রুটি কলার বিনিময়ে গুলি , এতে ঝড়ে যায় অন্তত ১৫ টি তাজা প্রাণ।, আহত প্রায় ২০০০।

লিখেছেন লিখেছেন মনসুর আহামেদ ০৫ মে, ২০১৩, ১১:২৩:৫২ রাত

বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামের পূর্বঘোষিত ঢাকা অবরোধ কর্মসূচীর শুরুটা ছিল চমৎকার। আইনশৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের শুরুতে শুভেচ্ছা জানান হেফাজতের নেতাকর্মীরা। নিজেদের নাস্তা পানি ভাগ করে পুলিশ সদস্যদেরও দেন তারা। পুলিশও অত্যন্ত সোহার্দ্যপূর্নভাবে গ্রহণ করে হেফাজতের এই আতিথেয়তা। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল অবরোধ কর্মসূচী। পুলিশ ও হেফাজত সদস্যরা অবস্থান করছিলেন পাশাপাশি শান্তিপূর্ণভাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একই রকম থাকেনি এই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।

বেলা এগারোটার দিকে পল্টন এলাকায় হেফাজতের মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। এর পর উভয় পক্ষে দফায় দফায় চলে সংঘর্ষ। এতে ঝড়ে যায় অন্তত ১৫ টি তাজা প্রাণ। আহত হন কয়েকশ’ হেফাজত নেতাকর্মী। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আহতদের। হাসপাতাল ও কিনিকে আহতদের স্থান ও চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের।

শাহবাগের নাস্তিক ব্লগারদের ইসলাম বিদ্বেষী ইন্টারনেট প্রচারণার বিরুদ্ধে গঠিত হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচীতে ঘটে এ ঘটনা। মহানবী (সাHappy- এর বিরুদ্ধে চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ অবমাননাকর কল্পকাহিনী ইন্টারনেটে প্রচারকারী নাস্তিক ব্লগারদের বিচার, সংবিধানে মহান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে দেয়াসহ ১৩ দফা দাবিতে ওই কর্মসূচীর ডাক দেয়া হয়।

গতকাল ফজরের আযানের সুমধুর সুরের সাথে সাথে মুসল্লিগন বের হয়ে আসেন মসজিদের উদ্দেশ্যে। নামাজ শেষে ভোরের মৃদুমন্দ বাতাসে পূর্বঘোষিত কর্মসূচী সফল করতে রাস্তায় নেমে আসেন তারা। নির্দিষ্ট পয়েন্টে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা জমায়েত হন। সূর্যোদয়ের আগেই রাজধানীর ৬টি প্রবেশপথের প্রতিটি পয়েন্টেই লাখো জনতার ঢল নামে। সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে জনতার স্রোত। লাখো জনতার উম্মাতাল স্রোত থেকে গগনবিদারী স্লোগান দেয়া হয় ‘ নাস্তিকদের ফাসি চাই’ … ‘মহা নবীর (সা.) অপমান সইবে না রে না মুসলাম।’

মুহুমুর্হু স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে রাজধানীর প্রবেশমুখগুলো। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে ধর্মপ্রাণ মানুষের জমায়েতও। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ইসলাম প্রিয় জনতা খাবার, পানি নিয়ে আসেন হেফাজতের আলেম ওলামাদের জন্য। আলেমগন নিজেরাও ব্যাগে করে শুকনা খাবার এনেছিলেন। ধর্মপ্রাণ মানুষেরা হেফাজতের আলেমদের জন্য রুটি, বিস্কুট, কলা, তরমুজ, শসা, শরবত, পানি নিয়ে আসেন।

হেফাজতের নেতাকর্মীরা ওই খাবার সবার মধ্যে বিলিয়ে দেন। এমনকি পথচারিরাও বাদ যাননি। পুলিশ সদস্যদের রুটি কলা, পানি দিয়ে সৌহার্দের নজির দেখান আলেমগণ। এছাড়া পুলিশের ব্যারিকেড সরিয়ে জমায়েতের জন্য জায়গার পরিধি বাড়ানো, জমায়েতের সামনে এগিয়ে যাওয়া এসব ব্যাপারে আন্তরিকতার সাথে হেফাজতের দায়িত্বশীল নেতাদের সাথে হাসিমুখে পরামর্শ ও সহযোগিতা করতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের। হেফাজত নেতারাও পুলিশের পরামর্শ গ্রহণ করেছেন হাসিমুখে। পোস্তগোলার চীন মৈত্রী সেতু, কাচপুর সেতুসহ রাজধানীর প্রায় সবগুলো প্রবেশ পথের পয়েন্টেই দেখা যায় এই দৃশ্যপট।

লাখ লাখ মুসল্লির বিশাল সব পয়েন্টে পুলিশ কোন রকম ঝুকি নিতে চায়নি শান্তি বিনষ্টের। হেফাজতের উদ্দেশ্যে পুলিশ কর্মকর্তাদের বলতে শোনা গেছে, ‘ আমরাও মুসলমান। আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচী পালন করে আমাদের সহযোগিতা করুন। হেফাজতের নেতাকর্মীরা জবাবে বলেছেন, ‘ আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই কর্মসূচী পালন করতে চাই।’

হেফাজত নেতাদের ঘোষণা ছিল অবরোধকর্মসূচীকালে বেলা দুইটার পর মতিঝিল বা শাপলা চত্বরে সমাবেশ করবেন তারা। সে ঘোষণা অনুসারে অবস্থানের পয়েন্টগুলোতে বড় জমায়েতের অবস্থান বজায় রেখে খন্ড খন্ড মিছিল যেতে থাকে বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও মতিঝিল অভিমুখে। বেলা এগারোটার দিকে এরকমই একটি মিছিল পল্টন এলাকায় পৌছলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠি হাতে হামলা চালায় তাদের ওপর। হেফাজতের নেতাকর্মীরা পাল্টা ধাওয়া করলে গুলি চালায় পুলিশ। এর পর থেকে দফায় দফায় তা চলতে থাকে। পুলিশের গুলি ও টিয়ার শেল এবং হেফাজতের ইটপাটকেল নিক্ষেপে পল্টন, বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা মোড়, প্রেসকাব এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। অন্যদিকে গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, নবাবপুর রোডসহ সংলগ্ন এলাকায় লাঠি সোটা নিয়ে মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। ফলে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। কিন্তু হেফাজত কর্মীদের মতিঝিলের সমাবেশের দিকে এগিয়ে যাওয়া থামাতে পারেনি এসব কিছুই। পরিণতিতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অন্তত ৭ টি তাজা প্রাণ। আহত হন অগুনতি মানুষ। সকালের শান্তিপূর্ণ সেই দৃশ্যের সাথে মিল খুজে পাওয়া যায় না এই মর্মান্তিক ঘটনার।তথ্য সূএে:http://www.dailynayadiganta.com/

বিষয়: বিবিধ

১১৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File