ঈমানদারির অর্থঃ আত্মদানে চুক্তিবদ্ধ হওয়ামানদারির অর্থঃ

লিখেছেন লিখেছেন মনসুর আহামেদ ২৬ মে, ২০১৪, ১১:১০:০৬ রাত



মুসলমান হওয়ার অর্থ মহান আল্লাহতায়ালার সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়া। সে চুক্তিটি মহান আল্লাহর কাছে তাঁর জানমাল বিক্রির। কোরআনের ভাষায় এটি হলো বাইয়া অর্থাৎ বিক্রয়নামা। মু’মিন এখানে তাঁর জানমাল বিক্রয় করে মহান আল্লাহর কাছে। প্রতিদানে সে মহান আল্লাহতায়ালা থেকে পায় জান্নাত। সে চুক্তিনামাটি পবিত্র কোরআনে ঘোষিত হয়েছে এভাবে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ মু’মিনের নিকট থেকে তার জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন, তাদের জন্য এর বিনিময়ে রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, নিধন করে এবং নিহত হয়।” –(সুরা তাওবাহ, আয়াত ১১১)। মুমিনের কাছ থেকে সে বাইয়াতনামাহ নিতে আল্লাহতায়ালা স্বয়ং পৃথিবীপৃষ্টে নেমে আসেন না। তার পক্ষ থেকে সে কাজটি করেন আল্লাহর নবী। নবীর অবর্তমানে সে বাইয়াতের কাজটি করে ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফা। তাই বলা হয়, সাহাবাগণ যখন নবীর হাত ধরে বাইয়াত করতেন তখন সেখানে মুমিনের হাতের সাথে শুধু নবীজী (সাঃ)র হাতই থাকতো না। সে দু’টি হাতের উপর আরেকটি হাত থাকতো, এবং সেটি মহান আল্লাহর। অথচ সে বাইয়াত আজ পীর-দরবেশদের মুরিদ রূপে আনুগত্য জাহিরের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং বাদ পড়েছে আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ে জিহাদ এবং জানমালের কোরবানীর বিষয়। নবীজী (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের আমলে মুসলিম রাষ্ট্রে সৈন্য পালতে গ্রীক, রোমান বা পারসিকদের ন্যায় বড় বড় সেনানিবাস গড়তে হয়নি। বড় বড় কেল্লাও নির্মিত হয়নি। বরং প্রতিটি জনপদ ছিল সেনানিবাস, প্রতিটি ঘর ছিল কেল্লা। যুদ্ধের প্রয়োজন হলে রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে একটি ঘোষণাই যথেষ্ট হতো। চাষাবাদ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ন্যায় যুদ্ধবিদ্ধাও তারা নিজ গরজে শিখতো। নিজ খরচে অস্ত্র কিনে, নিজ অর্থে যুদ্ধের রশদ সংগ্রহ করে এবং নিজের ঘোড়া বা নিজের উঠ নিয়ে শত শত মাইল দূরের রণাঙ্গনে গিয়ে হাজির হতো। সে যুদ্ধে প্রাণও দিত। ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থ এবং মুসলিম ভূমি এভাবেই তখন সুরক্ষা পেত।

অথচ রাষ্ট্র যখন ইসলামের বিপক্ষ শক্তির হাতে অধিকৃত হয় তখন নিষিদ্ধ হয় ইসলামের সর্বোচ্চ ইবাদত এ জিহাদ। এসব রাষ্ট্রের শাসকগণ জিহাদীদের গণ্য করে নিজেদের প্রতিপক্ষ রূপে এবং নিষিদ্ধ করে আল্লাহর সাথে কৃত বাইয়াতের শর্ত্ব পালন। তখন আইন করে বন্ধ করা হয় ইসলামের নামে সংগঠিত হওয়া এবং শরিয়তের প্রতিষ্ঠার যে কোন উদ্যোগ। এভাবেই জনগণের জন্য দুরুহ করা হয় জান্নাতের পথে পথচলা। বরং সরকারি প্রতিষ্ঠান, সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী ও বিচারব্যবস্থাসহ সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান লিপ্ত হয় শয়তানের এজেণ্ডা সফল করায়। রাষ্ট্রীয় কর্মচারি, সেনাসদস্য ও পুলিশ তখন স্বৈরাচারি শাসকের নওকরে পরিনত হয়। ইসলাম, মুসলিম ভূমি ও মুসলমানের জানমাল বিপন্ন হলেও এমন রাষ্ট্রে তখন জিহাদ শুরু হয়না।

মুসলমানদের আজকের পরাজিত দশা এজন্য নয় যে মুসলিম দেশগুলোতে কোরআন-হাদীস বা মসজিদ মাদ্রাসার কমতি রয়েছে। বরং অতীতের তুলনায় মসজিদ মাদ্রাসার সংখ্যা হাজার গুণ বেড়েছে। নবীজী(সাঃ) শাসনামলে এমনকি খোলাফায়ে রাশেদার আমলেও কোন সাহাবার ঘরে একখানি পুরা কোরআন ছিল না। হযরত উসমান (রাঃ) খলিফা থাকা কালে পূর্ণাঙ্গ কোরআন পুস্তাকারে ছিল মাত্র ৪ খানি। অথচ আজ ঘরে ঘরে কোরআন মজিদ ও কোরআনের তাফসির। আর হাদীস গ্রন্থ? সে সময় কোন হাদীস গ্রন্থই ছিল না। অথচ আজ যে কোন ব্যক্তি বিছানায় শুয়ে শুয়ে হাজার হাজার হাদীস পাঠ করতে পারে। কিন্তু প্রাথমিক কালে হাদীসের সে রূপ শিক্ষা লাভে হাজার হাজার মাইলের দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে নানা দেশের নানা স্থানে গিয়ে বিক্ষিপ্ত সাহাবা ও তাবে-তাবেয়ীনদের নিকট থেকে হাদীস শিখতে হতো।

মুসলমানদের আজকের পরাজয়ের মূল কারণটি অন্যত্র। সেটি ইসলামি রাষ্ট্রের অনুপস্থিতি। কোরআন হাদীস আজ ঘরে ঘরে বেঁচে থাকলেও সমগ্র মুসলিম জাহানে ইসলামি রাষ্ট্র বেঁচে নাই। রাষ্ট্র অধিকৃত হয়ে গেছে ইসলামের শত্রু শক্তির হাতে। আজকের মুসলমানদের এটিই সবচেয়ে বড় বিপদ। চোর-ডাকাতদের হাতে ঘরবাড়ি অধিকৃত হলে এতবড় ক্ষতি হয় না। কারণ তখনও ঈমান বেঁচে থাকে। কিন্তু রাষ্ট্র দুর্বৃত্ত জাহেলদের হাতে অধিকৃত হলে ঈমানকে বাঁচতে দেয়া হয় না। আর ঈমান বেঁচে থাকলে আল্লাহর শরিয়তের বিধানের এমন পরাজয়ে মুসলিম বিশ্বে জিহাদ কি অনিবার্য হতো না? শয়তানের খলিফাদের দখলদারির বিরুদ্ধে জিহাদ যে শুরু হয়নি সেটিই প্রমাণ করে ঈমান তার সুস্থ্যতা নিয়ে খুব একটা বেশী মানুষের মাঝে বেঁচে নাই।

তথ্য সূত্রে: http://drfirozmahboobkamal.com/2010-03-24-10-18-09/995-the-evils-of-un-islamic-state.html

বিষয়: বিবিধ

১১২১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

226754
২৬ মে ২০১৪ রাত ১১:৩৮
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : চমৎকার লেখা, সরাসরি প্রিয়তে
226810
২৭ মে ২০১৪ রাত ০২:২১
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : শাহ আলম বাদশা ভাই, আপনার কমেন্ট দেখি
মাঝে মধ্যে , এতে বুঝে নিয়েছি। আপনার হৃদ্বয়
রয়েছে ইসলামী আন্দোলনের প্রতি।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File