ইসলামী রাষ্ট্রবিপ্লব জন্য রোড ম্যাপের গুরুত্ব:

লিখেছেন লিখেছেন মনসুর আহামেদ ১০ মার্চ, ২০১৩, ১২:১১:১০ রাত

ইসলামী রাষ্ট্রবিপ্লব

ইসলামী রাষ্ট্রবিপ্লবের কাজ কোত্থেকে শুরু হবে, কি হবে শেষ ঠিকানা, মাঝের মাইল ফলকগুলোই বা কি হবে - এগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। যে কোন পথযাত্রার ন্যায় আল্লাহর পথে যাত্রাতেও রোডম্যাপটি তাই অপরিহার্য। নইলে বিভ্রান্তি আসে পথচলায়, তখন ব্যর্থ হয় জীবনের সকল মেহনত ও ত্যাগ-তিতীক্ষা। সেটি পথ না চিনে গাড়ী চালানোর মত। রোডম্যাপে জানা না থাকলে প্রকান্ড বিচ্যুতিও ধরা পড়ে না। কারণ, বিচ্যুতির বিচারে তখন কোন রেফারেন্স পয়েন্ট থাকে না। আল্লাহর পথে নিজের অবস্থানটি কোথায়, গন্তব্যস্থল থেকেই বা কতদূরে, সেটিই বা তখন জানা যায় কি করে? ইসলামে সে রোডম্যাপটি হলো পবিত্র কোরআনে বর্ণীত সিরাতুল মোস্তাকীম। তাই প্রয়োজন নাই এটি আবিস্কারের, বরং প্রয়োজন হলো সেটা জানা এবং পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ। ঈমানদার হওয়ার মূল শর্তই হলো এটি।

মুসলমানের জীবনে সে রোডম্যাপের অনুসরণ শুরু হয় জ্ঞানার্জনের মধ্য দিয়ে। কোরআনের প্রথম আয়াত তাই নামায-রোযার হুকুম নয়, সেটি “ইকরা” অর্থাৎ পড়। এভাবে ফরয করা হয়েছে কোরআনের জ্ঞানার্জন। ইসলামের পথে চলতে হলে এই ফরযটি প্রথমে পালন করতে হয়। জ্ঞানার্জনের মধ্য দিয়েই ঈমানদার জানতে পারে আল্লাহপ্রদত্ত রোডম্যাপ তথা সিরাতুল মোস্তাকিম। সে জ্ঞানার্জনটি যথার্থ না হলে সিরাতুল মোস্তাকিমটি চেনা যেমন অসম্ভব, তেমনি সে পথে চলাও অসম্ভব। ফলে অসম্ভব হয় মুসলমান হওয়া। তাই রোডম্যাপটির অনুসরণে শুরুর দিকটিতে তথা জ্ঞানার্জনের পর্বে কমতি বা ভ্রান্তি হলে বাঁকি পথচলাও সঠিক হয়না। কোন পথটি সঠিক আর কোনটি বিচ্যুতির- সেটুকুও তখন জানা হয় না। পর্বত-সমান বিচ্যুতির পরও অজ্ঞ-ব্যক্তি তখন ভাবে, সে সঠিক পথেই আছে। বাংলাদেশের মত দেশে সূদখোর, ঘুষখোর, দুর্বৃত্ত সন্ত্রাসী, বেপর্দা নারী ও সেকুলার রাজনীতির নেতা-কর্মীরা নিজেদের মুসলমান হওয়া নিয়ে যেরূপ গর্ব করে -তা তো এরূপ অজ্ঞতা নিয়েই। আর এ অজ্ঞতার ফলে ব্যক্তির জীবনে যেটি বাড়ে সেটি সীমাহীন পথভ্রষ্টতা। ইসলামের প্রতিষ্ঠার লড়াই এবং সে লড়াইয়ে প্রাণদান -এজন্যই এসব ব্যাক্তির কাছে সন্ত্রাস মনে হয়।

রোডম্যাপ নিছক তেলোওয়াতের বিষয় নয়। মুখস্থ করার বিষয়ও নয়। এটি বুঝা ও অনুসরণের বিষয়। ঘরে তাই রোডম্যাপ তথা কোরআন থাকলেই চলে না, সেটি বুঝা এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণের সামর্থও থাকা চাই। না বুঝে তেলওয়াত বা মুখস্ত করায় সেটি হয় না। বাংলাদেশে তেলাওয়াতকারির সংখ্যা তো লক্ষ লক্ষ। কিন্তু কাজের কাজ কি আদৌ হয়েছে? ক’জনের জীবনে মিলেছে সিরাতুল মোস্তাকিমের সন্ধান? সিরাতুল মোস্তাকিমে চললে সে পথে শুধু নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত আসে না। আসে নির্যাতন, আসে হিযরত, আসে জিহাদ। আসে ইসলামের প্রতিষ্ঠার লড়াই, আসে সে লড়াইয়ে অর্থদান, শ্রমদান ও প্রাণদান। তখন রাষ্ট্রজুড়ে আসে শরিয়তের প্রতিষ্ঠাও। আসে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির প্লাবন। নবীজী (সাঃ)র যামানায় যারাই সে পথে চলেছিলেন তাদের সবাইকে বহু ত্যাগ ও বহু নির্যাতন সয়ে এ ধাপগুলো অতিক্রম করতে হয়েছিল। সিরাতুল মোস্তাকিমের পথে এগুলোই হলো অনিবার্য মাইলফলক। যে পথে এ মাইলফলকগুলো নাই, সে পথটি আর যাই হোক সিরাতুল মোস্তাকিম নয়। ইসলামী দলের নেতা-কর্মী, পীর-উলামা ও তাদের মুরীদ এবং তাবলীগ জামাতের অনুসারীদের কে কতটা সিরাতুল মোস্তাকিম অনুসরণ করছে তা বুঝার উপায় তো তাদের জীবনের সাথে এ রোডম্যাপটি মিলিয়ে দেখা। তাদের মুখের বুলী নয়। নবীজী (সাঃ)র আমলে এ রোডম্যাপটি শুরু দিকটার অনুসরণ হয়েছিল অতি নিষ্ঠার সাথে। ফলে তাঁরা বাঁকি পথটাও সঠিক ভাবে চলতে পেরেছিলেন। শুরুর কাজটি হয়েছিল দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে। হিজরত, ক্ষমতা দখল, জিহাদ, রাষ্ট্রের বুকে ইসলামের বিজয়, ইসলামী সভ্যতার নির্মাণ এবং বিশ্বশক্তিরূপে মুসলমানের উত্থান -এ ধাপগুলো এসেছিল পরে। ইসলামী সভ্যতার মূল বুনিয়াদ নির্মিত হয়েছিল মূলতঃ সে সময়। কিন্তু বাংলাদেশের মত দেশে রোডম্যাপের শুরুর দিকটার অনুসরণ পূর্ণভাবে ও সঠিক ভাবে হয়নি। ফলে জানা বা বুঝা হয়নি খোদ রোডম্যাপটিই। সেটির অনুসরণ তো পরের কথা। আজ থেকে প্রায় ৮ শত বছর আগে বাংলাদেশ যেসব মুসলমানদের হাতে বিজিত হয়েছে তাদের মূল প্রায়োরিটি ছিল রাজ্য জয়, দ্বীনের প্রচার নয়। ছিল না ইসলামের জ্ঞানদান। ফলে আরবী ভাষার চর্চা যেমন বাড়েনি তেমনি বাড়েনি কোরআন চর্চা। যা বেড়েছে তা হলো অর্থ না বুঝে কোরআন তেলাওয়াত। ফলে ইসলামে অজ্ঞতা থেকে গেছে শুরু থেকেই।

তথ্য সূএে:http://www.drfirozmahboobkamal.com/2011-02-26-19-32-39/718-road-map-for-islamic-revolution-.html

বিষয়: বিবিধ

১০৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File