লড়াই এবার ইসলাম ও দেশ বাঁচানোর দখলদারি শত্রুশক্রির জোগালদারদের
লিখেছেন লিখেছেন মনসুর আহামেদ ২২ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৬:২১:১৬ সকাল
আওয়ামী বাকশালীগণ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই মহা বিপর্যয় ঘটে। তখন যে শুধু গণতান্ত্রিক অধিকার ছিনতাই হয় তা নয়,হায়েনার হাত পড়ে দেশ ও দেশবাসীর ইজ্জতে। বিশ্ববাসীর সামনে বাংলাদেশের মুখ তখন কালিমালিপ্ত হয়।এবং দুর্ভোগ বাড়ে জনগণের।সেটি যেমন মুজিবের আমলে ঘটেছিল,তেমনি হাসিনার আমলেও।অথচ যে কোন দায়িত্বশীল সরকারের মূল কাজটি তো দেশের মুখ উজ্বল করা ও দেশবাসীর সুখশান্তি বাড়ানো। অথচ আওয়ামী বাকশালীদের সে ভাবনা নাই। আর সেটি থাকার কথাও নয়।কারণ তাদের রাজনীতির মূল এজেন্ডা,ভারতের আগ্রাসী রাজনীতির জোগালদারি। দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষা যেমন নয়,দেশ ও দেশবাসীর ইজ্জত বাঁচানোও নয়।তাই ভারত যখন বাংলাদেশে চুরি-ডাকাতি করে তখন তাদের কাজ হয় সে লুন্ঠনে জোগালের কাজ করা।সেটি সুস্পষ্ট হয়ে যায় একাত্তরেই। ভারতীয় বাহিনীর ডাকাতি শুরু হয় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে পূর্ব পাকিস্তানের উপর তাদের দখলদারি প্রতিষ্ঠার পরই। তখন ডাকাতির লক্ষ্যবস্তু ছিল পাকিস্তান আর্মির অব্যবহৃত হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র ও অবাঙালীদের মালিকাধীন শিল্পকারখানা ও তাদের গৃহের সহায় সম্পদ। সে ডাকাতির প্রতিবাদ করতে গিয়ে সামরিক বাহিনীর চাকুরি হারিয়েছিলেন এবং বন্দী হয়েছিলেন মেজর আব্দুল জলীল। অথচ বাকশালী জোগালেরা সেদিন টু’শব্দটি পর্যন্ত করেনি।বরং তাদের মুখে তখন প্রচন্ড ভারত-বন্দনা।সে বন্দনাটি এখনও অব্যাহত। আর যে ভাবনা থেকে জন্ম নেয় এমন ভারত-বন্দনা তাকেই তারা বলে একাত্তরের চেতনা।বাংলাদেশের ভূমি,নদ-নদী,সীমান্তু,সম্পদ,নারী-পুরুষ,গরুমহিষের উপর ভারতীয়দের পক্ষ থেকে ডাকাতি হলে এ চেতনাধারিরা প্রতিবাদ করে না।
এ জোগালদারদের ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতার মসনদকে টিকে থাকাটি সুনিশ্চিত করে ভারত।সেটি যেমন ১৯৭০, ১৯৭১ ও ২০০৮ সালে যেমন দেখা গেছে,তেমনি সেটি ২০১৪ সালেও দেখা গেল।বাংলাদেশের বাইরে একমাত্র ভারতই তাদের নির্ভরযোগ্য মিত্র।জোগালদার পালার এ রাজনীতিতে ভারতের বিনিয়োগটি হাজার হাজার কোটি টাকার।আসামের দৈনিক নববার্তা লিখেছে,একমাত্র ২০০৮ সালের নির্বাচনেই ভারতের বিনিয়োগটি ছিল ৮০০ কোটি ভারতীয় রুপির।২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রস্তাবিত বিনিয়োগটি ছিল ১০০০ কোটি রুপির।নির্বাচনের বাইরেও তাদের রয়েছে শত শত কোটির টাকার বিনিয়োগ। তবে এ হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগটি যে ভারতীয়দের নিজস্ব ভান্ডার থেকে আসছে তা নয়। ডাকাত সর্দার কখনই নিজের জমিজমা বিক্রি করে ডাকাত পালে না। সে অর্থটি আসে লুন্ঠিত মালামাল থেকে। একই রূপ কইয়ের তেলে কই ভাজার নীতি ভারতীয়দের।বাকশালী জোগালদারদের সহযোগিতায় ভারত পেয়েছে ১৬ কোটি মানুষের বিশাল বাজার।এর চেয়ে ক্ষুদ্রতর বাজারের উপর দখল নিতে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেশেরা ৫ হাজার মাইল দূর থেকে বহু সাগর ও মহাসাগর পাড়ি দিয়ে এসেছিল। সে বাজার ধরে রাখতে যুদ্ধ করেছিল এবং সেসব যুদ্ধে জানমালের বিনিয়োগও করেছিল।
ভারতীয়দের কাছে বাংলাদেশের পরিচিতিটি আদৌ স্বাধীন দেশ রূপে নয়।তারা ভাবে,দেশটি তাদের নিজস্ব যুদ্ধের কামাই। ভাবে,তারা যুদ্ধ না করলে একাত্তরে বাংলাদেশের জন্মই হতো না।ফলে তাদের যুক্তি,জন্মসূত্রেই ভারতের কাছে বাংলাদেশ দায়বদ্ধ।এখন উচিত আজীবন ভারতের পদসেবা করে বাঁচা। সন্তান যেমন পিতাকে অস্বীকার করতে পারে না,বাংলাদেশও তেমনি পারে না ভারতকে অস্বীকার করতে।এমন ধারণাটি যে শুধু ভারতীয়দের -তা নয়। আওয়ামী বাকশালীদেরও।এমন কি বহু অ-আওয়ামীলীগারদেরও। তাই ভারতের কাছ থেকে ট্রানজিটের ফি নেয়াকে এরা বেয়াদবি মনে করে। কারণ পিতা থেকে তো আর ভাড়া আদায় করা যায় না।ভারত চায়,বাংলাদেশের রাজনীতির উপর দখলদারিটা এমন পদসেবী জোগালদারদের হাতেই চিরকাল থাকুক।
হাত পড়েছে ইজ্জতে
আওয়ামী বাকশালীরা বাংলাদেশকে কি দিয়েছে এবং কি নিয়েছে -সেটি আজ আর গোপন বিষয় নয়। মুজিবের ক্ষমতায় আসাতে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছিল ভিক্ষার তলাহীন ঝুড়ি রূপে।ঘরে ঘরে ভিক্ষা কুড়াতে ভিক্ষুকের তবুও তলাসর্বস্ব একটি থলি থাকে।থলির তলায় ফুটো দেখা দিলে সেটির সে মেরামত করে। যা কিছু ভিক্ষা পায়,ভিক্ষুক তো এভাবেই সেগুলি ধরে রাখে।কিন্তু মুজিবের হাতে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল ভিক্ষার এমন এক ঝুলিতে যার কোন তলা ছিল না। তলা না থাকায় বিভিন্ন দাতা দেশ ও দাতা প্রতিষ্ঠান যা দিত তার বিশাল অংশ দেশে না থেকে প্রতিবেশী ভারতে গিয়ে পৌঁছতো। রিলিফের সামগ্রী তখন কলকাতা,আগরতলা,গৌহাটির ন্যায় ভারতীয় নগরগুলির ফুটপাথে বিক্রি হতো। তখন দেশে সীমান্ত বলে কিছু ছিল না,সীমান্ত বাণিজ্যের নামে মুজিব সেটির পুরাটাই ধ্বসিয়ে দিয়েছিলেন। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকার খয়রাত লাভের পরও দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ এসেছিল। সে দুর্ভিক্ষে বহুলক্ষ বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছিল।অথচ ফুলে ফেঁপে মোটা হয়েছিল আওয়ামী বাকশালীরা। ব্যবসা-বাণিজ্য না থাকা সত্ত্বেও ধানমন্ডি,গুলশান, বনানীতে তারা বড় বড় বাড়ীর মালিক হয়েছিলেন। বিপুল সম্পদ বেড়েছিল মুজিবেরও। দেশের মুখে কালিমা লেপন ও দেশবাসীর ভাগ্যে দুর্ভোগ বাড়ানোর সে ধারাটি মুজিবের ন্যায় অব্যাহত রেখেছে মুজিব কন্যা হাসিনাও। হাসিনার প্রথমবার ক্ষমতায় আসাতে বাংলাদেশ অর্জন করে দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে প্রথম হওয়ার খেতাব। আর দ্বিতীয়বারে রেকর্ড গড়লো ভোট ডাকাতিতে।আওয়ামী বাকশালীরা এভাবেই দেশ ও দেশবাসীর ইজ্জতে বার বার হাত দিয়েছে।
বাংলাদেশে নির্বাচনের নামে যা কিছু হলো তা অন্য সভ্যদেশে হয় না। আগে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অধিকৃত হতো সামরিক শক্তির জোরে। আর ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশ অধিকৃত হলো ভোট ডাকাতির মাধ্যমে। নিউইয়র্ক টাইমস ৬/১/১৪ তারিখে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে লিখেছেঃ প্রতিযোগিতার অভাবে বাংলাদেশে একটি অদ্ভুত নির্বাচন হলো -বিশেষ করে গতিশীল গণতন্ত্রের ঐহিত্য বিবেচনায়। নির্বাচনের আগেই ৩০০ আসনের সংসদে সরকারি দলের প্রার্থীরা অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা ভোটে জয়ী হয়ে বসেছিলেন। এসব আসনে ভোট হয় নি। ফলে ৪ কোটি ৮০ লাখ ভোটারকে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। পত্রিকাটি লিখেছে, রবিবারের ঐ নির্বাচনে শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসেই সবচেয়ে কম ভোট পড়েনি, সম্ভবত কম ভোট পড়ার হিসেবে এটি এক বিশ্ব রেকর্ড।
বাংলাদেশের সরকার বা জনগণ ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যাই ভাবুক না কেন বিশ্ববাসী জানতে পারলো বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থানটি এখন কোথায়। ডাকাতের গ্রাম রূপে পরিচিতি পেলে সে গ্রামে ঘরে ঘরে বিল্ডিং ও সম্পদের পাহাড় গড়ে উঠলেও তাতে ইজ্জত বাড়ে না। অন্য গ্রামের মানুষেরা এমন গ্রামের মানুষকে ঘৃনা করে। বাংলাদেশে এতকাল ডাকাতি হয়েছে ব্যাংক,শেয়ার বাজার,সরকারি তহবিল,সরকারি প্রকল্পের টেন্ডার,বিশ্বব্যাংকের অর্থ,সরকারি ভূমি, রাস্তার গাছ,নদীর তীরের উপর। এবার ডাকাতি হলো জনগণের ভোটের উপর। ফলে বাংলাদেশ পরিচিতি পেল ভোট ডাকাতের দেশ রূপে। শেখ হাসিনা ও দলীয় নেতাকর্মীগণ কি একটি বারও ভেবে দেখেছে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে কতবড় ইজ্জতহানি হলো? বিয়ের আগে যেমন বাচ্চা প্রসব হয় না,তেমনি ভোটের আগে কোন দেশে কেউ এমপি নির্বাচিত হয় না। অথচ ১৫৩ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। কোন সভ্যদেশের শাসনতন্ত্র কি এমন নির্বাচনকে বৈধতা দেয়? বৈধতা দেয় না বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রও।বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র বলে,কাউকে সংসদে এমপি রূপে বসতে হলে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে তাকে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। কিন্তু ১৫৩ আসনে সেটি হয়নি। বাকি ১৪৭ আসনে ভোট হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সে নির্বাচনকে বর্জন করেছে। ৪১টি কেন্দ্রে একজনও ভোট দিতে যায়নি।
নির্বাচন বর্জনে রেকর্ড ও জনগণের বিজয়
আওয়ামী বাকশালীরা রেকর্ড গড়েছে ভোট ডাকাতিতে,আর জনগণের রেকর্ডটি হলো নির্বাচন বয়কটে। এ নির্বাচন যে জনগণ বর্জন করেছে তা নিয়ে সরকারি দলের কর্মকর্তাদেরও কি কোন সন্দেহ আছে? এ বর্জনকে অস্বীকারের অর্থ দিনের জ্বলন্ত সূর্যকে অস্বীকার করা। নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে জনগণ ছিনিয়ে নিয়েছে সরকারের বৈধতা ও আন্তর্জাতিক গ্রহনযোগ্যতা। এখানেই জনগণের অভূতপূর্ব বিজয়।নির্বাচনের প্রক্রিয়া যখন ভোট ডাকাতদের হাতে অধিকৃত হয় তখন শতকরা ১০০ ভাগ হারে ভোট দিয়েও কি ডাকাতদের পরাজিত করা যায়? জনগণ ভোট দিতে পারে,কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল তো ঠিক করে ভোট-ডাকাতেরা।এরূপ ভোট ডাকাতির কারণে সিরিয়ার স্বৈরাচারি হাফেজ আল আসাদ কোন বারই শতকরা ৯৯ ভাগের চেয়ে কম ভোট পায়নি।শতকরা ৯০ভাগের বেশী ভোট পেতেন মিশরের হোসনী মুবারক।
এবার ভোট ডাকাতির জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি ছিল আওয়ামী বাকশালীদের। এবং সেটি গোপন থাকেনি দেশের সজাগ জনগণের কাছেও। জনগণের পক্ষ থেকে এ সাঁজানো নির্বাচন বর্জনের মূল কারণ তো এ বাস্তব উপলদ্ধি।এমন কি নির্বাচনের নামে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রটি ধরা পড়েছিল বিদেশীদের কাছেও। ফলে এ নির্বাচন যে আদৌ নির্বাচন নয় সেটি বিদেশীরা জানিয়ে দিয়েছে কোন পর্যবেক্ষক না পাঠিয়ে।ভোট ডাকাতির মাধ্যমে আওয়ামী বাকশালীগণ তাই বিজয় অর্জন করলেও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি কোন মহলেই। সেটি যেমন দেশে,তেমনি বিদেশে। কারণ চোর-ডাকাতদের যারা সমর্থণ দেয় তাদেরও তো সম্মান বাঁচে না। তাই হাসিনা বিশাল বিজয় দাবী করলেও এ বিজয়ের জন্য হাসিনাকে কোন রাষ্ট্রপ্রধানই এ পর্যন্ত অভিনন্দন জানায়নি। বরং জাতিসংঘের সেক্রটারি জেনারেল বান কি মুন তো জানিয়ে দিয়েছে,জাতিসংঘ চায় পুণরায় নির্বাচন যাতে অংশ গ্রহণ থাকতে হবে সকল দলের। এমন কি অভিনন্দন জানায়নি হাসিনার প্রভু ভারতও।ভারতের পক্ষ থেকে অভিনন্দন না জানানোরও বোধগম্য হেতু আছে। ডাকাতের বাপ তার পুত্রকে গোপনে যতই ডাকাতিতে উৎসাহ দিক না কেন,জনসম্মুখে সমর্থণ দেয় না। সেটি করলে পথে ঘাটে চলা তো তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। সে নিজেও তখন ডাকাত রূপে প্রমাণিত হয়।আওয়ামী বাকশালীগণ যতই নির্লজ্জ হোক,অন্যরা কেন তাদের স্বার্থে এতটা বেহায়া হতে যাবে?
জনগণ কেন নির্বাচন বর্জন করলো -সেটি কি আওয়ামী বাকশালী একবারও ভেবে দেখেছে? স্বৈরাচারি শাসনে জনগণের ভোটদানের অধিকার থাকে না। সে অধিকার অর্জনে জনগণকে লড়াই করতে হয়।সে লড়াইয়ে জনগণকে জানমালের কোরবানিও দিতে হয়। গুরুত্বপূর্ণ ও কষ্টার্জিত সে অধিকারকে জনগণ সহজে বর্জন করবে সেটি কি ভাবা যায়? বরং জনগণ তো প্রচন্ড ত্যাগ স্বীকার করে সে গণতান্ত্রিক অধিকারের সংরক্ষণে। জনগণ তো তখনই নির্বাচন বর্জন করে যখন পরিস্কার বুঝতে পারে,তাদের ভোটদান নির্বাচনে কোন প্রভাবই ফেলবে না। নির্বাচনে অংশগ্রহণ তাদের কাছে তখন অনর্থক মনে হয়। সে বিশ্বাসেরই প্রতিফল ঘটেছে তাদের নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে। তাছাড়া যে আশংকা নিয়ে জনগণ নির্বাচনকে বর্জন করলো সেটিও কি মিথ্যা ছিল? বরং সেটি যে শতভাগ সঠিক ছিল সেটিও তো প্রমাণ করেছে খোদ হাসিনা সরকার। সে প্রমান করেছে সীমাহীন ভোট ডাকাতির মাধ্যমে। ভোট ডাকাতদের কাছে জনগণ এতটাই অসহায় যে শতকরা ১০০ ভাগ ভোটারও যদি ভোট দিত তবুও কি সরকারের বিজয়ে কোন বাধা সৃষ্টি করতো পারতো? আদালতের রায়,শাসনতন্ত্রে পরিবর্তন, দলীয় লোককে নির্বাচনি কমিশনার রূপে নিয়োগ, প্রশাসনে রদবদল –সবই তো করা হয়েছে ভোট ডাকাতির স্বার্থে।
গণতন্ত্রের মুখোশ ও নিরেট স্বৈরাচার
সরকারের মূল দায়ভারটি তো সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখানো। গণতন্ত্রের সেটিই তো মূল কথা। সংবিধান এখানে কোন বাধা হতে পারে না। বরং সংবিধানকে তার বিধান পাল্টিয়ে জনগণের ইচ্ছার সাথে সামঞ্জস্যশীল হতে হয়। নইলে খোদ সংবিধানকে আস্তাকুরে যেতে হয়।সংবিধান তো স্বৈরাচারি শাসকদেরও থাকে। কিন্তু স্বৈরাচারি শাসকদের প্রণীত সংবিধানের লক্ষ্য হয়,স্বৈরাচারি শাসনকে আইনগত বৈধতা দেয়া। হাসিনার আচরণ কি তা থেকে ভিন্নতর? গণরায়ের প্রতি হাসিনার সামান্যতম শ্রদ্ধা থাকলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি মেনে নেয়া উচিত ছিল। এটি যে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দাবী -তা নিয়ে কি শেখ হাসিনারও কি সামান্যতম সন্দেহ আছে? তার দলের বিরোধীতা অর্থ তো সংখ্যাগরিষ্ঠদের বিরোধীতা নয়। তার দল কি শতকরা ৩৫ ভাগের বেশী জনসমর্থণ রাখে? তাছাড়া তিনি নিজেও তো এর পক্ষে আন্দোলন করেছেন। তিনি বলে থাকেনঅনির্বাচিত শাসনকে রুখতেই তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে বিলুপ্ত করেছেন। আসলে কি তাই? ৫ই জানুয়ারির ভোটারহীন নির্বাচনের পর যারা শাসন করতে যাচ্ছে তারা কি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত? ক’জন ভোট দিয়েছে তাদের পক্ষে?
শেখ হাসিনার অপরাধ,নিজের ক্ষমতায় থাকাকে নিশ্চিত করতেই তিনি সংবিধানে পরিবর্তন এনেছেন। সে সাংবিধানিক পরিবর্তনটির মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্বটি তিনি নিজ হাতে রাখার বিধান এনেছেন।এমন একটি সাংবিধানিক সংশোধনীকে তিনি মহৎ কর্ম রূপে চিত্রিত করেন।অথচ দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান রাখতে সংবিধানে সংশোধনের দাবি করলো তখন সেটি আর তার কাছ মহৎ কর্ম মনে হয়নি।তিনি বরং সংশোধনীর বিরুদ্ধে সংবিধানের রক্ষক সেজেছেন। ভন্ডামী আর কাকে বলে? হাসিনার স্বার্থপরতা ও কুমতলব কি এরপরও গোপন থাকে? তিনি যে আসলে স্বৈরাচারি,এবং গণতন্ত্রের মুখোশ পড়েছেন স্রেফ জনগণকে ধোকা দেয়ার জন্য সেটি কি জনগণ বুঝে না? তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে আদালতের রায়ের দোহাই দেন। অথচ আদালত কোন আইন সভা বা পার্লামেন্ট নয়। বিচারকদের অধিকার নেই যে তারা দেশের শাসনতন্ত্রে পরিবর্তন আনে বা দেশে কোন আইনের জন্ম দেয়। আইন তৈরী ও সংবিধান তৈরীর দায়িত্ব তো পার্লামেন্টের।তাছাড়া বিচারকগণই বা কোথায় ন্যায়বিচারের প্রমাণ রেখেছেন? তারা তো শেখ হাসিনার স্বৈরাচারি খায়েশ পূরণে দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় নেমেছেন।শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে বলেছেন,তার খায়েশ ছিল যুদ্ধাপরাধী রূপে যাদের আদালতে তোলা হয়েছে তাদের অন্তত একজনকে ১৬ই ডিসেম্বরের আগে ফাঁসীতে ঝুলানো। আগেকার দিনে দিনে রাজার খায়েশ পূরণে তার সামনে মানুষ বলি করা হতো। আর হাসিনাকে খুশি করতে আব্দুল কাদের মোল্লার মত একজন নিরীহ ও নির্দোষ মানুষকে হত্যা করা হলো। আর সেটি আদালতের হুকুমে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে যে বিচারক বেআইনী বলে রায় দিয়েছিলেন তার চরিত্রটা দেখা যাক। তিনি হলেন দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি জনাব খায়রুল হক। অথচ রায় প্রদানের কিছু দিন পরই প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণতহবিল থেকে তিনি ১০ লাখ টাকা ত্রাণ নিয়েছেন। এটি কি রাজনৈতিক ত্রাণ না হাসিনা পক্ষে রায় প্রদানের ফি? হাসিনা সম্প্রতি আগামী নিবার্চনের আগে সমঝোতার মূলা ঝুলিয়েছেন। এটি কি কম মশকরা? দেশ এখন সংকটে মরণাপন্ন।দেশের অর্থনীতি দ্রুত ধ্বংসের পথে। জনগণ চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সত্বর একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন। চায় জনগণের সরকার। আর তিনি এ সংকটের চিকিৎসা নিয়ে চিন্তাভাবনা করবেন ৫ বছর পর! অর্থাৎ দেশের সর্বনাশটি পুরাপুরি সমাধা করার পর?
গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে মূল লড়াইটি হয় নির্বাচনে। সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া তাই গণতন্ত্র বাঁচে না। জনগণের সরকারও নির্বাচিত হয় না। স্বৈরাচারি শাসকদের মূল এজেন্ডা তাই নিরপক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি নির্মূলে।নির্বাচনই জনগণকে দেয় নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার। সংবিধানের মূল কাজ তো নাগরিকের জন্য ভোটের সে অধিকারকে সুনিশ্চিত করা। অধিকারটি সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজনে সংবিধানকেও সংশোধন করতে হয়। সে সাথে জনগণকে ভোট কেন্দ্রে আনারও ব্যবস্থা করতে হয়ে। অথচ হাসিনা সরকার ব্যর্থ হয়েছে জনগণকে ভোট কেন্দ্রে আনায়। এ কাজে ব্যর্থ হলে কি সংবিধান পুঁজায় গণতন্ত্র বাঁচে? জনগণকে ভোট কেন্দ্রের বাইরে রেখে নির্বাচন হলে সেটি কি সুস্থ্য মানুষের কাছে নির্বাচন রূপে স্বীকৃতি পায়? রাজনীতির খেলাটি তারা শুধু নিজেরা খেলতে চায়। তাই জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচনের বাইরে রেখেছে আদালতের পরিকল্পিত রায়ের মাধ্যমে। ১৮ই দলের জোটকে বাইরে রাখার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে পরিকল্পিত ভাবে।ভোটদানের অধিকারটি প্রতিটি নাগরিকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।ভোটদানের মাধ্যমেই সরকারের সাথে জনগণের বন্ধন গড়ে উঠে।গড়ে উঠে নির্বাচিত সরকারের উপর জনগণর উপর আস্থা। গণতান্ত্রিক শাসন তো বাঁচে সে আস্থা ও বন্ধনের উপর ভিত্তি করে। তখন দেশ শাসনে রাস্তাঘাটে ও ঘরে ঘরে যৌথ বাহিনীর সেপাইদের পাঠানো লাগে না। অথচ সুষ্ঠ নির্বাচন না হলে জনগণের সাথে সরকারের সে বন্ধনটি গড়ে উঠে না। তখন মৃত্যু ঘটে গণতন্ত্রের, এমন পরিস্থিতিতে যা বেড়ে উঠে সেটি নিরেট স্বৈরতন্ত্র। তখন সরকার বাঁচে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মদদে। হাসিনার সরকার তেমন একটি আস্থার পরিবেশ গড়ে তুলতে পুরাপুরি ব্যর্থ হয়েছে। বরং বেড়ে উঠেছে প্রবল অনাস্থা। আর সে অনাস্থাই প্রকাশ পেল ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে প্রায় শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ভোটারের নির্বাচন বর্জন করার মধ্য দিয়ে।
যে আশংকাটি শতভাগ সত্য প্রমাণিত হলো
৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে যে সত্যটি আবার প্রমাণিত হলো তা হলো,নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়ভার কোন দলের হাতে থাকলে বাংলাদেশে সে দলটির নির্বাচন জিততে ভোট লাগে না।ভোটারদের তখন কষ্ট করে ভোট কেন্দ্রে যাওয়া লাগে না। সরকারি দলের পক্ষে ভোট ঢালার দায়িত্বটি সরকারি আমলা ও দলীয় কর্মীগণ নিজেরা নিয়ে নেয়। জনগণ ভোট না দিলেও বালোট বক্স তখন ভোটে উপচিয়ে পড়ে।৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে সেটিই তো দেখা গেল। তবে সরকারি আমলাগণ যেসব কেন্দ্রে ভোট ডাকাতিতে অংশ নেয়নি সেখানকার চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের পক্ষ থেকে ভোট না ঢালায় ৪১টি কেন্দ্রে সারা দিনেও কোন ভোট পড়েনি।বহু কেন্দ্র রয়েছে যেখানে মাত্র ৫ থেকে ১০টি ভোট পড়েছে। দৈনিক মানব জমিন,৬/১/১৪ এর রিপোর্টঃ বেশিরভাগ কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১৫-২০টি করে, অসংখ্য কেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি, ভোট দেননি অনেক আ.লীগ সমর্থকও। দৈনিক যুগান্তর,০৬/০১/১৪ তারিখে লিখেছে,“লালমনিরহাট সদর আসনের ২৭টি, জামালপুর-৪ আসনের ৪টি, বগুড়া-৭ আসনের একটি,রাজশাহীর বাঘা-চারঘাট আসনের একটি,সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের ৪টি, সাতক্ষীরার ৪টি,কক্সবাজারের উখিয়ার ১টি, ফেনী-২ আসনে ২টি এবং নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ২টি ভোট কেন্দ্রে একটি ভোটও কাস্ট হয়নি।
তবে জনগণের যে নির্বাচন বর্জন করেছে সেটি ঢাকতে হাসিনা সরকারের চেষ্টাতে কমতি ছিল না। ভোটকেন্দ্রের সামনে দলীয় ক্যাডারদের ঘন্টার ঘন্টার পর সারিবদ্ধ দাঁড় করিয়ে রেখেছে শুধু সাংবাদিকদের দেখানোর জন্য যে নির্বাচনে জনগণ অংশ নিচেছ। বহুস্থানে ভোটের বন্যা সৃষ্টি করা হয়েছে সরকারি উদ্যোগে। সেটির উদাহরণ শেখ হাসিনার নিজস্ব নির্বাচনি এলাকা গোপালগঞ্জ। দৈনিক প্রথম আলো ৬/১/১৪ তারিখে লিখেছে,“গোপালগঞ্জ -৩ আসনে মোট ভোটের সংখ্যা ২ লাখ ১১ হাজার ৮৩৯। সে আসনে শেখ হাসিনা ১ লাখ ৮৭ হাজার ১৮৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।” অর্থাৎ শেখ হাসিনা ভোট পেয়েছেন ৮৮.৩৬% । এর অর্থ দাঁড়ায়, উক্ত এলাকার প্রতি দশ জনের মাঝে ৯ জনই ভোট কেন্দ্রে এসেছে এবং হাসিনাকে ভোটও দিয়েছে! প্রশ্ন হলো,নির্বাচনে যখন তীব্র প্রতিযোগিতা থাকে এবং সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ থাকে তখনও কি এত ভোট পড়ে? ভোটদানে সাধারণ মানুষের আগ্রহ তো তখন বাড়ে যখন তারা নিজের প্রিয়প্রার্থিকে প্রবল প্রতিযোগিতার মুখে বিজয়ী করতে চায়। হাসিনার বিরুদ্ধে তো কোন প্রতিযোগী প্রার্থীই ছিল না। তাকে বিজয়ী করার জন্য লক্ষাধিক মানুষ নিজের কাজকর্ম ফেলে ভোট কেন্দ্রে আশাটি জরুরী ভাববে সেটি কি ভাবা যায়? ফলে হাসিনার নির্বাচনি এলাকায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ১৮৫ ভোট পড়বে সেটি বিবেচনায় আশে কি করে? এটি যে নিরেট মিথ্যাচার সেটি জানা যাবে গোপালগঞ্জে গিয়ে কিছু মানুষকে জিজ্ঞেস করলেই। সরকারি আমলাগণ যে কত সহজে স্বৈরশাসকদের জোগালে পরিণত হয় এ হলো তার প্রমাণ। ঢাকা য়াকাঢা৫ আসনে আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী হাবিবুর রহমান মোল্লা নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ৬ হাজার ৬৬৬ ভোট। কুমিল্লা-১ আসনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী সুবিদ আলী ভূঁইয়া ৯০ হাজার ৩৭৮ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। কুমিল্লা-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন ৭৮ হাজার ৬৪৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।এগুলোও কি বিশ্বাসযোগ্য? অনিয়ম হয়েছে অন্যভাবেও। সরকার সমর্থক পত্রিকা দৈনিক ইত্তেফাক ৬/১/১৪ তারিখে রিপোর্ট করেছেঃ “ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি আসনে প্রকৃত ভোটের ফলাফলে পরাজিত হওয়া প্রার্থীদের প্রশাসনের সহযোগিতায় জিতিয়ে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় ভোটার ও গণমাধ্যম কর্মীদের দাবি,এসব আসনে প্রশাসন ফল পাল্টে দিয়েছে।সূত্রমতে,ঢাকা-৪,ঢাকা-৬,লালমনিরহাট-২,লালমনিরহাট-৩,ঢাকা-১৭,বগুড়ার ১টি আসন, খুলনার দুটি আসন এবং কুষ্টিয়ার ১টিসহ অনেকগুলো আসনে ফল পাল্টে ফেলা হয়েছে। এসব আসনে যাদের জয়ের বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত ছিল তাদেরকে প্রশাসনিক নানা ম্যাকানিজমে হারিয়ে দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের জিতিয়ে দিতে এসব আসনে 'পরাজিত' প্রার্থীদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কোথাও কোথাও কেন্দ্র দখলে নিয়ে প্রশাসনের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট দেয়া হয়। আবার কোথাও কোথাও ভোটের শেষে ফলাফল পাল্টে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ ওঠে।অন্যদিকে, কয়েকটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও প্রশাসন হারিয়ে দিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে,ভোট গ্রহণের শুরু থেকে সংশ্লিষ্ট আসনগুলোর কেন্দ্রসমূহে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়,যাতে অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থীগণ দিনের প্রথমভাগেই ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। অপর দিকে এরশাদ নির্বাচন করেও জিতে গেছেন।”
মূল রোগঃ লজ্জাহীনতা
চোর-ডাকাত ও ব্যাভিচারিদের মূল রোগটি স্রেফ নীতিহীনতা বা অর্থলিপ্সা নয়, বরং সেটি লজ্জাহীনতা। এসব দুর্বৃত্তরো চোর-ডাকাত বা ব্যাভিচারি হয় বেহায়া ও বেশরম হওয়ার কারণে। নবীজী (সাঃ) র হাদীসঃ হায়া বা লজ্জা হলো ঈমানের অর্ধেক। এর অর্থ দাঁড়ায়, যার লোক-লজ্জাও নাই, ঈমানের দিক দিয়ে সে অতি দুর্বল। এমন দুর্বল ঈমানের লোকেরাই দুর্বৃত্ত বা পাপাচারি হয়।যে কোন দেশের পতিতা পল্লি, মদের আসর, নাচের ঘর ও চুরি-ডাকাতিতে এরূপ বেহায়াদেরই ভিড়। বেঈমানের ঈমানহীনতা ধরা পড়ে তার লজ্জাহীনতায়। অর্থের লোভ কার না থাকে? আনন্দ-উল্লাসই বা ক’জন চায় না। কিন্তু সাধারণ মানুষ যে কারণে চুরি ডাকাতি করে না ও পতিতা পল্লিতে যায় না বা নাচের আসরে ও সিনেমায় উলঙ্গ হয় না -তার মূল কারণটি স্রেফ উন্নত নীতিবোধ বা সুনীতি নয়। বিশাল পড়ালেখা বা আধ্যাত্মিকতাও নয়, বরং সেটি হলো এ লোকলজ্জা। চুরি-ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়লে সমাজে কি করে সে মুখ দেখাবে? পরিবার-পরিজনই বা কি ভাববে? তাছাড়া পরকালে আল্লাহর কাছেই বা সে করে মুখ দেখাবে? রোজহাশরের দিনে কি করেই বা সে নবীজীর সামনে হাজির হবে ও তার সাফায়াত চাইবে? এ লজ্জাটুকু থাকলে সমাজে ভাল মানুষ হওয়ার জন্য বিশাল কোন পন্ডিত,মহাত্মা বা ডিগ্রিধারি হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বড় বড় ডিগ্রিধারি ও বিত্তশালী খান্দানী ব্যক্তি চোর-ডাকাতে পরিণত হয় তো সে লজ্জাটুকু না থাকার কারণে। অপরদিকে লোক-লজ্জার কারণে দরিদ্র ও নিরক্ষর কৃষক, শ্রমিক, তাঁতী ও জেলে আজীবন সৎ মানুষ রূপে কাটিয়ে দেয়।
অথচ বেহায়া ও বেশরম হওয়ার কারণে চোর-ডাকাতগণ চুরিডাকাতির মধ্যে কোনরূপ অন্যায় দেখে না। বরং চুরি ডাকাতিকে যেমন হালাল মনে করে,তেমনি চুরি-ডাকাতির বিশাল অর্জন নিয়ে উৎসবও করে। নানা ভাবে মনের আনন্দও জাহির করে। তেমনি এক আনন্দঘন মনের তৃ্প্তি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ দাবি করেছেন, দশম সংসদ নির্বাচনে ৯৭ শতাংশ কেন্দ্রেই ভোট সুষ্ঠু হয়েছে” –(দৈনিক কালের কন্ঠ” ৬/১/১৪)। আরো বলেছেন নির্বাচনে গড়ে ৪০.৬% ভোট পড়েছে। এটি কি কম মিথ্যাচার? কোন বিবেকমান মানুষ কি এমন কথা বলতে পারে? এ কথাটি বলার জন্যই কি তাকে নির্বাচনি কমিশনার বানানো হয়েছে? লজ্জাহীনতা কি শেখ হাসিনারও কম? তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন,জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। স্বতঃস্ফুর্তভাবে ভোট দিলে এটি কি করে সম্ভব হলো যে ৪১টি কেন্দ্রে একটি ভোটও পড়লো না। কোথায় সে স্বতঃস্ফুর্ততা। স্বতঃস্ফুর্ততা থাকলে তো মানুষ হাজারে হাজার হাজির হতো। হয়তো সবগুলি কেন্দ্রে কেউ ভোট না দিলেও শেখ হাসিনা একই কথা বলতেন।কারণ এটিই তার রাজনীত। শাপলা চত্বরে ২০১৩এর ৬ই মে তারিখে যৌথ বাহিনীর গুলিতে অসংখ্য মানুষ নিহত ও আহত হয়েছিল।রক্তাত্ব হয়েছিল মতিঝিল।বহু লাশ সেদিন গোপন করা হয়ছিল।লাশ ফেলা হয়েছিল ময়লার গাড়িতে। অথচ শেখ হাসিনা বলেছিলেন ঐ রাতে শাপলা চত্বরে একজনও মারা যায়নি। নিহত মুসল্লিদের লাশের প্রতি অবজ্ঞা করে বলেছিলেন,“দেখা গেল লাশগুলো উঠে দৌড়াচ্ছে।” আজ একই মিথ্যাচার শুরু হয়েছে নির্বাচন নিয়ে।মিথ্যাচার হয়েছে একাত্তর নিয়ে।অথচ মিথ্যা বলা কবিরা গুনাহ।এ পাপ সকল পাপের মা। এরূপ মিথ্যাবাদিদের কারণেই বাংলাদেশের রাজনীতি পরিণত হয়েছে কবিরা গুনাহর রাজনীতি।এ রাজনীতি যে আল্লাহতায়ালার আযাব ডেকে আনে তা নিয়ে কি আদৌ সন্দেহ আছে?
কেন অপরিহার্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার?
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি যে কত অপরিহার্য ৫ই জানুয়ারির ভোট ডাকাতিতে সেটিই আবার প্রমাণিত হলো। প্রমাণিত হলো,দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন বাংলাদেশে কতটা অসম্ভব। তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এ যাবত যাদের সংশয় ছিল তাদের অন্তত এখন বোধোদয় হওয়া উচিত। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন দলটির প্রার্থি যত দৃর্বৃত্ত ও অযোগ্যই হোক তাকে পরাজিত করা অসম্ভব। এরূপ নির্বাচন শেখ মুজিব ও এরশাদের আমলেও হয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে সেসব নির্বাচনে পরাজিত করা সম্ভব হয়নি।এরশাদকে পরাজিত করতে হয়েছে রাজপথে। আর মুজিবের পরাজয়টি এসেছে তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।এরূপ নির্বাচনে সরকারি দলের জন্য বিজয় যে অতি সহজ সেটি আওয়ামী লীগ জানতো বলেই তড়িঘড়ি করে বিলুপ্ত করেছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায় সরকারে বিধান। অপর দিকে বিরোধী দলগুলিও নির্বাচনে অংশ না নিয়ে প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছে। কারণ নির্বাচন অংশ না নেয়ায় তাদের কোন লোকসান হয়নি। অংশ নিলে বরং শোচনীয় পরাজয় হত। তাতে তাদের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটতো। বরং ভাল হয়েছে যে,আওয়ামী লীগ যে কতবড় ভোট ডাকাত ও গণশত্রু -সেটিই জনগণ নতুন করে জানলো। বাকশালী বর্বরতা ও ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের শত্রুতা বাংলাদেশের স্কুল কলেজে পড়ানো হয়না। কিন্তু এখন সে পাঠটি রাজপথে দেয়া হচ্ছে। পুরা দেশ পরিণত হয়েছে পাঠশালায়। এটি কি কম কথা? শত্রুদের কবল থেকে দেশকে মুক্তি দেয়ার লড়াইয়ে শত্রুকে এভাবে চেনাটি খুবই জরুরী। নইলে কি সে লড়াইয়ে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ে?
নির্বাচন হলো জনগণের আদালত। বিচারকগণ আদালতে রায় দেয়,আর নির্বাচনে রায় দেয় জনগণ। বিচারকদের বাদ দিয়ে যেমন আদালত বসে না, তেমনি জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন হয় না। ভোটারহীন নির্বাচন তাই বিচারকহীন আদালতের ন্যায়। আদালত দলীয় সরকারে অধীনে গেলে যেমন ন্যায় বিচার অসম্ভব,তেমনি নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হলে অসম্ভব হয় জনগণের নিরপেক্ষ রায়দান। নির্বাচনের উদ্দেশ্য তো শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতার বদল। নির্বাচনের লক্ষ্য তো সে লক্ষ্যে জনমত যাচাই। শত শত কোটি টাকার অর্থ ব্যয় হলেও ভোটারহীন নির্বাচনে তাই লাভ হয় না। বরং তাতে ক্ষতির অংকটাই বাড়ে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কয়েক লক্ষ সরকারি ও বেসরকারি লোক শত শত ঘন্টা এ নির্বাচনে ব্যয় করেছে। কিন্তু আদৌ কি তাতে কোন লাভ হলো? বিবাদ তো শান্তিপূর্ণ ক্ষমতাবদল নিয়ে। বিবাদ তো সকল পক্ষের কাছে গ্রহণ যোগ্য সরকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে। কিন্তু তার কোনটাই কি এ নির্বাচনে অর্জিত হয়েছে? বরং নির্বাচনের পর বিবাদ আরো ঘনিভূত হলো। দেশবাসীকে বরং একটি গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত করা হলো।
ডাকাতির নতুন পর্ব
লাগাতর ডাকাতি করাই ডাকাতদের স্বভাব। একটি বা দুটি ডাকাতি করে তারা ক্ষ্যান্ত দেয় না। নীরবে বসে থাকা তাদের স্বভাবও নয়। আওয়ামী বাকশালীদের হাতে বিগত ৫টি বছর ধরে বহু চুরি-ডাকাতি হয়েছে। দেশীয় ব্যাংক ডিঙ্গিয়ে এ ডাকাতেরা বিশ্বব্যাংকের ভান্ডারে হাত দিয়েছিল। আর তাতে পিছিয়ে গেল পদ্মা সেতুর ন্যায় দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প।ভোট ডাকাতির পর্ব সম্প্রতি শেষ হলো।এবার শুরু হতে যাচ্ছে ডাকাতির নতুন পর্ব। সেটি আরো ৫ বছরের জন্য। তাই শুধু পদ্মা সেতু নয়,বহু কিছুই পিছিয়ে যাবে।থেকে যাবে সামনে চলা।সরকারে পক্ষ থেকে এখন বলা হচ্ছে,বিরোধী দলের সাথে আর কোন আলোচনা নয়। এখন ১৮ দলের বিরোধী দলকে আর বিরোধী দল বলতেও রাজী নয়।এখন বিরোধী দলের আসনে বসিয়েছে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে।শেখ হাসিনা ১৮ দলীয় জোটের নেত্রীকে নসিহত করেছেন,আগামী ৫ বছরের জন্য ধৈয্য ধরতে হবে। অর্থাৎ চুরি-ডাকাতিতে বাকশালীদের নতুন করে আরো ৫টি বছরদিতে হবে। দেশজুড়া এ ডাকাতিতে শেখ হাসিনা যে বিদেশী ডাকাতদেরও ডেকে আনবে সে আলামতটিও প্রকট। ভারত এমন লুন্ঠনে দু’পায়ে খাড়া। যেমনটি বাংলাদেশে ভূমিতে তাদেরকে একাত্তরে দেখা গেছে। তাছাড়া যে দেশ দুর্বৃত্তিতে বিশ্বের ২ শত রাষ্ট্রকে হারিয়ে ৫বার প্রথম হয় সে দেশটি নিজেও যে এমন ডাকাতদের স্বর্গ ভূমি –তাতেও কি সন্দেহ আছে? এমন ডাকাতদের উপস্থিতি যেমন রাজনীতির ময়দানে,তেমনি প্রশাসন, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীতেও।
বাকশালী ডাকাতদের ডাকাতির লক্ষ্যটি স্রেফ গ্রামীন মানুষের অর্থভান্ডার নয়। ডাকাতির টার্গেট শুধু দেশী ব্যাংক,রাজস্ব-ভান্ডার,সরকারি টেন্ডার,সরকারি ভূমি,বিদেশী অনুদানের অর্থও নয়।আধুনিক ডাকাতদের ডাকাতির সবচেয়ে বড় টার্গেটটি হলো জনগণের ভোট।ভোট ডাকাতিতে সফল হলে ডাকাতদের হাতে অধিকৃত হয়ে যায় সমগ্র রাষ্ট্র।তখন রাষ্ট্রীয় সম্পদের উপর ডাকাতি সহজ হয়ে যায়।তখন সরকারি ডাকাত দলের উপর বন্ধ হয়ে যায় পুলিশ বাহিনী ও আদালতের উৎপাত। মঙ্গোলিয়ার ট্রাইবাল ডাকাতগণ চেঙ্গিজ খান ও হালাকু খানের নেতৃত্বে দুর্ধর্ষ ডাকাতদল গড়ে তুলেছিল।দেশের পর দেশ তারা দখল করেছিল।দখল শেষে ব্যাপক লুন্ঠনও করেছিল।সমরখন্দ,বোখারা,বাগদাদ,নেশাপুরের ন্যায় সমৃদ্ধ নগরগুলিকে শুধু তারা লুন্ঠনই করেনি,ধ্বংসও করেছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরাও এদেশে ১৯০ বছর যাবত ডাকাতি করেছে। তাদের ডাকাতি বাংলাদেশে দুইবার দুর্ভিক্ষ ও সে দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ডেকে এনেছে। দুর্ভিক্ষ ডেকে এনেছে মুজিব আমলের ডাকাতিও।বাংলাদেশের এসব ডাকাতগণও এখন আর গ্রাম্য ডাকাতদল গড়ে না। বরং গড়ে রাজনৈতিক ডাকাত দল।ডাকাতিতে তাদের প্রবল আগ্রহটি যেমন মুজিব আমলে প্রমাণিত হয়েছে,তেমনি এরশাদ ও হাসিনার আমলেও।
সন্ত্রাস ও লুন্ঠনের বাইরে ডাকাতদলের কাছে অন্যকোন এজেন্ডা থাকে না। সন্ত্রাস ও দেশলুন্ঠন ছাড়া হাসিনারও কোন বাড়তি এজেন্ডা নাই। নির্বাচনে সকল দল ও সকল জনগণের অংশ্রগহণ বাড়াতে হাসিনা সরকারের এজন্যই কোন আগ্রহ ছিল না। জনগণ যে ভোটদানে অংশ নিল না -তা নিয়ে শেখ হাসিনা ও তার দলীয় নেতাদের এ জন্যই কোন আফসোস নাই। বরং প্রচন্ড উল্লাস জাল বিজয় নিয়ে। বরং শেখ হাসিনা ৬/১/১৪ তারিখে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন,“জনগণ যতটুকু ভোট দিয়েছে এতেই আমরা সন্তুষ্ট।”
সফল ডাকাতি শেষে উল্লাস করাই ডাকাতদের স্বভাব। ডাকাতগণ তখন মনযোগ বাড়ায় ডাকাতিলদ্ধ সম্পদ ধরে রাখার কাজে। তেমনি হাসিনা সরকারেরও এজেন্ডা,ভোট ডাকাতির মাধ্যমে অর্জিত বিজয়কে যে কোন রূপে ধরে রাখা। ফলে কদর বেড়েছে যৌথ বাহিনীর। ক্ষমতায় টিকে থাকাকে বৈধ করতে তামাশার এ নির্বাচনকেও তারা বৈধ বলছে।কথা হলো ডাকাতেরাও কি কোন কালেও তাদের ডাকাতিকে অবৈধ বলে? ফেরত দেয় কি ডাকাতির মাল? তাছাড়া এ ভোট ডাকাতিকে মেনে নিলে দেশের উপর হাসিনার লাগাতর ডাকাতিকেও বৈধতা দিতে হবে। আর সেটি হলে দেশ যে শুধু মুজিবামলের ন্যায় তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি হবে তা নয়,পুরা দেশই হয়তো হারিয়ে যাবে।
বিপদ দেশ হারানোর
বাংলাদেশ আজ যে ভয়ানক বিপর্যয় -সেটি হঠাৎ আসেনি। বরং সৃষ্ঠি করা হয়েছে একটি গ্রান্ড পরিকল্পনার অংশ রূপে। লক্ষ্য,বাংলাদেশের মেরুদন্ড চূর্ণ করা। লক্ষ্য, দক্ষিণ এশিয়ার পূর্ব প্রান্তে মুসলিম শক্তির উত্থাণকে চিরতরে প্রতিহত করা। একাজে একাত্তরের ন্যায় আওয়মী লীগ এবারও একা নয়। একাত্তরে পাকিস্তান ভেঙ্গে গেছে। কিন্তু ১৭টি কোটি বাঙালী মুসলমানের মাঝে জাগরণের সে সুপ্তশক্তি এখনও রয়ে গেছে। এখানেই ইসলামের শত্রু শক্তির প্রচন্ড দুর্ভাবনা। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার বুকে বাঙালী মুসলমানরাই যে সবচেয়ে বৃহৎ জনশক্তি সেটি ইসলামের শত্রুপক্ষ ভূলে যায় কি করে? এ শক্তিই তো ১৯৪৭সালে পাকিস্তান সৃষ্টি করেছিল। বীজ থাকলে তো চারাই গজাবেই। পাকিস্তান ভেঙ্গে গেলেও ইসলামের বীজ তো রয়ে গেছে। তাই তারা এবার সে বীজ নির্মূলে হাত দিয়েছে। তাদের সে বীজ থেকে না জানি ভারতের পূর্ব প্রান্তে আরেক পাকিস্তানের জন্ম হয়।তাই গুরুত্ব পেয়েছে তাফসির মহফিল বন্ধ ও জিহাদ বিষয়ক বই বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি আলেমদের ফাঁসিতে ঝুলানোর কাজ। তাই সে প্রকল্পের অংশ রূপেই টিভি, পত্র-পত্রিকা, ব্লগ, ফেসবুক যোগে লাগাতর হামলা হচ্ছে আল্লাহতায়ালা, তার রাসূল পাক (সাঃ) ও ইসলামের বিরুদ্ধে।
নির্বাচনের নামে ভোট ডাকাতি হলে তার পরিণতি যে কি হয় -সেটি কি হাসিনা জানতো না? শুধু হাসিনা নয়, তার প্রভু ভারতও সেটি জানতো। কিন্তু তাদের এজেন্ডা তো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশকে একটি মহাবিপর্যয় উপহার দেয়া। গ্রামবাসীর ঘরে আগুন লাগাতে ডাকাতদের মনে দুঃখ জাগে না। ডাকাতদের হত্যায় যে গ্রামবাসী ধেয়ে আসে তাদের ঘরবাড়ির প্রতি ডাকাতদের দরদ থাকার কথা নয়। তাদের ঘরে আগুণ লাগাতে ডাকাতেরা বরং আনন্দিত হয়। শেখ হাসিনার অজানা নয় যে, সমগ্র বাংলাদেশ আজ তার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে উত্তাল। সে নিজে দেখেছে তার স্বৈরাচারি পিতা ও তার পরিবারের প্রতি দেশবাসীর আচরণ। দেখেছে স্বৈরাচারি শাসনের নির্মূল নিয়ে সে সময় দেশবাসীর উল্লাস। এমন কি আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মালেক উকিলও মুজিবের মৃত্যুতে বলেছিল “ফিরাউনের পতন হয়েছে।” ফলে দেশ ও দেশবাসীর জানমাল, শিল্প, বানিজ্য,অর্থনীতি ও শিক্ষা নিয়ে শেখ হাসিনার দরদ থাকবে এবং ধ্বংসের হাত থেকে সেগুলি বাঁচাতে তার সরকার এগিয়ে আসবে সেটি কি আশা করা যায়? নিজ দলের ভবিষ্যৎ নিয়েও কি তার ভাবনা আছে? ফলে দেশের বর্তমান সংকটের চেয়েও জটিল সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান বিশ্বের অন্য কোন দেশে সম্ভব হলেও বাংলাদেশে যে সম্ভব নয় তা নিয়ে কি কোন সন্দেহ আছে? শেখ হাসিনা চাইলেও ভারত সেটি হতে দিবে না। সেরূপ একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধান ভারত একাত্তরেও হতে দেয়নি। ২০১৩ বা ২০১৪ সালেও নয়। কারণ সেটি হলে বাংলাদেশের মেরুদন্ড ভাঙ্গার কাজটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাতে অপূর্ণ থেকে যাবে ভারতের ইসলাম-বিনাশী এজেন্ডা। বাংলাদেশের চলমান সংকট নিয়ে ভারত তাই আনন্দে ডুগডুগি বাজাচ্ছে।একাত্তরের পর ভারত ছিনিয়ে নিয়েছিল পাট ও চায়ের বাজার। ছিনিয়ে নিয়েছিল বেরুবাড়ি এবং পদ্মা ও তিস্তার পানি। ছিনিয়ে নিয়েছিল হাজার হাজার কোটি টাকার পাকিস্তানী অস্ত্র। এবার ছিনিয়ে নিবে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারের গার্মেন্টস ও চিংড়ি মাছের বাজার।ছিনিয়ে নিবে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি। পুরাপুরি দখলে নিবে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার। সে সাথে ছিনিয়ে নিবে ইসলামের মৌল চেতনাও। ভারত বাংলাদেশকে বানাতে চায় আরেকটি কাশ্মীর। আরেকটি সিকিম। কুমিরের কাজ তো একের পর এক শিকার ধরা। শিকার ধরার সে রাজনীতিই হলো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতি ভারতের বিদেশ নীতি। ভারত ইতিমধ্যেই কাশ্মীর,জুনাগড়,মানভাদর, হায়দারাবাদ,সিকিম পেটে পুরেছে। এখন চায় নতুন শিকার। সে নতুন শিকারটি যে বাংলাদেশ -তা নিয়ে কি আদৌ কোন সন্দেহ আছে?
লড়াই ইসলাম ও দেশ বাঁচানোর
এমুহৃর্তে জনগণের দায়ভার বিশাল। এদেশটি তাদের নিজেদের। ইসলামের শত্রুপক্ষটি সব সময়ই প্রতিবেশী ভারতে জামাই আদর পাবে। যেমনটি একাত্তরে পেয়েছিল। সে আদর হাসিনা ও তার পরিবার এখনও পায়। কিন্তু বাঙালী মুসলমানদের দেশতো মাত্র এক খানই। তাদের পালাবার স্থান নাই। আর শত্রুর হামলার মুখে পৃষ্ঠ প্রদর্শণ করা বা পালানো তো কবিরা গুনাহ। সে কবিরা গুনাহ তো জাহান্নামে নেয়। মহান আল্লাহতায়ালার বড় নিয়ামত হলো এই বঙ্গভূমি। মহান আল্লাহর দেয়া এটি এক মহান আমানত। আর মুসলমানের ধর্ম তো আমানতের খেয়ানত করা নয়। সে কাজ তো মুনাফিকের। মুসলমানের দায়িত্ব হলো আল্লাহর ভূমিতে আল্লাহর দ্বীনের আবাদ বাড়ানো। আমানতের খেয়ানত থেকে নিজেকে যেমন বাঁচতে হবে, তেমনি অন্যদেরও বাঁচাতে হবে।আমানতের খেয়ানত তো মহান আল্লাহর আযাব ডেকে আনে।
শত্রুশক্তির হাত থেকে দেশ রক্ষার এ দায়িত্বটি তো প্রতিটি নাগরিকের। এ দায়িত্ব স্রেফ বিএনপি, জামায়াত-শিবির,হেফাজতে ইসলাম,ইসলামি ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, হিযবুত তাহরির, ইসলামি ঐক্য আন্দোলন, ইসলামি শাসতন্ত্র আন্দোলন বা অন্য কোন সংগঠনের নয়।এ দায়িত্ব সবার। বাংলাদেশ আমাদেরকে কি দিয়েছে সেটি বড় কথা নয়।আমরা এদেশকে শত্রুশক্তির হাত থেকে বাঁচাতে ও আল্লাহর শরিয়ত প্রতিষ্ঠায় কি করেছি সেটিই মূল। মহান আল্লাহর কাছে সেটি নিয়েই বিচার হবে।ইসলামের শত্রুপক্ষ আজ একতাবদ্ধ। ইসলামের নির্মূলে তাদের এজেন্ডা ও অঙ্গিকার সুস্পষ্ট। তাদের প্রস্তুতিও বিশাল। একতাবদ্ধ হওয়াটি তাদের কাছে রাজনীতির প্রধান কৌশল। কিন্তু মুসলমানের কাছে সেটি ফরজ ইবাদত। এ ফরজ পালিত না হলে কঠিন গুনাহ হয়। তাদের এ লড়াই স্রেফ ক্ষমতা দখলের রাজনীতি নয়, বরং পবিত্র জিহাদ।
আওয়ামী বাকশালীরা যে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা রুখতে চায় তা নিয়ে কি কারো মনে কোনরূপ সন্দেহ আছে? ফলে তারা যে ইসলামের শত্রুপক্ষ তা নিয়েও কি সন্দেহ থাকে? আর এমন শত্রুশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো তো শতকরা শতভাগ জিহাদ।এ জিহাদ মু’মিনের জীবনে দুটি পরিণতি দেয়। এক বিজয়। দু্ই, শাহাদত। এছাড়া তৃতীয় কোন সম্ভাবনা আছে কি? আর এ দুটি পরিণতির কোনটি মু’মিনের কাছে অপছন্দের হতে পারে? শাহদত দেয় মু’মিনে জীবনে সবচেয়ে বড় বিজয়। দেয় মৃত্যুহীন জীবন, দেয় জান্নাত। মুসলমানগণ যখন একতাবদ্ধ হয়ে জিহাদে নামে তখন ময়দানে তারা একাকী থাকে না। তাদের সাথে থাকেন মহাশক্তিমান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর অপরাজেয় ফেরশতা বাহিনী। বিশ্বের কোন শক্তির কি সামর্থ আছে সে শক্তিকে পরাজিত করার? ফলে বিজয় তখন অনিবার্য হয়ে উঠে। মুসলমানগণ যে আজ দেশে দেশে পরাজিত তার কারণ, সে জিহাদে তারা নিজেদের জানমালের বিনিয়োগ বাড়ায়নি। এখন দায়িত্ব হলো, প্রতিটি বাঙালী মুসলমানের চেতনায় জিহাদের এ চেতনাটি বদ্ধমূল করা। নইলে তাদের বর্তমান লড়াইটি নিছক রাজনীতির সংঘাতই থেকে যাবে, পবিত্র জিহাদে পরিণত হবে না।ফলে মহান আল্লাহর সাহায্যও জুটবে না। ৫ই জানুয়ারী তো শুধু ভোট ডাকাতি হয়েছে। কিন্তু ইসলাম ও দেশ বাঁচানোর এ জিহাদে আত্মনিয়োগ না বাড়ালে আগামীতে সমগ্র দেশই ডাকাতি হয়ে যাবে।
তথ্যসূত্রে:http://www.drfirozmahboobkamal.com/2010-03-24-10-21-22/980-the-war-for-protecting-islam-and-against-existential-threat.html
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
***মনসুর আহামেদ লিখেছেন : @খেলাঘর বাধঁতে এসেছ,আকবার ,স্বাধীনতা,জুলিয়া,
মারিয়া
পরীবানু
মরুর মুসাফির
পরীবানু ,সততার আলো
অশ্বথমা
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক
পরমা ,নীলমণীলতা
বিলকিস লায়লা
দস্তার
রুপবান
মুক্তিযুদ্ধ ৭১
দ্রাবীড় বাঙাল
লেয়লা ইসলাম
বিলকিস
বাংলা ৭১
ভিক্টোরিয়া
হেলেনা
পল্লব প্রভাতে
খালেদ
রুশো তামজিদ
বারাংগনা
মধুবালা
সখি
ফয়সাল১
মাঝি-মাল্লা, ,
লায়লার
লায়লা০০৭
রাতুল দাস
চকো চকো
সায়েদ-রিয়াদ
বিভ্রান্ত নাবিক
ফাজিল
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক
মুক্তিযুদ্ধ ৭২
দ্রাবীড় বাঙাল
পিচ্চি পোলা
কাওসাইন হক
চাষা
jahed_ullah
নীরু
সাদা মন
সাদা মন
চোথাবাজ
আমি বিপ্লবী
সততার আলো সকাল সন্ধ্যা
এই নেরিকুত্তার এত নিক ***
ভাই আপনি কিভাবে জানেন,
আমাকে একটু বলবেন ??
যুগ উপযোগী
ও সুন্দর পোস্ট
ভালো লাগলো
ভাই, শুধু আওয়ামীলীগ বলবেন না,
সাথে "জঙ্গিবাদী" বলবেন,
মানে = জঙ্গিবাদী--আওয়ামীলীগ
মন্তব্য করতে লগইন করুন