বাংলাদেশে জিহাদ ও দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ Written by ফিরোজ মাহবুব কামাল

লিখেছেন লিখেছেন মনসুর আহামেদ ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৭:২৯:০৩ সকাল

দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ

রক্তাক্ষয়ী বিশাল যুদ্ধ উপহার দেয়াই আওয়ামী লীগের রাজনীতি। দলটি একটি ভয়ংকর যুদ্ধ উপহার দিয়েছিল একাত্তরে। সম্প্রতি শাহবাগের যুবকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তারা আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। একাত্ত্বরের যুদ্ধটি ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। হাজার হাজার মানুষ সে যুদ্ধে নিহত হয়েছিল। আর এবারের যুদ্ধ ইসলামপন্থিদের নির্মূলে। তারা এবারে ক্ষমতায় এসে সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর আস্থার বানি সরিয়েছে। শুধু সে টুকুতে তারা খুশি নয়। এবার চায়,দেশ থেকে ইসলাম ও সকল ইসলামপন্থিদের নির্মূল। এ যুদ্ধের সুস্পষ্ট ঘোষণা এসেছে শাহবাগের জমায়েত থেকে। তারা চায় সকল রাজাকারের ফাঁসী। চায়,সকল ইসলামি দলের নিষিদ্ধকরণ।এমন কি যেসব ইসলামপন্থিদের জন্ম একাত্তরের ২০ বছর পর তারাও তাদের দৃষ্টিতে রাজাকার। দ্বিতীয় এ যুদ্ধের নেতৃত্বে আছে এমন সব উগ্র নাস্তিক-মুরতাদ যাদের মনপ্রাণ মহান রাব্বুল আলামীন,তাঁর মহান রাসূল (সাঃ),রাসূলের বিবিগণ এবং সাহাবায়ে কেরামের বিরুদ্ধে ঘৃনাপূর্ণ বিষে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। ফলে তাদের দূষমনিটা শুধু রাজাকার বা দেশের ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে নয়,বরং খোদ মহান আল্লাহতায়ালা,তার রাসূল ও ইসলামের বিরুদ্ধে। সে দুষমনিটা তারা গোপনও রাখেনি। ইসলামের এ শত্রুপক্ষটি সেটি প্রকাশ করে আসছে তাদের ব্লগে। তাদের বিরুদ্ধে ইসলামের নির্দেশটি কি এবং মুসলমানদের করণীয় কি –ইসলামে সেটি সুস্পষ্ট। চোর-ডাকাত,খুনি,মিথ্যুক ও ব্যাভিচারির শাস্তি কীরূপ হবে সে ফয়সালার ভার আল্লাহতায়ালা মানুষের হাতে দেননি। আল্লাহতায়ালা শুধু ইবাদতের বিধান দেননি,আইনের বিধানও দিয়েছেন। সে বিধানটি তিনি দিয়েছেন শরিয়তে। মুসলমানের দায়িত্ব হলো সে বিধানের বাস্তবায়ন।

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে মুসলিম নামধারি কোন ব্যক্তি কিছু লিখলে বা বললে সে আর মুসলমান থাকে না। সে পরিণত হয় মুরতাদে। আর ইসলামের মুরতাদের শাস্তি হত্যা। হানাফি, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী ও শিয়া আলেমদের মাঝে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও এ বিষয়ে কোন মতভেদ নাই। আল্লাহর রাসূল ও তাঁর মহান সাহাবাগণ নিছক উটদুম্বা বা গরুছাগল জবাই করেননি, এসব মুরতাদদেরও অতি কঠোর হস্তে জবাই করেছেন। তাদের হত্যার সে নির্দেশ এসেছে পবিত্র কোরআন থেকে। বলা হয়েছে,“নিশ্চয়ই আল্লাহ ঈমানদারদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে,অতঃপর (আল্লাহর শত্রুদের) হত্যা করে এবং নিজেরাও নিহত হয়।” -সুরা তাওবাহ, আয়াত ১১১। ইসলাম শক্তি পেয়েছে এবং বিশ্বশক্তি রূপে বেড়ে উঠেছে শুধু বিদেশী শত্রু নির্মূলের মধ্য দিয়ে নয়,নিজ ঘরে বেড়ে উঠা ভিতরের শত্রুদের নির্মূল করে। নইলে কি বিশ্বশক্তি রূপে বেড়ে উঠা সেদিন সম্ভব হতো? মহান আল্লাহতায়ালা এক্ষেত্রে বান্দার প্রস্তুতিটা কত বিশাল সেটি দেখেন না,দেখেন নিয়েতটি কত বিশাল। পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে,“বেরিয়ো পড়ো অভিযানে,তোমার প্রস্তুতি হালকা হোক বা ভারি হোক,লড়াই করো আল্লাহর পথে তোমাদের সম্পদ ও জীবন দিযে। সেটিই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে।” –(সুরা তাওবাহ, আয়াত ৪১। মুসলিম দেশ যখন ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে অধিকৃত হয় এবং আল্লাহর শরিয়ত যখন আবর্জনার স্তুপে নিক্ষিপ্ত হয়,তখন কি জিহাদ জানাজার নামাযের ন্যায় ফরজে কেফায়া থাকে? তখন সেটি প্রতিটি মুসলমানের উপর ফরজ নামাযের ন্যায় ফরজে আইন তথা বাধ্যতামূলক ইবাদতে পরিণত হয়। যার যা সামর্থ আছে তা নিয়ে তখন ময়দানে নামতে হয়। নবীজী(সাঃ)ও সাহাবায়ে কেরামদের আমলে তো সেটিই হয়েছে।

ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ঘৃনা নিয়ে বহুকাল ধরে ইন্টারনেটে লেখালেখি করেছে রাজীব নামের এক ব্লগার। শাহবাগ সমাবেশের একজন অন্যতম আয়োজক ছিল সে। সে মুরতাদটি ক’দিন আগে আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছুটে গেছেন তার বাড়িতে সমবেদনা জানাতে। অথচ ঢাকার বুকে নির্মম ভাবে নিহত হচ্ছে বহু মানুষ। শত শত গার্মেন্ট শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা গেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা কি কখনো তাদের দেখতে গেছেন? ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে দিন-দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করা হলো বিশ্বজিৎ দাশকে। দেখতে যাওয়া দূরে থাক,শেখ হাসিনা কি তার পরিবারে জন্য সামান্য সমবেদনাও জানিয়েছে? কে কীভাবে মারা গেল সেটি শেখ হাসিনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়,গুরুত্বপূর্ণ হলো নিহত ব্যক্তিটি কোন দল, কোন চেতনা ও কোন পক্ষের যোদ্ধা সেটি। গার্মেন্ট শ্রমিকগণ যেহেতু তার সম-চেতনার লোক নন বা তার দলের যোদ্ধাও নন,ফলে আগুনে পুড়ে কয়লা হলেও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর সময় তার হয় না। কিন্তু ব্লগার রাজীব খুন হলে তিনি ছুটে যান। কারণ, সে শুধু শেখ হাসিনার চেতনার আত্মীয়ই নয়, ইসলাম ও ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে সক্রিয় সহযোদ্ধাও। তাই দ্রুত ছুটে গেছেন তার মৃত্যুর সংবাদে। রাজীবের জানাযায় ছুটে গেছে তার পুত্র জয়। শুধু তাই নয়,শেখ হাসিনা,তার দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও শাহবাগ সমাবেশের নেতারা তাকে তাদের শুরু করা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ বলেও ঘোষণা দিয়েছে।

মিথ্যাচার ও শহীদ শব্দের অপব্যবহার

নিজেদের মৃতদের শহীদ বলার ক্ষেত্রেও তারা আশ্রয় নিয়েছে প্রচন্ড মিথ্যাচারের। শহীদ শব্দটি একান্তই ইসলামের নিজস্ব পরিভাষা। শব্দটি কি বাংলা বা সংস্কৃত থেকে এসেছে? শহীদ কি কোন কাফের বা মুরতাদ হতে পারে? আল্লাহর উপর যাদের ঈমান নেই এবং জান্নাত ও জাহান্নামের উপর যাদে বিশ্বাস নাই,তাদের আবার শহীদের ধারণা আসে কোত্থেকে? ইসলামে শহীদের মর্যাদা বিশাল। আল্লাহতায়ালা তাদেরকে মৃত বলতে নিষেধ করেছেন। বলা হয়েছে,তারা জীবিত। ইন্তেকালের পরও আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা খাবার পেয়ে থাকেন। এবং তারা পুরস্কৃত হবেন মহা নিয়ামতপূর্ণ জান্নাত পাওয়ার মধ্য দিয়ে। শহীদ তো তারাই হয় যাদের মনে মহান আল্লাহর উপর অটল বিশ্বাস থাকে এবং তারা যুদ্ধ করে একমাত্র আল্লাহর রাস্তায় এবং প্রান দেয় ইসলামের বিজয়ে। যারা রাব্বুল আলামীন মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে গালীগালাজ করে এবং শরিয়তের প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করে তারা কি করে শহীদ হয়? তাদের মৃত্যু তো কাফেরের মৃত্যু। মৃত্যু তাদের জীবনে জাহান্নামের আযাব ডেকে আনে।

একাত্তরের যুদ্ধে আওয়ামী লীগ ভারতের কাফের বাহিনীর পূর্ণ সমর্থণই শুধু পায়নি, বরং মূল যুদ্ধটি তো লড়েছে তারাই। সে যুদ্ধে আওয়ামী লীগের যোদ্ধারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একটি জেলা দূরে থাক, একটি থানার উপরও দখলদারি প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। বাংলাদেশের উপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্ণ অধিকৃতি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৬ই ডিসেম্বরে। সে অধিকৃতিকেই আওয়ামী লীগ আখ্যায়ীত করেছে স্বাধীনতা বলে। আর দিল্লির সাথে সাক্ষরীত তাজুদ্দিনের ৭ দফা আত্মসমর্পণ চুক্তি এবং মুজিবের ২৫ দফা দাসচুক্তিকে বলেছে স্বাধীনতার সনদ। এবং বাকশালী স্বৈরাচারকে চিত্রিত করেছে গণতন্ত্র বলে। এবং সকল বিরোধী পত্রপত্রিকাকে নিষিদ্ধ করাকে বলেছে বাকস্বাধীনতা। সে মুজিবী আমল নিয়ে আজও আওয়ামী লীগের কত গর্ব! মিথ্যাচার আর কাকে বলে! ভারত তার নিজ সৈন্য তুলে নিলেও দাসদের তুলে নেয়নি। বরং নতুন করে বসিয়েছে হাজার হাজার এজেন্ট। কোলকাতায় পুলিশ পালতে যত অর্থ ব্যয় হয় সে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করলেই বাংলাদেশে বহু লক্ষ দালাল পালা য়ায়। ভারত সেটি জানে এবং সে স্ট্রাটেজী নিয়েই কাজ করছে। শাহবাগ মোড়ে এমন দালালের সংখ্যা কি কম ছিল?

যুদ্ধে নামছে ভারতও

এবারের মিথ্যাচারটি শুধু রাজাকারদের বিরুদ্ধে নয়,খোদ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ও তাঁর মহান রাসূলেপাকের বিরুদ্ধে। তারা যুদ্ধ শুরু করেছে আল্লাহ ও তার শরিয়ত প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে। ইসলাম ও ইসলামপন্থিদের নির্মূলের এ যুদ্ধেও আওয়ামী লীগ ভারতের পূর্ণ সহযোগিতা চায়। কারণ,রাজাকারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ লড়ার সামর্থ যেমন একাত্তরে ছিল না,এখনও নাই। ভারত নিজেও নিজ স্বার্থে এমন একটি যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট হতে চায়। কারণ তারা চায় তাদের সীমান্তে ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ হোক। কারণ তাতে প্রচণ্ড বল পাবে ভারতের ২০ কোটি মুসলমান। তাই নিজ গরজেই ভারত তার সমর্থনের কথা এবারের যুদ্ধেও আগাম জানিয়ে দিয়েছে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার সহরোয়ার্দি উদ্দ্যানের এক সমাবেশে বলেছেন, বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের যুদ্ধটি একাত্তরে শেষ হয়নি। আরো যুদ্ধ বাঁকি। ক’দিন আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকা এসেছিলেন। তিনিও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দিয়েছেন,যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে সরকার যা কিছু করছে ভারত তাতে সমর্থণ দিবে। শাহবাগের সমাবেশ থেকে ঘোষিত যুদ্ধ এবং সে যুদ্ধের আয়োজকদের প্রতি ভারতের সমর্থন প্রমাণ করে যুদ্ধটি রীতিমত শুরুও হয়ে গেছে। তেমনই একটি যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল গতকাল সমগ্র বাংলাদেশব্যাপি। বাংলাদেশ এখন সুস্পষ্ট ভাবে দ্বি-ভাগে বিভক্ত। একপক্ষে ইসলামের শক্তি। অপর পক্ষে ইসলামের বিপক্ষ শক্তি। গতকাল ইসলামের বিপক্ষ শক্তির হামলায় ৬ জন শহীদ হয়েছেন।আহত হয়েছে শত শত।

ব্লগারদের ঔদ্ধত্য ও হাসিনার একাত্মতা

ইসলামের বিরুদ্ধে লিখে সালমান রুশদি ও তাসলিমা নাসরিনকে বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হতে হয়েছে। জনরোষের ভয়ে তাসলিমা নাসরীনকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। সালমান রুশদি এখনও ইঁদুরের ন্যায় লুকিয়ে লুকিয়ে বাস করে। কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধে সালমান রুশদি ও তাসলিমা নাসরিন যা কিছু লিখেছে শাহবাগ সমাবেশের নেতারা লিখেছে তার চেয়ে বহু বেশী,এবং অতি জঘন্য ভাষায়। বাংলার মাটিতে কোন অমুসলিমও এমন জঘন্য কথা পূর্বে বলেনি বা লেখেনি। বাংলাদেশের তৌহিদী জনগণ তাই সঙ্গত কারণেই জেগে উঠেছে। গতকাল (২২/০৩/১৩) জনগণ তাই শুধু রাজধানীতে নয়, বিপুল সংখ্যায় রাস্তায় নেমে এসেছিল বাংলাদেশের প্রতিটি নগর বন্দরে। আর বিক্ষুব্ধ জনগণের উপর যুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হয় সরকারের পুলিশ,র‌্যাব ও বিজিবীকে। হাজার হাজার রাউন্ড গুলি ও কাঁদুনে ছুড়েছে নিরস্ত্র জনতার উপর। তাদের সাথে যোগ দেয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ ক্যাডারগণ। ছাত্রলীগের ক্যাডারদের ন্যায় ব্লগারগণ হাসিনার নিজস্ব যোদ্ধা। ছাত্রলীগের ক্যাডারগণ প্রকাশ্যে মানুষ খুন করলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে না। আদালতেও তোলে না। অন্যকোন সরকারের আমলে আদালতে কারো মৃত্যুদন্ড হলে হাসিনার সরকার দায়িত্ব নেয় তাদেরকে মুক্ত করে আবার খুনের জগতে ফিরিয়ে আনার।এরূপ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ২০জনের বেশী অপরাধীকে হাসিনা সরকার দেশের প্রেসিডেন্টকে দিয়ে মাফ করিয়ে দিয়েছেন।তেমন একটি আচরন করেছে মুরতাদ ব্লগারদের সাথে। এসব ব্লগারগণ বহুবছর ধরে আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালা ও তাঁর মহান রাসূল (সাঃ) ও ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের গোয়েন্দাগণ সেটি সরকারকে জানালেও হাসিনা সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

ব্লগারদের সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের যোগসূত্র যে কতটা গভীর তার একটি তথ্যবহুল রিপোর্ট ছেপেছে দৈনিক আমার দেশ তার ২২/০২/২০১৩ তারিখের সংখ্যায়। নিম্নে তা থেকে কিছু উদ্ধৃতি দেয়া হলোঃ “গত ২০১২ সালের ২১ মার্চ হাইকোর্ট ধর্মদ্রোহী মুরতাদদের ব্লগারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিলেও তাতে পাত্তা দেয়নি হাসিনার সরকার। বরং উচ্চ আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শাহবাগের কথিত প্রজন্ম চত্বরের নেতৃত্বদানকারী ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন লিখেছে,‘সম্পূর্ণ সজ্ঞানে সচেতনভাবে ঐ যুক্তিহীন অন্ধ ষাঁড়ের মতো উৎকট দুর্গন্ধময় ধর্মীয় অনুভূতি এবং ঐ যুক্তিহীন ধর্মীয় অনুভূতির রক্ষক আদালত,দুই জিনিসেরই অবমাননা করলাম।’ পবিত্র ইসলাম,দেশের প্রচলিত আইন-আদালত এবং সভ্যতার শত্রু ব্লগারদের এসব কুৎসিত মন্তব্য ও বক্তব্যের ডাউনলোড করা কপি সম্পূরক নথি হিসেবে আদালতে পেশ করেন আইনজীবীরা। একই সঙ্গে তারা আদালতের আদেশসহ তা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি),র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পেশ করেন। মহান আল্লাহ এবং নবী-রাসুলদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা ও আদালত অবমাননাকারী এসব ব্লগারকে চিহ্নিত করে র‌্যাব ও ডিবি পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রতিবেদন জমা দিলেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। সুপ্রিমকোর্ট,বিটিআরসি ও গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ব্লগাররা ইন্টারনেট ব্যবহার করে ব্লগ ও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহান আল্লাহ,মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সাঃ)-সহ নবী-রাসুল (আঃ), ইসলামের প্রধান খলিফা,ইসলামের বিভিন্ন বিধিবিধানকে কটাক্ষ করে মনগড়া ও ভয়ঙ্কর ধরনের মন্তব্য লিখে নিজেদের বিকৃত রুচি প্রকাশ করতে থাকে। ২০১১ সাল থেকে এসব ব্লগার আরও অশ্লীল ও অশালীন ভাষায় মহানবীর (সা.) বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে থাকে। এরই একপর্যায়ে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করলে সরকারের উপরের নির্দেশে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় বলে জানান ওই গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা। গোয়েন্দা হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আসিফ মহিউদ্দীন,ব্লগার আহমেদ হায়দার রাজীব শোভন ওরফে থাবা বাবা,আরিফুর রহমান (প্রকৃত নাম নিতাই ভট্টাচার্য),ইবরাহিম খলীল ওরফে সবাক,স্বপ্নকথক,অমি রহমান পিয়ালসহ বর্তমানে শাহবাগ আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী অন্য ব্লগাররা পবিত্র ইসলামের বিরুদ্ধে কুত্সা রটানোর মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। তারা সামহোয়্যারইন ব্লগ,মুক্তমনা ব্লগ,আমার ব্লগ,ধর্মকারীসহ বিভিন্ন ব্লগে এরা বিকৃত ভাষা প্রয়োগ করে মহান আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ)কে নিয়ে ভয়ঙ্কর মন্তব্য করতে থাকে।

এসব ব্লগ বন্ধ ও চিহ্নিত ব্লগারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রার্থনা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক বাতুল সরওয়ার ও ঢাকা সেন্ট্রাল ল’ কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম হাইকোর্টে একটি রিট (নং ৮৮৬/১২) করেন। বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মো. খোরশিদ আলম সরকার এ রিটের ওপর শুনানির পর গত বছর ২১ মার্চ রিট আবেদনটি গ্রহণ করে মহান আল্লাহ,রাসুল (সাঃ)সহ ইসলাম ধর্মের অবমাননাকারী ব্লগুগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধের বিষয়ে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না মর্মে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। পাশাপাশি আদালত ওইসব ব্লগ ও ব্লগারদের বিষয়ে অনুসন্ধান করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিটিআরসি,র‌্যাব ও পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতি নির্দেশনা দেন এবং রুল নিষ্পিত্তি না হওয়া পর্যন্ত পিটিশনে উল্লেখ করা ওয়েবসাইট ও ব্লগগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আদালতের আদেশে ওইসব ওয়েবসাইট,ব্লগ ও ওয়েবপেজের স্বত্বাধিকারী এবং ধর্মদ্রোহী ব্লগারদের অনুসন্ধান করে তাদের নাম-ঠিকানাসহ পূর্ণ পরিচয় আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেয়া হয়। আদালতের এ নির্দেশের পর বিটিআরসি প্রয়োজনীয় ব্লগারদের চিহ্নিত করে আদালতে পেশ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেয়। কিন্তু সরকারপক্ষ অদ্যাবধি এদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা,উল্টো এসব নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহী ব্লগারকে সমর্থন জানিয়ে আসছে।” এসব ব্লগারদের একজন মৃত্যুতে হাসিনার শোক,তার বাড়ীতে গমন এবং তাকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ আখ্যায়ীত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়,এসব মুরতাদদের শুধু সহযোগীই নয়,বরং তাদের পিছনে মূল শক্তি হলো এই হাসিনা সরকার। সরকারের প্রটেকশন না পেলে এ মুর্তাদদের কি সাহস হতো ঢাকার রাস্তায় দাড়িয়ে বুক ফুলিয়ে কথা বলার? জনগণ গতকাল (২২/২/১৩) যখন শাহবাগে তাদের আস্তানায় তিন দিক থেকে ধাওয়া করে তখনও তাদেরকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে এ সরকার।

হাসিনার এজেন্ডাঃ নিজ-পিতার ইজ্জত রক্ষা

শেখ হাসিনা চান,আল্লাহতায়ালা,তাঁর মহান রাসূল ও সাহাবায়ে কেরামের বিরুদ্ধে যার যা ইচ্ছা বলুক,কিন্তু তার পিতার বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। পিতার সন্মান রক্ষার্থে তিনি সংবিধানে সংশোধন এনেছেন। কেউ তার পিতার বিরুদ্ধে কিছু বললে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে হাজতে তোলে। আদালতে তারা শাস্তি হয়। অথচ শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ও তাঁর রাসূলে পাকের ইজ্জতের উপর হামলা হলে তা রুখবার কেউ নাই। সরকারি পুলিশ বরং চড়াও তাদের উপর যারা আল্লাহ ও রাসূলের পক্ষ নিয়ে ময়দানে নামে। এমন দেশে কি আযাব না এসে পারে? সরকার কি সে আযাব ডেকে আনার পথ বেছে নিয়েছে? অথচ মুসলমান রাষ্ট্র প্রধানের মূল দায়িত্ব হলো,দেশে ইসলামের বিজয় আনা তেমনি আল্লাহর নামকে বুলন্দ করা এবং রাসূলের মর্যাদায় বৃদ্ধি আনা। সেটিই মহান আল্লাহর নির্দেশ -যা পবিত্র কোরআনে বার বার ঘোষিত হয়েছে। মুসলমানগণ তাই অহরহ আল্লাহু আকবর বলে। এবং মিছিলে বা সমাবেশে স্লোগান দেয়ার আগে সর্বপ্রথম “নারায়ে তাকবীর,আল্লাহু আকবর” বলে। নইলে মুসলমানের ঈমানের প্রকাশ ঘটে না। এটিই মুসলিম সংস্কৃতি।অথচ “জয় আরব”,“জয় আফগান” বা “জয় বাংলা” এরূপ ভাষা বা ভূ-গোল ভিত্তিক কোন স্লোগান কোন ঈমানদারের মুখ থেকে বের হয়নি। মুসলমান তো বাঁচে আল্লাহ ও তার দ্বীনের গৌরববৃদ্ধির জন্য। এজন্যই সে শ্রম দেয়,অর্থ দেয়,এমনকি প্রাণও দেয়। অথচ হাসিনা সরকারের এজেন্ডা এবং সে সাথে উৎসব হলো ইসলামকে পরাজিত দেখার মধ্যে। ফলে তাদের মুখ প্রসন্ন হয় দেশে শরিয়তের পরাজয় দেখে,তেমনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে গালিগালাজ শুনে। তাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মুখে জয়বাংলা উচ্চারণের প্রচন্ড সামর্থ দেখা গেলেও আল্লাহু আকবর ধ্বনি উঠেনা। এটি তো আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। চেতনায় সামান্য ঈমান বেঁচে থাকলেও কি এমনটি ঘটে? এমন ব্যক্তিগণ কি কোন মুসলিম দেশের সরকার প্রধান হওয়ার অধিকার রাখে?

কোন মুসলমান যখন রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে পায় তখন তার উপর দায়িত্ব পায় সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় ও অসত্যের নির্মূল। তাকে কাজ করতে হয় আল্লাহর অতি অনুগত খলিফা রূপে। একাজের মধ্য দিয়ে একজন ন্যায়পরায়ন শাসক আল্লাহর কাছে অতি প্রিয় বান্দায় পরিণত হয়। তিনি জান্নাত পান। অপর দিকে আল্লাহর কাছে অতি অপরাধী হলো জালেম শাসক। সে কাজ করে শয়তানের খলিফা রূপে। তার বিরুদ্ধে হক কথা বলাকে জিহাদের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। জাহান্নামের অতি বেদনাদায়ক শাস্তি তাকে দেয়া হবে। কোন মুসলিম শাসকের ন্যায়কর্ম কি দেশের রাজধানির এক চৌরাস্তায় একপাল মুরতাদকে আল্লাহ,তাঁর রাসূল ও ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জারি রাখার অনুমতি দেয়া? সরকার প্রধানের ঈমানদারি কি রাষ্ট্রের পুলিশ দিয়ে কি তাদের পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা করা? অতীতে কোন ইংরেজ কাফের শাসকও এমন কাজ ভারতে বা বাংলাদেশে হতে দেয়নি। দেশের ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে। শেয়ার বাজার লুট হচেছ,পথে ঘাটে মানুষ লাশ হচ্ছে, অসংখ্য নারী ধর্ষিতা হচেছ। অথচ তাদের প্রতিরক্ষায় পুলিশের বা র‌্যাবের তৎপরতা নেই।কিন্তু হাজার হাজার পুলিশ নামানো হয় মুসল্লিদের মিছিল ঠেকাতে।

জিহাদের পরীক্ষা ও ঈমানী দায়ভার

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে দেশের আলেম ও মুসলিম যুবকদের জেগে উঠার মধ্যে। তারা ঘুমিয়ে থাকলে দেশে ইসলামের প্রতিরক্ষায় আর কেউই থাকবে না। বাংলাদেশে ইসলামের ইতিহাস প্রায় হাজার বছরের। কিন্তু এদেশে ইসলামের নামে জিহাদ হয়েছে সে ইতিহাস নেই বললেই চলে। একাত্তরের যুদ্ধ ইসলামকে বিজয়ী করা বা মুসলমানদের শক্তিবৃদ্ধির লক্ষে হয়নি।জিহাদ শুরু না হওয়ার ফলে আল্লাহর রাস্তায় মানুষ উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় শহীদও হয়নি। জিহাদে নির্লিপ্ততা নিয়েই দেশের মানুষ ১৯০ বছর গোলামী করেছে কাফেরদের। মুসলিম বিশ্বে জনসংখ্যায় তৃতীয় হয়েও কাফেরদের হাতে এরূপ দীর্ঘকাল গোলামীর ইতিহাস গড়াটি কি কম লজ্জাজনক? জনসংখ্যায় আফগান বা ইরানীরা ক্ষুদ্র হয়েও মুসলমানদের শক্তিবৃদ্ধি ও ইসলামের প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৯৪৭য়ে বাংলার মুসলমানদের সামনে একটি মহাসুযোগ এসেছিল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠি রূপে বিশ্ব-মুসলিম রাজনীতির মধ্যভূমিতে থাকার যে সুযোগ এসেছিল বাংলার মুসলমানদের। তেমনটি ভিশন নিয়েই তো নাজিমুদ্দীন,সহরোয়ার্দি,শেরেবাংলার ন্যায় নেতারা পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানভূক্ত করেছিল। কিন্তু ইসলামের দুষমন ও ভারতীয় এজেন্টগণ সে সুযোগটি নস্যাৎ করার জন্য দেশটির জন্মের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয় ষড়যন্ত্র। মুজিব জোরগলায় সেটি স্বীকারও করেছেন। সে ষড়যন্ত্র সফল হয় ১৯৭১য়ে।নাজিমুদ্দীন, সহরোয়ার্দি, শেরেবাংলার ন্যায় নেতাদের আস্তাকুরে ফেলে মুজিব বাংলার রাজনীতির ইতিহাসে একমাত্র তারকা রূপে আবির্ভূত হন। বাংলার মুসলমানদের সাথে শেখ মুজিব,আওয়ামী লীগ ও তার সেক্যুলার মিত্রদের এটিই হলো সবচেয়ে বড় গাদ্দারি। দেশটিতে মুজিব প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন ভারতের লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি। শেখ হাসিনা তার পিতার সে নীতিকে আরো বেগবান করছেন। ফলে বিশ্বরাজনীতিতে দূরে থাক,মুসলিম বিশ্ব বা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতেও কি ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশের কি কোন ভূমিকা আছে? কারণ বিশ্বের নেতারা কখনো দাসদের সাথে কথা বলে না, কথা বলে তাদের মনিবদের সাথে। তাই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী রূপে বগুড়ার মোহম্মদ আলী ওয়াইট হাউসে দাওয়াত পেলেও সে সম্মান মুজিব পায়নি, হাসিনাও পায়নি। মুসলমানগণ নির্মম অত্যাচারের শিকার হচ্ছে মায়ানমার,কাশ্মীর এবং ভারতের আসামসহ নানা প্রদেশে। কিন্তু সে অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কি কোন ভূমিকা আছে? বরং দেশটিতে চলছে ভারতের প্রাদেশীক রাজনীতির মানের একটি ক্ষুদ্র পরিসরের রাজনীতি। প্রাদেশিক রাজনীতিতে পররাষ্ট্রনীতি থাকে না।তাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি যেমন মুজিব আমলে ছিলনা,হাসিনার আমলেও নাই। বিদেশী শত্রুপক্ষের অধিকৃতি ১৯৪৭য়ে শেষ হলেও দেশটি এখন পুরাপুরি অধিকৃত ইসলামের দেশী শত্রুদের হাতে।তাদের সে অধিকৃতিতে সহযোগিতা জোগাচ্ছে বিদেশী কাফের শক্তি ও তাদের এনজিওগুলি। এ অধিকৃতি যতই লম্বা হবে ততই বাড়বে আরো কুখ্যাতি এবং বাড়বে আরো বিদেশ-নির্ভরতা।

ঈমানের ট্রানফিউশন

দেশের মানুষ ঈমানী শক্তি পায় শহীদদের রক্তদান থেকে। রক্তশূণ্য মুমুর্ষ রোগীকে বাঁচাতে হলে রক্তের ট্রানফিউশন জরুরী,নইলে সে বাঁচে না। তেমনি ঈমান-শূণ্য জাতিও ঈমানের ট্রানফিউশন চায়। নইলে সে জাতির মাঝেও ইসলাম বাঁচে না। জাতি সে ট্রানফিউশন পায় শহিদের রক্তের মাধ্যমে। তাই যে দেশে শহীদ জন্ম দিতে জানে না, সেদেশে ঈমানী বলে বলীয়ান মানুষ বেড়ে উঠে না। তখন বাড়ে আযাব,আসে ইসলামের পরাজয়। অধিকৃতি বাড়ে শয়তানী শক্তির। এজন্যই অতীতে মুসলিম শাসকগণ নিজ দেশের উপর কোন অমুসলীমদের হামলা না হলে নিজেরাই কাফের অধ্যুষিত দেশে হামলার লক্ষ্যে মুসলমানদের জিহাদে এবং সে জিহাদে শহীদ হতে উদ্বুদ্ধ করতো। তারা বিশ্বাস করতো, মহান আল্লাহর সুনজরে থাকার উপায় নিছক নামায-রোযা ও তাসবিহপাঠ নয়,বরং সেটি হলো জিহাদ। তাদের সে পবিত্র জিহাদ ছিল আল্লাহর জমিনকে শয়তানের খলিফাদের অবৈধ অধিকৃতি থেকে মুক্তিদানের। জিহাদ করতে করতেই তারা বাংলাদেশ অবধি এসেছে। নইলে কি বাংলাদেশের মানুষ পৌত্তলিক সেন রাজাদের কুফরি শাসন থেকে মুক্তি পেত? সুযোগ পেত কি ইসলামের পবিত্র ছায়া তলে আসার? কিন্তু সেদিন সেনা রাজরা বাংলার মাটি থেকে বিতাড়িত হলেও বাংলার মুসলমানদের ঘাড়ে আজ চেপে বসেছে তাদেরই অতি অনুগত খলিফারা। বিছমিল্লাহ,আল্লাহু আকবরের বদলে সরকারি শিবিরে মঙ্গলপ্রদীপের আগমণ কি সাক্ষ্যই দেয় না? নইলে কি আল্লাহ ও তাঁর মহান রাসূলের বিরুদ্ধে শয়তানের এজেন্টগণ এরূপ কুৎসিত কথা উচ্চারনের সুযোগ পেত? ইখতিয়ার বিন বখতিয়ার খিলজির মাত্র ১৭ জন সৈনিক যখন বাংলার মাটিতে অবস্থান নিয়েছিল তখনও তো তারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে এরূপ কুৎসিত ও অশ্রাব্য কথা বলার সাহস পেত? বরং তাদের আগমনের প্রথম দিন থেকেই তো প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল শরিয়তি শাসন। সভ্য আইন বলতে বখতিয়ার খিলজি একমাত্র শরিয়তি আইনই বুঝতেন। তখন কি বাংলায় শতকরা ৯০ জন মুসলমান ছিল? তবে কি বাংলাদেশের ১৫ কোটি মুসলমানের সম্মিলিত ঈমানকে শয়তান ও তার এজেন্টগণ ১৭ জন তুর্কি সৈনিকের চেয়েও দুর্বল মনে করে?

রক্তের শক্তি

শহীদদের রক্তের বলেই সম্পদের দরিদ্র আফগানিস্তান আজ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। দেশটির জনসংখ্যা বাংলাদেশের ৬ ভাগের একভাগের এক ভাগেরও কম। দেশটির মোজাহিদগণ সোভিয়েত রাশিয়ার মত একটি বিশ্বশক্তিকে শোচনীয় ভাবে পরাজিত করেছে। আজ পরাজিত করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ৪০টি দেশের সম্মিলিত ন্যাটো বাহিনীকে। সমগ্র মুসলিম ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী রক্ত দিয়েছিল আরবের মুসলমানগণ। ফলে তাদের সাহায্যে আল্লাহর ফেরেশতাগও সবচেয়ে বেশী সংখ্যায় সে আরব ভূমিতে নেমে এসেছেন। ফলে অন্যদের পক্ষে তাদের পরাজিত করা সম্ভব হয়নি। তাদের রক্তের বদৌলতেই পারস্য ও রোমান –এ উভয় সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে মরুবাসী দরিদ্র মুসলমানগণ আবির্ভুত হয়েছেন সবচেয়ে শক্তিশালী বিশ্বশক্তি রূপে। এটিই ইসলামের ইতিহাস। সে ইতিহাস থেকে বাংলাদেশের মুসলমানদের প্রতিপদে শিক্ষা নিতে হবে। কারণ বাংলার মুসলমানদের সামনে বিশ্বের বুকে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি রূপে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার যেমন এছাড়া ভিন্ন পথ নেই, তেমনি ভিন্ন উপায় নেই নিজ দেশের স্বাধীনতা বাঁচানোর।

এতকাল বাংলাদেশে মসজিদ মাদ্রাসা বিপুল ভাবে বেড়েছে,কিন্তু বাড়েনি আল্লাহর রাস্তায় শহীদের সংখ্যা। ফলে জনসংখ্যা বাড়লেও শক্তি বাড়েনি। প্রচণ্ড অপূর্ণতা রয়ে গেছে দেশবাসীর ঈমানে। সে ভয়ানক অপূর্ণতা নিয়েই দেশটি বিশ্বের তাবত দেশকে হারিয়ে দুর্নীতিতে বিশ্বে ৫ বার প্রথম হয়েছে। সে ঈমানী অপূর্ণতা নিয়ে মানুষ আওয়ামী লীগের মত ইসলামের চিহ্নিত শত্রুকে ভোট দিবে এবং তার নেতাকে বাংলার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ রূপে গণ্য করবে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? সে ঈমান-শুণ্যতার কারণে ১৭৫৭ সালে সামান্য কয়েক হাজার ব্রিটিশ সৈন্যের আক্রমণের মুখে বাংলার ৫০ হাজার সৈন্য একটি গুলিও ছুড়েনি। কোনরূপ যুদ্ধই করেনি। সবদোষ কি শুধু মিরজাফরের ঘাড়ে চাপানো যায়? বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার মুসলিম রাজধানী মুর্শিদাবাদ দখলের পর সেখানে ইংরেজ বাহিনী যখন বিজয় মিছিল করছিল,শহরের মুসলমানগণ তখন শত্রুর সে বিজয় মিছিলও আনন্দচিত্তে উপভোগ করেছিল। যেন রথ যাত্রা দেখছিল। তাদের যে মহাক্ষতিটা হয়ে গেল,সেটুকু বোঝার সামর্থও তাদের ছিল না। ঈমানের একই রূপ অপূর্ণতার কারণে বাঙালী মুসলমানেরা একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় ভারতীয় কাফের বাহিনীর বিজয়কে নিজেদের বিজয় মনে করে উৎসব করেছে। এবং প্রতিবছরই সেটি করে থাকে। যেন পাকিস্তান বাহিনীকে তারা নিজেরা পরাজিত করেছিল। মিথ্যাচার আর কাকে বলে। অথচ সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটনা ঘটেছিল আফগানিস্তানে ও ইরানে। ইংরেজ বাহিনী দুটি দেশেই বিপুল প্রস্তুতি নিয়ে হামলা করেছিল। কিন্তু দুটি দেশের সাধারণ জনগণ হাতের কাছে যা ছিল তাদিয়ে ইংরেজ বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ফলে তাদের রণেভঙ্গ দিতে হয়েছে। কাবুলের উপর প্রথমবারের হামলায় সমগ্র ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর মাঝে মাত্র একজন সৈনিক প্রাণ নিয়ে ফিরে আসতে পেরেছিল।

মদিনার জনসংখ্যা সাহাবায়ে কেরামের সময় বাংলাদেশের একটি ইউনিয়নের চেয়ে অধিক ছিল না। কিন্ত সে মদিনা মাত্র দশ বছরে যত শহীদ জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ কি গত হাজার বছরেও দিয়েছে? সে সময় মদিনার প্রতিটি গৃহ থেকে শহীদ পয়দা হয়েছে। যখনই আল্লাহর পথে মুসলমানের জানমালের কোরবানী দেয়া শুরু হয় তখনই তাদের পিছনে আল্লাহর নিজের বিনিয়োগও শুরু হয়। তখন তাদের সাহায্যে মহান আল্লাহর ফেরেশতারাও নেমে আসে। পবিত্র কোরআনে তাই বলা হয়েছে, “স্মরণ কর, যখন তোমরা তোমাদের রবে কাছে সাহায্য প্রার্থণা করেছিলে। এর জবাবে তিনি তোমাদেরকে বলেছিলেন,“আমি তোমাদের সাহায্য করার জন্য সারিবদ্ধ এক হাজার ফেরেশতা পাঠাচ্ছি।” –(সুরা আনফাল আয়াত ৯)। শুধু দোয়ার কারণে ফেরেশতা নেমে আসার ঘটনা খুম কম। দোয়ার সাথে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দার কোরবানীও দেখতে চান। আফগান মোজাহিদদের সাথে আল্লাহর ফেরেশতাগণও যে জিহাদ লড়েছে সেটিও কি অস্বীকার করা যায়? গায়েবী মদদ ছাড়া কি বিশ্বশক্তির বিরুদ্ধে এতবড় বিশাল বিজয় সম্ভব ছিল? তাছাড়া আফগানিস্তানের জিহাদ যে শতভাগ খালেছ জিহাদ ছিল তা নিয়েও কি সন্দেহ আছে? নির্ভেজাল জিহাদ জেনেই হাজার হাজার মাইল দূর থেকে নানা দেশের হাজার হাজার মুসলমান ছুটে এসেছে আফগানিস্তানের জিহাদে।

ইসলাম শান্তি চায়, তবে সেটি শত্রুর সামনে জিহাদশূণ্য আত্মসমর্পণ বা পরাজয়ের শান্তি নয়। কাফের বা মুনাফিকের জীবনে যুদ্ধ বা লড়াই থাকলেও জিহাদ বলে কিছু নাই। অথচ ঈমানদারের প্রতিটি যুদ্ধকেই জিহাদ হতে হয়। নইলে মহান আল্লাহর সাহায্য আসে না। নবীজী (সাঃ)র জীবনে তাই প্রায় প্রতিবছর জিহাদ এসেছে। কোন কোন বছর একটি নয়,তাঁকে অনেকগুলি জিহাদ লড়তে হয়েছে। মদিনায় ১০ বছরের জীবনে তিনি ৫০ টির বেশী জিহাদ লড়েছেন। আজও মুসলমানদের জীবনে ভিন্ন রীতি থাকতে পারে কি? ছাত্রের জীবনে প্রতি বছর যেমন পরীক্ষা থাকে তেমনি মুমিনের জীবনেও নিয়মিত পরীক্ষা থাকে। জিহাদ তো সে পরীক্ষা। পবিত্র কোরআনে তাই বলা হয়েছে, “তোমরা কি মনে কর যে এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ করেছে এবং কে ধৈর্যশীল সে বিষয়টি আল্লাহ এখনও প্রকাশ করেন নাই।” -সুরা ইমরান আয়াত ১৪২)।

সম্ভাবনা বিশাল

অতি খুশির কথা এবং সে সাথে অতি আশার কথা,অতি দেরীতে হলেও বাংলাদেশেও শতভাগ খালেছ একটি জিহাদ শুরু হয়েছে। আর প্রতিটি জিহাদই উম্মাহর মাঝে প্রচন্ড সম্ভাবনা নিয়ে আসে। আর সেসম্ভাবনাটি আল্লাহর সাহায্য লাভের প্রতিশ্রুতির কারণে। মুসলমানদের হাতে বাংলাদেশও জিহাদ ছাড়া অন্যভাবে বিজিত হয়নি। তেমনি আজও কি জিহাদ ছাড়া ইসলামের বিপক্ষ শক্তির হাত থেকে মুক্তি মিলবে? বরং সত্য তো এটাই,মুসলমানদের সমগ্র অতীত ইতিহাসে জিহাদ ছাড়া কিছু্ই অর্জিত হয়নি। জিহাদ শুধু জান্নাত লাভের দরজাই নয়,পার্থিব জীবনে আল্লাহর রহমত লাভের দরজাও। বাংলাদেশের এ জিহাদ কোন সেক্যুলার ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসানোর লড়াই নয়,বেতন বা বৈষয়ীক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবী নিয়ে সংগ্রামও নয়।এটি কোন দেশ দখলের জিহাদও নয়। বরং স্রেফ মহান আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালা ও তাঁর মহান রাসূলের ইজ্জত রক্ষার জিহাদ। আল্লাহর সাহায্য লাভের এরচেয়ে বড় ওসিলা আর কি হতে পারে?

মুরতাদের ফাঁসীর দাবীর সাথে তাই কোন ঈমানদারের গাদ্দারি করার সুযোগ নাই। এ জিহাদে লক্ষ লক্ষ মানুষ যেমন রাজপথে নেমে এসেছে,তেমনি অর্থদান ও প্রাণদানও শুরু হয়েছে।এটি এক বিশাল আশাপ্রদ দিক। এ জিহাদের লক্ষ্য শুধু মূরতাদদের ফাঁসি নয়।নিছক শেখ হাসিনার পতনও নয়। ব্লাসফেমি আইন প্রবর্তন বা শরিয়তের প্রতিষ্ঠার মধ্যেও এ জিহাদ সীমিত নয়। বরং লক্ষ্য হতে হবে আল্লাহর দ্বীনের পরিপূর্ণ বিজয়। বিশ্বের এ প্রান্তটিতে ইসলামি শক্তির উম্মেষ ও মুসলিম সভ্যতার নির্মান তো একমাত্র এ পথেই হতে পারে। ঈমানদার হওয়ার হওয়ার এ এক বিশাল দায়বদ্ধতা। মহান আল্লাহর খলিফা রূপে কোন মুসলমান কি সে দায়ভার অস্বীকার করতে পারে? অস্বীকার করলে সে কি মুসলমান থাকে? ২৩/০২/১

সূএ:http://www.drfirozmahboobkamal.com/2010-03-24-10-21-22/906-jihad-in-bangladesh-and-the-second-liberation-war-.htmlhttp://www.drfirozmahboobkamal.com/2010-03-24-10-21-22/906-jihad-in-bangladesh-and-the-second-liberation-war-.html

বিষয়: বিবিধ

২৩৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File