নেতৃত্ব নয় আদর্শই মূখ্য
লিখেছেন লিখেছেন আত্মসমর্পিত ০২ মার্চ, ২০১৩, ০৪:১৬:২০ বিকাল
যখন বিশ্বমানবতার নেতা মুহাম্মাদ ইবনু আবদি'আল্লাহ সাল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল করলেন নবীপ্রেমিক উমার ইবনুল খাত্তাব রাযি'আল্লাহু আনহু গর্জে উঠলেন আর বলে উঠলেন আর বলে বসলেন: 'যে বলবে রাসুলুল্লাহ্ মারা গেছেন আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেব।'
আর এর পরেই আবু বকর আস-সিদ্দিক রাযি'আল্লহু সেই ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন: ‘যে মুহাম্মাদের ইবাদাত করতো সে জেনে রাখুক মুহাম্মাদ মারা গেছেন আর যে আল্লাহর ইবাদত করে সে জেনে রাখুক; আল্লাহ্ চিরন্জীব-চিরন্তন।’
আর উমার রাযিআল্লহু আনহুসহ অন্যান্যরা তখন হুশ ফিরে ফেলেন। আর রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি নসীহা তো আছেই, যেখানে তিনি যা বলেছিলেন তার ভাবার্থ এমন: “তোমরা যদি কোন বিপদে পতিত হও তবে আমাকে হারিয়ে ফেলার কথা স্মরণ করো তবে তোমাদের সমস্ত বিপদ তুচ্ছ মনে হবে।“
আর, পূর্ববর্তী অনেক নবী-রাসূলকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিলো তাদের স্বগোত্রীয়রা। আর নবীদের হত্যা করা তো ছিলো বনী ইসরাইলের নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। যাকারিয়া আলাইহিস সালামকে করাত দ্বারা দ্বিখন্ডিত করেছিলো তৎকালীন রোমান সৈন্য-সামন্তরা। হত্যার পরিকল্পনা করেছিলো ঈসা ইবনু মারিয়াম আলাইহিস সালামকে। কিন্তু তাই বলে সত্যের বাণীকে তারা স্তব্ধ করতে পারেনি।
প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ হাসানুল বান্নাকে নিয়ে এক সময়ের কম্যুনিজম আক্রান্ত মিশরের লোকজন স্লোগান দিচ্ছিলো ‘হাসানুল বান্না নিপাত যাক।’ তাদের সাথে হাসানুল বান্না যোগ দিলেন নিজেও। তিনি পরে বলেছিলেন, ‘একজন ব্যক্তি হাসানুল বান্না এমনিতেই নিপাত যাবে আর তারও তো অনেক ভুলত্রুটি রয়েছে’। এর দ্বারা তিনি ইসলামী আন্দোলনের আদর্শের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন যেখানে নেতাই মূখ্য নয়।
এছাড়াও ইসলামের জন্য সাঈদ ইবনু যুবাইর, ইমাম আবু হানিফা, সুফিয়ান সাওরী, আহমাদ ইবনু হাম্বল, ইবনু তাইমিয়াহসহ অসংখ্য আলিম যারা নির্যাতিত হয়েছিলেন কেবল সত্যপন্থা অবলম্বন করায়। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামআহ আজ এই সকল আলিমদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করলেও সেই সকল যালিম যারা তাদের উপর যুলম করেছে তাদের ঘৃণাভরে নিক্ষেপ করে ইতিহাসের আস্তাকূঁড়ে।
বর্তমান সময় পরিক্রমায় এমন অসংখ্য আলিম, দা’য়ী, ইসলামপ্রেমী যুবা নিক্ষিপ্ত হয়েছেন আবু গারাইব, গুয়ানতানামোয় কিংবা নির্যাতন-নিপীড়ণে অনেককে হত্যা করা হয়েছে। এই তো কয়দিন আগে ভারতে আফজাল গুরুকে ফাসি দিয়েছে কেবল ভারতীয় জনতার আবেগকে প্রাধান্য দিতে।
কারো উপর যুলমের প্রতিবাদ অবশ্যই করতে হবে কিন্তু সেই প্রতিবাদ যেনো ইসলামের সীমারেখার বাইরে না হয়; সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কিংবা একজন নেতার জন্য অসংখ্য সম্ভাবনাময় তরুণকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়া; যারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নেতৃত্বের-আন্দোলনের কান্ডারী হতে পারতো তাদের দিকনির্দেশণা দেয়াও আমাদের দায়িত্ব। এই দ্বন্ধ আদর্শিক। হক্ব আর বাতিলের। তাই আহলুল হক্বের পরিচয় আমাদের কর্মপন্থাই ফুটে উঠবে এই প্রত্যাশাই করি। আল্লাহ্ আমাদের সকলকে নিকটবর্তী সৎকাজের দিকে ধাবিত করুন আর ন্যায়নিষ্ঠতায় নিজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে ও যেনো দ্বিধান্বিত না হই সে তাওফীক দিন।
আর রাসুলুল্লাহর ইন্তেকাল পরবর্তী সময়ে উমার হওয়ার চেয়ে আবু বকর হওয়ার তাওফীক দিন। আর ইসলামের ঝান্ডা সমুন্নত রাখার হিম্মত দিন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১১৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন