মোহাম্মাদান না মুসলিম
লিখেছেন লিখেছেন আত্মসমর্পিত ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১২:২৮:২৬ রাত
[Mohammedan Or Muslim]
অরিয়েন্টালিস্টরা যখন ইসলাম চর্চা শুরু করেছিলো, তখন তাদের মূল উপজীব্য ছিলো খ্রিস্টান ধর্মের সাপেক্ষে ইসলামের সমালোচনা আর ভুল-ত্রুটি খোঁজে বের করা। তাদের মতে, মুহাম্মাদ নিজেই এ ধর্মের প্রবক্তা আর তিনি তা সুকৌশলে ইনজীল আর তাওরাত থেকে প্রতিলিপি তৈরীর মাধ্যমে করেছেন। আর এর মাধ্যমে খ্যাতিমান হওয়াই তার লক্ষ্য। তাই যারা মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আনীত এ ধর্মের অনুসারী তাদের নামাঙ্কিত করেছে মুহাম্মাদান [Mohammedan] বলে; অর্থ্যাৎ মুহাম্মাদীয়। এর উপর একটি বই ও লিখেছিলেন শিয়া মতাবলম্বী সৈয়দ আমীর আলী যার নাম ছিলো 'The Spirit of Islam' ।আর দুঃখজনক হলেও সত্যি তাকেই সমাজসংস্কারক হিসেবে জেনে এসেছি স্কুলের বইগুলোতে। আর, উচ্চতর পর্যায়েও ইসলামের ইতিহাসের যে বই পাঠ্য তার লেখকও অমুসলিম পি.কে হিট্টি। খুবই সূক্ষ্নভাবে মুসলিমদের সঠিক আর গৌরবোজ্জল ইতিহাস থেকে বিমূখ করা হচ্ছে।
আর তার আনীত এ ধর্ম সম্পর্কে নানা ধরনের বিভ্রান্ত, বানোয়াট আর মনগড়া তথ্য তো আছেই। আর ইউরোপীয়ানদের এমন ইসলামবিদ্বেষ আর নাকউঁচু ভাবের কারণ হচ্ছে ইউরোপের অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগের পরবর্তী রেনেসা [Renaissance] বা পূর্ণজাগরণ এর পিছনে মুসলিমদের সরাসরি অবদান। স্পেনে উমাইয়ারা যে খিলাফাহ্ প্রতিষ্ঠা করেছিলো তার অধীনে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা আর প্রসার এত বেশী ছিলো যে তৎকালীন স্পেনের শহর কর্ডোভা ছিলো ইউরোপের আলোকিত শহর [Lighthouse of Europe]। আর এই কর্ডোভার জীবনাচরণ ছিলো ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলের জন্য অনুকরণীয়। আর ক্রুসেডের ক্রমাগত পরাজয়ের ক্ষত ইউরোপীয়ানরা এতো সহজে ভুলতে পারে নি।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পূর্ববর্তী রাসূল ছিলেন ঈসা আলাইহিস সালাম। তার উপর নাযিল হয়েছিলো ইনজীল [New Testament] আর তিনি নিয়ে এসেছিলেন একটি সুসংবাদ [Gospel]। আর তার পরবর্তীতে একজন রাসূলের; যিনি তার এবং তার মায়ের সত্যায়ণ করবেন। আর এই সত্যায়ণ আমরা কেবল কুরআনেই পাই। ঈসা আলাইহিস সালাম খ্রিস্টধর্ম [Christianity] প্রচার করেননি বরং তিনিও ছিলেন মুসলিম আর প্রচার করেছিলেন ইসলাম। অনুরূপভাবে, মুসা আলাইহিস সালাম ও প্রচার করেননি ইহুদীবাদ [Judaism] বরং তার আনীত তওরাহ [Old Testament] ও ছিলো ইসলামেরই বিধিবিধান সম্বলিত। অর্থ্যাৎ পৃথিবীতে মূল ধারার একত্ববাদী ধর্ম [Monotheistic Faith] তিনটিই [ইহুদীবাদ, খিস্টিয়ানিটি আর ইসলাম] হলো মূলতঃ ইসলাম। আর তৎপূর্ববর্তী নবী-রাসূল আর আসমানী কিতাবসমুহের সত্যায়ণ তো ইসলামের বিশ্বাসেরই একটি স্তম্ভ। আর এ ধারা সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকেই চলে আসছে: দূত এবং তার বার্তা [Messenger and Message]।
একবার কানাডিয়ান রিভার্ট মুসলিম আবদুল্লাহ্ হাকিম কুইক বলছিলেন, তার পৃথিবীর বিভিন্ন সভ্যতার ইতিহাস সংগ্রহে বিশ্বভ্রমনের কথা। তিনি বলেন পৃথিবীর প্রতিটি সভ্যতায় রয়েছে একত্ববাদের [Monotheism] ছাপ; যদিও তাতে সবটুকু বিশুদ্ধতা সর্বত্র বজায় ছিলো না। যা কুরআনের এই আয়াহ্’রই সত্যায়ণ করে:
”আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক।“ [সুরা নাহল:৩৬]
And We certainly sent into every nation a messenger, [saying], "Worship Allah and avoid Taghut." [TMQ-Sahih International: Surah Nahl-36]
পৃথিবীতে আরো কিছু বিভিন্ন মানবসৃষ্ট উপাসণার ধরণ যেমন-অগ্নিপূজারী জরুস্ত্রু [Zoroastrianism], মূর্তিপূজা [Paganism], সন্ত পূজা [Saint], যাদু-ডাকিনীবিদ্যা, মায়াবিদ্যা, ঐন্দ্রজালিকতা ইত্যাদি। এছাড়া দর্শণ [Philosophy] ও মানুষকে কম মোহিত করে নি।
অতিসাম্প্রতিকতম সময়ে বস্তুবাদ, ভোগবাদের কারণে অতিমাত্রিক আত্মকেন্দ্রিকতা মানুষকে আত্মউপাসণার দিকে ধাবিত করেছে; যেখানে প্রবৃত্তিই তার উপাস্য। আর এটাই মন্দতম বিপর্যয়; যা কেবল আধ্যাত্মিক শূণ্যতা আর নৈতিক বিপর্যয়েরই উৎসরণ ঘটায়।
আমি, এইসকল পরিক্রমা এজন্যই টেনেছি আমাদের দেশের অনেক মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া লোকজনও ভাবে ইসলাম ১৪০০ বছর আগে এসেছে কিংবা সনাতন ধর্মই বুঝি পুরনো ধর্ম। বরং তা নয়। সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকেই চলে আসছে একত্ববাদের উপর ভিত্তি করে দূত আর বাণী প্রেরণের এই ক্রমধারা; যার শুরু আদম আলাইহিস সালাম আর শেষ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর তার আনীত এই বিধানই চূড়ান্ত পৃথিবী ধ্বংসের আগ পর্যন্ত। আর তার এই বাণী বিশ্বজনীন অর্থ্যাৎ সকল জাতি-গোষ্ঠীর জন্য।
মূলতঃ বাংলা ব্লগ কিংবা নেটওয়ার্কিং সাইটে অনেকের ইসলামের ইউরোপীয় সংকীর্ণ দৃষ্টভঙ্গি [European Depiction] আর মনগড়া কথার প্রেক্ষিতে সমালোচনা; যা আমাকে ব্যথিত করেছে। আশাকরি এই বিষয়টির আলোকপাত আপনাদের কিছুটা হলেও উপকারে আসবে আর বিভ্রম থাকলে তা দূর হবে, বি’ইদনিআল্লাহ।
মুসলিমরা মোহাম্মাদান নয় বরং তারা সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকে একত্ববাদের ক্রমধারা ইসলামেরই অনুসারী।
[লিখার বিচ্ছিন্নতা ভাবের জন্য দুঃখিত]
বিষয়: বিবিধ
১৭১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন