অনৈসলামি রাষ্ট্রের অকল্যাণ
লিখেছেন লিখেছেন মনসুর আহামেদ ২৭ মে, ২০১৪, ০২:২৩:১৩ রাত
কেন এ অকল্যাণ?
দুর্বৃত্ত মানুষ যখন হাতে লাঠি বা চাকু পায় তখনই সে অঘটন ঘটায়। তাদের লক্ষ্য যে শুধু মানুষের ধনসম্পদ লুন্ঠন -তা নয়। তারা তো সমাজ ও রাষ্ট্রে একচ্ছত্র প্রভু হতে চায়। লুন্ঠনের পরিধিকে এভাবে তারা সমগ্র রাষ্ট্রময় করতে চায়। রাষ্ট্র যখন পুলিশ, সেনাবাহিনী, আদালত ও প্রশাসনসহ তার প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়ে এমন দুর্বৃত্তের হাতে অধিকৃত হয় তখন সমগ্র দেশবাসীর জীবনে মহা-অকল্যাণ নেমে আসে। হত্যা,ধর্ষণ, চুরিডাকাতির ন্যায় নানারূপ অপরাধকর্ম তখন রাষ্ট্রের নীতি বা সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়ায়। ফিরাউন-নমরুদের ন্যায় দুর্বৃত্তরা যখন রাষ্ট্রের উপর তাদের দখলদারি প্রতিষ্ঠা করেছিল তখন নিজেদেরকে শুধু রাজা রূপে নয়,খোদা রূপেও প্রতিষ্ঠা করেছিল। এমন দুর্বৃত্তকবলিত রাষ্ট্রে সত্য,সুশিক্ষা ও সুবিচার মারা পড়ে। এমনকি হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও হযরত মূসা (আঃ)র মত মহা মানবগণও সে সমাজে ভাল আচরণ পাননি। বরং তাদেরকেও নির্মম হত্যা করার চেষ্টা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যখনই হালাকু-চেঙ্গিজ-হিটলারদের ন্যায় দুর্বৃত্তদের হাতে গেছে তখনই লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে নির্মম নির্যাতন ও মৃত্যু নেমে এসেছে। মানব ইতিহাসের বড় বড় বিপর্যয়গুলো গ্রামগঞ্জে বাসকরা চোর-ডাকাতদের হাতে হয়নি। রোগ-ভোগ, মহামারি বা ঝড় তুফানের হাতেও হয়নি। বরং হয়েছে দুর্বৃত্তদের হাতে রাষ্ট্র যাওয়াতে। মানব জাতির সবচেয়ে বড় দুষমন হলো এসব দুর্বৃত্তরা।মহান আল্লাহতায়ালা তাই এরূপ দুর্বৃত্ত নির্মূলকেও বাধ্যতামূলক করেছেন। এবং নির্মূলের সে কাজকে পবিত্র জিহাদের মর্যাদা দিয়েছেন।
মুসলমানগণ আজ বিশ্বশক্তির মর্যাদা হারিয়ে পদে পদে পরাজয়ের যে গ্লানি বইছে সেটিও রোগ-ভোগ, ভূমিকম্প বা ঝড়তুফানের কারণে নয়। বরং মুসলিম রাষ্ট্রগুলো দুর্বৃত্তদের হাতে অধিকৃত হওয়ায়। এবং সে বিপর্যয় যে কতটা ভয়ানক হতে পারে তারই আধুনিক উদাহরণ হলো আজকের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষ আজ পথে ঘাটে লাশ হচ্ছে, গুম হচ্ছে,ধর্ষিতা হচ্ছে এবং নানা ভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। কিন্তু এ জন্য কি দেশের জলবায়ু বা ভূপ্রকৃতিকে দায়ী করা যায়? বরং মূল কারণঃ রাষ্ট্র অধিকৃত হয়েছে যে দুর্বৃত্তদের হাতে তারা।তাদের হাতে দেশের পুলিশ, সেনাবাহিনী, আদালত ও প্রশাসনসহ সমগ্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পরিণত হয়েছে নির্যাতনের হাতিয়ারে। বনে জঙ্গলে মানুষ লাশ হলে বা ছিনতাইয়ের শিকার হলে যেমন বিচার হয় না, তেমনি বিচার হয় না বাংলাদেশেও। ফিরাউন-নমরুদ-হালাকু-চেঙ্গিজের আমলে মানুষ যেমন তাদের জানমালের নিরাপত্তা হারিয়েছিল,একই রূপ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে এদেশটিতেও।বাংলাদেশের মানুষের আজকের বড় দুষমন তাই যেমন রোগ জীবানূ নয়,তেমনি ঝড়-তুফান এবং চোরডাকাতও নয়। বরং সে ভয়ানক শত্রুটি হলো খোদ সরকার।
ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা রাষ্ট্রের শক্তি-সামর্থ ও গুরুত্বকে সঠিক ভাবে সনাক্ত করেছে। অন্য ধর্মে রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে দখলে নেয়ার নির্দেশ নেই। কিন্তু ইসলামে সে নির্দেশটি বার বার এসেছে। ইসলামের নবী তাই শুধু ধর্মপ্রচারকই ছিলেন না, তিনি রাষ্ট্রের প্রধানও ছিলেন। এরূপ ভিন্নতর নির্দেশের কারণ, ইসলাম যে মহাজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালা থেকে এসেছে তাঁর মহান দৃষ্টি থেকে রাষ্ট্রের সে প্রবল ক্ষমতাটি গোপন থাকার কথা নয়। এজন্যই ইসলামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেককর্ম নফল নামায-রোযা বা দানখয়রাত নয়।মহল্লার ছিঁছকে চোর-ডাকাতদের ধরাও নয়। বরং দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রাষ্ট্রকে বাঁচানো। ইসলামে সেটি সর্বোচ্চ ইবাদত। ইসলামে সে চেষ্টাকেই জিহাদ বলা হয়েছে। নবীজী (সাঃ) ও তার সাহাবাদের জীবনে সবচেয়ে বড় কোরবানী দিতে হয়েছে সে জিহাদে। রাষ্ট্রকে নিজেদের দখলে রাখতে নবীজী (সাঃ)র শতকরা ৭০ ভাগ সাহাবী প্রাণ দিয়েছেন। একটি দেশ কতটা সভ্য রূপে গড়ে উঠবে সে ফয়সালাটি দেশের কলকারখানা, রাস্তাঘাট বা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা থেকে নির্ধারিত হয় না। বরং সেটি নির্ধারিত হয় রাষ্ট্রকে ইসলামি করার কাজে কতটা জিহাদ হলো তা থেকে। যে দেশে সে জিহাদ নাই সে দেশ যে দুর্বৃত্তির সয়লাবে ভেসে যাবে সেটিই হলো নিয়ম। আর তারই প্রমাণ হলো আজকের বাংলাদেশ। আবর্জনা এমনিতে সরে না। সেটি সরানোর কাজ না হলে সমগ্র দেশ তখন আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়। বাংলাদেশে বিগত ৫০ বছরে যত কলকারখানা, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল বা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে তা দেশটির সমগ্র ইতিহাসেও নির্মিত হয়নি। কিন্তু তাতে কি বাংলাদেশের মানুষের সভ্য মানুষ রূপে বেড়ে উঠাটি নিশ্চিত হয়েছে? বরং নির্মিত হয়েছে বাংলার হাজার বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে কদর্যকর ইতিহাস। সেটি যেমন ভিক্ষার তলাহীন ঝুড়ির খেতাব পেয়ে তেমনি বিশ্বমাঝে ৫বার সবচেয়ে দুর্বৃত্তকবলিত দেশ রূপে প্রতিষ্টা পেয়ে।
সূত্র:http://drfirozmahboobkamal.com/2010-03-24-10-18-09/995-the-evils-of-un-islamic-state.html
বিষয়: বিবিধ
১০৪৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন