ভারতের বাংলাদেশভীতি ও গ্রান্ড স্ট্রাটেজী
লিখেছেন লিখেছেন মনসুর আহামেদ ২৮ নভেম্বর, ২০১৩, ০৫:২৬:২১ সকাল
হাসিনা-বিরোধী আন্দোলন যতই তীব্রতর হচ্ছে ভারতের শাসক মহলে ততই বাড়ছে বাংলাদেশভীতি।শেখ হাসিনার উপর ভারতীয় নেতাদের প্রগাড় আস্থা। কারণ শেখ হাসিনা ভারতকে যতটা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে তা অন্য কোন দেশ থেকে পেতে হলে ভারতকে যুদ্ধ করতে হতো বা সেদেশের অর্থনীতিতে বিশাল বিনিয়োগ করতে হতো। যেরূপ পশ্চিম ইউরোপীয় দেশসমুহ ও জাপানকে বন্ধু রূপে পেতে মার্কিনীরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেসব দেশের পুননির্মাণে বহু বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। অথচ ভারত বাংলাদেশ থেকে সেটি পেয়েছে কোনরূপ অর্থব্যয় না করেই। কারণ চাকর বাকর পেতে বড় কিছুই বিনিয়োগ করতে হয় না। তারা ভাবে, এজন্য কিছু উচ্ছিষ্ট ব্যয়ই যথেষ্ঠ। ভারতীয় বর্ণহিন্দুরা শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা বা কোন বাঙালী মুসলমানকে কোনকালেই কি চাকর বাকরের চেয়ে বেশী কিছু ভেবেছে? ভারতের মুসলমানদেরও কি তারা তেমন কিছু ভাবে? সংখ্যায় তারা জনসংখ্যার শতকরা ১৬ ভাগ হলে কি হবে,সরকারি চাকুরিতে মুসলমানদের হিস্যা শতকরা ৪ ভাগেরও কম। পাশের পশ্চিম বাংলার মুসলমানদের বঞ্চনা তো আরো করুণ।তারা সেখানে শতকরা ২৮ভাগ, অথচ সরকারি চাকুরিতে তাদেরকে শতকরা ৫ ভাগও দেয়া হয়নি।
ভারত বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে ট্রানজিট নিয়েছে কোনরূপ রোড টাক্স বা ট্রানজিট ফি না দিয়েই। কারণ চাকরবাকরের ভিটা উপর দিয়ে হাটতে জমিদার কোন ফি দেয় না। কৃতজ্ঞতাও জাহির করে না। বরং কথায় কথায় চাকর বাকরদের গালি দেয়াই জমিদারের কালচার। ভারত বেরুবাড়ি ছিনিয়ে নিয়েছে প্রতিশ্রুত তিন বিঘা করিডোর না দিয়েই। গঙ্গার পানি নিয়েছে, এবার তিস্তা, কুশিয়ারা ও সুরমার পানিতেও হাত দিচ্ছে। উত্তরপূর্ব ভারতের মজলুম জনগণের মুক্তিযুদ্ধের সাথে শেখ হাসিনার গাদ্দারিটাও একমাত্র ভারতের স্বার্থে। অথচ বাংলাদেশের সাথে এ বিশাল এলাকার মুক্তিকামী মানুষের কোন কালেই কোন শত্রুতা ছিল না। তারা বাংলাদেশের মিত্র ও বাংলাদেশী পণ্যের বিশাল বাজার হতে পারতো।
ভারতের একমাত্র বিনিয়োগ বাংলাদেশের রাজনীতি ও মিডিয়াতে। সেটি দেশের রাজনীতি,সংস্কৃতি, বুদ্ধিবৃত্তি,মিডিয়া, প্রশাসন ও সেনাবাহিনীতে ভারতসেবী বিশাল দাসবাহিনী প্রতিপালনে। এরূপ বিনিয়োগের ফলেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুসলমানদের পিটাতে একাত্তরের ন্যায় নিজ দেশের সেনাবাহিনী নামাতে হচ্ছে না।প্রতিপালিত দাসরাই সেটি করছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ভারতের মূল স্ট্রাটেজী হলো, বাংলাদেশের বুকে ভারতীয় দাসদের শাসন প্রতিষ্ঠা। সেরূপ এক দাসশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ভারত একাত্তরে প্রকান্ড একটি যুদ্ধ লড়েছিল।তাদের সে যুদ্ধটির লক্ষ্য ভারতের পূর্ব সীমান্তে পাকিস্তানের ন্যায় আরেক স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা ছিল না। এ বিষয়ে ভারতীয় নেতাদের বক্তব্য আজও সুস্পষ্ট।
২০০৮ সালে হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে ভারতের ষড়যন্ত্র ও বিনিয়োগটিও ছিল বিশাল। তাকে আবার ক্ষমতায় আনতে ভারত অবিরাম চালিয়ে যাচ্ছে প্রকান্ড এক প্রচারযুদ্ধ। আসামের দৈনিক নববার্তা পত্রিকাটি গত ২১/১০/২০১৩ তারিখে প্রথম পৃষ্ঠায় লিড খবর ছাপে যে,হাসিনাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার জন্য ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারত এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। উক্ত পত্রিকায় ভাস্কর দেব আরো রিপোর্ট করে,ভারত গত ২০০৮ সনের নির্বাচনে ৮ শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল। বলা হয়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি নির্বাচনেই ভারত বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে।
ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগের পিছনে ভারতের এরূপ বিনিয়োগের হেতু কি? হেতু,স্বাধীন বাংলাদেশ-ভীতি। ভারত ভয় পায় বাংলাদেশের ১৫ কোটি মুসলমানের ইসলামের মৌল বিশ্বাস নিয়ে বেড়ে উঠা নিয়ে। ইতিহাসের ছাত্র মাত্রই জানে,১৯৪৭য়ে হিন্দুদের অখন্ড ভারত নির্মাণের স্বপ্নকে যারা ধুলিতে মিশিয়ে দিয়েছিল তারা পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্ত প্রদেশ,উত্তরপ্রদেশ,বিহার বা অন্যকোন স্থানের মুসলমান নয়,তারা ছিল বাংলার মুসলমান। ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা থেকে ১৯৪০ সালে লাহোরে পাকিস্তান প্রস্তাব-পাশ ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন পর্যন্ত প্রতিটি পর্বে যারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তারা ছিল এই বাংলার মুসলমানই। সে সময় মুসিলীম লীগের মূল দুর্গটি ছিল বাংলায়। আজও সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার বুকে যে ভূখন্ডটিতে সবচেয়ে বেশী মুসলমানের বাস সেটিও পাঞ্জাব, সিন্ধু, আফগানিস্তান নয়, বরং সেটি বাংলাদেশ। আর যেখানে এত মুসলমানের বাস সেখানে ইসলামের জাগরণের ভয় থেকেই যায়। কারণ সিংহের ঘুম যত দীর্ঘই হোক,সেটি মৃত্যু নয়। একসময় সে ঘুম ভেঙ্গে যায়। বাংলার মুসলমান সাতচল্লিশে জেগে উঠেছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর আবার ঘুমিয়ে পড়িছিল। আর সে ঘুমের ঘোরেই ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে ঢুকে তার দাসদের সহায়তায় বিরাট সর্বনাশটি করেছিল। কিন্তু বাংলার মুসলমানগণ যে আবার জেগে উঠেছে সে আলামত তো প্রচুর। আর তাতেই ভয় ধরেছে ভারতের।
বাংলার মুসলমানদের সাতচল্লিশের জিহাদটি ছিল উপমহাদেশের অন্যান্য এলাকার মুসলমানদের সাথে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার। কারণ, প্রাসাদ গড়তে যেমন বৃহৎ ভূমি লাগে তেমনি সভ্যতা গড়তে বিরাট একটি রাষ্ট্র লাগে। প্রাথমিক যুগের মুসলমানদের এজন্যই মক্কা-মদিনা বা হেজাজের ক্ষুদ্র গন্ডি পেরিয়ে বিশাল দেশ গড়তে হয়েছে। সাতচল্লিশের সে জিহাদটি ছিল দু’টি বৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে। একদিকে ছিল সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ বিশ্বশক্তি, অপর দিকে ছিল আগ্রাসী বর্ণ হিন্দুশক্তি। মূল লক্ষ্যটি ছিল, বিশ্ব-রাজনীতিতে মুসলমানদের হৃত গৌরবকে আবার ফিরিয়ে আনা। উপমহাদেশের মুসলমানদের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠার ফলেই সেদিন হিন্দু ও ব্রিটিশ -এ উভয়শক্তির বিরোধীতার সত্ত্বেও জন্ম নিয়েছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ পাকিস্তান। ভারত শুরু থেকে সে বৃহৎ পাকিস্তানকে মেনে নিতে পারিনি। তেমনি আজ পারছে না স্বাধীন বাংলাদেশকে মেনে নিতে। তাদের ভয়,না জানি এটি আরেক পাকিস্তানে পরিণত হয়। ভারতের ভয়ের আরো কারণ, একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশে পরিণত হলেও বাংলার মুসলমানদের মন থেকে ইসলাম বিলুপ্ত হয়নি। বরং দিন দিন সে ইসলামী চেতনা আরো বলবান হচ্ছে। সে সাথে প্রবলতর হচ্ছে ভারতের পূর্ব প্রান্তে ইসলামি শক্তি রূপে বেড়ে উঠার সাধ। আর তাতে তীব্র ভয় বাড়ছে আগ্রাসী ভারতের মনে। সেটি আঁচ করা যায় ভারতীয় পত্রপত্রিকায় সেদেশের রাজনৈতীক নেতা,বুদ্ধিজীবী ও কলামিস্টদের লেখা পড়লে।
আপনজন ও পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে
ভারত এ মুহুর্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিজ স্বার্থের বিশ্বস্থ পাহারাদার চায়। সে কাজে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগণ যে ভারতের আপনজন সে সাক্ষ্যটি এসেছে ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম এক নীতিনির্ধারকের মুখ থেকে।তিনি হলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী সুশীলকুমার শিন্দে। শেখ হাসিনার ভারতপ্রেমে তিনি এতটাই মোহিত যে,সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে “ভারতের আপনজন’ এবং “যেন পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে” রূপে আখ্যায়ীত করেছেন।সে খবরটি ছেপেছে কোলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা তার ৭ই নভেম্বর সংখ্যায়। সুশীলকুমার শিন্দে এ কথাটি বলেছেন পাঞ্জাবের আট্টারি-ওয়াঘা সীমান্তের ধাঁচে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে জয়েন্ট রিট্রিট সেরিমনির সূচনা পর্বের এক সমাবেশে।
প্রতিটি বিনিয়োগের পিছনেই থাকে মুনাফা লাভের আশা। মুনাফা লাভের সম্ভাবনা না থাকলে একটি টাকা ও একটি মুহুর্তও কেউ বিনিয়োগ করে না। আর বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগটি কোনকালেই খয়রাত ছিল না। খয়রাত ছিল না একাত্তরের যুদ্ধে ভারতীয়দের বিপুল অর্থ ও রক্তের বিসর্জনও। তবে বাংলাদেশ থেকে ভারতের মুনাফা তোলার মাত্রাটি অত্যাধিক বেড়ে যায় যখন শাসনক্ষমতা আওয়ামী লীগের হাতে যায়। ২০০৮ সালে হাসিনার ক্ষমতায় আসাতে ভারত যে প্রচুর মুনাফা তুলেছে সে সাক্ষ্যটি এসেছে খোদ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী শিন্দের মুখ থেকে। বাংলাদেশ থেকে তারা এতই নিয়েছে যে এখন সাধ জেগেছে কিছু প্রতিদান দেয়ার। তবে সেটি বাংলাদেশের জনগণকে নয়,সেটি খোদ হাসিনাকে। সে প্রতিদানটি তারা দিতে চায় তাকে পুণরায় ক্ষমতায় বসানোর মধ্যদিয়ে। সে লক্ষ্যেই বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে ভারতের বিনিয়োগ এক হাজার কোটি রুপি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিন্দের ভাষায়ঃ “পাঁচ বছরে হাসিনার আমলে ঢাকা ভারতকে যে ভাবে সহযোগিতা করেছে,তার প্রতিদান দিতে নয়াদিল্লিও বদ্ধপরিকর”। তাছাড়া আগামী নির্বাচন শুধু বাংলাদেশীদের জন্যই নয়, ভারতীয়দের কাছেও অতি গুরুত্বপূর্ণ। সে অভিমতটি এসেছে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা RAW য়ের বাংলাদেশ ইনচার্জ ও সিনিয়ার অফিসার শ্রী বিবেকানন্দ থেকে। তিনিও সম্প্রতি জানিয়েছেন,বাংলাদেশের ২০১৪ সালের নির্বাচন ভারতের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। আর নির্বাচনের গুরুত্ব বাড়লে তাতে ভারতীয়দের বিনিয়োগও যে বাড়বে সেটিই তো স্বাভাবিক।
আগ্রাসী ভারত ও দাসের আত্মতৃপ্তি
দাসদের জীবনে বড় চাওয়া-পাওয়াটি হলো মনিব থেকে নিষ্ঠাবান দাস রূপে স্বীকৃতি লাভ। সে স্বীকৃতিটুকু পাওয়ার মাঝেই তারা জীবনের সার্থকতা ভাবে। “দারোগা মোরে কইছে চাচি আমি কি আর মানুষ আছি”–এমন এক দাসসুলভ আত্মতৃপ্তি ফুটে উঠেছে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তের জয়েন্ট রিট্রিট সেরিমনিতে উপস্থিত বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগিরর কথায়। গত ৬/১১/১৩ তারিখে অনুষ্ঠিত সে সেমিনারে ভারতের স্বরাষ্ট্র সুশীলকুমার শিন্দে যখন শেখ হাসিনাকে “ভারতের আপনজন’ এবং “যেন পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে” আখ্যায়ীত করেন তখন করতালি দিয়ে সে কথাকে স্বাগত জানিয়েছেন মহিউদ্দিন খান আলমগির।তিনি তার নিজের বক্তৃতাতে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের। ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বকে ‘চিরায়ত’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য আমরা গর্বিত। এর পরে সুশীলকুমার শিন্দে বলেন,“দু’দেশের বন্ধুত্বের কথা বলতে গেলে শেখ হাসিনাজির কথা বলতেই হয়। আমার তো মনে হয়, উনি যেন এই বাংলারই মেয়ে। আমাদের অত্যন্ত আপনজন।” শিন্দের নিজের কথায়, “বাংলাদেশের মাটিতে আশ্রয় নেওয়া এদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলিকে উচ্ছেদ করার ক্ষেত্রে হাসিনা সরকারের ভূমিকা প্রশংসনীয়। ভারত নিশ্চয়ই তার প্রতিদান দেবে।”
শ্রী শিন্দের কথায় বুঝা যায়, শেখ হাসিনার উপর ভারতীয় নেতাদের এত খুশির কারণ, বাংলাদেশের মাটিতে ইসলামপন্থিদের নির্মূলে তার নির্মম নৃশংসতা। ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরের মুসলমানদের সাথে যেরূপ আচরণ করতে ভয় পায়,শেখ হাসিনা তার চেয়েও নৃশংসতর আচরণ করেছে জামায়াত-শিবির কর্মী ও হেফাজতে ইসলামের মুসল্লিদের সাথে। সে অপরাধ কর্মে হাসিনা ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে নিজের মুসলিম নামের পরিচিতি। তিনি বলে থাকেন,আমিও মুসলমান। দাবি করেন, সকালে নাকি কোরআনে পড়ে কাজ শুরু করেন। প্রশ্ন হলো, অন্তরে সামান্য ঈমান থাকলে কেউ কি মুসল্লীদের উপর গুলি চালাতে পারে? সংবিধান থেকে বিলুপ্ত করে কি আল্লাহর উপর আস্থার বানী? নিষিদ্ধ করতে পারে কি তাফসির মহফিল? সে কি বিরোধীতা করে মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তী বিধানের? অথচ হাসিনা তো এর সবগুলিই করছেন। এদের সম্পর্কেই পবিত্র কোরআনে মহান রাব্বুল আ’লামীন বলেছেন, “তারা নিজেদের মুসলমান হওয়ার অঙ্গিকারটিকে ঢাল রূপে ব্যবহার করে। অথচ তারা আল্লাহর রাস্তা থেকে (মানুষকে) দূরে হটায়। কতই না নিকৃষ্ট হলো তারা যা করে সে কাজগুলি।”-(সুরা মুনাফিকুন আয়াত ২)।
বাংলাদেশের বাংলাদেশের সীমান্তে আগামীতে যদি কোন বিদেশী সেনাবাহিনীর আগ্রাসন হয় তবে সেটি ১২শত মাইল দূরের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বারা হবে না। বাংলাদেশের শিশুরাও সেটি বুঝে। বাংলাদেশের উপর আজ যাদের অর্থনৈতীক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য সেটিও পাকিস্তানের নয়, সেটি ভারতের। বাংলাদেশের সীমান্তে আজ যারা ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে মারা যাচ্ছে তারা পাকিস্তানী সীমান্ত প্রহরী নয়,তারা ভারতীয়। এবং ভারতীয়দের সে হামলার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের রাজপথে ও মিডিয়াতে যারা প্রতিবাদমুখর তারাও আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের কেউ নয়। তারা হলো বাংলাদেশের ইসলামি জনতা। ভারতীয়দের ভাষায় এরাই হলো বাংলাদেশের ইসলামি মৌলবাদী শক্তি। ভারত নিজের অপরাধগুলি দেখতে চায় না,বরং মৌলবাদী রূপে গালি দেয় তাদের যারা ভারতের সে আগ্রাসী নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। ভারতীয়রা চায়, সিকিমের ন্যায় বাংলাদেশও ভারতের বুকে লীন হয়ে যাক। চায়,বাংলাদেশের মানুষ শেখ মুজিব,হাসিনা ও আওয়ামী ঘরানার রাজনৈতীক নেতাকর্মী ও বুদ্ধিজীবীর ন্যায় দাসসুলভ চরিত্র নিয়ে বেড়ে উঠুক। এ দাসদের বিশ্বাস, দাসসুলভ এ আত্মসমর্পণটি হলো ভারতের একাত্তরের ভূমিকার জন্য তাদের দায়বদ্ধতা। কিন্তু সেটি হচ্ছে না দেখেই ভারত প্রচন্ড বিক্ষুব্ধ। সে সাথে প্রচন্ড ভীত বাংলাদেশের বুকে প্রতিবাদী মানুষের বিপুল উত্থান দেখে।
আওয়ামী দাসশাসনে ধ্বস
ইসলামের উত্থানের ফলে শুধু বাংলাদেশের রাজনীতিতে নয়, ভারতের রাজনীতিতেও যে ভূমিকম্প শুরু হবে তা ভারতীয় নেতারা বুঝে। কারণ ভারতে রয়েছে ২০ কোটি মুসলমানের বাস -যা সমগ্র বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠি। তাদের হিসাবে প্রতিটি মুসলমানই হলো সুপ্ত টাইম বোমা। সময়মত ও সুযোগমত তা বিস্ফোরিত হতে বিলম্ব করে না। তাছাড়া রাজনৈতীক জাগরণটি প্রচন্ড ছোঁয়াছেও। তাই যে বিপ্লব তিউনিসিয়ায় শুরু হয়েছিল তাই মিশর, লিবিয়া, ইয়েমেন, জর্দান, বাহরাইন ও সিরিয়ায় কাঁপন ধরিয়েছে। ঠোঁট উড়ে গেলে দাঁতেও বাতাস লাগে। তাই বাংলাদেশে ভারত সেবী দাসশক্তির দুর্গ বিলুপ্ত হলে ভারতেও তার আছড় পড়বে। ইসলামের জোয়ার নিয়ে ভারত এজন্যই চিন্তিত। ভারতীয় নেতারা তাই বার বার বলছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামপন্থিরা বিজয়ী হলে তা পাল্টে দিবে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি। তখন সে বিপ্লব আঘাত হানবে শুধু ভারতে নয়, রোহিঙ্গার মুসলিম ভূমিতেও। ভারত চীনকে সে কথা বলে সে দেশের নেতাদের ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে উস্কানি দিচ্ছে। এজন্যই ভারত চায়,বাংলাদেশের মুসলমানদেরকে যে কোন মূল্যে ইসলাম থেকে দূরে রাখতে। চায়,ইসলামপন্থিদের নির্মূল। ভারতের বাংলাদেশ বিষয়ক নীতির সেটিই মূল কথা। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের বিনিয়োগটি এজন্যই এত বিশাল।
আওয়ামী লীগের জন্য ভারত থেকে শুধু হাজার কোটি রুপীর অর্থ-সাহায্যই আসে না,নিয়মিত নির্দেশমালাও আসে। সেটি ১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিজয়ের পর থেকেই। সে সব ভারতীয় নির্দেশমালার প্রতি আনুগত্যের কারণেই শেখ মুজিব ইসলামপন্থিদের রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করেছিলেন।এবং জেলে তুলেছিলেন নেতাদের। শাসনতন্ত্রে মূলনীতি রূপে স্থান দেয়া হয়েছিল সমাজতন্ত্র,বাঙালী জাতিয়তাবাদ ও সেক্যেুলারিজমের ইসলাম বিরোধী মতবাদকে। অথচ ১৯৭০য়ের নির্বাচনে সেগুলি কোন নির্বাচনি ইস্যু ছিল না। অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে এর চেয়ে বড় গাদ্দারি আর কি হতে পারে? মুসলমানের ঈমানী দায়বদ্ধতা হলো,ইসলামের প্রতিষ্ঠায় নিষ্ঠাবান হওয়া। অথচ মুজিব সেটিকে ফৌজদারি অপরাধে পরিণত করেছিলেন। ইসলামি দলের বহু নেতাকর্মীদের সেদিন নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে মুজিবের ন্যায় ইসলামের এতবড় দুষমণ হলো বাংলার সর্বকালের সেরা ব্যক্তিত্ব। আর যে শাসনতন্ত্রে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতাকে দাফন করা হয়েছিল এবং প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল একদলীয় বাকশালীয় স্বৈরাচার, সেটিই হলো সেরা শাসতন্ত্র। ভারতীয় নেতারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও মুজিবের ন্যায় গণতন্ত্রের এতবড় শত্রুকে সমর্থণ দিতে বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধ করেনি। বরং আজ একই কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে শেখ হাসিনা। হাসিনাকে দিয়ে কোরআনের তাফসির মহফিলগুলো যেমন বন্ধ করা হয়েছে, তেমনি বাজেয়াপ্ত কর হচ্ছে ইসলাম বিষয়ক বইপুস্তক।ইসলামপন্থিদের দলনে ব্যবহৃত হচ্ছে দেশের আদালত। আদালতের নতজানু বিচারকগণ কেড়ে নিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন ইসলামী দলের নিবন্ধন। জেলে তুলেছে সেব দলের বহুহাজার নেতাকর্মীকে। অনেককে ইতিমধ্যে ফাঁসির হুকুমও শুনিয়েছে।
ভারতের ইসলামভীতি
গত ৮ই নভেম্বর তারিখে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ প্রসঙ্গে একটি আলোচনা সভার খবর ছাপা হয়েছে। সে আলোচনাতে যে বিষয়টি প্রকট ভাবে ফুটে উঠেছে সেটি ভারতীয় নেতাদের প্রচন্ড ইসলামভীতি।সে সভায় ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শ্যাম শরণ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত দুই সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি ও পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন,বাংলাদেশ এখন যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে মৌলবাদের মোকাবিলাই তাদের রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।এ চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা ঠিকমতো করতে না পারলে কয়েক বছর ধরে উন্নয়নের যে ধারা অব্যাহত আছে,তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার এ অঞ্চলও অশান্ত হয়ে উঠবে।“দ্য সোসাইটি ফর পলিসি স্টাডিজ” আয়োজিত এ গোলটেবিল আলোচনায় বাংলাদেশ থেকেও কয়েকজন যোগ দেন। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ঘিরে যে রাজনৈতিক বিতর্ক ও অচলাবস্থা,তাকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং ধর্মীয় মৌলবাদের ক্রমে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার বিষয়গুলো এ আলোচনায় প্রাধান্য পায়।দৈনিক প্রথম আলো লিখেছে,বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ ও আবুল বারকাত মনে করেন,বাংলাদেশের গণতন্ত্রী,শান্তিপ্রিয় ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের কাছে বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থানই এ মুহূর্তের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।বীণা সিক্রি মনে করেন,জামায়াত ও হেফাজত বাংলাদেশে অস্থিরতা আনতে চাইছে, তারা জঙ্গি ইসলামি শাসন কায়েম করতে চায়।সে জন্য তারা মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করে রাখতে চায়। তাদের অভিযোগ,বিএনপির শাসনামলেও জামায়াত এ কাজই করেছে। আলোচনায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের প্রসঙ্গও। পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী মনে করেন,আমেরিকা যেভাবে জামায়াতকে নরম মৌলবাদী বলে মনে করে,তা বিপজ্জনক।মৌলবাদ নরম বা কঠোর হয় কি না,সে প্রশ্ন ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠে মার্কিন মনোভাব।সে বিষয়ে পিনাকরঞ্জন মনে করেন, বাংলাদেশে জামায়াতের ধারক-বাহক বিএনপি যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মদদ পাচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে যতই বাড়ছে ইসলামি জনতার বিশাল সমাবেশ এবং যতই ধ্বনিত হচ্ছে “নারায়ে তাকবীর,আল্লাহু আকবর” ততই কাঁপন শুরু হচ্ছে ভারতীয় শিবিরে। এটিকেই তারা বলছে মৌলবাদের উত্থান। এখন এটি সুস্পষ্ট,ভারতীয়দের ঘুম হারাম করার জন্য আনবিক বোমার প্রয়োজন নাই,রাজপথে “আল্লাহু আকবর” ধ্বনিই যথেষ্ট। আনবিক বোমার চেয়েও যে এ ধ্বনি শক্তিশালী সেটি তো বার বার প্রমাণিতও হয়েছে। ফিরাউনের বিশাল বাহিনীকে নিরস্ত্র বনি ইসরাইলের সামনে নির্মূল করতে তাই আনবিক বোমা লাগেনি। ভারতীয় মনে তাই সে “আল্লাহু আকবর” এর ভয়। আওয়ামী লীগের নৌকার তলা যে ধ্বসে গেছে এবং সেটি যে আর ভাসানো সম্ভব নয় সেটি ভারতীয় নেতারাও টের পেয়ে গেছে। ফলে বেড়ে গেছে তাদের দুর্ভাবনাও। ১৯৭৫য়ের ১৫ই আগষ্টের পর এতবড় দুর্ভাবনায় ভারত এর আগে কখনোই পড়ে নাই। সে দুর্ভাবনা নিয়েই সম্প্রতি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মিষ্টার মনমোহন সিং সম্প্রতি তার জাতিসংঘে যোগদান উপলক্ষ্যে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাথে।
মার্কিনীরা বুঝে ফেলেছে,নির্বাচনে গণধিকৃত হাসিনাকে বিজয়ী করা আর সম্ভব নয়। খুনি হাসিনাকে এমুহুর্তে ক্ষমতায় রাখতে হলে তাদের নিজেদেরকে অস্ত্র ধরতে হবে।কিন্তু মার্কিনীদের সমস্যা,বাংলাদেশের মাটিতে তেমন একটি যুদ্ধ করার সামর্থ তাদের নাই। আফগানিস্তান ও ইরাকের দীর্ঘ যুদ্ধ তাদেরকে কাহিল করে ফেলেছে। অতীতের দু’টি বিশ্বযুদ্ধও মার্কিনীদের এতটা কাহিল করেনি। তাই হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হলে সেটি ভারতকেই নিজ বলে করতে হবে। কিন্তু ভারতে সমস্যা হলো,দেশটির সেনাবাহিনী দুইটি বৃহৎ অভ্যন্তরীন যুদ্ধে দীর্ঘকালীন যাবত লিপ্ত।একটি কাশ্মিরে,অপরটি বাংলাদেশের উত্তরপূর্বে অবস্থিত ৭টি রাজ্য জুড়ে। বহু অর্থ ও বহু রক্ত ব্যয় করেও ভারত সরকার এ যাবত সে রাজ্যগুলিতে কোন কূলকেনারা করতে পারিনি। একাত্তরে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যে সৈন্য-সংখ্যা তার সাত গুণের বেশী সৈন্য নিয়েও বিজয় আনতে পারেনি। এবং সেটি মাত্র ৮০ লাখ মানুষের দেশ কাশ্মিরে। ফলে ১৬কোটি মানুষের বাংলাদেশে সৈন্য নামানোর মত মনবল তাদের নাই। অথচ “বিডিনিউজ-২৪” এর সুদীব ভৌমিক টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত তার এক নিবন্ধে ভারতীয়দের প্রতি তেমন একটি যুদ্ধেরই দাওয়াত দিয়েছেন।
ঘরের শত্রু সেক্যুলারিস্টগণ
উপমহাদেশের রাজনীতিতে ভূমিকম্প সৃষ্টির সামর্থ বাংলাদেশীদের যে আছে সেটি বহু বাংলাদেশী না বুঝলেও ভারতীয়রা বুঝেছে। তাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে যতটা বিশাল অংকের ভারতীয় বিনিয়োগ সেরূপ বিনিয়োগ পাকিস্তানের রাজনীতিতে নাই। ভারতের এবারের কৌশলটি হবে বাংলাদেশীদের কাঁধে অস্ত্র রেখে নিজের যুদ্ধটি লড়া। এক্ষেত্রে ভারত তাদের মিত্র রূপে ব্যবহার করবে সেক্যুলারিস্টদের। আর এরাই বাংলাদেশের ঘরের শত্রু। সেক্যুলারিস্টগণই হলো প্রতিটি মুসলিম দেশে সবচেয়ে বিবেকহীন ও সবচেয়ে নৃশংস গণদুষমন। তারা শত্রু গণতন্ত্রেরও। ইসলামের সবচেয়ে বড়শত্রু হলো এরাই। মুসলিম দেশগুলোতে ইসলামের বিরুদ্ধে বড় বড় অপরাধগুলো কাফেরদের দ্বারা হচ্ছে না। বরং হচ্ছে মুসলিম নামধারি এসব সেক্যুলারিস্টদের হাতে। এরাই মুসলীম বিশ্বের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরোয় বিভক্তি নিয়ে প্রচন্ড উৎসব করে। মুসলমানদের উপর যেখানেই আঘাত সেখানেই তাদের উৎসব। তাই শাপলা চত্বরে হাজার হাজার মানুষকে হতাহত করা হলেও বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্টদের মনে সেদিন কোন দংশন হয়নি।বরং বিপুল আনন্দে তারা উৎসব করেছে। তেমনি বিবেকহীনতা মিশরের সেক্যুলারিস্টদেরও। কায়রোর রাজপথে সামরিক বাহিনী যখন মুসলিম ব্রাদারহুডের সহস্রাধিক কর্মীকে হত্যা করে তখন সে নৃশংস হত্যাকান্ডকে তারা সমর্থণ করেছে। একই চিত্র পাকিস্তানেও। জেনারেল মোশাররফের শাসনামলে ইসলামাবাদের লাল মসজিদের আঙিনায় শত শত ছাত্রীদের উপর সেনাবাহিনী গুলি চালায় ও তাদের হত্যা করে। আর সে নৃশংসতাকেও সমর্থণ দিয়েছে সেদেশের সেক্যুলারিস্টগণ। ইসলামের উত্থান রুখতে এমন কোন হীনকর্ম নাই যা এরা করে না।
ইউরোপ,আমেরিকা বা ভারতে বসবাসকালে এসব সেক্যুলারিস্ট কীটদের চেতনায় নিজ নিজ মাতৃভাষা,নিজ সংস্কৃতি,নিজ বর্ণ ও নিজ গোত্রভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ার কোন ভাবনা উদয় হয় না। বরং নিজ ভাষা ও নিজ স্বাতন্ত্রতা ভূলে আলোপটলের ন্যায় সেখানকার কড়াইয়ে হারিয়ে যাওয়াতেই তাদের আনন্দ। অথচ কোন বৃহৎ মুসলিম দেশে বসবাস কালে তাদের কাছে বড় হয়ে দাঁড়ায় নিজ ভাষা,নিজ বর্ণ ও নিজ গোত্রভিত্তিক রাজনীতি বাঁচানোর এজেন্ডা। অন্যভাষী মুসলমানগণ তাদের কাছে তখন হত্যাযোগ্য শত্রু গণ্য হয়।তাই বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের কাছে অসম্ভব গণ্য হয়েছিল অবাঙালী পাকিস্তানীদের সাথে একরাষ্ট্রে বসবাস করা। অথচ তাদের সে সমস্যাটি ভারতে বসবাসকারি বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের হয়না।ইউরোপ-আমেরিকাতেও হয় না।কারণ তাদের দুষমনিটা ভারতের বিরুদ্ধে যেমন নয়,তেমনি পাশ্চাত্য সভ্যতার বিরুদ্ধেও নয়। তাদের একমাত্র শত্রুতা তো ইসলাম ও মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এসব সেক্যুলারিস্ট কীটদের নিজ নিজ ক্ষুদ্রতা নিয়ে বেড়ে উঠার উগ্র নেশাগ্রস্ততার কারণেই উসমানিয়া খেলাফত,পাকিস্তান ও আরব ভূমির বিশাল বিশাল ভূগোল টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।গড়ে উঠেছে রাষ্ট্রীয় সীমারেখার নামে বিভক্তির দুর্ভেদ্য প্রাচীর।আর এতে দারুন ভাবে শক্তিহীন হয়েছে মুসলিম উম্মাহ। তবে এমন মুসলিম রাষ্ট্র-নাশক জঘন্য কীটদের অবস্থান শুধু যে মুসলিম দেশের সেক্যুলার দলগুলিতে তা নয়। তাদের উপস্থিতি বিপুল সংখ্যায় তথাকথিত বহু ইসলামি দলেও।নইলে সেসব তথাকথিত ইসলামী দলেই বা কেন মুসলিম রাষ্ট্রবিনাশের দিবসগুলিতে বর্ণাঢ্য মিছিল ও বিজয়-উৎসব হবে? মুসলমানের বিভক্তি নিয়ে সেরূপ উৎসব যে হারাম সে হুশটি কি এসব ইসলামী দলের নেতাকর্মীদের নেই? ভাষা, বর্ণ বা আঞ্চলিকতার নামে মুসলমানদের মাঝে এরূপ সীমান্ত কি সাহাবায়ে কেরামের সময় ছিল? ছিল কি উমাইয়া ও আব্বাসীয় আমলে? সূদ,জুয়া, কুফরি আদালত ও পতিতাপল্লির ন্যায় মুসলিম ভূমির উপর এরূপ বিভক্তির সীমারেখা তো ঔপনিবেশিক শাসনের লিগ্যাসী। প্রকৃত ঈমানদারের অন্তরে তো এরূপ বিভক্তি নিয়ে মাতম হওয়া উচিত,উৎসব নয়। প্রকৃত ঈমানদার তো অংশ নিবে এসব হারাম সীমান্ত ভেঙ্গে উম্মতে ওহেদা গড়ার জিহাদে।আধুনিক হওয়ার অর্থ তো ইসলামের মৌল বিশ্বাস থেকে দূরে সরা নয়। সেক্যুলারিজম যে কতটা গভীর ভাবে ইসলামি দলগুলিতে ডুকেছে এ হলো তার নমুনা।
মুসলিম রাজনীতির মূল কথা তো ইসলামের প্রতিষ্ঠা বাড়ানো এবং সে সাথে মুসলমানের শক্তিবৃদ্ধি। যুগে যুগে মুসলিম মুজাহিদগণ তো সে কাজেই জিহাদ করেছেন এবং সে জিহাদে শহীদও হয়েছেন। মুসলিম ভূগোল খন্ডিত করা তো ইসলামে জঘন্য প্রকারের হারাম। কিছু ব্যক্তির মদ্যপানে বা ব্যাভিচারে মুসলিম উম্মাহর এতবড় ক্ষতি হয় না যা হয়,মুসলিম ভুগোল খন্ডিত হলে। এমন বিভক্তি তো শত্রু শিবিরে উৎসব আনে। ১৬ ডিসেম্বর তো এ জন্য ভারতীয়দের কাছে এতটা উৎসবযোগ্য।অতীতে মুসলিম রাষ্ট্রে ইজিদ বিন মোয়াবিয়া ও হাজ্জাজ বিন ইউসুফের ন্যায় বহু বর্বর ও জালেম শাসক এসেছে। কিন্তু সে জন্য কি সে যুগের মুসলমানগণ মুসলিম ভূগোলে হাত দিয়েছে? প্লেটে মশামাছি বসার কারণে প্লেট ভেঙ্গে ফেলাটি শিশু সুলভ পাগলামী।বিবেকের সুস্থ্যতা তো প্রকাশ পায় সে প্লেট পরিস্কার করায়। তেমনি কোন মুসলিম দেশ বর্বর শাসক দ্বারা অধিকৃত হলে বা দেশে স্বৈরাচার ও অনাচার বাড়লে ইসলামের বিধান হলো তার বিরুদ্ধে জিহাদ করা। কিন্তু জঘন্য হারাম কর্ম সে অজুহাতে মুসলিম দেশের ভূগোল ভেঙ্গে ফেলা। অতীতে সে ভূগোল গড়তে যে বহু রক্ত ব্যয় হয়েছে –একজন ঈমানদার সে ইতিহাস ভূলে যায় কি করে? তাছাড়া পবিত্র কোরআনে “পরস্পরে বিভক্ত হয়ো না” বলে সে হারাম বিভক্তির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট নির্দেশও রয়েছে।এজন্যই একাত্তরে কোন একটি ইসলামী দল এবং কোন একজন আলেমও পাকিস্তান ভাঙ্গাকে সমর্থণ করেনি।সমর্থন করেনি কোন এক মুসলিম দেশও। সেটি ছিল নিতান্তই ভারত ও তার সেক্যুলারিস্ট দালালদের প্রজেক্ট।
অথচ মুসলিম দেশের সেক্যুলারিস্টগণ সে হারাম কাজটি বেশী বেশী করেছে এবং ভূলিয়ে দিয়েছে সে কোরআনী ফরমান।সেটি যেমন মুসলিম দেশের নগরবন্দরে সূদী ব্যাংক ও ব্যভিচার পল্লি নির্মানের ক্ষেত্রে,তেমনি বৃহৎ মুসলিম ভূগোল ভেঙ্গে ফেলার ক্ষেত্রে। একাত্তরে তো সেটিই হয়েছে। আর যেসব ইসলাম-দুষমন ব্যক্তি সেসব হারাম কাজে নেতৃত্ব দিয়েছে তাদেরকে জাতির পিতা বলে মাথায়ও তুলেছে। এদের কারণেই মুসলিম উম্মাহ আজ ৫৫টির বেশী টুকরায় বিভক্ত। আর সেক্যুলার সেনাবাহিনীর কাজ হয়েছে সে হারাম সীমান্তগুলীকে পাহারা দেয়া।ফলে অসম্ভব হয়ে পড়েছে বিভক্তির প্রাচীর ভেঙ্গে মুসলিম বিশ্বের ভৌগলিক সংহতি প্রতিষ্ঠা এবং বিশ্বশক্তি রূপে মুসলমানদের উত্থান।ভারতের সেক্যুলারিস্ট হিন্দুগণ অন্ততঃ ভাষা, বর্ণ ও আঞ্চলিকতার নামে এমন বিভক্তির পথে এগুয়নি। মুসলমান নামধারি ব্যক্তি ইসলামে অঙ্গিকারহীন তথা মুনাফিক হলে সে যে পৌত্তলিক কাফেরদের চেয়েও নীচে নামতে পারে এ হলো তার প্রমাণ। মহান আল্লাহতায়ালা এজন্যই জাহান্নামে তাদের স্থান দিবেন কাফেরদেরও নীচে।–(হাদীস)। এরাই দেশে দেশে ইসলামের আন্তর্জাতিক শত্রুপক্ষের সবচেয়ে বড় মিত্র। ভারত এদের কাঁধে বন্দুক রেখেই বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ লড়তে চায়।
কোন মুসলিম দেশে সেক্যুলারিস্টদের রাজনৈতীক পরাজয় ও ইসলামের অভ্যুত্থান দেখা দিলে সেক্যুলারিস্টদের কাজ হলো রাজনীতিতে সেনাবাহিনীকে ডেকে আনা। কারণ চিন্তা-চেতনায় তারাই সেক্যুলারিষ্টদের বিশ্বস্থ্য মিত্র। বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্টগণও সম্ভবত সেপথেই এগুবে। আলজেরিয়ার নির্বাচনে ইসলামপন্থিগণ যখন বিশাল ভাবে বিজয়ী হচ্ছিল তখন সে বিজয় রুখতে নৃশংস সামরিক জান্তাদের ক্ষমতা দখলে ডেকে আনা হয়। আর সামরিক অভ্যুত্থান হলে তো রক্তপাতও অনিবার্য হয়ে উঠে। আলজিরিয়ায় বহু লক্ষ মানুষের জীবন নাশ হয়েছে সে অভ্যুত্থানে। আর সামরিক বাহিনী তো এরূপ ক্ষমতা দখলের কাজে দু’পায়ে খাড়া।মুসলিম দেশগুলিতে সেক্যুলারিস্টদের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটিটি কোন রাজনৈতীক দল নয়,কোন পতিতাপল্লি, মদ্যশালা বা ক্লাব-ক্যাসিনাও নয় বরং সেটি হলো সামরিক বাহনী। ক্যান্টনমেন্টগুলো হলো মুসলিম দেশের মাঝে অনৈসলামীক ধ্যানধারণা ও সংস্কৃতির বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। ইসলাম ও নিজ দেশের মুসলিম সংস্কৃতি নিজেই এখানে বিদেশী। ট্রেনিংয়ের নামে পাশ্চাত্য দেশ থেকে সামরিক অফিসারগণ যতটা পায় সামরিক প্রশিক্ষণ তার চেয়ে বহুগুণ বেশী পায় মগজ ধোলাই। ট্রেনিং শেষে ফিরে আসে শত্রুশক্তির অতি বিশ্বস্থ্য মিত্ররূপে। মুসলিম দেশগুলোতে এরাই হলো বিদেশী শত্রুদের বিশ্বস্থ্য সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতীক বন্ধু। তাই এশিয়া-আফ্রিকার কোথাও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বিপদে পড়লে তাদের ডাক পড়ে। এদের কারণেই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান থেকে ইংরেজগণ বিতাড়িত হলেও পাক-সেনাবাহিনীতে মদ্যপান ও ব্যাভিচার বেঁচেছিল আর বহু দশক। কামালপাশার নেতৃত্বে এরাই খেলাফতের ন্যায় ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে বিলুপ্ত করেছিল।তুরস্কের নির্বাচিত ও জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী আদনান মেন্দারেসকে সেনাবাহিনীই ফাঁসীতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিল।মিশরের ইতিহাসের সর্বপ্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড.মুরসীকে এরাই বন্দী করে রেখেছে। এবং রাজপথে তার সমর্থকদের হত্যা করছে। এরাই বার বার দখলে নিয়েছে পাকিস্তানকে।
ভারতীয় স্ট্রাটেজী
বাংলাদেশের ইসলামের জাগরণের এখনই সুবর্ণ সুযোগ। দেশের সেক্যুলারিস্টদের অপরাধী কদর্য চরিত্রটি জনগণের সামনে আর কখনোই এতটা প্রকট ভাবে উম্মোচিত হয়নি। তারা যে দেশ ও ইসলামের ভয়ানক শত্রু সেটি এখন সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত। জনগণ এখন তাদের গ্রাস থেকে মুক্তি পেতে চায়। তাদেরকে আবর্জনার স্তুপে ফেলার এখনই মোক্ষম সময়। কিন্তু ভারত তাদের বন্ধুদের এ অবস্থায় দেখতে রাজি নয়। তাই সে সুযোগ বিনষ্ট করতে শুধু আওয়ামী লীগের কাঁধে নয়,সেনাবাহিনীর কাঁধেও অস্ত্র রেখে যুদ্ধটি লড়তে চায়। ভারতের বিনিয়োগ তাই শুধু তাদের রাজনৈতীক ও সাংস্কৃতিক সেপাইদের পিছনে নয়,সেনাবাহিনীর অফিসারদের পিছনেও। জেনারেল মঈনকে দিল্লিতে ডেকে নিয়ে ভারত সরকার কি শুধু ঘোড়া উপহার দিয়েছিল? আরো কি কি দিয়েছিল সেটি জেনারেল মঈন ও তার সহচরগণই ভাল জানে।শেখ হাসিনা তো ক্ষমতায় এসেছিল সে বিনিয়োগের ফলেই।তাছাড়া বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে ভারতের নতজানু সেবাদাস কি শুধু জেনারেল মঈন একা ছিল? সেটি হলে তো বুঝতে হবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থানরত হাজার হাজার ভারতীয় গোয়েন্দাদের দিবারাত্রের কাজ শুধু ঘোড়ার ঘাস কাটা। ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর রুচি ও নৃশংসতা যে কতটা গভীর সেটি তো ধরা পড়ে শাপলা চত্বরে হাজার হাজার সৈন্যের সমাবেশ ও নিরস্ত্র মুসল্লিদের উপর লক্ষাধিক রাউন্ড গুলি বর্ষণ।তাছাড়া সে নৃশংসতা লাগাতর প্রমাণ করছে র্যাবের অফিসার ও সেপাহীরাও। তারাই তো বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে ইসলামি বই বাজেয়াপ্ত করছে। হানা দিচ্ছে হিজাবী ছাত্রীদের পাঠচক্রে। হানা দিচ্ছে বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনের অফিসে। তাছাড়া শেখ হাসিনা তার বিগত ৫ বছরের শাসনে সেনাবাহিনীকে সাঁজিয়েছে ইসলামপন্থিদের দমনের গ্রান্ড স্ট্রাটেজীকে সামনে রেখেই।
ভারতের লক্ষ্য বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নয়,দেশটির স্বাধীনতা নয়। দেশটির অর্থনৈতীক উন্নয়নও নয়। গণতন্ত্রের প্রতি সামান্যতম আগ্রহ থাকলে তবে কেন গণতন্ত্র হত্যাকারি বাকশালী মুজিবের প্রতি এত প্রশংসা? বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি আগ্রহ থাকলে তবে কেন ৭ দফা ও ২৫ দফা দাসচুক্তি? আর বাংলাদেশের অর্থনৈতীক উন্নয়ন? বাংলাদেশের অর্থনৈতীক উন্নয়নের বড় শত্রু হলো ভারত। সেটি প্রমাণিত হয় ১৯৭১য়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরপরই। পাত্রের তলা ধ্বসে গেলে সে পাত্রে যত কিছুই ঢালা হোক না কেন তা বেরিয়ে যায়। দেশের ক্ষেত্রে সে তলাটি হলো দেশের সীমান্ত। সুরক্ষিত সীমান্তই দেশের সম্পদ নিজ দেশে ধরে রাখে। তাই শুধু যুদ্ধকালে নয়,প্রতিদেশে রীতি হলো প্রতি দিনের প্রতিটি মুহুর্ত সীমান্ত পাহারা দেয়া। একাজে বিরতি চলে না। কিন্তু ভারত সে অবিরাম পাহারাদারি বাংলাদেশ সীমান্তে হতে দেয়নি। মুজিবামলে সীমান্ত বাণিজ্যের নামে পাকিস্তান আমলের সে সুরক্ষিত সীমান্তই বিলুপ্ত করেছিল। আর হাসিনা বিলুপ্ত করেছে বিডিআর। মুজিবের কু-কুর্মের ফলে পাকিস্তান আমলের সোনারূপা,কাঁসাপিতল,কলকারখানার যন্ত্রপাতিই শুধু নয়,বিদেশীদের দেয়া রিলিফের মাল এবং কাঁচা পাটও ভারতের বাজারে গিয়ে উঠে। বাংলাদেশ হারায় পাকিস্তান আমলের অর্জিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাট ও পাটবস্ত্র উৎপাদনকারি দেশের মর্যাদা। সেটি ছিনতাই হয় ভারতের হাতে। বাংলাদেশের ললাটে জুটে বিশ্বের তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি হওয়ার অপমান। সে সময় শুরু হয় শত শত কোটি টাকার জাল নোট ছেপে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিনাশের ষড়যন্ত্র।ফলে আসে অর্থনৈতীক মড়ক ও দুর্ভিক্ষ। তাতে মৃত্যু হয় বহু লক্ষ বাংলাদেশীর। এ সবই হলো ভারত ও তার দাসশাসকদের অপরাধ।
ভারতের এবারের লক্ষ্য শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা খর্ব করা নয়। নিছক অর্থনৈতীক বিনাশও নয়। মূল লক্ষ্যটি হলো যে কোন মূল্যে ইসলামের জাগরণ রুখা। কারণ,তারা জানে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ভারতের জন্য কোন চ্যালেঞ্জ নয়।অর্থনৈতীক ময়দানেও বাংলাদেশ ভারতের প্রতিদ্বন্দী নয়। কিন্তু উপমহাদেশের রাজনীতিতে অপ্রতিরোধ্য বিপ্লব আনতে পারে ইসলামি বাংলাদেশ।সে সামর্থ বাংলাদেশের রয়েছে। কারণ সে জন্য অর্থবল লাগে না। আনবিক বোমাও লাগে না। লাগে ঈমানের বল। লাগে জিহাদ। আফগানিস্তানের আড়াই কোটি মানুষের জিহাদ বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র সোভিয়েত রাশিয়ার ভূগোলকে গুড়িয়ে দিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে দেশটির বিশ্বশক্তির মর্যাদা। স্বাধীনতা দিয়েছে ৬টি মুসলিম দেশকে।ধ্বস নামিয়েছে মার্কিন অর্থনীতিতেও। সে তুলনায় বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ কি কম? ভারত কি সোভিয়েত রাশিয়া বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী?
জিহাদঃ অনিবার্য স্ট্রাটেজী
বাংলাদেশের মাটিতে মুসলমানদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ইখতিয়ার মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির মাত্র ১৭ জন মুজাহিদ দিয়ে। এখন তো দেশটিতে মুজাহিদদের সংখ্যা লক্ষ লক্ষ। তবে যারা বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় আধিপত্যের বিনাশ ও ইসলামের বিজয় চায় তাদেরকে ভারতীয় রাজনীতির মূললক্ষ্য ও স্ট্রাটেজীকে অবশ্যই বুঝতে হবে। লড়াই এখানে স্রেফ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতিষ্ঠা নয়। নিছক আওয়ামী বাকশালীদের নির্মূলও নয়। বরং লড়াই এখানে সরাসরি ভারত ও তার পদসেবী সৈনিকদের বিরুদ্ধে। আর ভারতের সে সৈনিকদের অবস্থান শুধু সীমান্তের ওপারে নয়,বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও।
শত্রুর হামলার মুখে নীরব থাকাটি ঈমানদারি নয়। মুসলিম দেশ ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে অধিকৃত হলে বা সে দেশের উপর হামলা হলে জিহাদ সেখানে ফরজে আইন তথা সবার উপর বাধ্যতামূলক হয়। দেশের প্রতিটি নাগরিকই তখন যোদ্ধা। সমগ্র দেশ তখন ক্যান্টনমেন্ট। সে যুদ্ধে যোগ না দেয়াটি তখন মুনাফেকি। মু’মিনের জীবনে ইসলাম শুধু নামায-রোযা,হজ-যাকাত আনে না,লাগাতর জিহাদও আনে। জিহাদ এখানে ইসলামের সনাতন স্ট্রাটেজী। কোরআনের ছত্রে ছত্রে রয়েছে সে জিহাদের তাগিদ।বলা হয়েছে, “তোমাদের প্রস্তুতি কম হোক বা বেশী হোক অভিযানে বেরিয়ে পড়, জিহাদ করো আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের সম্পদ ও প্রাণ দিয়ে।এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা জানতে।”-(সুরা তাওবা আয়াত ৪১)।আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন এখানে বিশাল প্রস্তুতির অপেক্ষায় কালক্ষেপনের সুযোগ দেননি। বিশেষ করে তখন যখন মুসলিম ভূমি ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে অধিকৃত হয়। মুসলমানদের অসম্পূর্ণতা তখন মহান আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদের দিয়ে পূরণ করেন। আর এটিই তো সিরাতুল মুস্তাকীম যা মু’মিনকে জান্নাতে নিয়ে পৌঁছায়। যে পথে জিহাদ নেই তাকে কি তাই সিরাতুল মুস্তাকীম বলা যায়? জিহাদহীন সে পথে চলে কি জান্নাতপ্রাপ্তির কল্পনা করা যায়? নবীজী (সাঃ)র আমলে তো তেমন এক সিরাতুল মুস্তাকীমের পথেই লাগাতর জিহাদ শুরু হয়েছিল। সে সময় ইসলাম কবুলের অর্থ শুধু নামাযের জামায়াতে হাজির হওয়া ছিল না, জিহাদের ময়দানে হাজির হওয়াও।যার মধ্যে জিহাদ নাই এবং সে জিহাদে জানমালের কোরবানীর কোন নিয়েতও নেই,নবীজী (সাঃ)তাকে মুনাফিক বলেছেন।
মু’মিনের জীবনে জিহাদের অংশগ্রহণ এক অনিবার্য দায়বদ্ধতা। কারণ সে তো আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্রয়কৃত দাস। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,“নিশ্চয়ই আল্লাহ মু’মিনদের থেকে তাঁর জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে।তাঁরা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে এবং (সে পথে তারা শত্রুদের) নিধন করে এবং নিজেরাও নিহত হয়।তাওরাত,ইঞ্জিল ও কোরআনে এ বিষয়ে তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আর কে আল্লাহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর? তোমরা আল্লাহর সাথে যে সওদা করেছো তার জন্য আনন্দ প্রকাশ করো,কারণ এটিই তো মহাসাফল্য।”-(সুরা তাওবা আয়াত ১১১)।তাই ঈমানদারির প্রকৃত পরিচয় এবং সে সাথে এ জীবনে সাফল্যের পথ শুধু কালেমায়ে শাহাদত পাঠ নয়।স্রেফ নামায-রোযা আদায়ও নয়। বরং সেটি হলো মহান আল্লাহর রাস্তায় নিজের জান ও মালের কোরবানীতে চুক্তিবদ্ধ হওয়া। এটিই মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ বাণিজ্য।এবং সেটি মহান আল্লাহর সাথে। মানব জীবনে প্রকৃত সফলতা আসে তো এ পথেই। মহান আল্লাহতায়ালার এ ঘোষণাটির উপর যার ঈমান আছে,তার জীবনে জিহাদ এবং সে জিহাদে জানমালের কোরবানীর জজবাটি তাই অনিবার্য কারণেই সৃষ্টি হয়। তাই এটি যেমন মৌলবাদ নয়,তেমন চরমপন্থি সন্ত্রাসও নয়।বরং মু’মিনের জীবনে এটিই হলো ইসলামের স্বাভাবিক প্রকাশ।
সে জিহাদের ঢেউই বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছিল আজ থেকে ৮শত বছরেরও বেশী কাল আগে। এবং সে জিহাদের বরকতেই মুক্ত হয়েছিল আজকের চেয়েও বিশাল ও অখন্ড বাংলা। কিন্তু ১৭ জন মুজাহিদের হাতে যে বাংলা সেদিন স্বাধীন হয়েছিল তা এখন অধিকৃত ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে। যাদের হাতে শুধু শরিয়তি বিধানই নয়,আল্লাহর উপর আস্থার বানীও আস্তাকুঁরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। নিষিদ্ধ হয়েছে তাফসির মাহফিল,গুলি চালানো হয়েছে ঢাকার রাস্তায় ধর্না দেয়া নিরস্ত্র মুসল্লিদের উপর। শহীদ মুসল্লিদের লাশ ফেলা হয়েছে ময়লার গাড়িতে! এদেশের শাসনতন্ত্রে সূদ নিষিদ্ধ নয়।নিষিদ্ধ নয় পতিতাবৃত্তির ন্যায় জ্বিনার বানিজ্যও।কিন্তু নিষিদ্ধ করা হয়েছে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার নিয়ে রাজনৈতীক সংগঠন করা।সে অপরাধে তখন নিষিদ্ধ করা হয় সে দলের নিবন্ধন। জেলে তোলা হয় সে দলের নেতাদের। এসবই হচ্ছে ১৫ কোটি মুসলমানের সামনে। বাঙালী মুসলমানের জীবনে এর চেয়ে বড় পরাজয় ও এর চেয়ে বড় লজ্জার আর কি হতে পারে? বাংলাদেশের ন্যায় এমন একটি অধিকৃত মুসলিম দেশে জিহাদ থাকবে না তা কি কোন মুসলমান ভাবতে পারে? আর সেরূপ ভাবলে কি কেউ মুসলমান থাকে।
তথ্য সূএে: http://www.drfirozmahboobkamal.com/2010-03-24-10-21-22/968-indias-bangladesh-phobia-and-the-grand-strategy.html
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন