রক্তের শক্তি। ফিরোজ মাহবুব কামাল.

লিখেছেন লিখেছেন মনসুর আহামেদ ০১ মার্চ, ২০১৩, ০৭:৫৬:০৫ সকাল

শহীদদের রক্তের বলেই সম্পদের দরিদ্র আফগানিস্তান আজ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। দেশটির জনসংখ্যা বাংলাদেশের ৬ ভাগের একভাগের এক ভাগেরও কম। দেশটির মোজাহিদগণ সোভিয়েত রাশিয়ার মত একটি বিশ্বশক্তিকে শোচনীয় ভাবে পরাজিত করেছে। আজ পরাজিত করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ৪০টি দেশের সম্মিলিত ন্যাটো বাহিনীকে। সমগ্র মুসলিম ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী রক্ত দিয়েছিল আরবের মুসলমানগণ। ফলে তাদের সাহায্যে আল্লাহর ফেরেশতাগও সবচেয়ে বেশী সংখ্যায় সে আরব ভূমিতে নেমে এসেছেন। ফলে অন্যদের পক্ষে তাদের পরাজিত করা সম্ভব হয়নি। তাদের রক্তের বদৌলতেই পারস্য ও রোমান –এ উভয় সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে মরুবাসী দরিদ্র মুসলমানগণ আবির্ভুত হয়েছেন সবচেয়ে শক্তিশালী বিশ্বশক্তি রূপে। এটিই ইসলামের ইতিহাস। সে ইতিহাস থেকে বাংলাদেশের মুসলমানদের প্রতিপদে শিক্ষা নিতে হবে। কারণ বাংলার মুসলমানদের সামনে বিশ্বের বুকে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি রূপে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার যেমন এছাড়া ভিন্ন পথ নেই, তেমনি ভিন্ন উপায় নেই নিজ দেশের স্বাধীনতা বাঁচানোর।

এতকাল বাংলাদেশে মসজিদ মাদ্রাসা বিপুল ভাবে বেড়েছে,কিন্তু বাড়েনি আল্লাহর রাস্তায় শহীদের সংখ্যা। ফলে জনসংখ্যা বাড়লেও শক্তি বাড়েনি। প্রচণ্ড অপূর্ণতা রয়ে গেছে দেশবাসীর ঈমানে। সে ভয়ানক অপূর্ণতা নিয়েই দেশটি বিশ্বের তাবত দেশকে হারিয়ে দুর্নীতিতে বিশ্বে ৫ বার প্রথম হয়েছে। সে ঈমানী অপূর্ণতা নিয়ে মানুষ আওয়ামী লীগের মত ইসলামের চিহ্নিত শত্রুকে ভোট দিবে এবং তার নেতাকে বাংলার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ রূপে গণ্য করবে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? সে ঈমান-শুণ্যতার কারণে ১৭৫৭ সালে সামান্য কয়েক হাজার ব্রিটিশ সৈন্যের আক্রমণের মুখে বাংলার ৫০ হাজার সৈন্য একটি গুলিও ছুড়েনি। কোনরূপ যুদ্ধই করেনি। সবদোষ কি শুধু মিরজাফরের ঘাড়ে চাপানো যায়? বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার মুসলিম রাজধানী মুর্শিদাবাদ দখলের পর সেখানে ইংরেজ বাহিনী যখন বিজয় মিছিল করছিল,শহরের মুসলমানগণ তখন শত্রুর সে বিজয় মিছিলও আনন্দচিত্তে উপভোগ করেছিল। যেন রথ যাত্রা দেখছিল। তাদের যে মহাক্ষতিটা হয়ে গেল,সেটুকু বোঝার সামর্থও তাদের ছিল না। ঈমানের একই রূপ অপূর্ণতার কারণে বাঙালী মুসলমানেরা একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় ভারতীয় কাফের বাহিনীর বিজয়কে নিজেদের বিজয় মনে করে উৎসব করেছে। এবং প্রতিবছরই সেটি করে থাকে। যেন পাকিস্তান বাহিনীকে তারা নিজেরা পরাজিত করেছিল। মিথ্যাচার আর কাকে বলে। অথচ সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটনা ঘটেছিল আফগানিস্তানে ও ইরানে। ইংরেজ বাহিনী দুটি দেশেই বিপুল প্রস্তুতি নিয়ে হামলা করেছিল। কিন্তু দুটি দেশের সাধারণ জনগণ হাতের কাছে যা ছিল তাদিয়ে ইংরেজ বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ফলে তাদের রণেভঙ্গ দিতে হয়েছে। কাবুলের উপর প্রথমবারের হামলায় সমগ্র ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর মাঝে মাত্র একজন সৈনিক প্রাণ নিয়ে ফিরে আসতে পেরেছিল।

মদিনার জনসংখ্যা সাহাবায়ে কেরামের সময় বাংলাদেশের একটি ইউনিয়নের চেয়ে অধিক ছিল না। কিন্ত সে মদিনা মাত্র দশ বছরে যত শহীদ জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ কি গত হাজার বছরেও দিয়েছে? সে সময় মদিনার প্রতিটি গৃহ থেকে শহীদ পয়দা হয়েছে। যখনই আল্লাহর পথে মুসলমানের জানমালের কোরবানী দেয়া শুরু হয় তখনই তাদের পিছনে আল্লাহর নিজের বিনিয়োগও শুরু হয়। তখন তাদের সাহায্যে মহান আল্লাহর ফেরেশতারাও নেমে আসে। পবিত্র কোরআনে তাই বলা হয়েছে, “স্মরণ কর, যখন তোমরা তোমাদের রবে কাছে সাহায্য প্রার্থণা করেছিলে। এর জবাবে তিনি তোমাদেরকে বলেছিলেন,“আমি তোমাদের সাহায্য করার জন্য সারিবদ্ধ এক হাজার ফেরেশতা পাঠাচ্ছি।” –(সুরা আনফাল আয়াত ৯)। শুধু দোয়ার কারণে ফেরেশতা নেমে আসার ঘটনা খুম কম। দোয়ার সাথে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দার কোরবানীও দেখতে চান। আফগান মোজাহিদদের সাথে আল্লাহর ফেরেশতাগণও যে জিহাদ লড়েছে সেটিও কি অস্বীকার করা যায়? গায়েবী মদদ ছাড়া কি বিশ্বশক্তির বিরুদ্ধে এতবড় বিশাল বিজয় সম্ভব ছিল? তাছাড়া আফগানিস্তানের জিহাদ যে শতভাগ খালেছ জিহাদ ছিল তা নিয়েও কি সন্দেহ আছে? নির্ভেজাল জিহাদ জেনেই হাজার হাজার মাইল দূর থেকে নানা দেশের হাজার হাজার মুসলমান ছুটে এসেছে আফগানিস্তানের জিহাদে।

ইসলাম শান্তি চায়, তবে সেটি শত্রুর সামনে জিহাদশূণ্য আত্মসমর্পণ বা পরাজয়ের শান্তি নয়। কাফের বা মুনাফিকের জীবনে যুদ্ধ বা লড়াই থাকলেও জিহাদ বলে কিছু নাই। অথচ ঈমানদারের প্রতিটি যুদ্ধকেই জিহাদ হতে হয়। নইলে মহান আল্লাহর সাহায্য আসে না। নবীজী (সাঃ)র জীবনে তাই প্রায় প্রতিবছর জিহাদ এসেছে। কোন কোন বছর একটি নয়,তাঁকে অনেকগুলি জিহাদ লড়তে হয়েছে। মদিনায় ১০ বছরের জীবনে তিনি ৫০ টির বেশী জিহাদ লড়েছেন। আজও মুসলমানদের জীবনে ভিন্ন রীতি থাকতে পারে কি? ছাত্রের জীবনে প্রতি বছর যেমন পরীক্ষা থাকে তেমনি মুমিনের জীবনেও নিয়মিত পরীক্ষা থাকে। জিহাদ তো সে পরীক্ষা। পবিত্র কোরআনে তাই বলা হয়েছে, “তোমরা কি মনে কর যে এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ করেছে এবং কে ধৈর্যশীল সে বিষয়টি আল্লাহ এখনও প্রকাশ করেন নাই।” -সুরা ইমরান আয়াত ১৪২)।

তথ্য সূএে: http://www.drfirozmahboobkamal.com/

বিষয়: বিবিধ

১১৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File