সংকীর্ণ জীবন

লিখেছেন লিখেছেন আত্মসমর্পিত ১৯ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৩৬:৩১ রাত

১) সদ্য বেসরকারি নামকরা ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ পাশ করা কোন কর্মোদীপ্ত মেধাবী যুবক। ভার্সিটি থেকে বেরোনোর সাথে সাথেই চাকরি পেলো কোন নামকরা বেসরকারী ব্যাংকে; যার পে স্কেলও বেশ ভালো। বছর দুয়েক না যেতেই ব্যাংক তার জন্য অনুমোদন করলো ফ্ল্যাট আর গাড়ীর লোন। আর, ওই যুবকও সাত পাচ না ভেবে সেই সুযোগ লুফে নিলো; যদিও বাকী জীবন তাকে এই লোনের ঘানি টানতে হবে।

আমেরিকান ইসলামী সুবক্তা আর মনোবিদ ইয়াসির ফাজাগা একটি বেশ সুন্দর মন্তব্য করেছিলেন একবার, যা অনেকটা এমন:



”We buy things that we don’t need, with the money we don’t have, to impress the people we don’t like.”


অনেকেই হয়তো আপাতঃদৃষ্টিতে উপরের উদাহরণটিতে কোন গোঁজামিল খুঁজে পাবে না। আর না পাওয়ার পেছনে রয়েছে আমাদের বস্তুবাদী সমাজের পরিয়ে দেয়া রঙ্গিন চশমা। যদি সেক্যুলার দৃষ্টিভঙ্গিতেও এগোই, তবুও ঐ যুবক এমন এক জীবনমান আর জীবনোপকরণের পিছনে ছুটছেন যার উপযুক্ততা তিনি অর্জন করেন নি অথচ তা নিজের জন্য উপযুক্ত সাব্যস্ত করার জন্য কত বছরের গতর খাটুনি আর দাসত্বের শিকলে নিজেকে বন্দী করেছেন তা তিনিই জানেন। এবার দেখি, ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিতে, এই জীবন কতটা ভয়াবহতা, সংকীর্ণতা আর সীমালঙ্গনের। সুদের গুনাহ্ কিংবা ভয়াবহতা নিয়ে আলোচনা করা বাহুল্যতা আর এর শোচনীয় পরিণতির কথা আমরা সবাই জানি। অথচ আমরা এমন সওদা করছি যার আদ্যোপান্ত একজনকে নিক্ষেপ করছে জীবনের সবচেয়ে উত্তুঙ্গ আর কর্মময় সময়ে আল্লাহদ্রোহিতায়!

২) কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসণে মাস্টার্সের পাশাপাশি বিসিএস করা কোন যুবক বেশ বড় অংকের ঘুষ দিয়ে সরকারি ভূমি অফিসে চাকরি নিলো। ভূমি অফিসের দুর্নীতি আর ফাইলবন্দীত্বের সাথে যাদের পরিচয় আছে তারা জানে ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের আয়ের ফিরিস্তি; যার নব্বই শতাংশ আসে দুর্নীতি থেকে; তবে ব্যতিক্রমও থাকতে পারে। আমি কেবল প্রচলিত রেওয়াজের কথাই বলছি। এই সকল অফিসে মেধাবী অফিসার কিংবা তৃতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তারা এতটাই অর্থবুভুক্ষু হয়ে থাকেন যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভবপর নয়। এদের অনেকেই রাতারাতি বাড়ি-গাড়ীর মালিক বনছেন; অথচ তাদের অন্তরে এতটুকুন স্বস্তি নেই। কারণ, একটাই এদের আয়ের মূল উৎস ঘুষ।

৩) এক ছোটভাই বেশ কিছুদিন ধরে এক প্রবাসী মেয়ের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ের দর কষাকষি করছে। মেয়েপক্ষ একটু বেশী ধনাঢ্য হওয়ায় তাদের আবদারও বেশী। মাহর, উপহার আর বিয়ে পরবর্তী ওয়ালিমা বাবদ বেশ বড় অংকের টাকা চাই বৈবাহিক কার্য সম্পাদনের জন্য; যার জন্য হিমশিম খেতে হচ্ছে ওই ছোটভাইকে। এখানে, দর কষাকষি বলেছি এ জন্যই যে, এই বিয়ের মূল উদ্দেশ্য দুনিয়াবি স্বার্থ হাসিল; যার কারণে এই বিয়ের সম্ভাবনাটুকুও এই সকল আবদার-উপহারের সমানুপাতিক হয়ে পড়েছে। আর বিয়েকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনায় রীতিমতো হতাশ আর বিপর্যস্ত ওই ছোটভাই।

উপরের এমন উদাহরণ চাইলে, অসংখ্য দেয়া যায়।

সংকীর্ণতা, হতাশা আর গ্লানিতেই আশ পাশ; অথচ এই জীবনের তাড়নাই তারা গড়ছে আবাস।

কুরআনের দু’একটি আয়াহ্ দিয়ে যবনিকাপাত করতে চাই যা আমাদের বিভ্রম দুর করতে সহায়ক হবে, বি’ইদনিআল্লাহ:

“মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী, সন্তান-সন্ততি, রাশিকৃত স্বর্ণ-রৌপ্য, চিহ্নিত অশ্ব, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত-খামারের মত আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এসবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগ্য বস্তু। আল্লাহর নিকটই হলো উত্তম আশ্রয়।“ [সুরা আল-ই ইমরান:১৪]

“হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল?” [সুরা ইনফিতার: ০৬]

“এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।“ [সুরা ত্ব-হা:১২৪]




বিষয়: বিবিধ

১১০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File