আবুল বারাকাতের মহাবিপর্যয় ভীতি ও মিথ্যা উৎপাদন

লিখেছেন লিখেছেন মনসুর আহামেদ ৩১ মে, ২০১৩, ০৭:৩৬:৪২ সকাল



কে এই আবুল বারাকাত?

রাজনৈতীক ভাবে নির্মূল হওয়ার ভীতি আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের মনে যে কতটা প্রকট সেটিরই উৎকট প্রকাশ ঘটেছে গত ১৮/০৫/১৩ তারিখে ঢাকা থেকে প্রকাশিত “সাপ্তাহিক”য়ে দেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.আবুল বারাকাতের একটি সাক্ষাতকারে। প্রশ্ন, কে এই আবুল বারাকাত? ইসলামের বিরুদ্ধে তার দুষমনি ও প্রতিহিংসার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ইসলামের শত্রু পক্ষের তিনি একজন প্রথমসারির সৈনিক। তার লড়াই বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে। শাহবাগের নাস্তিক আয়োজকগণ হলো তার নিজের ভাষার আলোকিত সৈনিক। ফলে তারা যে তার অতি কাছের লোক সেটি তিনি গোপন রাখেনি। তার কন্যাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ইসলামের বিরুদ্ধে তার ন্যায় তার কন্যার আক্রোশও অধিক।সম্প্রতি তার কন্যা সে আক্রোশের প্রকাশ ঘটিয়েছিল,সপ্তাহের আর সব দিন বাদ দিয়ে জুম্মার নামাযের সময় ছাত্রদের পরীক্ষার আয়োজন করে। অবশেষে ছাত্রদের প্রতিবাদের মুখে তার সে ষড়যন্ত্র সে বানচাল হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের বাংলাদেশকে তারা যে কোন দিকে নিতে চায় সেটি কি এর পরও গোপন থাকে?

আবুল বারাকাত লেখাপড়া করেছেন সোভিয়েত রাশিয়ায়। ভারতীয় লবির অতি কাছের লোক তিনি। ঢাকায় অবস্থানরত পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী মহলের সাথেও তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক। ইসলামের বিরুদ্ধে আজ বিশ্বব্যাপী যে কোয়ালিশন সে কোয়ালিশনের সাথে তার গভীর সম্পর্ক। চাকুরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হলেও তার আসল কাজটি অন্যত্র। গবেষণা ও ইভালিউশনের নামে তার একটি এনজিও আছে। সে এনজিও’র সূত্র ধরে তিনি প্রচুর অর্থ পান পশ্চিমা দাতা সংস্থাগুলো থেকে। সে সাথে আওয়ামী শাসনামলের অতি সুবিধাভোগী ব্যক্তিও। জনতা ব্যাংকের তিনি একজন কর্ণধার। আবুল বারাকাতের মূল কাজটি হলো, বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের নির্মূলের একটি বুদ্ধিবৃত্তিক পরিকল্পনা খাড়া করা এবং সেটির বাস্তবায়নে অন্যদের উস্কানি দেয়া। তার গবেষণা ও লেখালেখির বিষয় মূলতঃ দুটি। এক). কি করে বাংলাদেশের মাটিতে হিন্দু ও হিন্দুস্থানের স্বার্থকে বৃদ্ধি করা যায়, দুই). কি করে বাংলাদেশের ইসলামপন্থিদের রাজনৈতীক ও অর্থনৈতীক মেরুদন্ডকে ভেঙ্গে দেয়া যায়। বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলা যাওয়া হিন্দুদের জমিজমা ফিরত দেয়ার পক্ষে তিনি জোর চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। ভারত থেকে এ কাজে তিনি মদদও পাচ্ছেন। সরকার তার সে দাবি মেনে নিয়েছে। অথচ মুজিব আমলে বাংলাদেশের হাজার হাজার কোটি টাকা ভারত যে লুটে নিয়ে গেল তা নিয়ে তিনি কোন সময়ই মুখ খুলেননি। সে লুটের মধ্যে ছিল পাকিস্তান আর্মির অব্যবহৃত হাজার হাজার কোটি টাকার যুদ্ধাস্ত্র্র। ভারতীয় বাহিনীর হাতে বাংলাদেশ অধিকৃত হওয়ার পর পাকিস্তান আর্মির ফেলে যাওয়া কোন ট্যাংক, কোন দূরপাল্লার কামান ও গোলাবারুদই তারা বাংলাদেশে রেখে যায়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট মুজিবের বিরুদ্ধে ঢাকার রাস্তায় যে কয়েক খানি ট্যাংক নামানো হয়েছিল তা এসেছিল মিশর থেকে। এসেছিল তৎকালীন মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের খয়রাত হিসাবে।

আবুল বারাকাতের ইসলামভীতি

কিছু কাল আগে আবুল বারাকাত গবেষনার ছদ্দবেশে এক বই লিখে দেখিয়েছিলেন, ইসলামি ব্যাংক কিভাবে বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের অর্থনীতির বিশাল ভিত গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি এ ব্যাংকটিকে তিনি পেশ করেছেন বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য বিপদজনক প্রতিষ্ঠান রূপে। উস্কানি দিয়েছেন, এ ব্যাংককে ইসলামপন্থিদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রনে নেয়ার। লক্ষ্য, এ ব্যাংকটিও পরিনত হোক সোনালী ও জনতা বাংকের মত আওয়ামী বাকশালীদের লুটপাটের উর্বর ক্ষেত্র রূপে। ইসলামি ব্যাংকের অর্থে বাংলাদেশে যে কয়েক হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, গড়ে উঠেছে বহু হাসপাতাল, বহু পশুপালন ও মৎস্যপালন প্রতিষ্ঠান এবং রাস্তায় নেমেছে যেরূপ হাজার হাজার যানবাহন -সেটি তার নজরে পড়েনি। সম্প্রতি দেশের নানা স্থানে ইসলামি ব্যাংকের নানা শাখা ও বুথের উপর যে হামলা হয়েছে তার পিছনে আবুল বারাকাতের মত ব্যক্তিদের উস্কানি যে সক্রিয় ছিল তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ আছে?

সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামি ও ইসলামি ছাত্রশিবিরের উপর্যপরি হরতালের সফলতা দেখে আবুল বারাকাতের মত ব্যক্তিদের ভয় আরো গভীরতর হয়েছে। সে ভয় আরো তুঙ্গে উঠেছে ৬ই এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের প্রায় তিরিশ লাখ লোকের লংমার্চ দেখে। এই ভয়ই তাদের মরণের ভয়। আবুল বারাকাতের আশংকা,বাংলাদেশ শ্রীঘ্রই তালেবান রাষ্ট্র হতে যাচ্ছে। তার নিজের উক্তি, “এখনই সমাধানে পৌঁছাতে না পারলে বাংলাদেশ তালেবান রাষ্ট্র হতেই পারে। কারণ একটি বিপ্লব বা পটপরিবর্তনের জন্য কোটি কোটি লোকের প্রয়োজন পড়ে না। শতকরা দুই ভাগ বা পাঁচ ভাগ কর্মী থাকলেই অনেক কিছু সম্ভব। জামায়াত-শিবিরের তো ৫ ভাগ সক্রিয় সমর্থক আছেই। এর সঙ্গে সেনাবাহিনীর একাংশ যোগ হতেই পারে। না হওয়ার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ, জামায়াত রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র তৈরি করেছে। আপনি আইনজীবীদের নির্বাচনগুলো দেখেন,ওরা কত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।”

অসুস্থ্যতা যেখানে বিবেকের

অতি ভয়ে মানুষ পাগলের প্রলাপ বকে। এমন ভীতু মানুষের সামনে ছোট খাটো মানুষও ভয়ংকর দৈত্য মনে হয়।এমন ভয়ে আক্রান্ত আবুল বারাকাত। তার মুখে তাই প্রলাপও অনেক। এরূপ ভয়ের কারণে জামায়াত ইসলামের ন্যায় একটি সংগঠন তার কাছে সাধারণ সংগঠন মনে হয়নি। মনে হয়েছে বাংলাদেশের মধ্যে প্রতিদ্বন্দী একটি পৃথক রাষ্ট্র। তার নিজের কথাঃ “তারা সৃষ্টি করেছে মূল ধারার রাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটি রাষ্ট্র,মূল ধারার সরকারের মধ্যে আরেকটি সরকার,মূল ধারার অর্থনীতির মধ্যে আরেকটি অর্থনীতি।” প্রশ্ন হলো একটি রাষ্ট্র বলতে কি বোঝায় সে জ্ঞান কি আবুল বারাকাতের আছে? রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কিতাবে রাষ্ট্রের সংজ্ঞা কি সেটি কি কখনোই তিনি একবার পড়ে দেখেছেন? রাষ্ট্র মানব সমাজের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। রাষ্টের যেমন নিজস্ব মানচিত্র থাকে, তেমনি সরকার,বিশাল প্রশাসন ও বিশাল বিশাল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানও থাকে। থাকে বিচার-কার্য নির্বাহের জন্য আইন-কানূন ও আদালত। থাকে বেতনভোগী বিশাল সশস্ত্র সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনী। কিন্তু জামায়াতে হাতে এর কোনটিও কি আছে? তাদের অফিসগুলি তো দীর্ঘকাল যাবত তালাবদ্ধ। তাদের কর্মীরা তো রাজপথে নামে খালি হাতে। তাদের রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট মানচিত্র বা সীমানাটি কোথায়? কোথায় সে রাষ্ট্রের প্রহরায় সশস্ত্র সেনাবাহিনী? কোথায় তাদের সে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন? একটি ব্যাংক, কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার অর্থ কি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা? ভারতে রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে এর চেয়ে বেশী প্রতিষ্ঠান আছে। মিশরে ইখওয়ানাল মুসলিমিনের হাতে তার চেয়েও বেশী প্রতিষ্ঠা। তাই বলে সে সংগঠনকে কেউ কি রাষ্ট্র বলেছে? জামায়াত যদি আলাদা রাষ্ট্র হয়েই থাকে তবে সে রাষ্ট্রের প্রধান বছরের পর বছর শত্রু পক্ষের জেলে থাকলে সে রাষ্ট্র বেঁচে থাকে কি করে? আবুল বারাকাতের কাছে এসব প্রশ্নের উত্তর আছে কি? অথচ এরাই আওয়ামী লীগের প্রথম শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী। এককালে বাংলাদেশের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। সে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানের প্রাদেশিক গভর্নর ছিল এবং তার একটি প্রশাসনও ছিল। কিন্তু ১৯৭১ সালে ভারতীয় বাহিনীর দখলদারির ফলে সে প্রাদেশিক সরকারের সবাই কারারুদ্ধ হয়। তখন পাকিস্তানী রাষ্ট্রও এ প্রদেশটিতে আর বাঁচেনি। ফলে জামায়াত যদি রাষ্ট্রই হয়ে থাকে তবে দলটির প্রধান ও তার কেন্দ্রীয় নেতাগণ কারারুদ্ধ হলে সে রাষ্ট্র বাঁচে কি করে? এসব প্রশ্ন কি আবুল বারাকাতের মনে একবারও উদয় হয়েছে?

বহু মানুষ শুধু মানসিক বিকলঙ্গতা নিয়ে জন্মায় না। জন্মের পর, এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ডিগ্রি নিয়েও বহু মানুষ পাগল হয়। আওয়ামী লীগে এমন অপ্রকৃতস্থ পাগলের সংখ্যা কি কম? বরং এ আওয়ামী পাগলদের পাগলামীটা ভিন্ন মাত্রার। কোন পাগলও কি কখনো বলবে,কিছু মানুষের ঝাঁকুনিতে একটি ৮ তলা বিশাল বিল্ডিং ধ্বসে পড়বে? অথচ যিনি বলেছেন তিনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবং পিএইচডি ডিগ্রিধারি। এবং তার নাম মহিউদ্দীন আলমগীর। ফলে আওয়ামী লীগে এমন পাগল শুধু আবুল বারাকাত একা নন। ডাকাত দলে একজনও সুস্থ্য মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না, তেমনি পাওয়া যাবে না আওয়ামী লীগেও। কারণ সুস্থ্য মানুষের সুস্থ্যতার সবচেয়ে বড় গুণটি হলো ডাকাতিকে ঘৃণা করা। তাই ডাকাত দল গড়ে উঠে শতকরা শতভাগ অসুস্থ্য ও চরিত্রহীন মানুষ দিয়ে। এ অসুস্থ্যতাটি দৈহীক নয়, বরং নৈতীক। তেমনি কোন স্বৈরাচারি শাসকের দলেও কোন সুস্থ্য ও চরিত্রবান মানুষ পাওয়া যায় না। মুর্তিপুজারি কাফেরদের মন্দিরে ঈমানদার খুঁজে পাওয়ার ন্যায় সেটিও এক অচিন্তনীয় ব্যাপার।কারণ সুস্থ্য ও চরিত্রবান মানুষদের দিয়ে তো আর ফ্যাসীবাদী দল গড়া যায় না। এবং তাদের দিয়ে বাকশালী স্বৈরাচার ও হাজার হাজার মানুষ হত্যার নীতিকে সমর্থণ করিয়ে নেয়া যায় না।

মিথ্যা বলা যেখানে স্ট্রাটেজী

ইসলামের বিরুদ্ধে একটি দীর্ঘকালীন গণহত্যার যুদ্ধকে ন্যায় সঙ্গত করার স্বার্থে আল কায়েদাকে একটি দানবীয় শক্তিরূপে চিত্রিত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন জনগণকে আল কায়েদা’র ভয় না দেখালে সরকারের পক্ষে কি সম্ভব হতো তাদের পকেট থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লুট করা? সম্ভব হতো কি আফগানিস্তান ও ইরাকে প্রায় তিন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যায়ের বিশাল যুদ্ধকে গ্রহণযোগ্য করা? বাংলাদেশেও তেমনি ইসলামপন্থিদের সহিংস নির্মূলের লক্ষ্যে ইসলামি দলগুলোকে দানবীয় শক্তিরূপে চিত্রিত করার সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা হচ্ছে। হিফাজতে ইসলামের হাজার হাজার কর্মীকে নির্মম ভাবে হতাহত করাকে জায়েজ করতে তারা প্রচার করছে হেফাজতের মুসল্লিরা বায়তুল মোক্কাররমের সামনে বইয়ের দোকানে পবিত্র কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে। বলা হচ্ছে,তারা রাস্তার গাছ নষ্ট করেছে। শত শত মানবহত্যাকারি এ খুনিরা এখন গাছপ্রেমিক হয়েছে। বলা হচেছ তারা নাকি ব্যাংকগুলোতে আগুন দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল। এক্ষেত্রে আবুল বারাকাতের নিজের মিথ্যাচারটিও দেখবার মত। তিনি বলেছেন,“বাংলাদেশে এখন প্রতি ৩ জন ছাত্রের ১ জন মাদ্রাসার ছাত্র (যার মোট সংখ্যা হবে ৮০ লাখ)। দেশে মোট মাদ্রাসার সংখ্যা হবে ৫৫,০০০-এর বেশি,যার মধ্যে ৭৩ শতাংশ কওমি মাদ্রাসা;এসব মাদ্রাসা পরিচালনে বছরে ব্যয় হয় আনুমানিক ১,৪০০ কোটি টাকা,আর মাদ্রাসা পাসদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৭৫ শতাংশ।” বুঝা যাচ্ছে, যেখানেই তিনি নজর দেন সেখানেই মাদ্রাসার ছাত্র দেখতে পায়,সে সংখ্যা প্রতি তিন জনে একজন। ফলে সর্বত্র দেখতে পান বিপুল সংখ্যক ইসলামের ঝান্ডাবাহিদের। এটি তার মহা দুশ্চিন্তা।তার ভাষায় মহা বিপর্যয়। প্রশ্ন হলো,এমন মহাবিপর্যয়ের এত দুশ্চিন্তা নিয়ে তিনি ঘুমোন কি করে? অথচ তার মনে ঈমান থাকলে বিষয়টি ভিন্নতর হতো। কারণ যেখানেই ইসলাম, যেখানে মাদ্রাসার ছাত্র -তা দেখে তো একজন ঈমানদার প্রচন্ড খুশি হয়। কারণ তারা তো ইসলামের সেবক। তাদের দেখে মৃত্যুর ভয় পাবে তো ইসলামের শত্রুগণ। কিন্তু সেটিই হয়েছে আবুল বারাকাতের ক্ষেত্রে। ইসলাম ও মাদ্রাসার ছাত্র দেখে তিনি ভয়ে জর্জরিত। তিনি ভয় পাচ্ছেন, ইসলামপন্থিগণ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অচিরেই দখল করে নিবে। তার ভয়,ইসলামি যুবকদের আত্মদানে। তার বিস্ময়,তারা কেন শহীদ হয় এবং শহীদী জজবা নিয়ে বোমায় পরিণত হয়।

আরো প্রশ্ন হলো,এসব আজগুবি তথ্য আবুল বারাকাত পেলেন কোত্থেকে? বাংলাদেশের প্রতি তিন জন ছাত্রের মাঝে একজন মাদ্রাসা ছাত্র এবং তাদের সংখ্যা ৮০ লাখ –এসব কি বিশ্বাস যোগ্য? মাদ্রাসার পিছনে ১৪ শত কোটি টাকা ব্যয় হয় –এমন নিখুঁত হিসাবই বা কোত্থেকে বের করলেন। মিথ্যা আবিস্কারে তাদের মগজ যে কত উর্বর এ হলো তার নমুনা। একাত্তরে ৩০ লাখ নিহত হওয়ার তথ্যটি এভাবেই বাজারে ছাড়া হয়েছিল। যিনি এ ভূয়া তথ্যটি ছেড়েছিলেন তিনি ভেবে দেখেননি,নিহতের সংখ্যা ৩০ লাখ হলে পাকিস্তান আর্মিকে যুদ্ধকালীন ৯ মাসের প্রতিদিন গড়ে ১১ হাজার মানুষের বেশী মানুষকে হত্যা করতে হত। এবং জনসংখ্যার প্রতি ২৫ জনে একজনকে মারতে হতো। হার্ভাডে বসে হাসিনা তনয় জয়ও এমন মিথ্যা আবিস্কার করেছিল। সে বলেছিল, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক অফিসার হলো মাদ্রাসার ছাত্র। আওয়ামী নেতাকর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের ঘরে ঘরে এভাবেই মিথ্যা উৎপাদনের ফ্যাক্টরি।

নিন্দিত হচ্ছে জিহাদ ও ইসলামি রাষ্ট্র

ইসলামের শত্রুদের কাছে ইসলামি রাষ্ট্র যেমন নিন্দিত। তেমনি অপরাধ হলো সে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জিহাদ।আবুল বারাকাত সে জিহাদকে চিত্রিত করেছেন জঙ্গিবাদ রূপে। তার মত লোকদের কাছে জঘন্য ভাষায় নিন্দিত হচ্ছে ইসলামপন্থিদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে নেয়ার চেষ্ঠা। ইসলামি রাষ্ট্র তাদের কাছে ফ্যাসীবাদি রাষ্ট্র। ইসলামের বিরুদ্ধে এমন এক বিষাক্ত ঘৃণা নিয়েই তো নাস্তিক ব্লগারগণ মহান আল্লাহতায়ালা,তাঁর প্রিয় রাসূল (সাঃ) ও রাসূল (সাঃ)র বিবিদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছে। হেফাজতে ইসলামের উত্থানের পর থেকে ইসলামের শত্রুপক্ষের মনে ইসলামভীতি এখন তুমুলে। তাদের বিরুদ্ধে আবুল বারাকাতের অভিযোগ, “সুসংগঠিত জঙ্গি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে উদ্যত”। বলেছেন, “তারা ধর্মকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে”। অভিযোগ তুলেছেন,“ধর্মভিত্তিক এ রাজনৈতিক মতাদর্শ ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়।”

প্রশ্ন হলো, ইসলামের প্রতিষ্টায় জিহাদ করা এবং সে জিহাদের প্রাণ দেয়া এবং ধর্মকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করা কি এক কথা? মুসলমান হওয়ার দায়বদ্ধতা হলো, ইসলামি বিধানের প্রতিষ্টায় রাষ্ট্র ক্ষমতা হাতে নেয়া। রাষ্ট্র ক্ষমতা হাতে না নিলে রাষ্ট্রের বুকে ইসলামের শরিয়তি বিধানের প্রতিষ্ঠা কীরূপে সম্ভব? ইসলাম তাই মসজিদ,মাদ্রাসা,খানকাহ বা মাজারে বন্দী থাকার বিষয় নয়। নবীজী নিজে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে নিয়েছেন, সাহাবাগণও নিয়েছেন। ইসলামের শত্রুপক্ষের অধিকৃতি হটিয়ে দখলে নেয়ার কাজটি হলো জিহাদ, এমন জিহাদে প্রাণদান হলো শাহাদাত। ইসলামে তো এটিই সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মকর্ম। অথচ আবুল বারাকাত এর মধ্যে দোষ খুঁজছেন। ইসলাম যতদিন মসজিদ-মাদ্রাসা,সূফীদের মাজারে বা খানকায়ে আবদ্ধ থাকবে ততদিনই সেটি তার কাছে প্রকৃত ধর্ম। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে নেয়ার চেষ্টা হলেই সেটি উগ্র জঙ্গিবাদ। রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে নিয়েছেন খোদ নবীজী (সাঃ) ও খোলাফায়ে রাশাদা।প্রশ্ন হলো, তাদেরকে তিনি কি বলবেন? আবুল বারাকাতের কাছে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্টা হলো রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ। অথচ মুজিব যেভাবে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্টা করলো,ছিনিয়ে নিল জনগণের মৌলিক মানবিক অধিকার এবং হত্যা করলো ৩০-৪০ হাজার মানুষ -তাকে তিনি কি বলবেন? মুজিবের ন্যায় গণদুষমন ও গনতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রমাণিত শত্রুকে তিনি বঙ্গবন্ধু বলতে পাগল! তিনি মুজিবকে এতটা মাথায় তুলেছেন তার নিজের অবস্থান গণতন্ত্র, মানবতা ও ইসলামের বিপক্ষে হওয়ার কারণে। মানবতা ও ইসলামের বিরুদ্ধে এমন একটি বিপক্ষীয় অবস্থান থেকে তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের বিরুদ্ধে গালিগালাজ করবেন এবং শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের নাস্তিকদের ইসলামপন্থি রাজনীতি নিষিদ্ধ ও ইসলামি নেতাদের ফাঁসির আন্দোলনকে “তরুণ প্রজন্মের আলোকিত-আন্দোলন” বলবেন সেটিই কি স্বাভাবিক নয়?

পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা কি বিপর্যয়?

যেখানেই ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থের প্রতি অঙ্গিকার সেখানেই আবুল বারাকাতের মত ব্যক্তিবর্গ পশ্চাতপদতা ও সাম্প্রদায়িকতা দেখেন। দেখেন বিপর্যয়। এবং মুসলমানদের গলাকাটার মধ্যে দেখেন প্রগতি। তাই প্রচন্ড প্রগতি দেখেছেন মতিঝিলে হাজার হাজার মুসল্লি হত্যার মধ্যে। অথচ ভারতে মুসলিম নিধন ও মুসলমান নারীদের ধর্ষণের মাঝে তিনি কোন পশ্চাদপদতা দেখেন না।তাই তার বিরুদ্ধে নিন্দাবাদও জানান না। বহু ভারতীয় হিন্দু ভারতে এরূপ মুসলিম হত্যার প্রবল নিন্দা জানিয়েছে।অরুন্ধতি রায়ের মত ব্যক্তিরা আন্দোলনেও নেমেছেন।কিন্তু আবুল বারাকাতগণ কি একটি বারের জন্যও নিন্দা বা প্রতিবাদ জানিয়েছে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাঝে যৌক্তিকতা দেখেছে এমনকি অনেক অমুসলমানেরাও। আবুল বারাকাতগণ যে ভারতীয় হিন্দুদের চেয়েও বেশী মুসলিম বিদ্বেষী সেটি কি এরপরও বুঝতে বাঁকি থাকে? এমন একটি মুসলিম বিদ্বেষ নিয়েই তিনি ১৯৪৭ সালের উপমহাদের মুসলমানদের পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা আন্দোলনকে বলেছেন পশ্চাদমুখি। তার কথায় “পূর্ব বাংলায় ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে প্রথম বড় মাপের পশ্চাদমুখী রূপান্তর (বিপর্যয়) ঘটেছে গত শতাব্দীতে যখন ব্রিটিশ উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের একপর্যায়ে যখন ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ এলো।” যেখানেই মুসলমানের জাগরণ ও স্বার্থ রক্ষণের বিষয় –সেটিই আবুল বারাকাতের কাছে মনে হয়েছে পশ্চাদপদতা। সে ধারণা নিয়েই তিনি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের প্রতিষ্টাকে বলছেন সাম্প্রদায়িকতা। কথা হলো, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি না হলে আজকের বাংলাদেশ কোত্থেকে আসতো? সে হুশ কি তার আছে? তার আফসোস “ধর্মভিত্তিক দেশ বিভাজনে ইসলাম ধর্মের উদারনৈতিক-মানবিক ধারার সুফি-ওলামারা বাধা দিতে পারলেন না।” অথচ ভূলে যান, মহম্মদ ঘোরির হাতে দিল্লি বিজয়েরে পর দক্ষিণ এশিয়ার বুকে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবজনক ঘটনা। মুসলমানের বিজয় ও গৌরব নিয়ে যাদের মনকষ্ট একমাত্র তারাই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের সৃষ্টিতে কষ্ট পেতে পারে। সে কষ্ট যেমন ভারতীয় হিন্দুগণ পায় তেমনি বাংলাদেশের বুকে তাদের প্রতিপালিন এজেন্টগণও পায়।

বাংলাদেশে আজও ইসলামপন্থিদের ফাঁসিতে ঝুলানো যায়নি তা তা নিয়ে আবুল বারাকাতদের বড়ই আফসোস। সে কাজ যে হাসিনা শুরু করেছে তাতেই তার আনন্দ। তবে তার ভয় বেড়েছে ইসলামের পক্ষে গণজাগরণ দেখে।সে জাগরণের মাঝে তিনি বিপন্নতা দেখছেন।বলেছেন,“উগ্র জঙ্গিবাদ যে ‘আত্মঘাতী বোমা সংস্কৃতি’ চালু করেছে তার ফলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে দেশের সব মানুষের জীবন বিপন্ন প্রায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া যতই ত্বরান্বিত হচ্ছে এ বিপন্নতা ততই বাড়ছে।” অথচ আবুল বারাকাত দেখেও দেখেন না যে, দেশে আজ প্রচন্ড ফ্যাসীবাদী শাসন। শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে ইসলামপন্থিদের হাতে নয়, বরং আওয়ামী দুর্বৃত্তদের হাতে। দেশ বিপন্ন তো হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে। দেশের স্বাধীনচেতা মানুষের পিঠ আজ দেয়ালে ঠেকে গেছে। ৩০-৪০ হাজার মানুষ আজ জেলে। ৫মে ও ৬ মে বহু হাজার মুসল্লিদর এ ফ্যাসিস্ট সরকার নির্মম ভাবে নিহত ও আহত করলো। তার আগে নিহত করেছে প্রায় দুই জামায়াত শিবির কর্মী ও সাধারন মানুষকে। সরকার বিরোধী গণমাধ্যমগুলো একের পর এক বন্ধ করা হচ্ছে। মানুষ গুম হচ্ছে। “আমার দেশ” সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হচ্ছে। নির্মম নির্যাতন করা হচ্ছে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদের। এরূপ ফ্যাসীবাদী নির্মমতার বিরুদ্ধে বহু বিবেকমান মানুষই প্রতিবাদ করছে। প্রতিবাদে সাধারণ জনগণও জেগে উঠেছে। জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়া প্রতিটি মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। যখনই কোন স্বৈরশাসক জনগণের উপর এরূপ আঘাত হানে তখনই জনগণ এভাবে জেগেছে। সেটি যেমন মুজিব আমলে জেগে উঠেছিল সেটি আজও হচ্ছে। এটিই একটি জীবিত জনগণের স্বাভাবিক রূপ। কিন্তু বিবেকের সে সুস্থ্যতা কি আবুল বারাকাতের মত আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের আছে? থাকলে এ নৃশংসতার বিরুদ্ধে তার মুখে প্রতিবাদ কই? জনগণের জেগে উঠার বিরুদ্ধে তারা এত শংকিত কেন?

ফ্যাসীবাদের নাশকতা

রোগজীবানূর আক্রমনে দেহের মৃত্যু ঘটে। আর ফ্যাসীবাদের আক্রমণে হাজার হাজার মানুষের দৈহীক মৃত্যুর সাথে মৃত্যু ঘটে অসংখ্য মানুষের বিবেকেরও। বিপুল হারে উৎপাদিত হয় দাস চরিত্রের মানুষ। বাংলাদেশের বুকে আওয়ামী ফ্যাসীবাদের হাতে এখানেই ঘটেছে সবচেয়ে বড় নাশকতা। তারা বহু হাজার মানুষকেই শুধু হত্যা করনি, হ্ত্যা করেছে লক্ষ লক্ষ মানুষের বিবেকও। অন্ধ করে দিয়েছে তাদের মনও। সেটি যেমন মুজিব আমলে ঘটেছিল তেমনি আজও ঘটছে। ফলে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রপক্ষের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা আজ বিবেকশূণ্য। হাসিনা সরকারের হাতে নির্মম নৃশংস ভাবে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু যেমন তাদের নজরে পড়ে না,তেমনি নজরে পড়ে না শেখ মুজিবের বাকশালী স্বৈরাচারের নিষ্ঠুরতাও। সরকারি প্রচার যন্ত্র ব্যস্ত মুজিবের সে নিষ্ঠুরতা ভূলিয়ে তাকে ফেরেশতা তূল্য জাহির করার কাজে। সে কাজে নেমেছেন আবুল বারাকাতের মত শত শত ব্যক্তি। সে মুজিবী নিষ্ঠুরতা যে কত নির্মম ছিল তার বিবরণ বহু। উদাহরণ দেয়া যাক কমিউনিস্ট নেতা (সিপিবি নয়)শান্তি সেনের স্ত্রী অরুণা সেনের বিবৃতি থেকে।অরুণা সেন ও তার পুত্রবধূ রিনা সেন ও হনুফা বেগমকে রক্ষীবাহিনী কী বর্বর নির্যাতনই না করেছিল! শারীরিক নির্যাতন,যৌন নির্যাতন,পুকুরে চুবানো,চাবুক দিয়ে পেটানো,নগ্ন-অসুস্থ অবস্থায় কম্বলচাপা দিয়ে শ্বাস রোধ করে রাখা (কথামালার রাজনীতি ১৯৭২-’৭৯/ড.রেজোয়ান সিদ্দিকী,তৃতীয় সংস্করণ,পৃ.৫৫)।মুজিব আমলে বাজিতপুরের ইকোটিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল আলীর ছেলে রশিদের খুনের ঘটনাটি কত নৃশংসা ভাবে ঘটেছিল সে বিবরণ দিয়েছেন জনাব আবদুল আলী এক সাক্ষাৎকারে। সেটি এরূপঃ “আমার সামনে ছেলেকে গুলি করে হত্যা করল। আমার হাতে কুঠার দিয়ে বলল,“মাথা কেটে দে,ফুটবল খেলব”। আমি কি তা পারি? আমি যে বাপ। কিন্তু অত্যাচার কতক্ষণ আর সহ্য করা যায়। সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত নিজের হাতে ছেলের মাথা কেটে দিয়েছি।”-(বাংলাদেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড,ইতিহাসের কাঠগড়ায় আওয়ামী লীগ,আহমেদ মুসা,পৃ. ৬৭-৬৮)। এরূপ নির্যাতন ও এরূপ নৃশংস হত্যাকান্ড শুধু অরুণা সেন,রিনা সেন কিংবা কৃষক আবদুল আলীর ছেলে রশিদের ক্ষেত্রেই ঘটেনি;ঘটেছে আরও হাজার হাজার মানুষের ক্ষেত্রে। ইদানিং একই নৃশংসতা ঘটে গেল শাপলা চত্তরে। আজও ঘটছে ইসলামি ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও শত শত জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সাথে।

ঘরের শত্রু ও বিপর্যয়ের পথে দেশ

কিন্তু আবুল বারাকাতের দৃষ্টিত এ নৃশংস মুজিবই বাংলার ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।এবং তার দল আওয়ামী লীগই বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সংগঠন। তিনি তার বয়ানে আওয়ামী লীগকে স্বাধীনতার সংগ্রামী সংগঠন রূপে ভূষিত করেছেন।অন্য কোন দলের প্রশংসায় তিনি একটি কথাও বলেননি। কথা হলো,আবুল বারাকাত কি স্বাধীনতার অর্থ বুঝেন?স্বাধীনতার অর্থ কি শুধু একটি মানচিত্র লাভ? বাংলার মানচিত্র কি আগেও কেউ গিলে খেয়েছিল? স্বাধীনতার অর্থ তো সাধারণ জনগণের মতামত প্রকাশ,সংগঠন গড়া,রাজনীতি করা ও দাবীদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করার পূর্ণ স্বাধীনতা,সেটি স্রেফ কোন ব্যক্তি বা দলের স্বাধীনতা নয়।শেখ মুজিব ও তার দল আওয়ামী লীগ কি সে স্বাধীনতা জনগণকে কোন কালেও দিয়েছে? আজও কি দিচ্ছে? বরং জনগণের সে স্বাধীনতা নির্মম ভাবে কেড়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।সেটি যেমন একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে।তেমনি পত্র-পত্রিকা ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা হরন করে। বরং আওয়ামী লীগের অপরাধ তো আরো জঘন্য।শুধু কথা বলা, দল গড়া বা রাজনীতির অধিকারই তারা হরন করেনি,বরং কেড়ে নিয়েছে হাজার হাজার মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার অধিকারও। মুজিব তার শাসনামলে হত্যা করেছে ৩০-৪০ হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে। ৫ই মে ও ৬ই মে মাত্র এ দুটি দিনে মুজিব কন্যা নিহত ও আহত করেছে হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার মুসল্লিদের। বাংলার বুকে মুসলমানদের এতবড় ক্ষতি কোন মনুষ্য জীবের হাতে কি কোন কালেও হয়েছে? জনগণের জানমাল ও স্বাধীনতার এতবড় শত্রুকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বললে স্বাধীনের শত্রু কে?

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট মুজিব ও তার পরিবারের অনেকেই নিহত হয়েছেন। কিন্তু মুজিব পরিবারের সকল সদস্য তার পারিবারিক ঐতিহ্য নিয়ে ডাইনোসোরের ন্যায় নির্মূল হয়ে যায়নি। বাংলার মানুষ তাই ডাইনোসরকে না চিনলেও মুজিব ও তার পরিবারকে চেনে। মাঝে মাঝে ভূলে গেলেও স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য মুজিব পরিবারের সদস্যরা এখনও বেঁচে আছে। গোখরা শাপ যেমন তার বিষাক্ত ফনা নিয়ে আজও বাংলার নানা প্রান্তে বেঁচে আছে,তারাও রাজনীতিতে বেঁচে আছে মুজিবী নৃশংসতা নিয়ে।গোখরার প্রাণনাশী বিষাক্ততা জানার জন্য স্কুল-কলেজে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।গ্রামগঞ্জের নিরক্ষর শিশুরাও সেটি জানে।স্মৃতিতে মাঝে মধ্যে বিলুপ্তি ঘটলে সেটি ছোবল দিয়ে আবার স্মরণ করিয়ে দেয়।তেমনি বাংলাদেশে জনগণের বুকে বার বার ছোবল মারছে মুজিবী বাকশাল। আওয়ামী লীগের ইতিহাস জানার জন্য তাই কি ইতিহাসের বই পাঠের প্রয়োজন পড়ে? আবুল বারাকাতদের বায়ান শুনারও কি প্রয়োজন হয়? তবে তার বায়ানে যেটি প্রকাশ পেয়েছে সেটি তার নিরেট মিথ্যাচার ও চাটুকর চরিত্র।সে সাথে ইসলামের বিরুদ্ধে সহিংস আক্রোশ। বাংলাদেশের মুসলমানের বিরুদ্ধে এরাই ঘরের শত্রু।

জানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শুধু গোখরা শাপগুলোক চিনলে চলে না,ভাল ভাবে চিনতে হয় এসব ঘরের শত্রুদেরও।চিনতে হয় বিদেশী শত্রুদেরও।বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় ডিগ্রির চেয়েও এজ্ঞানের গুরুত্ব অনেক বেশী।নবীজী (সাঃ)র সময় কোন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না,কিন্তু মসজিদের পবিত্র মেঝেতে এ জ্ঞানলাভটি সঠিক ভাবে হয়েছিল।ফলে ঘরের গোখরা শাপগুলো চিনতে ও নির্মূলে সাহাবাগণ সেদিনি ভূল করেননি।ইসলামের শত্রু নির্মূলের সে জিহাদের হাজার হাজার সাহাবা সেদিন শহীদ হয়েছেন। শহীদের সে রক্তে আল্লাহর শরিয়ত যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তেমনি মুসলমানগণ বেড়ে উঠেছে বিশ্বশক্তি রূপে। তাদের হাতে নির্মিত হয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা। কিন্তু বাংলাদেশে শত্রু চেনার সে কাজটাই যথার্থভাবে হয়নি।অজ্ঞতা নিয়ে ঘরের শত্রুদের মাথায় তোলা হয়েছে।দেশে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বিপুল ভাবে বাড়লেও সে অজ্ঞতা দূর হয়নি। বরং বেড়েছে। ফলে দেশ অধিকৃত হয়ে গেছে ভয়ানক শত্রুদের হাতে। মুসলিম ভূমিতে তাই পরাজিত হয়ে আছে মহান আল্লাহর শরিয়তি বিধান। বিষাক্ত গোখরাগুলো এখন ফনা বিস্তার করে আছে শুধু শাপলা চত্ত্বরে নয়,বরং দেশের বিশ্ববিদ্যালয়,পুলিশ,র‌্যাব,বিজিবী,মিডিয়া ও প্রচার মাধ্যম,আদালত,প্রশাসন,অপরাধ ট্রাইবুনাল,মন্ত্রীপাড়াসহ ক্ষমতার সর্বোচ্চ আসনে।ফলে নিরীহ আলেম-উলামা,ইসলামি আন্দোলনের নেতাকর্মী ও তাওহিদী কাফেলার তরুন সৈনিকেরা পথেঘাটে লাশ হচ্ছে এবং তাদের লাশও গুম করা হচ্ছে।আল্লাহর শরিয়তি বিধানকে পরাজিত রাখা এবং ঈমানদার মুসল্লিদের এভাবে হাজারে হাজারে লাশ করা ও তাদের লাশগুলো গুম করার মধ্যেই তাদের উৎসব।বাংলাদেশের আওয়ামী শাসক মহলে তো সে উৎসবই মহা ধুমধামে লাগাতর চলছে।যেদিন কয়েক হাজার মানুষ লাশ হলো সাভারের রানা প্লাজা ধসে সেদিনও উৎসব বসেছিল প্রেসিডেন্ট ভবনে। অথচ স্বজন হারা এবং নিহত সন্তানের লাশ না পাওয়া আপনজনের ক্রন্দনে ভারি হয়ে উঠছে বাংলার বাতাস। প্রশ্ন হলো,যাদের হৃদয়ে সামান্য ঈমান আছে,আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ে যাদের সামান্যতম অঙ্গিকার আছে এবং পরকালে জবাবদেহীতার ভয় আছে তারাও কি নীরবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে উৎসব দেখবে? আবুল বারাকাতরা তো সেটাই চায়।

তথ্য সূএে:http://www.drfirozmahboobkamal.com/2010-03-24-10-21-22/937-abul-barakata-disaster-phobia-and-lie-production.html

বিষয়: বিবিধ

২২৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File