্ন নিরাপরাধী হওয়া স্বত্তেও অমন করে জেল, জরিমানা ও ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলতে, কোন ঠাসা হতে - কারন তারা লিটারেলী অধুনা কুফ্ফার, মুশরিক, মুরতাদ, ইসলাম বিদ্বেষী, লুটেরা, অপরাধী, ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী, অত্যাচারীদের সামনে আল্লাহ প্রদত্ত নিজেদের অধিকারকে কোরান সুন্নাহ মোতাবেক রক্ষা না করে মহাত্মা গান্ধির প্রদর্শিত পথে, মোহাম্মদ সঃ এর আংশিক মক্কী দর্শন দিয়ে রক্ষা করতে চয়েছেন - স্বভাবতঃই সলামের দেওয়া অধিকার ও প্রিভেনশান মেকানিজমকে ওনারা কনসিডার করতে ব্যার্থ হয়েছেন।

আল্লাহ ভাল জানেন।
২১ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০১:০৭
294581
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : পড়ার জন্য ধন্যবাদ
354763
২০ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১০:১৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২১ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০১:০৮
294582
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : পড়ার জন্য ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File